somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা রিভেঞ্জ (পার্ট ০৩) (গল্প)

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

“তারমানে আপনি বলতে চাইছেন অভীক চৌধুরী আর মিস জয়িতা চৌধুরী সম্পর্কে ভাই-বোন?”

স্যান্ডউইচে এক কামড় দিয়ে কফি গিলতে গিলতে ডিটেকটিভ শাকিল মাহমুদ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলো সামনে বসা ডাঃ তানিয়ার উদ্দেশ্যে।

“তাদের পিতা যেহেতু একজনই তাহলে তো সেটাই হওয়া উচিত।” চোখ মটকে উত্তর দিলেন ডাঃ তানিয়া।

সকালবেলা তেমন ভিড় নেই ফরেনসিক ল্যাবের রাস্তার বিপরীতের ছোট্ট ক্যাফেটায়। সকাল বেলায় ডাঃ তানিয়ার ফোনকলটা শাকিল মাহমুদকে আর ঘরে থাকতে দেয়নি। তড়িঘড়ি করে ছুটে আসায় এখন বাধ্য হয়ে এখানেই বসে সকালের নাস্তাটা চালিয়ে নিচ্ছে শাকিল। আর কোন প্রশ্ন না করে চুপচাপ খাওয়াটা শেষ করল শাকিল। খাওয়া শেষ করে পকেট থেকে লাইটার আর সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে করল সে। সিগারেট বের করে সেটা জ্বালিয়ে একটা আয়েশের টান দিয়ে ডাঃ তানিয়া দিকে তাকালো শাকিল।

- পুরো ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলেন।

- জ্বী বলছি।

কফির মগে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললেন ডাঃ তানিয়া। চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। আর সেটার কারণ যে সামনে বসা শাকিল মাহমুদের সিগারেট সেটা বুঝতে পেরেই একটু ইতস্তত ভঙ্গীতে নড়েচড়ে বসল শাকিল। সিগারেট খাওয়া দেখতে পারেনা এমন মানুষের সামনে বসে সিগারেট খাওয়াটা একটু অস্বস্তিকর। শাকিল ঠিক বুঝতে পারলো না তার কি বলা উচিত বা কি করা উচিত। খাওয়ার পর একটা সিগারেট না খেলেই নয় বলে সিগারেটটা এখনো ফেলছে না সে। তাকে বাঁচাতেই কথা শুরু করলেন ডাঃ তানিয়া…

- আমি কিছু রুটিন চেক টেস্ট করতে গিয়ে মিস জয়িতা আর কবির চৌধুরীর মাঝে মিল পাই। পরে তাদের ডিএনএ টেস্ট করাতেই আমার সন্দেহ সঠিক প্রমানিত হয়।

- আপনি কি শিওর এই ব্যাপারটা নিয়ে?

উত্তর দিলেন না ডাঃ তানিয়া। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন শাকিলের দিকে। শাকিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে। প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে শাকিলের দিকে তাকিয়ে থাকার পরও যখন কোনো কথা বলছিলেন না তখন শাকিল টেবিলে আঙুল দিয়ে দুবার টোকা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে বললো…

- হ্যালো, মিস তানিয়া?

ধ্যান ভাঙল যেন হঠাৎ ডাঃ তানিয়ার।

- ওহ, সরি। কি বলছিলেন যেন?

- জানতে চাচ্ছিলাম, আপনি কি কবির চৌধুরী আর জয়িতা চৌধুরীর সম্পর্কের ব্যাপারটা নিয়ে শিওর?

- জ্বী, আমি শিওর।

বলেই আবার শাকিলের দিকে আগের দৃষ্টিতে তাকালেন ডাঃ তানিয়া। এবার শাকিল ব্যাপারটা ভালোভাবে খেয়াল করলো।

- কোনো সমস্যা, মিস তানিয়া?

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে ঈশারায় চুপ করার নির্দেশ দিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগটার মধ্যে কি যেন খুঁজতে শুরু করলেন ডাঃ তানিয়া। ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে, সামনে থেকে টিস্যু পেপার টেনে নিয়ে কি যেন লিখতে শুরু করলেন তিনি। যদিও শাকিল কিছুই বুঝতে পারছিল না, কিন্তু তার লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। লেখা শেষ হতেই সামনের দিকে টিস্যু পেপারটা ঠেলে দিলেন ডাঃ তানিয়া।

“আপনার ঠিক পেছনের দিকের টেবিলটায় বসা লোকটা আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে”

এটুকুই লেখা ছিলো টিস্যু পেপারটাতে। ঝট করে পেছনে তাকিয়ে লোকটাকে সতর্ক করার কোন ইচ্ছাই নেই শাকিলের। সে আরামসে সিগারেট টানতে টানতে টিস্যু পেপারটা ভাঁজ করতে লাগলো। ভাঁজ করা শেষ হলে সেটা পকেটে চালান করে দিল। কোমরে হাত দিয়ে ‘জিনিস’টার অবস্থান নিশ্চিত করে ডাঃ তানিয়ার উদ্দেশ্যে সে বলল…

