রাত প্রায় ১টা বাজে! আবার মেসেজ করলো ছেলেটা!রাহুল মিত্তাল । দিদিয়ার শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কের বলে, কিছু বলতেও পারেনা তিন্নি! সেই দিদিয়ার বিয়ে থেকে স্টিকি টাইপ বিহেভ করে যাচ্ছে । সন্ধ্যে থেকে কয়েকবার বিজি বলে কাটিয়েছে। এখন আর ফোনে হাত দিল না সে। তবে মেসেজ আর আসলো না! তাই কিছুটা নিশ্চন্তে চোখ বন্ধ করলো।
আরে, এতো মিতাদির মেসেজ! সকালে ফোনটা হাতে নিয়েই স্বগতোক্তি করলো! কিছুটা যেন হাঁফ ছেড়েও বাঁচলো সে । এদিকে মেসেজে কিছুটা অনুযোগর সুর! ঠিকই দিদিয়ার বিয়ে পর প্রায় মাস খানেক কেটে গেছে! মিতাদির সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। সে মেসেজ না করে সরাসরি রিং করে!
ওপ্রান্ত বলে ওঠে ' অবশেষে মনে পরেছে?
সরি গো মিতাদি, আসলে এতো ..
ইটস ওকে ডিয়ার! আমিও তো নানা কাজে, যাক এসব কথা ! সেদিন একটা ঘটনা ঘটলো! সেটা শেয়ার করতেই তোকে
কি? কি ঘটনা? হঠাৎ কি কোনো এলিয়েন নেমে এসেছিল তোমার বারান্দায়? যার তুমি প্রেমে পড়েছ?
আরে নাহ! তেমন হলে তোর কাছে রেফার করতাম! সেদিন কিগান মিত্রের সাথে হঠাৎ দেখা
কিগান নামটা যেন মুহূর্তকাল থামিয়ে দিল তিন্নির হৃদস্পন্দনকে ! সে স্পষ্ট অনুভব করলো সেটা! তারপর অনুচ্চ কন্ঠে বল্লো.....
কি? কি কথা হোলো? দিদিয়ার কথা?
আরে না না! ওসব কিছু না! ও তোলেনি আর আমিও না! শুধু ভালো আছি বলাতে বল্লো ' যে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকাটাই কাঙ্ক্ষিত '
আর কোনো কথা হয়নি?
আর ওই, ওরা নাকি গ্রামের মানুষদের জন্য কিসব কাজ করছে! পজিটিভ ক্যাটালিস্ট নামে একটা নাটকের দলও নাকি খুলেছে.........
পজিটিভ ক্যাটালিস্ট - শব্দ গুলো যেন ইচ্ছে মতো ঘুরপাক খেতে থাকে তিন্নির মাথায় ।
আগে বাস্তবএর পাঁচিলে যে কোনো কিছুর প্রচারের পোস্টার দেখা যেত ! এখন অবাস্তব থুড়ি অতিবাস্তব মুখবইয়ের পাঁচিলেই প্রচারকার্য বেশী চলে। তো সেখানেও তিন্নি পজিটিভ ক্যাটালিস্ট নামে কিছু পেল না। একবার ভাবলো, কেনোই বা সে খুঁজছে! তবু সে সার্চ করতেই লাগলো। অবশেষে ব্লগ স্পটে এই নামে একটা ব্লগ পেলো। কিন্তু তাতে ব্লগারর কোনো পিক নেই । অবশ্য নাট্যদল শব্দটা লেখা ছিল! কিন্তু একই নামে একাধিক গ্রুপ থাকতেই পারে! কিগান নামটাও কোথাও লেখা নেই। পরিচয়ও তেমন কিছু নেই! বাংলা, ইংরাজিতে কিছু ছোটো পোষ্ট! যার একটা তার খুব ভালো লাগলো!
life is about trusting our feelings & taking chances, losing & finding happiness, appreciating the memories & learning from them.
আর কিছু চারকোলের স্কেচ। নাটকের পোষ্টার বলে মনে হয়! একটার নীচে লেখা যুধিষ্ঠির! আওয়ার নিউ প্রজেক্ট! ব্রাকেটে ' হোয়াট আ শোম্যান' লেখা। ব্লগে কোনো কমেন্টও নেই! তিন্নি ভাবে, সে কি একবার কমেন্ট করে দেখবে? যুধিষ্ঠির এর তলায় এনোনমাস সিলেক্ট করে সে লিখলো - এটা কি আপনাদের আপকামিং ড্রামা? কিন্তু এর গল্পকে কি সমসাময়িক বলা যায় ?
অজনাকে জানার তীব্র আকর্ষন মানুষ উপেক্ষা করতে পারে না! সেদিন কয়েকবার তিন্নি পেজটা চেক করে কিন্তু রিপ্লাই পায়
না! পরের দিন বিকেলবেলা একটা জবাব সে পেল!
এটা আমার খোলা ডায়েরী। আপনি প্রথম পাঠক। তাই ওয়েলকাম এন্ড থ্যাংকস! আসলেই সময় কি বদলায়? আমরা সময়কে অনুবাদ করার চেষ্টা করি মাত্র!
