somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সো দেসকা-দের দেশে-১ (সারমেয় কাহিনী)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যায়সা এক তকমা জুটেছে আমার কপালে। গল্প করার সঙ্গী হিসেবে আমার চেয়ে বিরক্তিকর প্রাণী নাকি এ ধরাধামে আর দ্বিতীয়টি হয়না। ঘটনা সত্যি। ভালো শ্রোতা হলেও অতি নিম্নশ্রেণীর বক্তা আমি। কিছু বলার জন্য "যেইনা আমি ঠোঁট নেড়েছি", অম্নি সব কথা পালিয়ে যায়। ধ্বনি উৎপাদনের সবগুলো বিভাগ ঘুরে এসে কথামালা যখন পৃথিবীর মুখ দেখবে প্রায়, তখনি কোয়ালিটি কন্ট্রোল সেকশান এদের নাকচ করে দেয়। মনে হয় এ কথাটা তো তেমন আকর্ষণীয় হবেনা শ্রোতার কাছে। মিছেমিছি বিরক্তি বাড়িয়ে লাভ কি? তাই গল্প বলিকা হবার চেয়ে ব্লগিকা হওয়াই ঢের ভালো। কারো বিরক্তি চোখে দেখতে হবেনা, পড়ে চুপিচুপি হজম করে নিলেই হলো।

বড় হলে একটা অপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে। শিরোনাম "সো দেসকা-দের দেশে"। নামকরণ করেছে আমার শ্বশুরতো ভাই। জাপানিজ ভাষায় "সো দেসকা?" মানে "তাই নাকি?"। কথাটা এত বেশি ওরা ব্যবহার করে যে, আড়ালে এই নামেই ওদের ডাকি। তবে হ্যাঁ, সো দেসকা-রা লোক ভালো। যাই হোক, অপন্যাসখানার আলফা বেটা গামা সব ভার্সনই আপনাদের খাওয়ানোর ষড়যন্ত্র করেছি। ধীরে ধীরে, বিরক্তির চুড়ান্ত মাত্রায় আপনাদের পৌঁছে দিয়ে।

আজকে লিখব এদের সারমেয় প্রীতির কচকচানি। কুত্তাতো ভাই আমরাও পুষি। নেড়ি, বাঘা, ডাল হরেক রকম। তা নিয়ে এতো আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যাবারই কথা। ভ্যানিটি ব্যাগে করে ঘুরে বেড়াতে হবে? বলা নেই কওয়া নেই, পাশের ভদ্রলোকের ব্যাকপ্যাক থেকে হঠাৎ যদি একখানা কুকুরের জুলুজুলু চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়, আঁৎকে উঠবেননা? কুকুরের স্যালুন, বিউটি পার্লার। ঢং যত। প্রবাদ আছে, বউ পোষা আর হাতি পোষা সমান। এদের দেখে মনে হয়, কুত্তা পোষা আর ডাইনোসোর পোষা সমার্থক। তাও কারো আগ্রহে কমতি নেই। কারো বাসায় "পেট" নেই শুনলে এমন ভাব করে যেন ওই লোকের বেঁচে থাকাই অর্থহীন। সব সুপারমার্কেটে কুকুরের সেকশান আলাদা। পুষ্টিকর খাবার, প্রসাধন সামগ্রী, আসবাব, পোশাক থরে থরে সাজানো। আল্লার দুনিয়ায় কুত্তারা আরামও করে গেলো! এদের জন্য আবার আলাদা রেস্তোঁরা আছে। ভাবেন দেখি কেমন লাগে মেজাজটা! সেও আবার বিশাল খরচান্তের ব্যাপার। গৌরীসেনদের তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই।

কুত্তা বিলাই বৃষ্টির এক দিনে সবে নেমেছি রেলগাড়ি থেকে। রেইনকোট, ছাতা সব থেকেও জবুথবু অবস্থা, এমনি বৃষ্টি। ইস্টিশান থেকে বের হব বলে সিঁড়ি ভাংছি, দেখি দুই খালাম্মা ধরাধরি করে একটা প্যারাম্বুলেটর (বাচ্চা ঠেলার গাড়ি) নামাচ্ছে। নামাতে গিয়ে দুজনেরি দফারফা। হাত লাগাবো ভেবে পা বাড়াতেই চক্ষু চড়কগাছ ঠেলাগাড়ির যাত্রীকে দেখে। ফুটফুটে চেহারার নাদুসনুদুস একখান সারমেয়ছানা; আহ্লাদে চাঁদের আলোর মত গলে গলে পড়ছে। "শালা কুত্তা" বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। কুত্তাওয়ালী বোধহয় ভেবেছেন উনার জানের জান এর রূপের প্রশংসা করেছি। মুচকি হেসে ধন্যবাদ দিলেন। নিজে না পরলেও বৃষ্টির দিন এরা কুকুরকে বর্ষাতি পরাতে ভোলেনা। এপার্টমেন্ট ভাড়া নেবেন? "পেটওয়ালাদের" জন্য সুব্যবস্থা আছে। বাড়তি জায়গা, চড়া দাম। অনেকটা বঙ্গদেশীয় "সার্ভেন্টস কোয়ার্টারের" মত। বাপমার খবর নেয়না, পোষাপ্রানীর জন্ম মৃত্যুবার্ষিকী ঠিকই পালন করে। কম্যুনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে সে এক এলাহি কান্ড! এইখানে কুত্তা মরলেও লাখ টাকা। কবরের জায়গা কিনতে মালপানি বেরিয়ে যায় অনেক। দেখি আর ভাবি, ভাবি আর দেখি। কুকুরকে এরা মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। আমরাও এ দুপ্রজাতিকে সমান চোখেই দেখি। সেই দেখায় যে কতটা ফারাক, সে শুধু আমরাই জানি। হায়রে অভুক্ত বাঙ্গালি! মানুষ না হয়ে ধনীর দেশে কুকুর হয়ে জন্মালেও তো পারতি!

একটা প্রশ্ন অসংখ্যবার শুনেছি, তোমাদের দেশে জনপ্রিয় পেট কি? উত্তর দেব কি, কষ্টের হাসি হেসে এড়িয়ে যাই। আমাদেরও "পেট" আছে, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে। জ্বলন্ত চুল্লীর মত অসংখ্য পেট। বিনা পরিচর্যাতেই ওরা লকলক করে বেড়ে ওঠে, সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে। আমরাও কুকুর পুষি। সফেদ দাড়িওয়ালা, সুরমা চোখে দেয়া কুকুর। ভোট দেই, ভাগ্যবিধাতা বানাই। গাড়িতে লালসবুজ পতাকা উড়িয়ে শনশন করে ওদের পাজেরো ছুটে যায় আমাদের সামনে দিয়ে। ওরাও প্রভুভক্ত। দিনরাত নকশা কাটে সে প্রভুদের খুশি করতে।

আমি সো দেসকা দের মতো সেই "পেট" দের জন্য কবরের জায়গা কিনতে চাই, যত চড়া দামেই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৩
৪৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×