আজ একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। আমি জানিনা এটাকে আপনারা ট্রাজেডি হিসেবে নিবেন নাকি কমেডি হিসেবে নিবেন। যাই হোক, ভীতসন্ত্রস্থ আর মধ্যবিত্ত সাহস নিয়ে গল্পটা বলেই ফেলি। মার্কেটের ফুটপাত ধরে হাঁটছি। হঠাৎ একটি দোকানের সামনে চক্ষু আঁটকে গেলো। কাপড় চোপড়ের দোকান। টি শার্ট, জিন্স এইসবের দোকান আরকি। দেখি দুটি বৃহদাকৃতির পুতুলের গায়ে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের জার্সি পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, সামনে বিশ্বকাপ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার বহুত পুরনো কৌশল।
আমি উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে গেলাম। পুরনো রোগ। পুরনো রোকও বলতে পারেন। আমি যেন ঘোরের মধ্যে আছি। নেড়েচেড়ে দেখছি একটি জার্সি। হলুদটা দেখছিলাম নাকি আকাশী নীলটা দেখছিলাম সেটা আপনাদের নাইবা বললাম। যাই হোক, ঘোর কাটলো সেলসম্যানের ডাকে। “স্যার ভেতরে আসেন। বিভিন্ন সাইজ আছে। দেখে নেন।” আমি তার সাথে এগোলাম। ইতিমধ্যে সে একটি জার্সি নামিয়ে আমাকে ট্রায়াল রুম দেখিয়ে দিচ্ছে। আমি হঠাৎ আবার পুরনো ঘোরে নিমজ্জিত। শৈশবের নস্টালজিয়া আমাকে গ্রাস করেছে। মনে পড়ে গেলো, ছেলেবেলায় এই জার্সি কেনার জন্য কতদিন ধরে মায়ের আঁচল চিবিয়ে চিবিয়ে কেঁদেছি। মা আমাকে নাদের আলির মত শুধু বড় হতে বলতো। আকাশী নীল আর সাদা রঙ্গের ওই পতাকা ওড়ানোর যে অস্থির আর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমার পাড়ার বন্ধুরা নেমেছিল, তাতে নামতে না পেরে কতদিন আমি বাবার সাথে কথা বলিনি। (সরি, আমি সম্ভবতঃ কিছু একটা গোপন রাখার প্রাণপণ যুদ্ধে হেরে গেছি)
প্রসঙ্গে ফিরে আসি। জার্সি হাতে আমি ট্রায়াল রুমের দিকে এগুচ্ছি। হঠাৎ আমার কি যেন হল। আমি গেলাম না। আমি ফিরে এলাম। সেলসম্যানকে জার্সি ফেরত দিয়ে দিলাম। মনে হল, কি হবে একটা অন্য দেশের জার্সি কিনে? সত্যিই কি এটা আমি গায়ে লাগাবো? হঠাৎ মনে হলো একটা বাংলাদেশের জার্সি কিনি। পেলাম না। একটা সবুজ টি শার্ট পেলাম, যার বুকের ওপর টকটকে লাল বৃত্ত। পছন্দ হলো। কিন্তু কিনলাম না। মনে প্রশ্ন এল, কেন আমাকে এটা পরতে হবে? নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমান করতে?
আমার কেন এমন হয় আজকাল? আমিকি তাহলে বড় হয়ে গেছি মা? আমার কি বয়স হয়েছে নাদের আলি? কই আমার মাথাতো আজও ঘরের ছাদ স্পর্শ করতে পারেনা।