somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবিচার ও রাসেলের(........) প্রতিক্রিয়াঃ প্রসংগ "রাহেলা"

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সহব্লগার ও সুলেখক রাসেল কিছু প্রসংগের অবতারনা করেছেন। এ প্রসংগে আমার কিছু বলার আছে যা উনার পোস্টে কমেন্ট হিসেবে দিতে পারতাম তবে আলাদা পোস্ট দেয়া আমার ব্যক্তিগত অভিরুচি ও প্রাসংগিক।

রাসেল বলেছেনঃ
"ঘটনা ঘটেছে ৩ বছর আগে, এবং বাদি মৃত, এ ঘটনার কোনো সাক্ষ্য নেই। পরোক্ষ সাক্ষ্য ছিলো যারা তারাও এখন বিচারের বিষয়ে তেমন আগ্রহী নয়।"

আমার বক্তব্যঃ
ঘটনা ৩ বছর আগে ঘটলেও এ ঘটনার বিচার কার্য আদালতে চলছে যা বাংলাদেশের ধীরগতির বিচার কার্যের একটি বাজে উদাহরন। তবে এ ধীরগতি সুবিচার পাওয়া কে বাধাগ্রস্হ করে না।
ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষিরা বিচার কার্যে আগ্রহী না , এটা বিচারকার্যে কোনো বিশাল বিষয় নয়। বিচার চলবে কি চলবে না সেটা সাক্ষিদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার বিষয় নয়। বিচারকার্য তার নিজের গতিতেই চলে।
বাদি মৃত হলেও বিচার কার্য থেমে থাকে না।

রাসেল বলেছেনঃ
"মেয়েটার মা বাবার ঠিকানা হারিয়ে গেছে, হয়তো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কাছে ঠিকানা আছে তবে তারা মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে বেশী বক্তব্য দিতে নারাজ। অপরাধীদের ৩ জন জামিনে বাইরে এবং ১ জন পলাতক।"

আমার বক্তব্যঃ
আমার জানামতে মেয়েটির ( রাহেলা ) মা-বাবার ঠিকানা হারিয়ে যায় নি, তা কেস ফাইলেই রয়েছে।

রাসেল বলেছেনঃ
"আদালতে নিসংশয়ে যদি প্রমাণিত না হয় যে অপরাধীরা ধর্ষণ করেছে এবং তারা হত্যার উদ্দেশ্যে মেয়েটাকে ফেলে রেখেছিলো গোপন স্থানে তবে আদালত বেকসুর খালাস দিয়ে দিবে কারণ অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত না হলে আদালত অপরাধীকে বেনিফিট ওফ ডাউট দিয়ে দেয়।"

আমার বক্তব্যঃ
এটির সাথে একমত। তবে বিবিফিট অফ ডাউট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিমের পক্ষে যায় যদি বাদিপক্ষ শক্তভাবে ডিফেন্ড করতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষন মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষি থাকে না, বিচারক এ ক্ষেত্রে পারিপার্শিক অবস্থার বিচারে রায় দিয়ে থাকেন।

রাসেল বলেছেনঃ
এখন কথা হলো ধর্ষণজনিত ডাক্তারি প্রমাণ আছে কি না?

আমার বক্তব্যঃ
ময়না তদন্তকারী ডাক্তারের রিপোর্ট আছে।

রাসেল বলেছেনঃ
"হয়তো মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে ডাক্তার একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলো, সেখানে হয়তো ধর্ষণের চিহ্নও ধরা পড়েছে, তবে যে চিহ্ণ ধরা পড়েছে সেটা যে আদতেই অপরাধীদের দ্বারা সৃষ্ট এই প্রমাণ হবে কিভাবে?"

আমার বক্তব্যঃ
মেয়েটি মারা যাবার পর সুরুতহাল করেছিলো একজন পুলিশ কর্মকর্তা যেখানে মেয়েটির ঠিক সেই সময়কার অবস্থা প্রকাশিত হয়েছিল।
মেয়েটি যেহেতু ধর্ষন ভিকটিম সেহেতু প্রথম থেকেই সেটা পুলিশের নজরে ছিলো, ময়না তদন্তকারী ডাক্তার মেয়েটির সোয়াব পরীক্ষা করেছিলেন, ময়না তদন্তের সময়কার ভিসেরা রিপোর্টও অবশ্যই আছে।
ডি.এন.এ টেস্ট দ্বারাই প্রমান করা যায়, সেটা ঘটনা ঘটার ৩ বছর পর হলেও।

রাসেল বলেছেনঃ
বাংলাদেশের আদালতে এখনও বোধ হয় ফরেনসিক এভিডেন্স সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রথা প্রচলিত হয় নি। কিংবা যদি হয়েও থাকে ডাক্তার নিশ্চয় তার যৌনাঙ্গ থেকে বীর্য সংগ্রহ করে সেটার ডি এন এ প্রোফাইল তৈরি করে নি, যেটার ভিত্তিতে নিসংশয়ে বলা যাবে এই কয়জন মানুষ মেয়েটার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো এবং তাদের দেহের ছাপ পাওয়া গেছে মেয়েটার শরীরে।

