somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনতি লতা (র্পব - ১০)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব
----------------------------------------------------------
একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এলাম রুনা দিদির অফিসে। সাড়া শব্দ না দিয়েই রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা খোলার শব্দে তিনি কম্পিউটারের স্কিনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরালেন। হাসি মুখ করে হাত নেড়ে কাছে ডাকতেই আমি টেবিলের সামনে এগিয়ে গেলাম। তিনি বললেন ওখানে না বোকা, আমার এপাশে এসো।
রুনা দি’র টেবিলটা বেশ বড়। আমি ঘুরে তাঁর চেয়ারের পেছনে দাড়াতেই কম্পিউটারের স্কিনের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, এবার দেখো, নিজের বউকে চিনতে পারো কিনা!

আমি ছবির দিকে তাকালাম। ঠিকই আছে। লতাই তো। বেশ অসুস্থ দেখা যাচ্ছে। কাহিল একটা ভাব ফুটে আছে তার চাহনীতে। জানিনা কতক্ষণ চেয়ে ছিলাম। গায়ে খোচা মেরে তিনি যখন টিস্যুর বক্স এগিয়ে দিলেন, টের পেলাম ভিজে গেছে দু’চোঁখ। রুনা’দি বললেন, নাও চোঁখ মুছে ফেলো। পুরুষ মানুষদের কাঁদতে হয়না। আমি নির্বাক হয়ে আছি। এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। তিনি মাউস ঘুরিয়ে লতার ছবি উপরে তুলে দিলেন। বললেন, নাও এবার নিউজ পড়। অনেক কিছু লিখেছে। এ সময় এক তরুনি রুমে ঢুকলো। একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো, আপু, এই যে নিউজের প্রিন্ট কপি। রুনা’দি সেটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, মনিটরে যে নিউজটা তুমি পড়ছিলে, সেটির প্রিন্ট কপি এটা। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় সংবাদটি বেরিয়েছে। ভাল করে পড়ে দেখো।
আমি পড়তে শুরু করলাম,
কেনো ঘর ছেড়ে ছিলেন, কেনোই বা দিলেন সিমান্ত পাড়ি, কিছুই মনে করতে পারেন না গৃহবধূ মিনতি লতা। কেবলই জানা আছে তাঁর, স্বামীর বাড়ি ওপার বাংলায় নীলফামারির ডিমলায়। নাম তার দু:খবন্ধু। পেশায় কলেজ শিক্ষক।
টানা চার’মাস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা বাংলাদেশী নাগরিক মিনতি লতা এখন স্বামীর কাছে ফিরে যেতে ব্যাকুল। হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই যেন ঘুরে ফিরে আর্তনাদ করে উঠছে তার মুক্তির আকাঙ্খা। কখনও শব্দ করে, কখনও বা ডুকড়ে কেঁদে উঠছেন। এতে করে তার মনের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার মানসিক সুরক্ষার স্বার্থে এখন প্রয়োজন পারিবারিক সান্নিধ্যে নিবিড় পরিচর্যা। কিন্তু সেটিতো হচ্ছেই না, বরং আবারও তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নির্মল বেরা। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী সুস্থ হয়ে যাওয়ায় মিনতিকে এখন জেলখানায় ফেরত পাঠাতে হবে। কেননা তিনি অবৈধ পথে ভারতে ঢুকেছেন। যদিও মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে হিসাবে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। সাধারণত এধরণের রোগীকে “নন ক্রিমিনাল লুনেটিক” নামের একটি বিশেষ ইউনিটে রাখা হয়। চিকিৎসার পর ভাল হয়ে যাওয়া রোগীদের পরিবার বা আত্নীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় খবর দেয়ার পরও পরিবারের লোকজন রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেননা। তখন কোন সেল্টার হোমে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশী নাগরিক মিনতি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় তাকে কারা হেফাজতে প্রেরণ করতে হচ্ছে।


আমি চোঁখের পানি ঠেকাতে পারছিনা কোন ভাবেই। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে আমি খুব আবেগ প্রবণ। যেকোন কষ্টের কাহিনী দেখলে, শুনলে বা জানলে আমার চোঁখে জল চলে আসে। এখনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চোঁখের জল চোঁখেই ধরে রেখে রুনা’দি কে বললাম, এখন কী করতে হবে?
তাকে জেলে পাঠিয়ে দেবে কেনো?

