সরি, আমি অসুস্থ থাকায় দিতে একটু দেরী হয়ে গেল। ফাদ্দাল সাদিক! লেটস এঞ্জয় দ্য সিত্তা কিস্তি! সিত্তা মিনস সিক্স!
২৭ শে অগাষ্ট ২০১৮ ইং
আম্মি আর ছোটবোন হজ্জ করতে আসবে দেখে বাবা দুরুমের এক বাসা নিছেন। চলুন শুনি সে বাসায় বাড়িওয়ালা কি কি দিছেন!
বাসা ফুল ফার্নিশড নয়, বাসায় আছে শোয়ার ম্যাট্রেস, ফুল আধা ইঞ্চি কার্পেট, রান্না করার স্ট্যান্ড, বিশাল বড় তিনটে আলমিরা, লাইট, ফ্যান, মুকায়েফ (এসি), তাল্লাজা(ফ্রিজ), ওয়াশিং মেশিন, ডিশের লাইন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন! বাসার ভাড়া মাসে ৭০০ রিয়েল ( ১৫ হাজার বিডিটি)! আপনাকে শুধু এক্সট্রা ইলেক্ট্রিসিটি আর স্যুয়ারেজ বিল দিতে হবে!
ধনী দেশ একেই বলে বোধয়!
২৮শে অগাষ্ট ২০১৪ ইং
স্ট্যাটাস এর নাম বাটপার এভররিহোয়ার!দুনিয়াতে এরকম কিছু দেখব ভাবি নাই।
এখানে মোটামুটি সব প্যাকেটের খাবার। পানিও কিনে খাই। ৬০০ মিলি পানি অর্থাত হাফ লিটার পানি এক রিয়াল, আর সব চাইতে ভাল গাড়ীর তেল বেঞ্জিন নাইন্টি ফাইভ এর এক লিটার ৪৬ হালালা! তেল খাওয়ার অভ্যাস হইলে ভাল হত! সাপ্লাই এর পানি ভাল না, মিনারেলস জাদা, তাই ওই পানি খেলে রেনাল স্টোন হয়। এখানের সব হাসপাতালে আর যাই থাকুক না থাকুক ইউরোলজিস্ট আর ডায়ালাইসিস সেন্টার থাকবেই।
রান্না করা মুরগী তে কামড় দিলে আপনি ফ্রীজের গন্ধ পাবেন। বীফ এখানে নেহায়েত দূর্লভ। সেও আছে প্যাকেটের। ছাগল কোয়াইট এভেইলেবল।
তবে ঝামেলা হইল বাংগালী, পাঞ্জাবী আর ইন্না রাস্কেলা ওরফে তামিল নিয়া।
বাংলা হোটেলে যাবেন, আরে দেশী বলে বুকে টেনে খাতির! তা বাই(!), কি খাবেন? অতিরিক্ত যত্ন নিয়ে আপনাকে গরু বলে উট, আর ছাগল বলে হাই ফ্যাট দুম্বা খাওয়াবে। ভাত আপনাকে আনলিমিটেড দিবে, কিন্তু তরকাররীতে যে কয়টুকরো মাংস সেই কয়টা মরিচ! সাথে দিবে রং আর তেলাপোকা! উটের মাংস খেতে খারাপ না, আর তেলাপোকার স্বাদ নাই বল্লাম, ওই টা আপনি খেয়ে বুঝে নেবেন!
ইন্না রাস্কেলা কিংবা ইনা মিনা ডিকারা বেশ ভাল স্যান্ডুইচ বানায়। টার্কিদের পোড়া মুরগী আর বাধাকপির ছয় রিয়েলের স্যান্ডউইচ এর ব্যবসায় ধস নামিয়েছে তামিল এবং কেরালাদের বয়েল্ড আন্ডেকা স্যান্ডউইচ।
পোড়া মুরগী কে আরব দেশ এ ফাহাম বলে। তবে সমস্যা যেটা হয় সেটা ভাষাগত। হসপিটালে কেরালার নার্সরা হিন্দি না জানলেও চমতকার ইংলিশ জানে, বাট হোটেলের লোক জানে না। আরবী জানে শয়ে শয়ে( অল্প),যেহেতু আনা জাদীদ, মাফি কালাম জাদা আরবী (আমি নতুন, আরবী কম জানি), তাই ওদের হোটেলে গেলে মুরগী, গরু ও ছাগল চাইলে যথাক্রমিক ভাবে কক-কক, হাম্বা-হাম্বা, ও ম্যা ম্যা করে বুঝাই দিই। আশাকরি ম্যা ম্যা করাতে কেউ ছাগু ট্যাগ দিবে না!
বাকি রইল পাব্জাবী, দোকানে গেলেই হাল্কা নাচ দিবে, সুর করে বলবে,
- আয়ারে মেরা ইয়ার বাংলা সে!
-আনকেলজী কুচ বীফ আউর বকরি কা গোশত মিলেগা?
-আরে মেরী জান, মেরা ইয়ার বকরি তো আভী খাতাম হো গায়া, মাইন্ড মাত কার, কুচ বীফ লে লো!
(আদৌ সেদিন ছাগল কিন্তু রান্না করেই নাই!!)
-আনকেলজী ইয়ে সাচ মুচ বীফ ইয়া উট কা গোশত হ্যায়? আগার উট হ্যায় তো মুঝে আন্ডে অর মুর্গা চাহিয়ে!
