somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা-কে নিয়ে তীর্থ যাত্রা (পর্ব ১)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই সম্মেলন ভাল লাগতো। সম্মেলন মানে - অনেক মানুষ একই উদ্দেশে জড় হওয়া। ওই উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তৃতা বিতর্ক করা। সবাই মিলে কিছু একটা পালন করা। সেটা যেকোনো দলের সম্মেলন, ধর্মসভা, সাধুসঙ্গ - যাই হোক। এখনো এরকম মানুষের ঢল দেখলে মন আঁকুপাঁকু করে। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্মেলন হজ্জে অংশ নেবার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। সেই সাথে মা কেও হজ্জে নিয়ে যাবার দরকার ছিল।

২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে সুযোগ এলো। আমাদের অফিসের (রবি, সেসময় একটেল) সিনিয়র কলিগরা হজ্জ যাবার প্রস্তাব নিয়ে একটি মিটিং ডাকে। আপাত দৃষ্টিতে আমার বয়স বা জীবন-আচার সম্ভব্য হজ্জ যাত্রীদের কোটায় পড়ে না। তারপরেও কেন যেন ডাক পেলাম। হতে পারে পদের কারণে। আমাদের গাইডও ওইদিন উপস্থিত ছিলেন। তাকে পছন্দ হল। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

হজ্জের শেষের কাছাকাছি সময়ে জাতিয় নির্বাচন পড়লো। নির্বাচনের আগে দেশে থাকাই পছন্দ। তারপরও সিদ্ধান্ত বদল না করে টাকা পয়সা জমা দিয়ে দিলাম। শুধু পুরো সফরের সময়টা কমিয়ে নিলাম।

সময় মত হতে হজ্জের বিশেষ পাসপোর্ট হাতে এলো। যথারীতি নাম পরিচয়ে অসংখ্য ভুল (ওটা আমার পাসপোর্ট প্রমাণ করা কষ্টকর)। আমার নাম বড় আর একটু অন্যরকম হওয়ায় সবাই একটু সংশোধন করার সুযোগ নেন। এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় সরকারি কেরানিদের ক্ষেত্রে। আমাদের হজ্জ গাইড জানালো ওতে তেমন সমস্যা হবেনা।

হজ্জ যাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম। বই পুস্তক অনলাইন ঘেঁটে একটি তালিকা তৈরি করে গোছগাছ শুরু করলাম। দুসেট এহরামের কাপড়ের সাথে বেশি কিছু ভাল পাঞ্জাবি পাজামা নিলাম। গিয়ে মনে হয়েছে - জোব্বা আর ঢোলাঢাল থ্রি কোয়াটার শর্টস নিলে সবচেয়ে ভাল হতো। পরার পরে ফেলে আসার মত কাপড় নেওয়াই ভাল।

বাসা থেকে এহরামের কাপড় পরে রওনা দিয়েছিলাম। তীর্থ যাত্রার এই এক অসাধারণ অনুভূতি। পলার দিকে, আরশানের দিকে চেয়ে অনেক কিছু ভাবছিলাম। তীর্থ যাত্রার অনুভূতি পুরোপুরি উপভোগ করতে চাইছিলাম। ধর্মমতে ওদেরকে আল্লার জিম্মায় রেখে চলে যেতে হবে। চোখ ভিজে আসছিল বারবার। আমি সেসময় প্রায়শই দেশের বাইরে যেতাম। কখনও মাসে তিনবার। মাঝে মধ্যে অফিস থেকেও সরাসরি চলে যেতাম। কিন্তু এই যাত্রার অনুভূতি অন্যরকম। মনে হচ্ছিল জেট প্লেনে যেতেই এমন লাগছে, কেমন লাগতো যখন মানুষ হেঁটে হজ্জে যেত।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হজ্জ ক্যাম্পে পৌঁছলাম। সেখানে কাজ এহরাম বাঁধা, নিয়ত করা ও নামাজ আদায়। এরপর এয়ারপোর্টে পৌঁছে ইমিগ্রেশন শেষ করে সাউদি এয়ারের বিশাল প্লেনের পেটে। অন্যবার বিদেশ যাওয়ার চেয়ে হজ্জ-যাত্রী বলে একটু বেশি দেরি হল। অথচ উল্টোই হবার কথা।

প্লেনে উঠে বুঝলাম। এরপর মনে হল - এত আগে নিয়ত করার বদলে, মিকাতে পৌঁছাবার আগে করলেই হত। কারণ প্লেনে প্রচণ্ড শিত লাগলেও এহরাম অবস্থার কারণে মাথায় কোন কাপড় দিতে পারছিলাম না। একসময় বিমান যাত্রা শেষ হল। কিন্তু এয়ার পোর্টে নেমে ধৈর্যের পরীক্ষা শুরু। বসার যায়গা নেই, হাতে পড়ার মত বই নেই (বই লাগেজে), এমপিথ্রি প্লেয়ারে ট্র্যাকগুলো দু-তিনবার শুনে শেষ, নোটবুকে চার্জ নেই। কোন প্রসেস কখন শেষ হবে সেটা কেউ জানেনা। মিডিলইস্টের বেশিরভাগ এয়ারপোর্টের মত সবার হেলে দুলে চলাফেরা। একজনের কাজ তিনজন মিলে করা। অন্য সময় হলে হয়ত রাগ উঠত। মনে মনে পড়তে থকলাম - লা রাফাসা ... জিদালা।

দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্ষুধা ভয়ানক হয়ে গেল। এয়ারপোর্টের যে দোকান খুঁজে বের করলাম তার বিরিয়ানি গলার নিচে যায় না। অন্য যাত্রীর সাথে থাকা কিছু খবার খেয়ে পেটের জ্বালা কমলো।

একসময় ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এয়ার পোর্টের বাইরে আমাদের নির্ধারিত বাসে উঠলাম। উদ্দেশ্য হারাম শরিফের পাশে আমাদের নির্ধারিত বাসা। রাস্তার দুদিকের মরুভূমি, খেজুর বাগান, ছোট ছোট লোকালয় পার করে বাস ছুটে চলল .

পর্ব ২ : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×