somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের নাম শুনলেই জীবে জল চলে আসে। মিষ্টির রাজা বলে খ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ আর স্বাতন্ত্রের ও এর জুড়ি মেলাভার। এই সুস্বাদু ও লোভনীয় চমচম মিষ্টি টাঙ্গাইলের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য প্রায় ২শ' বছরের প্রাচীন। অর্থাত্ বৃটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিতি করেছে। বাংলা বিহার ছাড়িয়ে ভারত বর্ষ তথা গোটা পৃথিবী এর সুনাম রয়েছে। মিষ্টি জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী চমচমের বৈশিষ্ট্যে অতি চমত্কার। কারণ এর ভিতরের অংশ থাকে রসালো ও নরম। লালচে পোড়া ইটের রংয়ের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুড়ো কোষ থাকে কড়া মিষ্টিতে কানায় কানায় ভরা। তবে দেশের অনেক জায়গা থেকে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরীর কারিগর নিয়ে চমচম তৈরীর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল পাননি। এই ঐতিহাসিক চমচমের গুণেই মূলত টাঙ্গাইল জেলা বিশ্ববাজারে পরিচিতি লাভ করে।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বলতে এখন যা খাই তা মুলত টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের। পোড়াবাড়িতে এখন আর চমচমের সেই জৌলুস নেই। পোড়াবাড়ি এখন ছোট বাজার। ২-১টি চমচমের দোকান থাকলেও সেগুলোর জীর্ণদশা।

পোড়াবাড়ি হলো ছোট্ট একটি গ্রামের নাম। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের পথ। ছোট্ট শান্ত এই গ্রামকে ঘিরেই চমচমের সৃষ্টি। আর তার প্রধান অনুসঙ্গ ধলেশ্বরী নদী, এই নদীর পানি। চমচমের প্রথম কারিগর কে ছিল তা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, যশোরথ হালই নামে একজ কারিগরই এই চমচমের স্রষ্টা। যারা চমচম এবং তৈরীর সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই হালই বলা হয়। হালই ছাড়াও এই গ্রামের ঘোষ আর পাল বংশের লোকেরা বংশানুক্রমে মিষ্টি তৈরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুগ যুগ ধরে। পোড়াবাড়ি বাজার থেকে একটু পশ্চিমেই ধলেশ্বরী নদী। এটি যমুনার একটি শাখা।

টাঙ্গাইল পাঁচআনী বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী স্বপন কুমার ঘোষ জানান, এক সময় এই নদীর ধারে পোড়াবাড়ির বাজারে স্টিমারঘাট ছিল। যমুনা থেকে আসা বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো পোড়াবাড়িতে নোঙ্গর ফেলত। সমাজের নানা ধরনের লোকজনের আনাগোনার ছিল এই ঘাটে। বড় বড় রাজা-বাদশা, জমিদার, পাইকপেয়াদা, ব্যসায়ী থেকে শুরম্ন করে সাধারণ মানুষ সবার একমাত্র লড়্গ্য ছিল পোড়াবাড়ির চমচমের আকর্ষণ। মৌচাকের মধুর মতো মিষ্টি আর খাঁটি দুধ থেকে বিশেষভাবে তৈরী এই চমচম সবার কাছে ছিল সমান আকর্ষনীয়। পোড়াবাড়ির প্রবীণ লোকজন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি কথা ছড়িয়ে আছে যে, যশোরথ নামের একজন মুনি আসাম থেকে প্রথম এসেছিলেন পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম পোড়াবাড়ির গরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর ধলেশ্বরীর নদীর পানি দিয়ে বিশেষ উপায়ে এই চমচম প্রস্তুত করেন। এই চমচমের মধ্যে লুকায়িত ছিল পোড়াবাড়ি চমচমের স্বাদ। আর এ কারণেই শত চেষ্টা করেও অন্যান্য এলাকার মিষ্টির কারিগররা পোড়াবাড়ির চমচমের ধারে কাছেও আসতে পারেনি। সেই আমলে এই পোড়াবাড়ি ছিল রমরমা অবস্থা। ৫০-৬০টি দোকান রাতদিন চলত চমচমের বেচাকেনা। নদীপথ, সড়ক পথে দূরদূরান্ত এমনকি ভারতসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ত চমচমের স্বাদ। আস্তে আস্তে কালের বিবর্তনে ধলেশ্বরী নদী জৌলুস হারাতে থাকে। ছোট হয়ে আসে নদীর আকার। বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার ভীড়তে না পারায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমতে থাকে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে চমচমের প্রসার। বন্ধ হতে বসে পোড়াবাড়ির বাজারের সেই চমচম।

চমচম তৈরীর কারিগররা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ধলেশ্বরীর তীর পোড়াবাড়ি ছেড়ে শহরের দিকে ব্যবসা গুটাতে শুরু করে। এ কারণেই পোড়াবাড়িতে আজ চমচমের দোকান নেই বললেই চলে। ২-১টা দোকান যাও আছে তা আবার জীর্ণদশা।

পোড়াবাড়ি থেকে ব্যবসা সরিয়ে আনা চমচমের কারিগরদের মধ্যে আদিপুরুষরা আজ আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের নাতী আর নাতনির ঘরের ছেলেরা হাল ধরে আছেন চমচমের। আজকের টাঙ্গাইলের এই পোড়াবাড়ির চমচম সমান জনপ্রিয় কারণ এর স্বাদই যে আলাদা। টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার এখন টাঙ্গাইলের চমচমের জন্য প্রধান বাজার। এই বাজারে এখন মিষ্টির দোকান প্রায় ৩০-৩৫টির মতো। এগুলোর মিষ্টিগুলো সব সমান স্বাদের প্রায়। তবে সবচেয়ে পুরনো আর প্রসিদ্ধ দোকানের নাম জয়কালি ও গোপাল মিষ্টান্নভাণ্ডার। হালই বংশের রাধা বল্লভ দাসের পিতামহ এই গোপাল মিষ্টান্নভাণ্ডারের প্রধান পুরুষ। তার ছেলেরা এখন এই দোকান চালাচ্ছেন। আর জয়কালি চালাচ্ছেন স্বপন ঘোষ।

বাংলা, বিহার ছাড়িয়ে সারা ভারতবর্ষজুড়ে এর সুনাম রয়েছে। লালচে রঙের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুড়ো থাকে। এর ভেতরের অংশ রসালো নরম। চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি এবং দুধের ওপর নির্ভরশীল। এখানে এই দুটি মৌল শর্ত পুরণ হয় বলে এ মিষ্টি স্বাদে, গন্ধে, তৃপ্তিতে অতুলনীয়।

প্রতিদিনের আরো তথ্যপূর্ণ খবর জানতে আমার ব্লগ একবার ঘুরে আসতে পারেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×