-মেরী জান, ক্যায়সা বাত কাররাহে তু? মেনে ক্ষুদ জবাই কিয়া, গরু ভি মেনে খুদ খরিদা আর তু তো মেরী দোস্ত হ্যায়!
-তো ফির দে দো!
বাসায় এনে খাইতে বসে দেখি সেই ঘাসের স্বাদ, সেই পুরনো উট!
৩০শে অগাষ্ট ২০১৪ইং
আরব দের মাঝে পারিবারিক বন্ধন আমাদের মত দৃঢ় নয়। একাধিক বিয়ে আরবের ঘরে ঘরে। এখানে দ্বিতীয়, তৃতীয় বিয়ে করাটা লজ্জার নয়, বরং ক্রেডিট। আমাদের দেশে সেই দিন আসতে আর কত দেরী, পাঞ্জেরী?
মেয়ের বয়স ১৪ পার হলেই এখানে কন্যাদের রীতিমতো নিলাম করা হয়। যার সম্পদ বেশী, সে বিয়ের জন্য খরিদ করতে পারে। একারনে বুড়োরা কচি মেয়ে প্রায়শই বিয়ে করে। যুবক ছেলেরা আগে বিয়ে করার টাকা জমায়, মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট হিসেবে আপনাকে নতুন একটা বাড়ি বানাতে হবে স্ত্রীর জন্য।
আমাদের দেশে মেয়ের বাবারা যেমন কন্যাদায়গ্রস্ত, যৌতুক দিয়ে সর্বস্বান্ত, এখানে সিস্টেম উল্টো। মেয়ে হলে আরবেরা খুশি হয়, কারন মেয়ে মানেই টাকা! হসপিটালে আমি একবার এক মেয়ের আত্মীয় কে বাবা বলে ভেবে পরে দেখি স্বামী, খুব লজ্জার ব্যাপার হইসিল!
স্ত্রীকে "হুরমা" বলে এরা।
অনেক বাংলাদেশী যারা আছেন, বিশেষ করে অনেকদিন যাবত, আর যারা এদের বাড়ির ভেতর কাজ করেছেন তারা আমাকে ইন্সেস্ট (incest) সম্পর্কে বলেছেন।
জানিনা কতদূর সত্য, তবে অনেক লোক বলেছেন, ইনফ্যাক্ট এখানে আমি অবসর সময়ে এদের সাথেই থাকি। তবে বিষয়টা খেয়াল করার মত, কারন প্রাপ্ত বয়স্ক বোন, প্রাপ্ত বয়স্ক ভাইয়ের সাথে কিংবা বাবার সাথে বের হয় না, খুব রেয়ার কেস। আরেকটা জঘন্য জিনিস বলেছেন, আমার বিশ্বাস করতে কস্ট হয়েছে, বাবার তালাক দেয়া সত মা কে ছেলে বিয়ে করেছে! এমন কি বৃদ্ধ পিতার কিশোরী স্ত্রীর সাথে অন্যঘরের সন্তানের অনৈতিক সম্পর্কের কথাও শুনেছি!(নাউজুবিল্লাহ)।
একেকজন সম্পদশালী বৃদ্ধের আলহামদুলিল্লাহ্৩০/৬০ জন করে সন্তান। আমাদের বাড়িওয়ালা মিসফের আবদুল্লাহ এর ৪২ জন!বড় ছেলে আর ছোট ছেলের বয়সে তিরিশ বছরের পার্থক্য এখানে কোন বিষয় নয়।
এর পেছনে নাকি উটের দুধ দায়ী!! খাইলেই নাকি জিন্সেং এর মত কাজ করে! আরব হারবাল!
আরেকটার ছোট্ট বিষয় বলি, এরা গোসল করে না। যদিও পানির অভাব নেই, হোক উষর মরু, এরা গোসল করে না।দশ বছর ধরে এখানে আছেন এমন একজনের বক্তব্য হল এরা ফরয গোসল ও করে না! এরা প্রচুর সুগন্ধী ব্যবহার করে। এটা সুন্নত ও বটে! তবে আর সব কিছুর মত এখানে ও বেশ অপচয় আছে। আরব নিউজের মতে এরা বছরে পাচ দশমিক চার বিলিয়ন, আই রিপিট বিলিয়ন রিয়ালের সুগন্ধী কেনে। টাকার অনকে কত হয় আমি বলতে পারছি না, ২০.৯০ টাকা দিয়ে গুন করুন! এরা ঘর কেও সুগন্ধী রাখতে ভালোবাসে। ইন্ডিয়া থেকে চন্দন সহ বেশ কয়েক জাতের কাঠ আসে, ওগুলী ফায়ার প্লেসে পুড়িয়ে ঘর সুগন্ধী করা হয়।
তবে পারফিউমের ব্যবসা করে এমন একজন বাংগালি বলেছেন, এতে নাকি সেই লাভ, পঁয়তাল্লিশ রিয়ালে কিনে নব্বই তে বিক্রি করা হয়!
আমার লেখা আরব্য রজনীর গল্পগুলো, পঞ্চম পর্ব!
আমার লেখা আরব্য রজনীর গল্প গুলো চতুর্থ পর্ব!
আমার লেখা আরব্যরজনীর গল্পগুলো, তৃতীয় পর্ব
আমার লেখা আরব্য রজনীর গল্পগুলো!! দ্বিতীয় পর্ব!!
আমার লেখা আরব্য রজনীর গল্প গুলো!! প্রথম পর্ব!