তিনি বললেন, পুরো নিউজটা আগে পড়ো। সবকিছু পরিস্কার লেখা আছে।

আমি আবার পড়তে শুরু করলাম, হাসপাতালের রেজির্স্ট্রারের তথ্য মতে ১১ মে সন্ধ্যায় মিনতিকে ভর্তি করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এর আগে সলসলাবাড়ি পরিত্যক্ত রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন শিলিগুড়ি থানার আই সি অলোক গুপ্ত। তিনি বলেন, সলসলাবাড়ি রেল স্টেশনটি অনেক বছর ধরেই ভুতুরে বাড়ি। এটি পরিত্যক্ত হয়ে থাকায় সেখানে মাদক গ্রহন, অসামাজিক কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সেখানে আকস্মিক অভিযান চালানো হলে পরিত্যক্ত একটি কক্ষে ওই গৃহবধূকে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে মিনতির স্বামীর কাছে খবর পৌছে দিতে কলকাতাস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসে লিখিত ভাবে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদেশমন্ত্রক। গত সপ্তায় রাজ্য পুলিশের দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিদেশমন্ত্রকে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে মিনতিকে আইনি সহায়তা দিতে রাজ্য মহিলা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতালে মিনতির সাথে দেখা করেছেন।


রুনা’দি হঠাৎ বললেন, লতাতো মানসিক রোগী ছিল, নয় কি?

আমি নিউজ পড়া থামিয়ে বললাম, হ্যা দিদি, ছিল।

মানসিক রোগীদের ভেতরে হঠাৎ করেই ঘর ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা যে থাকে, তা তুমিই একদিন বলছিলে। তোমর এক ডাক্তার বন্ধু না তোমাকে বলেছিল।
হ্যা, বলেছিল।
রুনা’দি বললেন, লতার অন্তর্ধান রহস্য আমার কাছে পরিস্কার। তোমার বাড়ির পশ্চিমে ত্রিশ-চল্লিশ কিলোমিটার গেলেই তো সিমান্ত।
হ্যা।
নিউজটা পড়ার পর আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে তা হলো কোন না কোন ভাবে সে সিমান্ত পার হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে তার মানসিক রোগটি আরও বৃদ্ধি পায় এবং একেবারেই অচেনা, অজানা এলাকায় চলে গিয়ে সে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
কিন্তু দিদি, কাগজে লিখেছে ১১ মে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। লতা হারিয়ে যায় ২৮ এপ্রিল। তাহলে মধ্যে বারো-তেরো দিন সে কোথায় ছিল?
হতে পারে ওই সময়টুকু বিক্ষিপ্ত ভাবে সে পথ চলেছে।পথে-ঘাটে ঘুমিয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ভবঘুরে জীবন যেমন হয়। তোমার এখন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি না। সবার আগে জরুরি হচ্ছে শিলিগুড়ি যেতে হবে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার পাসপোর্ট আছে তো?
আছে।
তাহলে আজই ভিসা করতে দাও। আর এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে ফেলতে হবে। বিশেষ করে লতার ভোটার আইডি কার্ড, তার সাথে তোলা তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর যুগল ছবি, লতা হারিয়ে যাওয়ার পর তোমার থানায় করা জিডির কপি, পত্রিকায় দেয়া হারানো বিজ্ঞাপন, পত্রিকার নিউজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ যা যা ডকুমেন্ট আছে, তা গুছিয়ে নিও।
আমিও তোমার সাথে যাবো শিলিগুড়ি।
আপনি যাবেন?
হু, তুমি একা একা সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ভারতে যাওয়ার আগে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একবার যেতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরণাপন্ন হওয়া লাগতে পারে। এসব কাজ আমি গুছিয়ে নিচ্ছি। তুমি কেবল নিজের ভিসা নেয়ার কাজটা কর। আমার ছ'মাসের মাল্টি ভিসা নেয়া আছে।

----------------------------------------------------------------
(কথা ছিল ১০ পর্বেই টেনে দেবো মিনতি লতার ইতি। না পারার দোষটা আমারই। আর একটি পর্ব টেনে নিতে হচ্ছে গল্পের প্রয়োজনে। সেই পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে নিলাম।)


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×