প্রযুক্তির আধুনিকতায় আমরা এখন এমনই এক সময়ে এসে পৌঁছেছি, যখন মোবাইল ফোন এবং এর সাথে ইন্টারনেট প্রায় সবসময় আমাদের নিত্যসঙ্গি হয়ে উঠেছে। আমরা চাইলেই যখন যা খুশি তা এক মুহূর্তেই জেনে নিতে পারছি। গুগলে সার্চ করেল আমরা সাথে সাথেই পেয়ে যাচ্ছি আমাদের কাঙ্কিত বিষয়বস্তু, কিন্তু ইন্টারেন্ট তথা গুগল সার্চ ইঞ্জিন এর অপব্যবহারও কিন্তু কম নয়। গুগলে সার্চ করেল আমাদের কাঙ্কিত বিষয়বস্তু ছাড়াও চলে আসে আনুসাঙ্গিক অনেক বিষয় যা অনেক সময় আমাদের মনকে প্রলুব্ধ করে, বিপথে চালিত করতে উৎসাহিত করে। লুকুয়ে পড়ার দুঃপ্রাপ্য জুতা টাইপের বই গুলো এখন আমাদের হাতের নাগালেই চলে এসেছে। অনলাইন নিউজগুলো এখন নিয়মিত পরিবেশন করেছে “হাও টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন” টাইপের নিউজ গুলো, যা আমরা নিয়মিত পড়ে যাচ্ছি একান্ত গোপনে। ফেসবুকের হোমপেজে নিয়মিত এসে হাজির হচ্ছে আবেগাপ্লুত সব লেখা ও ছবি যা হয়তো আমাদেরই একান্ত গোপনে দেওয়া কোন লাইকপেজ থেকে আসা।
জ্ঞানের সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য হাজারও উপকরণ আমাদের সামনে কিন্তু কোনটা সঠিক তা আমরা কিভাবে বেছে নিব সে দায়িত্ব কিন্তু একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত। অনেক বছর আগেই “বই” নামক একটি কবিতায় “হুমায়ুন আজাদ” লিখে গিয়েছিলেন সেই নির্দেশিকাবলী।
বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে, বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে
যে-বই জুড়ে সূর্য ওঠে, পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে, সে-বই তুমি পড়বে |
যে-বই জ্বালে ভিন্ন আলো, তোমাকে শেখায় বাসতে ভালো, সে-বই তুমি পাড়বে |
যে-বই তোমায় দেখায় ভয়, সেগুলো কোনো বই-ই নয়, সে-বই তুমি পড়বে না |
যে-বই তোমায় অন্ধ করে, যে-বই তোমায় বন্ধ করে সে বই তুমি ধরবে না |
বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে, বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে |
আমরা সবাই জানি যে, যেসব বই আমাদের মনে আশা জাগায় না, স্বপ্ন দেখায় না, আমাদেরকে হতাশ করে দেয়, মনে ভয়ভীতি ও জড়তা সৃষ্টি করে সেসব বই আমাদের পড়া উচিত নয়।
আমরা আমাদের হাতের কাছে যা পাচ্ছি তাই পড়ে ফেলছি একনিমিষে। তবে হাতে নিয়ে বই পড়ার অভ্যাস না থাকলেও এখন আর খুব বেশি ভয় লাগে না, আমাদের কাছে তো ইন্টারনেট আছে! এক্ষেত্রে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আমাদেরকে আলোর ইস্কুলে নিয়ে এসেছে, আমরা চাইলেই এখন এই ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই পাঠ করতে পারি বিশ্বের সব বাঘা-বাঘা সাহিত্যগুলো।
আমাদের এই পাঠ অভ্যাস যেন থেমে না যায় কোন অশুভ চিন্তা চেতনায়। অন্ধকারের বিপরীত পার্শ্বে অবশ্যই আমরা আলোকে খুজে নিতে পারব এই প্রত্যাশা সবার কাছে।
যে বই প্রদীপ জ্বালে সে বই আমাদের অবশ্যই পড়তে হবে।