ওর মা যখন ডিমে তা দিতো,আমরা কাছে গেলেও নড়তোনা।আমাদের ছোটছেলে রাইয়ান যেয়ে কত খোঁচাখুঁচি করতো,গ্লাসে পানি নিয়ে গায়ে ঢেলে দিতো তবুও নড়তোনা।আমি বলতাম একেই বলে মা।কোন ভাবেই ডিমের কাছ থেকে নড়তোনা মা কবুতরটা।
ডিম ফুঁটে যেদিন বের হলো কবুতরের ছানাটা,রাইয়ানের সেকি উৎসাহ......সারাদিন শুধু বেলকনিতে যাওয়া আসা।বাসায় কেউ এলেই তাকে নিয়ে কবুতর এর বাচ্চা দেখানো।দেখতে দেখতে ২/৩ সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।কবুতর টা চোখের সামনে উড়তে শিখলো।
গত সপ্তাহে একদিন ওকে ঘরে নিয়ে আসলাম।ও লিভিং রুমে ঘুরলো।রাইয়ান গ্লাসে করে পানি এনে স্ট্র দিয়ে ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলো।আপ্যায়ন আর কি!
আমার হাতের মুঠায় পাখিটা কাঁপছিলো।বিশ্বাসহীনতায় ভুগছিলো।ওর দেখা প্রতিদিনকার চার জন মানুষের একজন আমি।ওকে আবার ওর জায়গায় রেখে আসলাম।
বুঝতে পারছিলাম খুব সহসাই ও উড়ে চলে যাবে।ওর মা টাও আর ওকে খাওয়াতে আসেনা ক'দিন।
গতকাল স্কুল থেকে ফিরেই রাইয়ান বেলকনিতে.........।এসে জানাল পাখিটা নেই।ভাবলাম আছে হয়তো কোথাও লুকিয়ে।হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।নাঃ কোথাও নেই।রাইয়ানের একই কথা পাখিটা হারিয়ে গেছে।ছলছল চোখে তাকাচ্ছিলো শুধু।ওকে বললাম ও মার সাথে কোথাও বেড়াতে গেছে।এই কথাতে ও একটু নিশ্চিন্ত।
সারা বিকাল পাখিটা আর আসেনি।রাতে অনেক বৃষ্টি পড়লো কাল।
বারবার পাখীটার কথা মনে হলো।ভাবলাম অন্য কোন বেলকনিতে বসে আছে নিশ্চয়ই।
আজ সকালে উঠে আমার মনটাও ভীষণ খারাপ লাগতে লাগলো।
আজকের পর পাখিটাকে দেখলে আর চিনবোনা।চোখের সামনে মাঝে মাঝে চেনা মানুষ যেমন করে অচেনা হয়ে যায়......ঠিক তেমন করেই পাখিটা হয়তোবা চোখের সামনে উড়তে থাকবে,অথচ আমি জানবোনা এই সেই পাখি যে এক বিকেলে আমার বাসায় অতিথী হয়েছিলো।
এক মাসের ও বেশী সময় ও আমাদের বেলকনির এক কোনায় বাসা বেঁধেছিলো।
পাখিটা ওর সাথীদের নিয়ে উড়বে।আমাদের দেখলে হয়তো চিনবে,ওর বন্ধুদের বলবে এই সেই মানুষেরা যাদের বাড়ীর বেলকনিতে আমার জন্ম।আমাদের রাশীককে দেখিয়ে বলবে এই সেই চুপচাপ ছেলেটা, যে সুযোগ পেলেই মুঠো মুঠো চাল এনে দিতো।রাইয়ানকে দেখিয়ে বলবে ও প্রতিদিন পিছে পিছে দৌড়াত ।একদিন পানি ও খেতে দিয়েছিলো গ্লাসে করে।
পাখিটাও কি আমাদের কথা ভাবছে?
আজ মনে হচ্ছে পাখিদের নিয়ে কিছু পড়ালেখা করা উচিত।পৃথিবীতে কত কিছু আমাদের অজানা।একবার মনে হয়েছিলো পাখীটার পায়ে লাল সুতা বেঁধে দেই।পরে ভাবলাম যে যাবার সেতো যাবেই।এই সুতাটা বেঁধে লাভ কি।ছেলেদের সাথে সাথে আমরাও ক'দিন ছেলেমানুষের মত অস্হির থাকলাম।
পাখিটা আকাশে উড়ুক.......যার যেখানে আনন্দ।
আমার ছোট ছেলেটা বারবার মনে করিয়ে দেয় পাখিটার কথা........পাখিটা কে দেখবার পর থেকে ও প্রায়ই ও বলে ও আমার বেবী পাখী।ও ডিমের থেকে এসেছে।এই গল্পটা ও বারবার বলে।একটা জীবনের শুরু থেকে উড়া পর্যন্ত দেখলো আমার ছোট্ট ছেলেটা।ও বুঝলো একেই বলে মায়া।
আসলে আমরা জীবনে চলার পথে এভাবেই কত মায়ায় জড়িয়ে যাই,কত কিছুর কাছে ঋণী হয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



