সামনে ১৬ ডিসেম্বর। আসছে বিজয় দিবস। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতীক আমাদের জাতীয় পতাকা।
১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে অনেকেই বাসা বাড়িতে, গাড়িতে, ডেস্কে, অফিসে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করবেন বা করছেন। কিন্ত আমরা কয়জন জানি এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে? বেশি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে হয়ত আমরা অবমাননা করে ফেলতেও পারি।
ইতিহাসঃ ( উইকিপিডিয়া থেকে)
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি করে এই পতাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন মধ্যের লাল বৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল, পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ করতেই, মানচিত্রটি বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাপানের জাতীয় পতাকার সাথে মিল রয়েছে, কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশের সবুজের স্থলে, জাপানীরা সাদা ব্যবহার করে। লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো হয়েছে, পতাকা যখন উড়বে তখন যেন এটি পতাকার মাঝখানে দেখা যায়।
আদি পতাকাটি এঁকেছিলেন স্বভাব আঁকিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ছাত্রনেতা শিবনারায়ন দাশ। আ.স.ম. আব্দুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ সালের মার্চ ০২ তে। শেখ মুজিবর রহমান মার্চ ২৩ তারিখে তাঁর বাসভবনে, স্বাধীনতা ঘোষনার প্রাক্কালে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ন দাশের ডিজাইন কৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
আমাদের জাতীয় পতাকাঃ
সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুঝ রঙ আমাদের দেশের সবুজ প্রকৃতি এবং তারুন্যের প্রতীক। লাল রঙ আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিক।
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত যথাক্রমে 10: 6। তারমানে পতাকা যদি লম্বায় ১০ একক হয় তাহলে প্রস্থে ৬ একক হবে। এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ একক।
মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: আসলে অনুপাতটা হল ১০:৬। এখন দৈর্ঘ্য বরাবর ১০ থেকে ১ বাদ তাহলে থাকতেছে ৯ । ৯/২=৪.৫ । তাহলে বাঁ দিক থেকে ৪.৫ একক দুরত্ব ও লম্বভাবে ৩ একক দুরত্বেই হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্র । ছবিটা দেখলেই ক্লিয়ার হবেন ।
পতাকার জমিন হবে গাঢ় উজ্জ্বল সবুজ এবং বৃত্তের রঙ হবে গাঢ় উজ্জ্বল কমলা রঙের।
বিল্ডিং এর জন্য জাতীয় পতাকার মাপঃ
(১) ১০ ফুট বাই ৬ ফুট
(২) ৫ ফুট বাই ৩ ফুট
(৩) আড়াই ফুট বাই দেড় ফুট
** ভবনের আকার অনুসারে জাতীয় পতাকার মাপ পরিবর্তনশীল। এবং অবশ্যই সরকারী অনুমতিতে।
গাড়ির জন্য পতাকার মাপঃ
(১) বড় গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫” বাই ৯”
(২) ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে ১০” বাই ৬”
ডেস্কের ক্ষেত্রেঃ
১০” বাই ৬” (international and bilateral conferences)
যেসব দিনে জাতীয় পতাকার উত্তোলন করা যাবেঃ
নিম্নোক্ত দিন সমূহে সব সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা পূর্ন উত্তোলন করা যাবেঃ
(১) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিনে (ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী)
(২) ২৬ মার্চ (স্বাধীনতা দিবস)
(৩)১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস)
(৪) সরকার ঘোষিত যেকোন দিনে
নিম্নোক্ত দিনে পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবেঃ
(১) ২১ ফেব্রুয়ারী(শহীদ দিবস)
(২) সরকার ঘোষিত যেকোন দিনে
ভবন,অফিস,গাড়ি এবং ইত্যাদীতে জাতীয় পতাকার ব্যবহারঃ
(১) সকল সরকারী অফিস আদালতে কর্ম দিন সমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত রাখতে হবে।
(২) নিম্নোক্ত ব্যক্তি সমূহের বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবেঃ
(a) The President.
(b) The Prime Minister.
(c) The Speaker of Parliament.
(d) The Chief Justice of Bangladesh.
(e) Cabinet Ministers.
(f) Chief Whip.
(g) Deputy Speaker of Parliament.
(h) The Leader of the Opposition in Parliament.