- চলুন, ওঠা যাক।

দুটো ছানাবড়া চোখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন ডাঃ তানিয়া। সে চোখে প্রশ্নও আছে। সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে পেছন ফিরে ওয়েটার কে ডাকতে উদ্যত হল শাকিল…

- এক্সকিউজ মি, বিল প্লিজ।

বলেই স্বাভাবিক ভঙ্গীতে আবার সামনে ফিরল শাকিল। এর মাঝে এক ঝলক দেখে নিয়েছে পেছনে বসে থাকা লোকটাকে। পরনে ব্লু জিন্স, ক্যাজুয়াল শার্ট, মাথায় হ্যাট। গরমের মধ্যেও মুখটা মাফলার দিকে ঢেকে রেখেছে লোকটা। মাফলার আর হ্যাটের কারণে পুরো চেহারাটাই ঢেকে আছে তার। মনে মনে একটা প্ল্যান করে ফেলল শাকিল। ক্যাফে থেকে বের হবার একমাত্র দরজাটা ডাঃ তানিয়ার পেছনে। ডাঃ তানিয়াকে দরজাটা কাভার দেয়ার ইঙ্গিত করে বললেন…

- আপনি যান, আমি আসছি।

ডাঃ তানিয়া উঠতেই শাকিলের পেছন দিক থেকে চেয়ার টানার শব্দ হল। দেরী না করে শাকিলও এক ঝটকায় কোমর থেকে রিভলবারটা বের করতেই দেখলো পেছনে লোকটা প্রায় দরজার কাছে পৌছে গেছে। লোকটার দিকে রিভলবার তাক করেও গুলি করতে ইতস্তত করছে শাকিল। কারণ লোকটার অবস্থান আর ডাঃ তানিয়ার অবস্থান এই মুহূর্তে খুব কাছাকাছি। ডাঃ তানিয়া তাকে বাঁধা দেবার উদ্যত হতেই লোকটা প্রচন্ড ঝটকায় ডাঃ তানিয়াকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বের হয়ে যায়। শাকিল দৌড়ে ডাঃ তানিয়ার কাছে গেল।

- আপনি ঠিক আছে?

- হুম, একদম।

যদিও তার চেহারায় ব্যাথার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ডাঃ তানিয়াকে দেখবে নাকি লোকটার পিছু নেবে এটা ভাবতেই দ্বিধায় পড়ে গেল শাকিল। তার মনের কথাটা বুঝতে পেরে ডাঃ তানিয়া প্রায় ফিসফিসিয়ে বললেন…

- আপনি আপনার দায়িত্বটা পালন করুন, আমি একদম ঠিক আছি।

- ওকে, আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এটা বলেই একটা শুকনো হাসি হেসে ছুটে বেরিয়ে গেল শাকিল।

বাইরে বের হতেই দেখলো তার গাড়ি থেকে ৩০-৪০ গজ সামনে হোন্ডা সিবিজেড মডেলের বাইকটা স্টার্ট করে ফেলেছে লোকটা। এই মুহূর্তে তাকে দৌড়ে ধরাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা বলে মনে করলো শাকিল। সে দ্রুত তার গাড়ির কাছে পৌছে ড্রাইভার কোনমতে নির্দেশ দিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠে গাড়িটা স্টার্ট দিলো। ততক্ষণে লোকটা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে।

ভার্সিটি লাইফে খুব রাফ এন্ড টাফ কিন্তু দক্ষ হাতে গাড়ি চালানোর জন্য বন্ধুমহলে একটা সুনাম ছিল শাকিল মাহমুদের। আজ আবার সেই পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এটা ভেবেই ভেতরে চেপে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা ‘হুফ’ করে ছেড়ে অটোম্যাটিক গিয়ার লিভারটা পেছনের দিকে টেনে গাড়ি আগে বাড়ালো শাকিল।

১০ মিনিট ধরে বাইকটাকে ধাওয়া করার পর, ডিটেকটিভ শাকিল মাহমুদ স্বীকার করতে বাধ্য হল যে লোকটা অসাধারণ বাইক চালায়। এতোক্ষণ তার পিছু নিয়ে বাইক আর গাড়ির দূরত্ব বলতে গেলে এক চুলও কমাতে পারেনি শাকিল। এই মুহূর্তে তারা আছে খিলক্ষেত-এয়ারপোর্ট সড়কে। বাইকটা এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। এটাই সুযোগ। রাস্তা প্রশস্ত হবার কারণে গাড়ির স্পীড বাড়ানোর সুযোগটা পেয়ে আর মিস করলো না শাকিল। এক্সিলেটর সর্বোচ্চ শক্তিতে চেপে ধরায় ইঞ্জিন গোঁ গোঁ করতে করতে লাগলো। আস্তে আস্তে গাড়ির স্পীড বেড়ে ১৩০ এর কাঁটা ছুঁই ছুঁই করছে। চারপাশের গাড়িগুলো হোস হোস শব্দে পেছনে চলে যাচ্ছে, সেই সাথে কমে যাচ্ছে বাইকের সাথে দূরত্ব। ৪০ সেকেন্ড এভাবে চালানোর পর যখন দূরত্ব কমে ১০ গজের মত আসল, তখন শাকিল বাইকটার নাম্বার প্লেট দেখার ট্রাই করলো। কিন্তু নাম্বার প্লেটের জায়গাটা খালি দেখে তার মুখ থেকে একটা অশ্লীল গালি বেরিয়ে এল। তার পরপরই প্রচন্ড হতাশ হয়ে গতি কমাতে বাধ্য হল শাকিল। কারণ তারা প্রায় চলে এসেছে এয়ারপোর্ট স্টপেজে। এখানে গাড়ির প্রচুর ভিড়, এখনি স্পীড না কমালে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই সুযোগে বাইকটা খানিকটা এগিয়ে গেল। কিন্তু শাকিল মাহমুদও হাল ছাড়ার পাত্র না। দক্ষতার সাথে গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে আবার বাইকটার পিছু নিল সে।

