somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকদের বিরুদ্ধে না হয় ধর্মযুদ্ধ করা গেল, অতি আস্তিকদের ব্যাপারে করণীয় কী?

১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই ব্লগে যে সব প্রীতিভাজন মানুষ আমার অর্বাচীনসুলভ লেখাগুলো নিয়মিত পড়ে আমাকে একই সংগে কৃতজ্ঞতা এবং লজ্জায় ফেলে দেন, তাঁরা জানেন যে, আমি ইদানিং ব্লগ লেখালেখি হতে একটু দুরেই আছি। আর অহেতুক তর্ক-বিতর্ক (ব্লগীয় পরিভাষা অনুযাতী "ক্যাঁচাল") হতে আমি সবসময়ই তফাতে অবস্থান করার চেষ্টা করি। তারপরেও বিগত কয়েকদিনে হুটহাট ব্লগে ঢুঁ দিতে গিয়ে যেসব দেখছি তাতে দু'কথা বলবার লোভ সামলানো কষ্টকর হয়ে গেল।

মানুষ হিসেবে আমাকে ঠিক কতটা ধার্মিক বলা চলে জানি না তবে, যথেষ্ট ধর্মপ্রীতি আছে- সে কথা বলতে পারি। সেদিক থেকে আমাকে ভালমানের আস্তিক অবশ্যই বলা চলে এবং আমি তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করি। তাই বলে, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী ব্যক্তির সাথে আমার জন্মগত দুশমনি আছে- সে রকম ভাবারও কোন কারন নেই। এ কারনেই, আস্তিক-নাস্তিক সংক্রান্ত যে কোন ধরনের ক্যাঁচালে তা সে বাস্তব জীবনেই হোক কিংবা ব্লগীয় পরিবেশে- আমি সযত্নে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। রাজাকার, জাফর ইকবাল - ইত্যাদির মত আস্তিক-নাস্তিক ইস্যুটিও এই ব্লগের শুরু হতেই বেশ জনপ্রিয় বা বলা চলে ক্যাঁচালসমৃদ্ধ। সে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে গিয়েই বোধ করি মাস কয়েক আগে (সে সময়ও আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়ে খুব তুলকালাম কান্ড হচ্ছিল এখানে) "ব্লগীয় নাস্তিকতার স্বরূপ সন্ধান এবং একজন চরম আস্তিকের নাস্তিকতা বিশ্লেষন!" শিরোনামে একটি লেখা দিয়েছিলাম।আস্তিকতা আর নাস্তিকতার পরিচিতি, কারন আর ফলাফল নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্লেষনটুকু সে সময় অনেকেই পছন্দ করেছিলেন আর ব্লগীয় রীতিবিরুদ্ধভাবেই কেন যেন ঐ পোষ্টে কোন পক্ষ হতে কোন প্রকার গালিগালাজের নহর বয়ে যায় নি!

পরবর্তীতে, আর এ বিষয় নিয়ে আর কিছু বলতে আগ্রহ এবং সাহস কোনটাই বোধ করি নি।

কেননা, এ বিষয়ে উচ্চকিত কন্ঠে বলবার জন্য এখানে দুই পক্ষেই বেশ কয়েকজন বীর সেনানী রয়েছেন যাঁদের তলোয়ার কখনোই কোষবদ্ধ হতে দেখি নি। সুযোগ পেলে তো বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ছেনই আর সুযোগের অভাব ঘটলে পায়ে পা বাঁধিয়ে সুযোগ করে নিতে মুখিয়ে আছেন! এঁদের দেখলে কখনো কখনো আমার মনেই হয় যে, এই পৃথিবীর ভবিতব্য বুঝি বা আস্তিকতা-নাস্তিকতা প্রশ্নের উত্তরে মাঝেই লুকিয়ে আছে! অতএব, একটা হেস্তনেস্ত না করলে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না! এ সুন্দর ধরণীর রূপ-রস-গন্ধ তাঁদের ততটা টানে না, যতটা টানে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের দুর্ভেদ্য ঘেরাটোপ!

আমি বরং এ নিয়ে সামান্য পড়াশোনার চেষ্টা করেছিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, বন্যা আহমেদের "বিবর্তনের পথ ধরে" পড়তে গিয়ে বিশ্বাসের ভিত একটু নড়েই উঠেছিল! "অরিজিন অভ ম্যান", "ব্রীফ হিস্ট্রি অভ টাইম" নিয়েও একটু সময় দিলাম। স্কুল জীবনের জীববিজ্ঞানের তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞান পুঁজি করেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ, ডিএনএ, নৃবিজ্ঞান- এধরনের কিছু দাঁতভাঙা বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পুরানো সেই বিশ্বাসটা আবার দৃঢ় হল যে, "পৃথিবীতে নাস্তিক হতে হলে অনেক পড়াশোনার প্রয়োজন"। তবে, আমি এখনো "বুদ্ধিবৃত্তিক অনুকল্পের" (Intelligent Design) উপরে আস্থাবান হওয়ায় আস্তিকদের কাতারেই রয়ে গিয়েছি।