তিন্নি লেখে ' দারুণ ইন্টারেস্টিং উত্তর! তো যুধিষ্ঠির শো ম্যান কেনো? '
কারো কারো মহান হওয়া ছাড় উপায় নেই। আর কেউ কেউ মহান হবে বলেই মহান। যুধিষ্ঠির দ্বিতীয় দলে আছেন! মহান হতে হবে বলেই নিজের পুণ্যর ভাগ ভাইদের ( যারা পুরোজীবন তাঁর জন্যেই সব করেছে) না দিয়ে , একটা কুকুরকে দিয়েছিল! ঠিক বা বেঠিক কাজ যেমনই হোক তাকে, যে যত ভালো ভাবে লেজিটিমেট করতে পারে সে তত নামী শাসক! শাসকর এই ধর্ম আজও বদলায়নি! তবুও যুদ্ধজয়র পর হব্যকের মতো প্রজা জানতে চায় ধর্মরাজ অন্ন কোথায় পাবো? আমাদের নাটকে এই প্রশ্নটাই তুলে ধরতে চাইছি । এই
রাজা যুধিষ্ঠির আর প্রজা হব্যক কি আজকের যুগে বিরল ?
এই প্রশ্নের উত্তর কি দেবে তা ঠিক এক মুহূর্তের বেশী ভাবার চেষ্টা করেনা তিন্নি । বরং চটজলদি সে লিখে দেয় ' আমি ইমপ্রেস হলাম । '
কথপোকথনের মাধ্যমে তিন্নি জানতে পারে একটা গ্রামে এসব নাটক করে এই ব্লগার ও তার গ্রূপ । সেই গ্রাম তার বাবার জন্মস্থান। তাই সেই সূত্রে সেও নাকি ভূমিপুত্র! এখন সেখানে একটা কারখানা হবে। কিন্তু তিন ফসলি জমি ছেড়ে চাষিরা চাকর হতে চায় না।
এদিকে রাহুল মিত্তালও নানাভাবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যায় । তিন্নি সিদ্ধান্ত নেয় যে এইবার রাহুলকে একটা মোক্ষম জবাব দেবে ।
এখন তিন্নি শুধু একটা চিন্তায় করে । সে কি সঠিক পথে এগোচ্ছে ? এই ব্লগারই কি কিগান? সে তো গ্রামেই নাটক করতো বলে শুনেছে! পরক্ষণেই ভাবে যে এসব জানার চেষ্টা সে কেনো করছে ? যদিও তার ভাবনা থামে না ।
আর পরের দিন, তিন্নি সরাসরি প্রশ্নটা করেই বসে - যার ব্লগে আমি কমেন্ট করি, তার নামটা কি?
তা পারেন! ওথেলো! আমার নাম! আর যে অনাম্নি পাঠকের আমি কমেন্ট পাই, তার নামটা কি?
আমি তো ডেসডিমোনা
বাহ! দেন, বি কেয়ারফুল মোনা! আমি ওথেলো
ওথেলো ? আসল নাম বললো নাহ!তাই ধোঁয়াশা থেকেই গেলো! তাই তিন্নি, এবার বলে-
আচ্ছা! ফেসবুকে আপনাদের কোনো পেজ নেই?
নাহ! আপাতত নেই । আসলে আমার এসবের সময় নেই! আমাদের গ্রুপের একটা ছেলে ফারুক! তার একটা একাউন্ট আছে! তবে সেও ঐ প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে। ওখানে নেট প্রব্লেম। তাই ও ইরেগুলার। জানিনা এনিয়ে পোষ্ট করেছে কিনা!
আচ্ছা, যে কোনো আর্ট তো প্রচার চায়। সাক্সেস চায়। আপনি কি ইস্যু ভিত্তিক নাটক করেন?
নাহ! নাটক আমার প্যাশন। ছোটো থেকে করি। কোনো একটা গন্ডির মধ্যে স্ট্যাটিক হয়ে দাঁড়াতে চাই না। ধরুন, আপনি ঠাণ্ডা ঘরে বসে দেখলেন আজ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছুঁয়েছে! আপনি বলবেন, আজ কী গরম। খোলা আকাশের নীচে থাকলে আপনি ই বলতেন, উফ, বাপরে কি গরম। ফেবুতে যারা গালভরা কমেন্ট করে তারা ওই ঠাণ্ডা ঘরের বাসিন্দা! তাছাড়া শহরে হল ভারা যদি ২৫ হাজার লাগে, তবে ফেবু থেকে বড়োজোর দুই থেকে তিন উঠবে। সেখানে আমি এতো সময় কেনো দেবো? আর বাকি টাকাটা পকেট থেকে দেওয়ার আমাদের ক্ষমতা নেই । আর গ্রামের মানুষের কথা আমরা সবাইকে শোনাতে চাই । তাই তাঁদের কথা তাদেরকেই আগে শোনানো ভালো নয় কি ? আর তাঁরা দিব্যি মাটিতে বসে নাটক দেখতে পারেন ।
কথাগুলো তিন্নির ভাবনাকে এলোমেলো করে দেয়। কারণ সে শুনেছিল কিগান জীবন সম্পর্কে উদাসিন । কিন্তু এরকম কথাবার্তা তো জীবন সম্পর্কে ওয়াকিবহল , ফোকাসড মানুষই বলতে পারে । একি তবে কিগান নয়? ওথেলো তাহলে কে?
প্রথম পর্বের লিঙ্ক - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫১