somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে বাবা হারানো এক মেয়ের কথা...................

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যার কথা লিখছি.....।
একসময় খুব কাছের বন্ধু ছিলেন উনি। এখনো মনের কাছেই থাকেন তবে যোগাযোগ হীনতায় সম্পর্কটা ঠিক বাড়ন্ত নয়। ঝিমিয়ে থাকা লতার মত। তবু বন্ধু তো বন্ধুই।
উনাকে খুব পছন্দ করি উনার স্বভাবের কিছু কারনে।
মানুষের স্বভাবের অদ্ভুত সব দিক থাকে ।ভালো এবং মন্দের।
উনার ভালোত্বের একটা দিক হলো উনি স্বল্পভাষী।
আমাদের প্রবল আড্ডার সময়ে আমরা যখন গল্প করতাম...কখনো বই,কখনো গান,কখনো মানুষ....।
আমাদের গল্প কথার বিষয়গুলো যখন এখান থেকে ওখানে দৌড়াতো।
ছেলেবেলা ঠেকে শুরু করে কৈশোর তারুণ্যের গল্প।
আমরা কথা বলছি।
আর উনি শুনছেন ।
উনি ও বলেছেন ।ঠেলে ঠুলে বলানো আর কি!
উনার ছেলেবেলা থেকে শুরু করে বিয়ের আগে পর্যন্ত নানীর কাছে ছিলেন।
কড়া শাসনে বড় হয়েছেন। উনার বন্ধুদের কারো কথাই তেমন শুনিনি কখনো। খুব অবাক লেগেছে।
কিন্তু খুব একা হয়ে উনার কথা যখন ভেবেছি।
উনার মত হয়ে উনার জীবনটাকে ভেবেছি।
চমকে গেছি।
বুকটা কেঁপে উঠেছে।
তবু তো উনি কথা বলেন........এমন ও তো হতে পারতো উনি কখনো কথা বলছেন না!
উনার জীবনের গল্পটা কি কষ্টের।
কি বেদনার।
চাইলেই কি সেই বেদনা ছুঁতে পারি কেউ? নাকি সম্ভব?
মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি খুব ছোট ছিলেন।
উনার মা তখন আবার সন্তান সম্ভবা।
যুদ্ধের সময় উনারা গ্রামে চলে যান।

এক রাতে গ্রামে পাকিস্তানী সৈন্যরা আসে........বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে। উনাদের বাড়ীতে এসে বৃদ্ধ দাদা দাদী আর মহিলা শিশুদের একটা ঘরে আটকে রেখে বাড়ীর উঠানে গুলো করে মারেন উনার বাবা আর চাচাদের(৪ ভাইকে একসাথে)। সারা গ্রামে কোন মানুষ ছিলো না যে উনাদের কে ঘর থেকে বাইরে আনবেন।
পরদিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে উঠান ভর্তি লাশ দেখেন সবাই।
এক চাচা নাকি পানি পানি করে আর্তনাদ করে চলে গেছেন.......কেউ দিতে পারে নাই পানি।পাশের বাড়ীর আরো কিছু মানুষের লাশ ও ছিলো সেখানে।

এমন একটা দৃশ্য দেখে একটা ছোট্ট মেয়ে যে কথা বলা ভুলে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক।
এতো শুধু মৃত্যু ছিলো না...........এ ছিলো বিভীষীকা!

যুদ্ধের পর সংগত কারনেই উনার মায়ের বিয়ে দেয়া হয়।
১৭/১৮ বছরের একটা মেয়ে ২ টা অবোধ শিশু নিয়ে কি করে জীবন পাড়ি দেবে?
উনার নানীর কাছে বড় হন দুইটা বোন।
বাবাহীন এবং মা হীন হয়ে।
ভাবলেই তো হিম হয়ে আসে মন।
নানীর ভালোবাসার গল্প করেছেন.........
তবে কোন সে অভিমান যে ছিলো মায়ের জন্য......
কখনো বলেন নি। ভাগ্যিস উনি কম কথা বলেন!

