আগেই ফেইসবুকে আপডেট দিয়ে রেখেছিলাম গতকাল বই মেলায় যাব। জানতাম অনেক ব্লগার বন্ধুদের বই এবারের মেলায় পাওয়া যাচ্ছে, কারো আবার বই এর মোড়ক উন্মোচন হবে। বিকেলে মেলায় গিয়ে প্রথমেই দেখা পেয়ে গেলাম জনপ্রিয় কবি মাহী ফ্লোরা’র । পরবাসী স্টলের সামনে তিনি সযতনে ব্লগার গুরুজীকে তার নতুন বই চন্দ্রহারা মানবীর চুল থেকে জল ঝরে তে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। বই কিনে আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। সুন্দরী কবি মাহী তার সুন্দর হাতের লেখায় আমাকেও অটোগ্রাফ দিলেন! মনে মনে লজ্জায় পড়ে গেলাম, যদি আমার কোন বই কোন দিন বের হত আর আমি অটোগ্রাফ দিতাম, তাহলে আমার হাতের লেখার কারণে ইজ্জতের পুরা ফালুদা হয়ে যেত। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে যে কোন ধরণের বই বের করার তৌফিক দেন নি !
সেই ঐতিহাসিক মুহুর্ত, মহাকবি মাহী আমাকে তার বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন !
মাহীর সাথে তার সহকবি শাহেদ খান ও ছিলেন, কাধে গিটার ! সুদর্শন এই কবির সাথেও এই প্রথম পরিচয়। অসুস্থতার কারণেই হয়ত স্বল্পভাষী ছিলেন।
লিটল ম্যাগ চত্বরের দিকে যেতেই এক সিন্ডিকেটের দেখা পেয়ে গেলাম !!
বহুমাত্রিক সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে মিরাজ এর এই পোস্টটি দেখতে পারেনঃ সৃষ্টি সুখের উল্লাসেঃ একুশে বই মেলায় সামু ব্লগারদের প্রকাশিত কিছু বই
মজার কথা হল, এই বইটিতে আমাকেও কবিতা দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আমার মাথায় বাড়ি দিলেও কোন কবিতা বের হবে না, দুঃখিত শিপু ভাই। তবে আপনার কাছ থেকে পাওয়া বহুমাত্রিকের সৌজন্য কপিটির জন্য ধন্যবাদ।
একটু দূরেই দেখি শাড়ি পড়া ছোট খাট সাইজের এক আপু বিশাল এক ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলায় ব্যাপক ব্যাস্ত। খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ইনি বিখ্যাত ব্লগার আহাদিল ! আমার আনন্দ আর দেখে কে? কারণ, তার লেহ লাদাখের ভ্রমন পোস্ট দেখে আমি ইতোমধ্যে পাগল। ইনশাল্লাহ একদিন লেহ লাদাখ যাব নিয়্যত করেছি। আপুর কাছ থেকে কিছু জ্ঞান নিয়ে নিলাম।
আহাদিল আপু যাদের ছবি তুলছিলেন, তাদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন বিখ্যাত গীতিকার এবং ব্লগার নস্টালজিক ! কথা প্রসংগে জানতে পারলাম তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই বড় ভাই এবং তিনি যে সময়টাতে ক্যাম্পাসে ছিলেন, তখন আমিও সেখানে ছিলাম। আফসোস গুণী এই মানুষটির সাথে আগেই পরিচয় হয়নি! ভাইয়ারও একটি বই বের হয়েছে এই মেলায়ঃ আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে
মেলায় আরো যাদের সাথে দেখা হল তারা হলেন ব্লগার অপরিনীতা , নিশাচর ভবঘুরে , ফ্রাংকেস্টাইন , ধুসরধ্রুব , আশরাফুল ইসলাম দুর্জয় , অথৈ সাগর , রোকন রাইয়ান এবং রেজওয়ান মাহবুব তানিম ।
এবার মেলা নিয়ে আমি আমার কিছু স্মৃতি চারন করি। মজার ব্যাপার হল, এই বই মেলায় আমার শুধু পাঠক হিসেবেই নয়, একবার বই বিক্রেতা হিসেবেও উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে।
২০১০ সালের পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়েই আমি কাকলী প্রকাশনীর স্টলে বই বিক্রেতা হিসেবে ছিলাম। প্রসংগত, কাকলী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী আমার শ্বশুড়। সে সময় আমি বেকার ছিলাম। সত্যি বলতে পুরো মাস এই কাজটি আমি খুব আগ্রহের সাথে করেছি এবং অনেক উপভোগ করেছি। ব্লগে থাকলে যেমন বহুরকম মানুষ চেনা যায়, তেমনি বই বিক্রির সময়ও বহু ধরণের মানুষের দেখা পাওয়া যায়, তাদের দৃষ্টিভংগির সাথেও পরিচিত হওয়া যায়। আমি যেহেতু সবার সাথে মিশতে পছন্দ করি, তাই আমার জন্য সেই একটি মাস ছিল অনেক আনন্দের।
তো সেবার আমার কোন বই পয়সা দিয়ে কিনতে হয় নি। মেলার শেষ পর্যায়ে লিস্ট নিয়ে শ্বশুড়ের সাথে বেরিয়ে পড়লাম আর পছন্দের সব বইয়ের সৌজন্য কপি নিয়ে এলাম সংশ্লিষ্ট প্রকাশনী থেকে। অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে খুব কমই পড়তে পেরেছি, কারণ তার কিছুদিন পরই একটা চাকরি পেয়ে যাই। ব্যস্ততার কারণে এর পর আর খুব বেশী বই পড়ার সময় হয় নি। শালা, চাকরিটা আর কটা দিন পরে পেলে কি হত?? !!
আমাদের সহব্লগার ও আমার সহকর্মী শামসীরের প্রথম গল্প গ্রন্থ “শেকলে বাধা ময়না” ও কিন্তু গত বছর একুশের বই মেলায় কাকলী প্রকাশনী থেকেই প্রকাশ হয়েছিল।
আরেকটা মজার ব্যাপার শেয়ার করি। আমি তখন নবম অথবা দশম শ্রেণীতে পড়ি। গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে থাকি। তিন দিনের বৈশাখী মেলায় দু’বন্ধু মিলে ঠিক করলাম বই এর স্টল দেব। বইয়ের উৎস কি? আমাদের ক্যাম্পাসের এক ছোট ভাই মাসুদ এর মামা’র নাকি বাংলাবাজারে প্রকাশনী আছে, ও বলে দিলে আমরা বিনে পয়সায় বই নিয়ে আসতে পারব। তিন দিনের মেলায় যা বই বিক্রি হয় সেগুলো বাদে বাকী বই ফেরত দিয়ে আসব। মাসুদের সাথে যোগাযোগ করে সব ঠিকঠাক হল, ওর মামা’র প্রকাশনীর নাম কাকলী প্রকাশনী ! বই মেলায় ভালই বই বিক্রি হল। বিনা পুজির ব্যবসা ! শুধু আসা যাওয়ার ভাড়া আর কিছু কায়িক পরিশ্রম !
বিয়ের পর একদিন শ্বশুড় বাড়ীতে সেই গল্প করলাম ! জামাই সেই কৈশোর কালেই শ্বশুড়ের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িয়েছিল !!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



