এই আগস্ট মাসের ৩ তারিখে মারা গেলেন আলেজান্দ্রেই সোলঝেনিৎসিন। সোভিয়েট রাশিয়ার এই লেখক ১৯৭০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যদিও সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কৃত হবার ভয়ে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেন নি। পরে ১৯৭৪ সালে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং তিনি ঐ পুরস্কার গ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে জন্ম নেয়া এই সাহিত্যিকের লক্ষ্য ছিল সোভিয়েট বিপ্লব নিয়ে লেভ ততস্তয়ের মত মোটা ভল্যুমে বই লেখার। কিন্তু ঘটনা ঘটে উলটো।
তার জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই যোসেফ স্ট্যালিন সোভিয়েট ইউওনিয়নের ক্ষমতায় বসেন আর শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। "গুলাগ" হচ্ছে রাশিয়ান বন্দী নির্যাতন কেন্দ্র। অনেকের মতে রাশিয়ার প্রভুত উন্নতির মূলে ছিলো ঐ সব বন্দীশিবিরের নির্যাতিতদের শ্রম। সোলঝেনিৎসিন, ব্রডস্কি এবং আরো এ ধরণের অনেক লেখক, কবিদের বেশ কটি বছর কেটেছে গুলাগে।
১৯৪৫ সালে জার্মানীর সাথে পূর্ব ফ্রণ্টে যুদ্ধ করছিলেন সোলঝেনিৎসিন, সেখানে থেকে লেখা কিছু চিঠিতে তিনি স্ট্যালিনের সমালোচনা করেন এবং সেই চিঠিগুলি ধরা পড়ে গেলে, যুদ্ধ শেষ হবার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আট বছরের জন্য নির্বাসনের সাজা দেয়া হয়।
সোলঝেনিৎসিন বিখ্যাত তার "গুলাগ আর্চিপেলাগো"র জন্য। তাকে এন্টি কম্যুনিস্ট বলে আখ্যায়িত করা হলেও এখনকার নব্য মার্ক্সসিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি বা মাওবাদী পার্টি নিজেদের আত্মসমালোচনার খাতিরে হলেও সোলঝেনিৎসিনের কথায় বা লেখায় সত্যতা খুজে পান। তার আরেকটি কাজ হল "রেড হুইল"। এখানে তিনি রাশিয়ান ফেব্রুয়ারি ও অক্টোবর বিপ্লব এবং তার পটভূমি নিয়ে কাজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য তার ইহুদীবিদ্বেষ এবং রাশিয়ান অর্থোডক্সি ধর্মের প্রতি অনুরাগ ফুটে উঠে। আরেক নোবেল জয়ী রাশিয়ান কবি ব্রডস্কির মতে, সোলঝেনিৎসিন সোভিয়েট নৃশংসতার বর্ণনা নিখুঁতভাবে দিলেও, মনে হয় যেন রাজনৈতিক মতাদর্শের (মার্ক্সিজম) চেয়ে এর মূল কারণ হল রাশিয়ান "অর্থোডক্সি ভাবাদর্শ" এবং পুরাতন রাশিয়ার ঐতিহ্য।
আমেরিকাতে বসবাস করতে গেলেও কখনোই তার ভালো লাগে নি এবং তিনি সবসময়ই মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে চেয়েছেন। ১৯৯০ সালে তার সোভিয়েট নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং ১৯৯৪ সালে তিনি মস্কোতে ফেরেন। তার ছিল অসীম জীবনীশক্তি ও ধৈর্য। কথিত আছে বনের মধ্য দিয়ে চলার সময়ও তিনি লিখতে পারতেন। গুলাগে থাকাকালীন তিনি কাগজের টুকরো এমনকি পাথরের দেয়ালেও লিখতেন এবং লেখার পর সেগুলি মুখস্ত করে ফেলতেন আর পুড়িয়ে ফেলতেন। তার মতে, "আমি শক্তি পেতাম ভেতর থেকে, এবং সেই শক্তি কাজ করার জন্য আর সংগ্রাম করার জন্য। "
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৪