somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার একুশে বই মেলা - ২০১২

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একুশের বই মেলা -– নামটা শুনলে আমার যতটা না বইয়ের কথা মনে পড়ে তারচেয়ে একটা উৎসব মূখর পরিবেশের চিত্রই বেশী চোখে ভাসে। এই একটা মেলা যেখানে সবাই তাদের প্রিয় লেখকের ভাবনাগুলো ছাপার হরফে খুজে নিতে আসে, ভাগ্য ভাল থাকলে প্রিয় লেখকের একটি অটোগ্রাফও মিলে যায়...

আগেই ফেইসবুকে আপডেট দিয়ে রেখেছিলাম গতকাল বই মেলায় যাব। জানতাম অনেক ব্লগার বন্ধুদের বই এবারের মেলায় পাওয়া যাচ্ছে, কারো আবার বই এর মোড়ক উন্মোচন হবে। বিকেলে মেলায় গিয়ে প্রথমেই দেখা পেয়ে গেলাম জনপ্রিয় কবি মাহী ফ্লোরা’র । পরবাসী স্টলের সামনে তিনি সযতনে ব্লগার গুরুজীকে তার নতুন বই চন্দ্রহারা মানবীর চুল থেকে জল ঝরে তে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। বই কিনে আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। সুন্দরী কবি মাহী তার সুন্দর হাতের লেখায় আমাকেও অটোগ্রাফ দিলেন! মনে মনে লজ্জায় পড়ে গেলাম, যদি আমার কোন বই কোন দিন বের হত আর আমি অটোগ্রাফ দিতাম, তাহলে আমার হাতের লেখার কারণে ইজ্জতের পুরা ফালুদা হয়ে যেত। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে যে কোন ধরণের বই বের করার তৌফিক দেন নি ! ;)


সেই ঐতিহাসিক মুহুর্ত, মহাকবি মাহী আমাকে তার বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন !

মাহীর সাথে তার সহকবি শাহেদ খান ও ছিলেন, কাধে গিটার ! সুদর্শন এই কবির সাথেও এই প্রথম পরিচয়। অসুস্থতার কারণেই হয়ত স্বল্পভাষী ছিলেন।

লিটল ম্যাগ চত্বরের দিকে যেতেই এক সিন্ডিকেটের দেখা পেয়ে গেলাম !!;) এ হল একুশ উদীয়মান কবির সিন্ডিকেট ! যদিও সিন্ডিকেট সদস্যদের অধিকাংশের অনুপস্থিতি দেখে হতাশ হলাম। শিপু ভাই , নিভৃত নয়ন , ছোট মির্জা , নীরব দর্শক , পাভেল হক , নোমান নমি , শাহেদ খান , তির্থক আহসান রুবেল এই কয়েক সিন্ডিকেট সদস্য মাত্র উপস্থিত! বইয়ের নাম, বহুমাত্রিক। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ বইটির মোড়ক উন্মোচন করলেন। এর মধ্যে তির্থক আহসান রুবেল দেখি আবার আমাকে চিনেও ফেলল, সে নাকি আমার স্কুলের ছোটভাই !:D

বহুমাত্রিক সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে মিরাজ এর এই পোস্টটি দেখতে পারেনঃ সৃষ্টি সুখের উল্লাসেঃ একুশে বই মেলায় সামু ব্লগারদের প্রকাশিত কিছু বই

মজার কথা হল, এই বইটিতে আমাকেও কবিতা দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আমার মাথায় বাড়ি দিলেও কোন কবিতা বের হবে না, দুঃখিত শিপু ভাই। তবে আপনার কাছ থেকে পাওয়া বহুমাত্রিকের সৌজন্য কপিটির জন্য ধন্যবাদ।:D

একটু দূরেই দেখি শাড়ি পড়া ছোট খাট সাইজের এক আপু বিশাল এক ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলায় ব্যাপক ব্যাস্ত। খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ইনি বিখ্যাত ব্লগার আহাদিল ! আমার আনন্দ আর দেখে কে? কারণ, তার লেহ লাদাখের ভ্রমন পোস্ট দেখে আমি ইতোমধ্যে পাগল। ইনশাল্লাহ একদিন লেহ লাদাখ যাব নিয়্যত করেছি। আপুর কাছ থেকে কিছু জ্ঞান নিয়ে নিলাম।

