somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম নায়েগ্রা জলপ্রপাত

১৯ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এবারের নায়েগ্রা যাওয়াটা অন্যরকম।আসলে প্রথমে টরন্টোর ওয়াটার লু তে বড় ভাইকে রাখতে গেলাম উর্মির কাছে। ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটির চারদিক ঘোরা হলো রাতের বেলা। বেশ সুন্দর ছিমছাম শহর।

পরদিন সারাদিন টরন্টো শহরের বেশ কয়েক জায়গা ঘোরা হলো। টরন্টো এত বড় শহর। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হিমশিম খেতে হয়। ডাউন টাউনটা খুব সুন্দর। ঘুরতে ঘুরতে ড্যানফোর্থ। বাংলাদেশী দোকানপাট গুলো অনেক এখানে।রাশীক কে নিয়ে সি ডি কিনবো বলে গাড়ি থেকে নামলাম।

একটা দোকানে কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এর সাথে দেখা। পেপারে উনার ছবি দেখেছিলাম আগে,তাই খুব চেনা লাগছিলো। কথা বলতে বলতে জানলাম উনি কিছুদিন অটোয়াতে ও ছিলেন। কথার মাঝে মিঠু এসে পড়লো। দুলাল ভাইকে বললাম দেশে থাকতে আপনার কবিতা পড়তাম ।উনি গত বইমেলায় দেশে ছিলেন জানালেন।অটোয়া থেকে লুৎফর রহমান রিটন ভাই ও গেছিলেন।

এ টি এন মিউজিক নামে একটা দোকান থেকে সি ডি আর বই কিনলাম।
অনেক বই ছিলো। দেখতে ভালোও লাগছিলো। বেশী সময় থাকলে অনেকক্ষন থাকা যেতো।

আমাদের এক বন্ধুর বাসায় যেতে হবে। তাই তাড়া তো ছিলোই।
ওয়াটার লু ফিরতে মাঝ রাত হয়ে গেলো।রাতের টরন্টো শহর সত্যি দেখবার মত।
রবিবার সকালে বের হলাম। মাঝে টরন্টো কিছুক্ষন থেকে অটোয়া ফিরে যাবো এই রকম ই ইচ্ছা। বড় ভাই এ যাত্রা আর যাচ্ছেন না। মেয়ের কাছে ক'দিন থাকবেন। রাশীক ,রাইয়ান মন খারাপ করলো। রাইয়ান তো সারাক্ষন বড় চাচাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললো।

গাড়ি হাইওয়েতে উঠবার একটু আগে ও বললো নায়েগ্রার এত কাছে এসে নায়েগ্রা যাবো না তা কি করে হয়। গাড়ী রাস্তার এক পাশে থামিয়ে টস্‌ করা হলো.......।
টস্‌ আর কি ! মনের টান বলে কথা।
জিপি এস এ নায়েগ্রা লিখে সার্চ দেয়া হলো।



শুরু হলো নায়েগ্রা যাত্রা। গ্রামের একটা পথ দিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি।কি যে এক উদাস সময়।এমন সব সময়ে দেশের কথা মনে পড়ে। আসলে যে কোন ভালো লাগা অনুভবের সাথে দেশ কেমন জড়িয়ে থাকে।দেশ ,দেশের মানুষ।
এক সময় আমরা দেখি হ্যামিলটনের ডানডাস শহরে। ওখানে ক্যাকটাস ফেস্টিভ্যাল চলছিলো। ইচ্ছা করছিলো যাই। কিন্তু নায়েগ্রা যেতে দেরী হয়ে যাবে তাই পথে আর থামা হলো না। এত সুন্দর পাহাড়ি পথ দিয়ে শহরটাতে ঢুকলাম। রাংগামাটির কথা মনে পড়ছিলো। খুবই ভালো লাগছিলো।


নতুন একটা শহর। নতুন মানুষ। কেমন যে ভালো লাগা.......চারিদিকে সুন্দর ছড়িয়ে আছে। অদ্ভুত লাগছিলো।কিছু সময় থাকে এমন।
বাতাসে কানে কানে আমার ভালো লাগার কথা জানিয়ে দিলাম।


মেইন ষ্ট্রীট দিয়ে অনেক অনেকক্ষন গাড়ী চালানোর পর আবার গ্রামের পথ শুরু হলো। আমরা ভাবছিলাম বাংলাদেশের মত দোকানের নামের নীচে শহর আর পাড়ার নাম থাকলে ভালো হতো।
শহর শেষ হতে না হতেই হাতের ডানে অনেকগুলো ফলের দোকান(অস্হায়ী)। গাড়ী থামিয়ে ওখান থেকে এক ঝুড়ি ফল কিনলাম।ফ্রেস সবজী,ফল সব। নানান বাহারী ফল । এক ঝুড়ি পাঁচ ডলার।


