
চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural Heritage of Humanity হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতি শুধু ঐতিহ্যের মর্যাদা বাড়িয়ে দিচ্ছে না, বরং টাঙ্গাইলের তাঁতি সম্প্রদায়ের শতাব্দীর পুরোনো শিল্পকুশলকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরছে।
টাঙ্গাইল শাড়িঃ
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম শাড়ি, যা তুলো থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে হাতে বোনা হয়। এটি সূক্ষ্ম বুনন, প্রাকৃতিক নকশা ও নান্দনিক ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। শতাব্দীর পুরোনো এই শিল্পে পুরুষরা তাঁত চালানো, সুতা রঙ করা ও নকশা বানায়, আর নারীরা সুতা ঘুরানো, ধানাকৃতার আঠা লাগানো ও শেষ পর্যায়ের কাজ গুলোতে সহায়তা করে।
ইউনেস্কো স্বীকৃতি কী তা এবং কেন গুরুত্বপূর্ণঃ
অতি সম্প্রতি, ইউনেস্কোর ২০০৩ সালের কনভেনশনের ২০তম আঞ্চলিক কমিটিতে একমতবদ্ধভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির বুনন শিল্পকে Intangible Cultural Heritage of Humanity হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য ইউনেস্কোর ঐতিহ্য তালিকায় ষষ্ঠ নিজেস্ব বাংলাদেশী পণ্য।
এই স্বীকৃতির অর্থ, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতিঃ টাঙ্গাইল শাড়ির অতি প্রাচীন শিল্পকুশল ও ঐতিহ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলো। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মর্যাদা বৃদ্ধিঃ দেশের লোকশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শনকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দেওয়া হলো। জীবিকায় সহায়তাঃ অনেক তাঁতি সম্প্রদায়ের পেশা ও জীবিকা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে এই স্বীকৃতির ফলে। পুনরুজ্জীবন ও প্রজন্মের আগ্রহঃ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ঐতিহ্য রক্ষার আগ্রহ বাড়বে এবং শিল্পের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। সর্বপরি এই স্বিকৃতি ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দেবে ।
টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোষাক নয় এটি বাংলাদেশের নারীর দৈনন্দিন জীবনে ও বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর সংস্কৃতিতে একটি আবেগ ও পরিচয়ের প্রতীক। বিয়েবাড়ি, উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিটি জায়গায় এই শাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম।
ইউনেস্কো স্বীকৃতি পেয়ে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা আরও বাড়তে পারে। যেমনটি অন্যান্য দেশ ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যবান হস্তশিল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশও এর মাধ্যমে ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিশ্ববাজারে স্থান তৈরি করতে পারবে।
টাঙ্গাইল শাড়ি-এর এই অর্জন শুধু প্রযুক্তিগত বা শিল্পগত মানদণ্ডের প্রমাণ নয়; এটি বাংলাদেশের প্রতিটি লোককলার প্রতি গভীর সম্মান ও এক বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই পথে বাংলাদেশ আরও অনেক ঐতিহ্যকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরতে পারবে, যদি আমরা ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বকে নিজের মনে গভীরভাবে ধারণ করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




