somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনতি লতা (পর্ব - ০৯)

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব - ০৮, আপলোড ০২/১০/২০১৩
-------------------------------------------------------------------
পর্ব-০৯
- মানুষ যখন বিপদগ্রস্থ হয়, চিন্তিত থাকে, তখন স্বাভাবিক বোধ শক্তি কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। চেতনার জায়গাটি দখল করে নেয় এক ধরণের অসহায়ত্ব। মানুষ তখন সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং সহজে যাকে তাকে বিশ্বাস করার প্রবণতা জাগ্রত হয়।

রুনা দি, আমি দু:খিত যে আপনার এই কথার সাথে ঠিক পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। আমি বিপদগ্রস্থ নই, তবে চিন্তাগ্রস্থ । ঘটনার আকস্মিকতায় হয়তো স্বাভাবিক বোধ শক্তি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু যাকে তাকে বিশ্বাস করার মত কোন প্রবণতা জাগ্রত হয়েছে বলে মনে করি না।

এবার রুনা দি বললেন, তা না হলে কেনো তুমি ওদেরকে শুধু শুধু বিশ্বাস করতে গেলে?

বিশ্বাস করেছি, কারণ এত দিনেও লতার অন্তর্ধান নিয়ে আমি কারোর কোন রেসপন্স পাইনি।পুলিশের কাছ থেকে কেবল আশ্বাসের বাণী শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। কখনও আবার তাদের টিটকেরি সহ্য করতে হয়েছে নিরবে।

-বুঝলাম, কিন্তু তোমার উচিৎ ছিল আরও দু'পাঁচ জনের সাথে আলাপ করে নেয়া।

কোনটা উচিৎ, কোনটা অনুচিৎ, তা নিয়ে ভাবনার সময় ছিল না। ওদের কথা বলার ধরণ শুনে আমার মনে হয়েছিল, হাসপাতাল থেকেই ফোন এসেছে।

-কিন্তু প্রথম থেকেই তুমি আমার সাথে সবকিছু নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করে আসছো, তাই না?

হু, করছি।

-এটা কেনো বললেনা?

আমি চুপ করে থাকি। দোষটা তো আমার। বোকার মত কাজ করেছি। রুনা দিদির সাথে আলোচনা করলে হয়তো তিনি ধরতে পারতেন।

তিনি বলতে লাগলেন, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে কোন প্রতারক চক্র তোমাকে ফোন করেছে। তারাতো বিজ্ঞাপন থেকেই তোমার মোবাইল নম্বর ও লতার নাম জেনেছে। না কি?

আমি আবারও কোন উত্তর দেইনা।

রুনা দি বলেন, বলছোনা কেনো, ভুল করেছো।

রুনা দিদি নীলফামারিরই মেয়ে। তার কথার ভেতরে ঠাকুরগাঁর টান আছে। শুনতে খুব ভাল লাগে। আমি বললাম, হ্যা, ভুল হয়েছে।

- তুমি তো বিজ্ঞাপনে বলে দিয়েছো, কবে সে নিখোঁজ হয়েছে।

তা বলা ছিল।

- শোন, জীবনে অনেক রকমের সমস্যা আসবে। কিন্তু সব পরিস্তিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। বুদ্ধি করে চলতে হবে। তো এখন রাখি রে দু:খু। পরে কথা হবে।

বললাম, ঠিক আছে। পরে কথা হবে দিদি।

রুনা দি ফোন রেখে দিলেন। তিনি আমার স্ত্রী মিনতি লতার সন্ধানে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন । তার নেটওয়ার্ক বেশ বড়। নিজে একটি এনজিও চালান। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কিছু সামাজিক ও নারী সংগঠনের সাথে যুক্ত।
এই একজন মহিলা, সারা জীবন সিঙ্গেল থেকে গেলেন। বয়স পঞ্চাশের কাছে পৌছালেও দেখলে তাকে মনে হবে না এখনও চল্লিশ পেরিয়েছে। দারুণ স্মার্ট।

এস আই সোনিয়া কে এখনও প্রতারিত হওয়ার খবরটা জানানো হয়নি। সেও নিশ্চয় রাগারাগি করবে। আমায় বলবে, "বোকা মানুষ।" সেই সাথে আরও দু লাইন বাড়িয়ে বলবে, "বোকা মানুষদের বউ সুন্দর হয়! কিন্তু রাখতে পারেনা।"

অনেকবার তার মুখে শুনেছি একথা। কিন্তু উনিও কোন কাজের না। খালি খালি বক বক করে।

একটু পরে ক্লাস আছে আমার। ছেলেরা সবাই এই ক্লাসের জন্য যে অপক্ষায় থাকে তা কলেজের অধ্যক্ষও সেদিন কথায় কথায় বলছিলেন। আমি নিজেও তা বুঝতে পারি। এমনিতেই মফস্বল এলাকায় ইংরেজি শিক্ষকের দাম সবার চেয়ে বেশি। তাছাড়া আমার ক্লাস নেয়ার ধরণটা ওরা পছন্দও করে। আসলে কাউকে কোন কিছু বুঝাতে পারা এক ধরণের দক্ষতা। শিক্ষক সবাই হতে পারে, কিন্তু সবাই শিক্ষকতা পেশার প্রকৃত উদাহরণ হতে পারে না। ঘড়িতে এখন তিনটা বাজে। ঘন্টা বাজালো দপ্তরি। অলস কিছুটা সময় কাটলো শিক্ষক মিলনায়তনে চুপচাপ পেপার পড়ে।

আবার রুনা দি'র ফোন।
হ্যালো দিদি!
-দু:খু, এখনই আমার এখানে চলে আসো।
কেনো?
-দেরি করো না। যা বলছি, তাই করো।
কি হয়েছে বলবেন তো।
- অনেক কিছু্।
কি সেটা?
-এবার সত্যি সত্যি লতার খবর পাচ্ছো তুমি। কোন ভুল নেই।
কোথায় পেলেন খবর।
- ইন্ডিয়ার একটি দৈনিক পত্রিকায় দিয়েছে " স্বামীর কাছে ফিরতে চায় লতা" সেখানে ছবিও দেয়া আছে।
কি বলছেন? ইন্ডিয়ান কাগজ কোথায় পেলেন?
- অন লাইন ভার্সন দেখলাম। তাড়াতাড়ি আসো।


(আগামী শুক্রবার শেষ পর্ব)
----------------------------------------
পূর্ববর্তী পর্ব গুলোর লিঙ্ক :

০২
০৩
০৪
০৫
০৬
০৭




সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৭
১০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×