আমার বক্তব্যঃ
বাংলাদেশের আদালতে ফরেনসিক এভিডেন্স সাক্ষ হিসেবে গ্রহীত হয় অনেক বছর ধরেই, এ জন্যই ময়না তদন্ত করা হয়ে থাকে।
ডিএনএ প্রোফাইল এখনো তৈরি করা যায়।
ধর্ষকদের দেহের ছাপ ভিকটিমের দেহে কখনই পাওয়া যায় না।
এটি প্রমান করার জন্য ডিএনএ ম্যাচিং করার দরকার হয়।

রাসেল বলেছেনঃ
"এখন কথা হলো মানবী যা করছে , একটা বিকল্প জনমত তৈরির চেষ্টা, যদি এটা দিয়ে বিচারক প্রভাবিত হয়, কিংবা যদি প্রচলিত জনমতের উপর ভিত্তি করে আদালত সিদ্ধান্ত দেয় তবে আদালতে বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা উচিত হবে কি?"

আমার বক্তব্যঃ
মানবী জনমত তৈরি করছেন যাতে সুবিচার হয়। এটা বিচারক কে প্রভাবিত করার জন্য হয়। তবে বিচারকও মানুষ, উনি প্রভাবিত হতেও পারেন আবার নাও পারেন , সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। তবে এটা মানবীর উদ্দেশ্য নয় বলেই আমি মনে করছি।

রাসেল বলেছেনঃ
"যে বিচারক প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত দেয় তার সিন্ধান্তের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে সব সময় একটা সংশয় থেকেই যাবে, কারণ বিচারক পদে আসীন থাকবার সময় তার নির্ভর করবার মতো বিষয়াদি হচ্ছে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য। এর বাইরে তার ব্যক্তিগত অনুভব যদি বিচারের রায়ে প্রতিফলিত হয় তবে সেটা অগ্রহনযোগ্য হবে আদালতে।"

আমার বক্তব্যঃ
একমত।
দোষ প্রমান করার জন্য প্রয়োজন কঠিন ও দৃড় প্রমান ও সাক্ষ। এ জন্য পুলিশের ভুমিকা বিশাল। মানবীর চেষ্টা পুলিশকে আরো সক্রিয় হতে বাধ্য করবে। এ ছাড়া আদালত যদি মনে করেন এ ঘটনার আরো তদন্ত দরকার তবে আদালত পূনঃতদন্তের আদেশ দিতে পারেন।

রাসেল বলেছেনঃ
"অবশ্য আমরা সবাই এ বিষয়ে নিশ্চিত ডেথ বেড স্টেটমেন্টে মেয়েটা ধর্ষকদের নাম বলেছে, এর উপরে ভিত্তি করে কয়েকজনকে চুড়ান্ত শাস্তি দিয়ে দেওয়া যায় হয়তো। কিংবা যদি আদালতের রায় মানবীর মনোবাঞ্ছা পুরণ না করে তবে মানবী আরও বড় একটা ক্যাম্পেইন করতে পারে - এবং জনমত গঠিত করে ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে।"

আমার বক্তব্যঃ
একমত।

রাসেল বলেছেনঃ
"আমার এর কোনোটাতেই তেমন আপত্তি নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে এই বিচারের রায় কখনই নিসংশয়ে ধর্ষণের অপরাধটা প্রমাণ করতে পারবে না। আর মৃতের স্বামী নিজস্ব প্রয়োজনে দ্বীতিয় বিয়ে করেছে, তার মৃত স্ত্রীর বিচারের বিষয়ে আগ্রহ কমে গেছে সময়ের সাথে- সুবিচার আদতে কি পাবে মেয়েটি?"

আমার বক্তব্যঃ
কোনো ঘটনায় যদি আদালত উপলব্ধি কর‌তে পারেন যে বাদী কেস চালাতে অপারাগ অথবা অনিচ্ছুক তবে আদালত স্বইচ্ছেয় সে কেস কে রাস্ট্রকে দ্বায়িত্ব দিতে পারেন ।

মেয়েটি সুবিচার পাবে কি পাবে না সেটা অনেকটুকুই নির্ভর করছে আদালতে কেস পরিচালনাকারী সংস্থা কত দৃড় ও আন্তরিকভাবে লড়তে পারে , কতো শক্ত সাক্ষপ্রমান দাঁরা করাতে পারে।
আমাদের কাজ হচ্ছে জনমত তৈরি করা যাতে পুলিশ আরো সচেতন হয়, আসামী ধরতে সক্রিয় হয়, কেস পরিচালনাকারী সংস্থা উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমান খারা করাতে পারে ও আর্থিকভাবে নিশ্চিন্ত হয়।

আমরা চাই এটি একটি উদাহরন হয়ে দাঁড়াক, যাতে বাংলাদেশের সাধারন অবহেলীত অংশ থেকে আসা নারীরা তাদের প্রতি অন্যায়ের সুবিচার পান।
ধনীক অংশের শাজনীনের যেমন সুবিচার পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে গরীব অংশের রাহলারও সেই রকম সৌভাগ্য পাবার অধিকার রয়েছে।
কৃতগ্যতা মানবীকে সলতেতে আগুন জ্বালাবার জন্য।
অন্য সকলকেও অনেক ধন্যবাদ ও কৃতগ্যতা।
ধন্যবাদ রাসেল ভাই আপনাকেউ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:০৯
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×