(i) Persons accorded the status of a Cabinet Minister.
(j) Ministers of State.
(k) Persons accorded the status of a Minister of State.
(l) Deputy Ministers.
(m) Persons accorded the status of a Deputy Minister.
(n) Heads of Diplomatic/Consular Missions of Bangladesh in
foreign countries.
(o) Chairmen of Parbattya Zilla Parishads of Rangamati,
Khagrachari and Bandarban
(৩) প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির গাড়ি, জলযান এবং বিমানে জাতীয় পতাকা ব্যাবহার বাধ্যতামূলক।
(৪) নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের গাড়ি এবং জলযানে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবেঃ
(a) The Speaker of Parliament.
(b) The chief Justice of Bangladesh.
(c) Cabinet Ministers.
(d) Chief Whip.
(e) Deputy Speaker of Parliament.
(f) The Leader of the Opposition in Parliament.
(g) Persons accorded status of a Cabinet Minister.
(h) Heads of Diplomatic/Consular Missions of Bangladesh in
foreign countries.
জাতীয় পতাকার মর্যাদাঃ
(১) জাতীয় পতাকার প্রতি সর্বদা সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে।
(২) জাতীয় পতাকা কোন যানবাহনের হুডের উপর, ছাদের উপর, পিছনে প্রদর্শন করা যাবে না।
(৩) অন্য দেশের পতাকার সাথে উত্তোলিত থাকা অবস্থায়ও জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
(৪) যদি দুইটি পতাকা থাকে তাহলে জাতীয় পতাকা ডান পাশে উত্তোলন করতে হবে।
(৫) একের অধিক পতাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মাঝখানে রাখতে হবে (বিজোড় সংখ্যক হলে) , মাঝখানের ডান পাশে উত্তোলন করতে হবে (জোড় সংখ্যক এর ক্ষেত্রে)
(৬) বাংলাদেশের পতাকার উপরে আর কোণ ধরনের পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
(৭) মিছিলে পতাকা বহনের ক্ষেত্রে পতাকা কেন্দ্রে অথবা সম্মুখের ডান পাশে বহন করতে হবে।
(৮) যদি দুইটি পতাকা একসাথে উত্তোলন করা হয় তাহলে বাংলাদেশের পতাকা আগে উত্তোলন করতে হবে এবং শেষে নামাতে হবে।
(৯) একের অধিক পতাকার ক্ষেত্রে সব গুলো পতাকা ভিন্ন ভিন্ন দন্ডে উত্তোলন করতে হবে এবং সবগুলোর সাইজ একই হতে হবে।
(১০) দন্ড বিহীন পতাকা ফ্ল্যাট ভাবে প্রদর্শন করতে হবে। রাস্তায় প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভার্টিক্যালী প্রদর্শন করতে হবে
(১১) পতাকা কখনো ভূমি স্পর্শ করতে পারবে না
(১২) পতাকা এমন কোন স্থানে রাখা যাবে না যেখানে এর কোন প্রকার ক্ষতি হবে বা অসম্মান হবে
(১৩) কোন কিছু দেয়ার বা নেয়ার সময় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
(১৪) পতাকা যদি আর ব্যবহার যোগ্য না থাকে তাহলে যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত পতাকা কে মাটিতে পুঁতে বা কবর দিতে হবে।
(১৫) সরকারী অনুমতি ব্যতিত পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না
সাধারণ নির্দেশিকাঃ
• পতাকা সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উত্তোলিত রাখা যাবে(যানবাহন এবং রাত্রিকালিন সরকারি অনুষ্ঠান ব্যতিত)
• পতাকা গাড়িতে ব্যবহারের সময় এর দন্ড চ্যাসিস বা র্যা ডীয়েটর ক্যাপের সাথে ভালভাবে সংযুক্ত রাখতে হবে
• জাতীয় পতাকার উপর কোন কিছু আঁকা লিখা সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ
• আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সের পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম আছে
আসুন আমরা পতাকার ব্যবহার জানি। পতাকাকে সম্মান করি। এবং সবাই আশেপাশে খেয়াল রাখি যেন আমাদের জাতীয় পতাকার সম্মান নষ্ট না হয়।
সব তথ্য উইকিপিডিয়া এবং PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH FLAG RULES, 1972 থেকে নেয়া।