২০১০ সালে আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে যাই।
সাথে দু’খানা ক্যামেরা। দুই ক্যামেরাতেই প্রচুর ছবি তোলা হয়েছিল।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন শেষে তাওহীদ ইতুল-এর ক্যামেরার সব ছবি
নিখোঁজ হয়ে গেল। উপায়ান্তর না দেখে
সাথে সাথে আমরা রিজওয়ান জামিল-এর
দ্বিতীয় ক্যামেরার সন্ধান করি। কিন্তু
হায়! বন্ধু জামিল এতই প্রকৃতিপ্রেমে
মজেছিল যে, ওর ক্যামেরায় গাছের গুঁড়ি, সৈকতের পাথর,
আকাশ, বাতাস ছাড়া কিছুই ধরা পড়েনি।
দুলাহাজরা সাফারি পার্ক-এর গন্ডার,
শিম্পাঞ্জি, হাতি আর উটপাখি বাদ দিলে ওর কোন ছবিতে প্রাণের চিহ্নও খুঁজে
পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে! অনেক খোঁজাখুঁজির পর
উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে এতটুকু শীতলতার মত দুই– একটি ছবিতে আমাদের কাটা মাথা কিংবা হাত-পায়ের সন্ধান পাওয়া গেল।
জামিল জীনগতভাবেই অকপটতার জন্য
জনপ্রিয়(!), সুতরাং এই ব্যপারে ওর ভাষ্য হলঃ
“তোদেরকে তো সাথে নিয়েই ফরিদপুর
ফিরবো, কিন্ত এই গাছের গুঁড়ি এই নির্জনতায় অনাদরে অবহেলায় একলা পড়ে
থাকবে। সুতরাং আমার ফটোগ্রাফিতে
তোরা বাহুল্যমাত্র”।
একে তো ছবিহারা তার উপর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর
এহেন নিষ্ঠুরতায় প্রচন্ড শোকে মূহ্যমান
হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ভ্রমণশেষে
এই দুরূহ রহস্যভেদের দায়িত্ব প্রখ্যাত
ব্রিটিশ গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে হোস্টেলে ফিরে আমরা নিজেরাই তদন্ত করে বের করি যে, ভ্রমণের
দ্বিতীয় দিন আমাদের সাথে ষষ্ঠ
একজন যোগদান করেছিল এবং এর ঘণ্টা
তিনেকের মাঝেই আমরা ছবিগুলো
হারিয়েছিলাম। রহস্যভেদের জন্য
শার্লক হোমসের আর দরকার পড়েনি !