somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা-কে নিয়ে তীর্থ যাত্রা (পর্ব ২)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন মসজিদুল হারামের পাশে আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসার সামনে পৌঁছলাম, তখন অনেক রাত। একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। আমাদের গাইডের হ্যান্ড মাইকের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। সব হাজি গাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালাম। সিদ্ধান্ত হল - সকালের নাস্তার পর আমরা একসাথে কাবায় যাব। ওখানে তওয়াফ, সায়ি ও নামাজ শেষ করে বাইরে আসব। এরপর চুল ছেঁটে এহরাম ভাঙ্গার মাধ্যমে প্রথম ওমরা পালন শেষ হবে। গাইড সবার রুমের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে ফজরের নামাজ নিজের ঘরে পড়ে নিতে পরামর্শ দিল।

আমি কাবা দেখার জন্য চরম উত্তেজিত ছিলাম। তখনই একবার ঘুরে আসতে চাই বলে গাইডকে জানালাম। সে হেসে বলল – জীবনের প্রথমবার যখন দেখবেন, তখন দিনের আলোতে দেখেন।

নতুন বিছানায় ঘুম তেমন একটা হল না। শেষ রাতে চোখ বুজতেই ফজরের নামাজের জন্য মা ডেকে দিলেন। গরম পানি দিয়ে একটা ভাল গোসল দিয়ে ক্লান্তি কিছুটা কমলো।

নামাজ শেষ করে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অন করতেই তাজ্জব। একটা ওপেন ওয়াইফাই সিগনাল পাওয়া যায়। সিগনাল স্ট্রেংথ ভালো। কানেক্ট করা চেষ্টা করতেই কানেক্ট হয়ে গেল, এন্টি ভাইরাসটাও মোড়া দিয়ে আপডেট হয়ে গেল। তার মানে ইন্টারনেট কাজ করছে !!! খবরে অবশ্য দেখেছিলাম হাজিদের ওয়াইফাই সুবিধা দেয় হবে। তবে কাবা থেকে একমাইল দুরে সেটা আশা করি নাই। মনটা দ্বিগুণ ভাল হয়ে গেল। মোবাইলে রোমিং পার্টনার মবিলি সিলেক্ট করলাম। ওয়েলকাম, বিভিন্ন অফার সহ ৭/৮ টা এস এম এস পেলাম। আরবিতেই বেশিরভাগ। কিছুক্ষণ পরে ইনবক্সে পলা আর ভাইয়ার মেসেজ পেলাম।

সকালে বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকতে পারি না। ভাবলাম - হাজিদের জন্য নির্ধারিত নাস্তা হয়ত ৮ টার আগে পৌঁছাবে না। নাস্তা সহ টুকিটাকি কেনার উদ্দেশ্যে নিচে নামলাম। আমাদের দেশের মতই রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংগুলোর নিচে সারি সারি দোকান। সম্ভবত হাজিদের জন্যই ফজরের আজানের আগে থেকেই খুলে আছে।

প্রথম দোকানের সামনে দাড়াতেই দোকানদার লম্বা সালাম দিয়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় টোনে জানতে চাইলো কি চাই। দোকানে ঢেকার পর থেকেই – কখন এসেছি, কি করি, সাথে কে, কদিন মক্কায় আছি, ইত্যাদি প্রশ্নের সাথে আন্তরিকতা মেশানো উপদেশ – বেশি করে তরল খাবেন, রোদে কম যাবেন, ইত্যাদি। সওদা দেখার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম বাড়ি চিটাগাং কোথায়। বলল কক্সবাজার। আমি বললাম কক্সবাজার কোথায়? এবার বিব্রত হয়ে মিনমিনে গলায় উত্তর - বর্মা। একটু অবাক ও বিরক্ত হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। তারও দন্ত-পাটি প্রস্ফুটিত হলো।

লাবান, দুধ, চায়ের পাতা, কলা, জ্যাম আর গরম রুটি নিলাম। একাটা ওয়াটার হিটার নিলাম। দাম মোটামুটি সস্তাই বলা যায়। মিডিলইস্ট দেশগুলোর ব্রেড কালচারটা আমার খুব পছন্দ। ফজরের পরেই বেকারির গাড়িগুলো দোকানে এসে যায়। হরেক রকম সুস্বাদু রুটি। দোকানে রুটিগুলো এমন ভাবে রাখে যেন কিছু সময় গরম থাকে। বাইরে থেকে আসা হাজিদের বেশি করে তরল খাবার খাওয়া উচিৎ। লাবান আর দুধই সবচেয়ে ভাল অপশন। যতদিন ছিলাম লাবান আর দুধ নিত্যসঙ্গী ছিল।

৮ টার পরে নাশতা এলো। রুটি, সবজি, মিষ্টি দিয়ে বেশ ভালো প্যাকেজ। তবে তার যা পরিমাণ, তাতে আমি আর মা খাবার পরেও ৪ জনার খাবার থাকে। ফেরত দিতে চেয়ে জানলাম ব্যবস্থা নেই। আমরা একজনের নির্ধারিত খাবার খেলাম। বাকিটা নষ্ট হলো। এই ব্যাপারটা আমার একদম সহ্য হয়না। অথচ আরবে খাবার নষ্ট করাটাই সংস্কৃতি। একজনের জন্য ন্যূনতম দুজন খাবার উপযুক্ত খাবার রাখবে। এবং একজনের জন্য নির্ধারিত খাবার অন্য কেউ খাবে না। পরবর্তীতে আমাদের গাইডকে একটু শক্ত কথায় জানিয়েছিলাম। তার পক্ষে যতখানি সম্ভব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই বিল্ডিং এর তলাই একত্রিত হলাম। আমাদের গাইড ওমরার নিয়ম কানুন নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিলেন। বক্তৃতা শেষে এক সাথে হারামের দিকে যাত্রা। উদ্দেশ্য প্রথম ওমরাহ পালন। এরপর যে কদিন থাকা হবে তার মধ্যে যে কেউ চাইলে আরও ওমরাহ পালন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মিকাতের বাইরে গিয়ে এহরাম বেঁধে আসতে হবে।

রাস্তা খুব বেশি না হলেও যাত্রাটা খুব উপভোগ করলাম। এহরাম পরা একদল মানুষ প্রায় নি:শব্দে এগিয়ে চলেছে। রাস্তায় আরও কয়েক দলের সাথে দেখা হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক বিরাট স্রোতের সাথে মিশে গেলাম।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা শুরু করলাম। স্থানীয়দের হজিদের বিষয়ে আন্তরিকতা এবং সাবধানতা। রাস্তা দিয়ে একজন হাজিকে পার হতে দেখলেও গাড়িগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে। হাজি রাস্তার ওপাশে না পৌঁছানো পর্যন্ত কোন গাড়ি আগাচ্ছে না।

আমাদের গাইড জানালো - সামনের রাস্তাটার বাঁক ঘুরতেই মসজিদুল হারাম দেখা যাবে। আমার প্রায় নি:স্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।

১ম পর্বের লিঙ্ক : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×