somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পতনের পর পর

১০ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভ্যাপসা গরমে যখন সবাই হাঁস-ফাঁস করে একে একে লাইন থেকে বেড়িয়ে চলে যাচ্ছিল কাউন্টারে টিকিট জমা দিয়ে- তখনই বাসটা চলে এলো। ভিতরটা ফাঁকা দেখে সদ্যভাঙ্গা যাত্রী-লাইনের সামনের অংশটুকু প্রায় লাফিয়ে বাসে চড়ে বসল মধ্যবয়স্ক মহিলাটি। সব গুলো খোলা জানালা দিয়ে যে সামান্য কিঞ্চিত বাতাস ঢুকতে পারছে তাতে শরীরের ঘাম শুকোচ্ছে না। ঘামে ভেজা শরীরের যতটুকু সম্ভব শাড়ী টেনে একদম শেষ মাথায় একটা সিট খালি পেয়ে টালমাটাল হয়ে চলন্ত বাসের মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকলো। ঘামে বুকের খোলা অংশ চিক চিক করছে হালকা উজ্বলতায়, ভারী নিতম্বের দিকে আড়চোখে ঘুরে আসে অনেকগুলো চোখ। কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেন নি মহিলা- ভুরু দুটো কোন কিছু দেখে আশ্চর্য হয়েছেন এমন ভঙ্গিমায় বাঁকিয়ে রেখেছেন। সিঁদুর বরাবর একটা ঘামের রেখা আস্তে করে গড়িয়ে পড়ল মুখের মধ্যক বরাবর, এক হাত ঝাঁপটা উঠিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘষে সরিয়ে দিতে চাইলো মহিলা রেখাটা- আর স্পীড ব্রেকারের প্রবল ঝাঁকুনিতে ভাঁজ হয়ে এলো দু-পা। শূন্যের মাঝে দুই হাত এলোমেলো করে ছুঁড়ে ধরতে চাইলো কোন কিছু-

চলন্ত বাসে এ ধরনের কান্ড খুব সাধারন। কিন্তু তারপরও যাত্রীদের আগ্রহের কোন ঘাটতি তৈরী হয় না কখনো এ ধরনের কোন ঘটনা সামনাসামনি ঘটে গেলে উপস্থিতিতে আগ্রহী দর্শক হয়ে বসে থাকতে। চুড়ি ওয়ালা কোন হাতকে সাহায্য করতে আরেকটা হাত এগিয়ে আসলে সাহায্যপ্রার্থীও দেখে নেয় বাড়িয়ে দেওয়া হাতে চুড়ি আছে কিনা। অশ্লেষে কোন সাহায্যকারীও তখন নিবৃত্ত হয় ক্ষণিক উপলব্ধিজাত অপরের অপমানটুকুর সামনে দাড়িয়ে নিজে অপমান হয়ে। শরীরের পুরো ভর ভীড়ে অন্য কারো পায়ের উপর চাপিয়ে নিশ্চিন্ত মনে রাস্তাটুকু পাড় করে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন শহরের মানুষ। অর্ধেক ভাড়ার দাবীতে বাস পুড়িয়ে হাসতে হাসতে পরের বাসের হ্যান্ডল পাকড়ে ধরেন অর্ধেক ভাড়া চুরি করে, কন্ডাকটরকে বলা জায়গার চেয়েও অতিরিক্ত চড়ে।

জানালার ফাঁক গলে আসা চৈতালি রোদের ঝাপটায় আবছা কেউ কেউ লক্ষ্য করে রক্তিম মুখটা ইষৎ লজ্জিত ও ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ। কয়েক জোড়া হাত এগিয়ে যায় মহিলার দিকে- তাকে সোজা দাড় করিয়ে দিতে। মহিলাটি কোন হাতের দিকে তাকায় না। কেয়ারই করলো না যেন- ঐ হাতগুলোতে কোন চুড়ি নেই। অঙ্গে-উপাঙ্গে তখন ব্যাথ্যা আর অপমান-লজ্জার মিশেল কোন তরল বইছে।

এরই ফাঁকে একটা হাত বুকে এসে আলতো ছুঁয়ে যায়। কেউ খেয়াল করে না, বাসের সবগুলো চোখ ব্যস্ত হয়ে ঘুরে রাস্তার দৃশ্য আর মহিলাটির শরীরের দৃশ্যমান অঞ্চলে। ভদ্রলোক একটা দেঁতো হাসি দিয়ে ফিরে চলে যান নিজের সিটে- অন্য কেউ বসে পড়তে পারে সেই ভয়ে।

তাৎক্ষনিক বিমূঢ়তার ভাব কাটিয়ে উঠতে পারে না যেন মহিলা। আস্তে করে একটা কিশোর এগিয়ে এসে বলে, আপা আপনি আমার সিটটাতে বসেন।

এদিকে আরেকটি তরুণ সামনের সিট থেকে লাফিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে সেই মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোকের কলার চেপে ধরে গেটের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এরা খুব সামান্য সময়ে অসামান্য প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, অগ্রপশ্চাদ বিবেচনা কিছুটা কম- সেই রমনী সুলভ চেহারার তরুণটির প্রচন্ড অগ্নিমূর্তির সামনে সেই ভদ্রলোক যেন কেঁচো হয়ে যান সহসাই। মুহূর্তে এক প্রচন্ড কোলাহল তৈরী হয়ে যায়- আশেপাশের লোকজনের হই হই রই রই এড়িয়ে শোনা যায় তরুণটির চিৎকার, ‘শাউয়্যার পোলা তগো বাসায় মা-বোন নাই, বানচোত....’

মহিলাটিকে আর শেষের দিকের সিটের দিকে হেঁটে যেতে হয় না। সামনের দিকেই একটা সিট পেয়ে যান। প্রত্যভিজ্ঞায় এই ধরনের ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়ায় দ্রুত সামলে উঠেন তিনি-কিছুক্ষন আগে সেই মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোকের আচরণ। আলতো করে আঁচল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হাত থেকে সেই ভদ্রলোকের মানিব্যাগটি পাশের যাত্রীর চোখ এড়িয়ে ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে চালান করে দিয়ে কপাল ঠেসে ধরেন জানালার কাঁচে।

চাতক বহুড়ীর মতো উপরে তাকান মহিলা- আজ প্রচন্ড গরম পড়েছে- বৃষ্টি পড়তে পারে ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×