আমাদের ছোটবেলার গল্প জুড়ে বাবা মা.......
আমরা গল্প করলে উনি চুপ করে শুনেছেন। আমরা উনার দিকে দিকে তাকিয়ে অন্য গল্পে চলে গেছি পলকেই।
উনি কার কথা বলবেন?

যে চোখে বাবাকে দেখার কথা মনে রাখেনি।
যে হাতে বাবার হাত ধরে বেড়াতে যাবার উষ্ণতা নেই।
যার সাথে সমুদ্র দেখার বাসনা হয়নি কখনো। তার কথা কি বলবেন?

বাবা শব্দটা উনার জন্য শুধু শব্দ। কোন সজীব অনুভূতি বা কোন উষ্ণতা নয়।
বাবা মানে উনার কাছে ফ্রেমে বাঁধানো সাদা কালো এক ছবি।
বাবার ছবিটা উনার ঘরে আটকানো।

ছবিটার দিকে তাকিয়ে উনার কি বলতে ইচ্ছা করে না....
বাবা ৩৭ টা বছর চলে গেলো। যেই দেশের জন্য তোমরা প্রান দিলে । সেই দেশ এখনো তেমনই অশুভ শক্তির কাছে পরাজিত থেকে গেলো।
বাংলাদেশের সব মানুষের দূর্বলতাকে পূজি করে সেই সব শক্তি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে।
এত রক্ত।
এত জীবন দান।
একটা দেশ তো হয়েছেই।
একটা পতাকা সবুজের বুকে লাল।
কিন্তু শুধু একটা পতাকা বা একটা মানচিত্রই কি চাওয়া ছিলো?

আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতির বাইরে থেকেও কত কিছু করছে......
প্রাইভেট সেক্টরে কত ভালো ভালো কিছু হচ্ছে......।কত মানুষের রুটি রোজগার।
সব খানেই তো দেশের মানুষ সার্বিক সাফল্য দেখাচ্ছে।
শুধু রাজনীতির খেলায় আমরা এমন ভুল করছি কেনো?
সার্থক কোন নেতৃত্ব কেনো নেই?

১৬ই ডিসেম্বরের এই দিনে আমরা সবাই কেনো বলি না .......
"আমাদের গর্ব করবার মত সব আছে
যুদ্ধ আছে।
প্রান উৎসর্গ আছে।
বীরাঙ্গণা মা ,বোন আছে।
বাবা মা হীন সন্তান আছে।
যুদ্ধ শিশু আছে।"
আমরা যদি না পারি.....আর কে পারবে?
আমাদের যদি জাগতে দেরী হয় তাহলে তো এভাবেই পরাধীণতায় চলে যাবে আরো ৩৭ কেনো শত শত বছর! "


আমার সেই স্বল্পভাষী বন্ধু যদি একদিন সবার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে......
কি হলো দেশবাসী
আমার বাবা ,চাচাদের রক্ত দিয়ে কি পেলাম!
আমার মাকে অন্যের ঘরে দিয়ে একা একা বড় হয়ে কি পেলাম?
কি জবাব দেবো আমরা?
বলতে পারেন কেউ?

আজ বিজয় দিবসে সবাই শপথ নেই .....
স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া সব শিশুরা যারা যু্দ্ধ দেখেনি।
যাদের কাছে যুদ্ধ শুধু ইতিহাস......
তারাই পারে দেশটাকে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে উঠিয়ে দিতে।

সেদিন আর যে যাই করুক আমার বন্ধুটি ওর বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলবে .....বাবা আমরাই পারি।
সেদিন হয়তো মাকে ফোন করে সব অভিমান ভুলে বলবে," মা তুমি সুখে থাকো। আমাদের ত্যাগ সার্থক হয়েছে।"
আমরা সবাই সেই সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় রইলাম।



ছবির লিন্ক:
Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:৩৭
১৫৩টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×