আহাদিল আপু যাদের ছবি তুলছিলেন, তাদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন বিখ্যাত গীতিকার এবং ব্লগার নস্টালজিক ! কথা প্রসংগে জানতে পারলাম তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই বড় ভাই এবং তিনি যে সময়টাতে ক্যাম্পাসে ছিলেন, তখন আমিও সেখানে ছিলাম। আফসোস গুণী এই মানুষটির সাথে আগেই পরিচয় হয়নি! ভাইয়ারও একটি বই বের হয়েছে এই মেলায়ঃ আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে

মেলায় আরো যাদের সাথে দেখা হল তারা হলেন ব্লগার অপরিনীতা , নিশাচর ভবঘুরে , ফ্রাংকেস্টাইন , ধুসরধ্রুব , আশরাফুল ইসলাম দুর্জয় , অথৈ সাগর , রোকন রাইয়ান এবং রেজওয়ান মাহবুব তানিম

এবার মেলা নিয়ে আমি আমার কিছু স্মৃতি চারন করি। মজার ব্যাপার হল, এই বই মেলায় আমার শুধু পাঠক হিসেবেই নয়, একবার বই বিক্রেতা হিসেবেও উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে।;)

২০১০ সালের পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়েই আমি কাকলী প্রকাশনীর স্টলে বই বিক্রেতা হিসেবে ছিলাম। প্রসংগত, কাকলী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী আমার শ্বশুড়। সে সময় আমি বেকার ছিলাম। সত্যি বলতে পুরো মাস এই কাজটি আমি খুব আগ্রহের সাথে করেছি এবং অনেক উপভোগ করেছি। ব্লগে থাকলে যেমন বহুরকম মানুষ চেনা যায়, তেমনি বই বিক্রির সময়ও বহু ধরণের মানুষের দেখা পাওয়া যায়, তাদের দৃষ্টিভংগির সাথেও পরিচিত হওয়া যায়। আমি যেহেতু সবার সাথে মিশতে পছন্দ করি, তাই আমার জন্য সেই একটি মাস ছিল অনেক আনন্দের। :)

তো সেবার আমার কোন বই পয়সা দিয়ে কিনতে হয় নি। মেলার শেষ পর্যায়ে লিস্ট নিয়ে শ্বশুড়ের সাথে বেরিয়ে পড়লাম আর পছন্দের সব বইয়ের সৌজন্য কপি নিয়ে এলাম সংশ্লিষ্ট প্রকাশনী থেকে। অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে খুব কমই পড়তে পেরেছি, কারণ তার কিছুদিন পরই একটা চাকরি পেয়ে যাই। ব্যস্ততার কারণে এর পর আর খুব বেশী বই পড়ার সময় হয় নি। শালা, চাকরিটা আর কটা দিন পরে পেলে কি হত?? !! X((:P

আমাদের সহব্লগার ও আমার সহকর্মী শামসীরের প্রথম গল্প গ্রন্থ “শেকলে বাধা ময়না” ও কিন্তু গত বছর একুশের বই মেলায় কাকলী প্রকাশনী থেকেই প্রকাশ হয়েছিল।

আরেকটা মজার ব্যাপার শেয়ার করি। আমি তখন নবম অথবা দশম শ্রেণীতে পড়ি। গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে থাকি। তিন দিনের বৈশাখী মেলায় দু’বন্ধু মিলে ঠিক করলাম বই এর স্টল দেব। বইয়ের উৎস কি? আমাদের ক্যাম্পাসের এক ছোট ভাই মাসুদ এর মামা’র নাকি বাংলাবাজারে প্রকাশনী আছে, ও বলে দিলে আমরা বিনে পয়সায় বই নিয়ে আসতে পারব। তিন দিনের মেলায় যা বই বিক্রি হয় সেগুলো বাদে বাকী বই ফেরত দিয়ে আসব। মাসুদের সাথে যোগাযোগ করে সব ঠিকঠাক হল, ওর মামা’র প্রকাশনীর নাম কাকলী প্রকাশনী ! বই মেলায় ভালই বই বিক্রি হল। বিনা পুজির ব্যবসা ! শুধু আসা যাওয়ার ভাড়া আর কিছু কায়িক পরিশ্রম ! B-)

বিয়ের পর একদিন শ্বশুড় বাড়ীতে সেই গল্প করলাম ! জামাই সেই কৈশোর কালেই শ্বশুড়ের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িয়েছিল !! ;)B-)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২৮
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×