এতক্ষন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এত কথা বলবার মূল উদ্দেশ্য তিনটি।

১. মেঘদূত নামের কোন এক ব্লগারের একটি অশ্রাব্য মন্তব্য। একই নিকের বিভিন্ন বানানে এখানে বেশ ক'জন ব্লগার আছেন যার মধ্যে একজন আমার কলেজ জীবনের বন্ধু। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম সেই বুঝি! ব্লক হল বলে। কাল জানলাম, এই মেঘদূত সেই মেঘ দূত নয়। যাক বাবা। ব্যক্তিগতভাবে, আমি সকলের বলার অধিকারকে সমর্থন করি। ব্লক-ব্যান- এ সবই আমার প্রাগৈতিহাসিক মন-মানসিকতার পরিচায়ক বলে মনে হয়। তাই বলে, যা ইচ্ছে তাই বলার স্বেচ্ছাচারিতাও সমর্থনযোগ্য নয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোকে যারা ধর্মানুভূতির সুড়সুড়ি হিসেবে দেখেন তাদের জন্য বলছি। আমার আপন কোন মানুষের প্রতি, নিজস্ব বিশ্বাসের প্রতি অশালীন ব্যবহার কিংবা অশ্রাব্য উক্তি যদি আমাকে অন্ততঃ প্রতিবাদে সোচ্চার করে তুলতেও না পারল, তাহলে আমি বলব, সে ভালবাসা, সে বিশ্বাসের কোনই মূল্য নেই। প্রতিবাদের ভাষা ও পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে, কিন্তু প্রতিটি প্রতিবাদকেই সুড়সুড়ি হিসেবে বিবেচনা করে হাস্যস্পদে পরিণত করার চেষ্টা নিতান্তই অমানবিক।

২. কার্টুনিষ্ট আরিফুর রহমান ইস্যু। আলপিনের সেই তোলপাড় করে দেয়া কার্টুন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। যতদুর মনে পড়ে, এ ব্লগেই আরিফুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে, আমি ভদ্রলোকের জন্য কেবল সহানুভূতিই অনুভব করি, যিনি কীনা পরিস্থিতির শিকার বৈ আর কিছুই নন। এ ঘুঁনেধরা রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজব্যবস্থা তাঁকে এর চেয়ে বেশী আর কিছুই দিতে পারত না। ৭৬ সালে জাসদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হবার পর হতেই এদেশে বামপন্থীরা চরিত্র হারাতে শুরু করেন। হালের "প্রথম আলো" তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ ঘটনার সকল দায়-দায়িত্ব ও দোষ- নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে ঠিকই নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে তারা। অন্যদিকে, তথাকথিত ইসলামপন্থীরা তো বহুদিন তক্কেতক্কে ছিলেন, কি করে প্রথম আলো গোষ্ঠীকে একহাত নেয়া যায়। একে তো রমযান মাস, মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট তখন তুঙ্গে; তার উপর সাপ্তাহিক ২০০০ এ দাউদ হায়দারের সেই লেখা নিয়ে তুলকালাম। এমনি সময়ে, এমন একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে তাঁরা আর হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না, সম্পাদককে হাত ধরে মাফ চাইয়ে তবেই ছাড়লেন। দু'পক্ষই নিজেদের কাজটুকু আদায় করে নিলেন। মাঝখান দিয়ে বিভাগীয় সম্পাদকের চাকরি গেল আর আরিফের কপাল পুড়ল।

৩. সবশেষে, অতি আস্তিকদের প্রসঙ্গ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই দেখছি ধর্মপ্রিয় মানুষের চাইতে ধর্মভীরু মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। ফলে, যে ধার্মিকতা বুকে ধারন করবার ব্যাপার, যে ধার্মিকতা মানুষের আচরনে ফুটে উঠবার ব্যাপার, তাই এখন মুখের বুলির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গলার জোরে নিজের বিশ্বাসের বন্দনা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন কেউ কেউ। কিন্তু, এভাবে কি হয়? ঘৃনা আর উগ্রপন্থা কি কখনো ভাল কিছু এনে দিতে পারে? নাস্তিকেরা নাহয় ধর্মের গন্ডির বাইরে গিয়ে ধর্মের অনেক ক্ষতি করে চলেছে। কিন্তু, অতি আস্তিক্যবাদীদের ঠেলায় যে ঘরের ভিতও টলে যাবার যোগাড় হচ্ছে- তার সমাধান কী?

(সঙ্গত কারনেই এখানে কোন সংশ্লিষ্ট ব্লগারের কোন লেখার লিংক ব্যবহার করা হয় নি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪৯
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×