প্রায় পনেরো বছর আগে কোন এক দুপুরে কলেজের ক্লাস ফাকিঁ দিয়ে আমি আর রাজীব বাংলা সিনেমা দেখতে কুষ্টিয়ার বনানী হলে ঢুকেছিলাম। মফস্বলের সিনেমা হলের চেহারা যা হয়- ভাঙ্গা চেয়ার, ছারপোকা সীট, গুমোট পরিবেশ, বিড়ির
ধোঁয়া, লুঙ্গি পরা রিক্সাওলা,খেটে খাওয়া
মানুষ আর আমাদের মত স্কুল- কলেজ পালানো কয়েকজন।
ভি.সি.পি-তে সিনেমা দেখে অভ্যস্ত আমাদের দুই বন্ধুর জন্য সেই পরিবেশটা একটু অন্যরকম। কিন্তু সিনেমা শুরুর ঠিক আগে আমাদের অবাক করে দিয়ে হল ভর্তি মানুষ গুলো সবাই দাঁড়িয়ে গেল!
না, সেদিন নিছক বিনোদনের জন্য রিক্সা
গ্যারেজ করে সিনেমা দেখতে আসা মানুষ গুলো কোন অনুদান না নিয়েই জাতীয় সংগীতের সময় উঠে দাড়িয়েঁছিলো।
ছোট্ট ডিটেইলিং, কিন্তু আমার আর কখনও ভুল হয়নি।
কেন যেন বুকে হাত দিয়ে আমার সোনার বাংলা….’
শুনলেই আমার কান্না পায়, আমি কেঁদে ফেলি। বেশীরভাগ মানুষেরই নাকি এমনটা হয়, জেনেছি, ফুপিয়েঁ ফুপিয়েঁ কাঁদতে দেখেছিও অনেককে। আমার জানামতে এই
কান্নার পেছনে কোন অনুদান থাকেনা।
মজার ব্যাপার হলো, এই দেশে প্রাথমিক ও
মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা
প্রায় আড়াই কোটির কাছাকাছি যারা
প্রতিদিন সকালে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত
গেয়ে লাল-সবুজ পতাকাকে একটা স্যালুট দিয়ে ক্লাশ শুরু করে। আমার জানামতে এই আড়াই কোটি বাচ্চারাও কোন
অনুদান না নিয়েই প্রতিদিন জাতীয় সংগীতটা দরদ দিয়ে গেয়ে যাচ্ছে।
এইবার আমাকে কেউ একজন বোঝান মাত্র লাখ খানেক লোককে দিয়ে জাতীয়
সংগীত গাওয়ানোর জন্য অনুদানের কেন প্রয়োজন হয়? দেশের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধের প্রশ্নে কি পরিমান দেউলিয়া হলে আমরা পয়সার বিনিময়ে জাতীয়
সংগীত গেয়ে বিশ্বরেকর্ড করার চিন্তা
করতে পারি!! কারোর মাথায় না ঢুকলে
আরো সহজ করে বলি,আমি আমার মা কে
ভালোবাসি, এই কথাটা আমার মুখ থেকে প্রকাশ করানোর জন্য কেউ যদি আমাকে অনুদান সাধে তাহলে থাপড়ায়ে আগে
আমি তার দাঁত ভেঙ্গে ফেলবো তারপর অন্য লজিক, সে ইসলামি ব্যাংক হোক
বা বিশ্ব ব্যাংক হোক বা ফোন কোম্পানী হোক। আফসোস, আমাকে কেউ টাকা সাধে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:২০