এরপর ফল খেতে খেতে ,গান গাইতে গাইতে পৌছে গেলাম নায়েগ্রা সিটি তে। একটা গান খুব মনে পড়ছিলো,"বেলা বয়ে যায় ,ছোট্ট মোদের পানসী তরী সংগে কে কে যাবি আয়।"


গত বছর যখন নায়েগ্রাতে এসেছিলাম ,ভাইজান দেশ থেকে আসছিলো। আরো অনেকেই সাথে ছিলো। এইবার আমরা ৪ জন শুধু।এবার কার বেড়ানো টা অন্যরকম আনন্দের। এই সব জায়গায় দলবল মিলে আসলে অবশ্য বেশী মজা হয়। ভাইজান এত আনন্দ পেয়েছিলো। হয়তোবা সেই ভ্রমন কাহিনী লিখে থাকবে লালমনিরহাট বার্তায়। ভাইজান যেখানেই যেতো সাথে একটা নোট বুক। আমিও নেই।এইবার আমি ব্যাগ গুছাই নি। টরন্টো পৌছে দেখি রাশীকের বাবা ঠিকই আমার সবুজ খাতাটা নিয়ে এসেছে। যদিও সময় করে আর তাৎক্ষনিক কিছু লেখা হলো না।



মঙ্গলবার ।কাজের দিন। অথচ নায়েগ্রার সামনে মানুষের ঢল।নায়েগ্রার পানির যেমন শেষ নাই। এখানে যতবার এলাম ...একই রকম।মানুষ আর মানুষ।কত বিচিত্র রকমের মানুষ যে। সবাই হাসছে,কথা বলছে।ছবি তুলছে। ছবি তোলার কোন শেষ নাই। আমি যেখানেই যাই , মানুষ দেখি।মানুষের আচরণ। কথাবলা।

নায়েগ্রার দারুণ এক আকর্ষণ মেরীন ল্যান্ড।ওখানে এবার যাচ্ছি না।
ওখানে যেতে হলে অনেক সকালে আসতে হবে।ডলফিনের নাচ হলো ওখানকার আকর্ষণ।এ ছাড়া অনেক অনেক রাইডস আছে। রাশীক কে নিয়ে এসেছিলাম কয়েক বছর আগে। রাইয়ান কে নিয়ে আসা হয়নি। আগামি বছর আসবো আশাকরি।



সত্যিই নায়েগ্রার একটা ভীষণ টান আছে। যে কোন সুন্দর মানুষকে টানে।আর পানির সৌন্দর্য্য বলে কথা! নায়েগ্রা আসলে প্রথমবার এখানে আসবার কথা মনে পড়ে। এত ভালো লেগেছিলো। আনন্দে কেঁদে দিয়েছিলাম।আসলেই যে কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কেমন বিবশ করে দেয়।


নদী,সমুদ্র,জলপ্রপাত.......সব কিছুই। এই সব সুন্দরের কাছে গেলে বুকের মধ্যে কেমন যেনো লাগে। এই সব বিশালতার কাছে আসলে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে বাতাস এ ভেসে আসা জলপ্রপাত এর পানিতে ভিজলাম.............রাইয়ান বলছিলো মাম্‌মা বৃষ্টি।
ও হা করে পানিগুলো খেতে চেষ্টা করছিলো।


জলপ্রপাতের উপরের রংধনুটা খুব সুন্দর লাগছিলো। আকাশের রংধনু আর এইটার অনেক পার্থক্য। ছবি তুললাম।


রাশীক,রাশীকের বাবা ২ জন ই যত ছবি তোলে আর বলে সাম হোয়ার ইন এ দিও। আমি হাসলাম ওদের কথা শুনে.......। আমার লেখালেখির জীবনেও এ ওরা এভাবে মিশে আছে।


গত বছর মেইড অব দ্য মিস্ট এ গেছিলাম তাই এবার আর গেলাম না। দুর থেকে জাহাজের মানুষ গুলোকে দেখলাম। আমি আগে থেকেই ভেবেছিলাম এবার বাটার ফ্লাই কনজাভেটরীতে যাবো। প্রজাপতি দেখতে।
প্রজাপতির মেলায় হারিয়ে গেছিলাম।এত অজস্র প্রজাপতি কখনো দেখি নাই একসাথে....।কি যে দারুণ যে লেগেছিলো দেখতে।



কিছুক্ষন ঘুরে ওখানে রওনা দিলাম। প্রজাপতির সেই গল্প আর একদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:০৩
৭২টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×