“ধ্যাত...”

হতাশায় শব্দটা অটোম্যাটিকেলি মুখ দিয়ে বেরিয়া আসলো শাকিলের যখন দেখলো বাইকটা জসীমউদ্দিন থেকে বাঁদিকে টার্ন নিয়ে উত্তরা ৩নং সেক্টরের ভেতরে চলে যাচ্ছে। সেক্টরের ভেতর অন্তত ৩০ টা রাস্তা আছে। সেখানে তাড়া করে একটা বাইক ধরে ফেলা খুব কঠিন কাজ। তাও শাকিল বাঁদিকে টার্ন নিয়ে বাইকটা খোজার চেষ্টা করলো, কিন্তু সামনে কোন বাইক দেখতে পেল না।

১০-১৫ মিনিট এ গলি ও গলি খুঁজে শাকিল বুঝতে পারলো খুঁজে লাভ নেই, পাওয়া যাবেনা। গাড়িটা রাস্তার একপাশে থামিয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য বের হল শাকিল। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখলো সিগারেটের প্যাকেটটাও নেই, তাড়াহুড়োও রেস্টুরেন্টে ফেলে এসেছে। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো তার। আবার একটা গালি দিয়ে আশেপাশে দোকান খুঁজতে সামনে এগোল।

সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে লাগলো স্থানীয় পুলিশকে ব্যাপারটা জানাবে কিনা। কিন্তু ব্যাপারটাতে কাজ হবেনা ভেবে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেললো। স্থানীয় পুলিশের কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো এস আই মিজানের কথা। সকালে সে একটা নিউজ দিয়েছিল আপাতত সেটা নিয়েই আলোচনা করবে ভেবে মিজানকে ফোন দিয়ে জসীমউদ্দিন আসতে বলল। মিজান জানালো সে ২০ মিনিটের মাঝে পৌঁছে যাবে।

মিজানের সাথে কথা শেষ করে শাকিল ভাবল পরবর্তী কি কি কাজ করতে হবে। প্রথমত ডাঃ তানিয়াকে ফোন দিয়ে তার খোঁজ নেবে এবং তারপর মিজানকে সাথে নিয়ে জাহানারা চৌধুরীর বাসায় যাবে ঠিক করল।

ডাঃ তানিয়াকে ফোন করে জানা গেল তিনি ঠিক আছেন, শুধু বাঁ পায়ের গোড়ালি মচকে গেছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার শুভকামনা করে ফোন রাখলো শাকিল। ফোন রাখার মিনিট পাঁচেক এর মাঝে মিজান চলে আসলো, হাতে একটি চামড়ার ব্যাগ।

- স্লামালিকুম স্যার।

- ওয়ালাইকুম আসসালাম। গাড়িতে ওঠ।

গাড়ি চালাতে চালাতে মিজানকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। মিজান চিন্তিত মুখে বলল...

- আমার মনে হয় এই ঘটনার সাথে জোড়া খুনের কোন সম্পর্ক নেই, স্যার।

- এটা মনে হল কেন তোমার?

- কারণ স্যার, আমি এই ২ দিনে একটা চমকপ্রদ খবর পেয়েছি। যেটার সাথে জয়িতা চৌধুরী এবং কবির চৌধুরীর খুনের ব্যাপারটার সম্পৃক্ততা থাকার একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

- কি সেটা?

- ৩ বছর আগে খান গ্রুপের মালিক মিঃ রাহাত খানের স্ত্রীর ৩ কোটি টাকা মূল্যের ডায়মন্ডের নেকলেস চুরির ঘটনাটা কি আপনার মনে আছে?

- হুম, মনে আছে। নেকলেসটা চুরি হয় একটা ম্যাজিক শো থেকে, যেখানে রাহাত খানের স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আর শো’টা হোস্ট করছিল বিখ্যাত ম্যাজিক গ্রুপ “রয়্যাল মিস্ট্রী”। পরে তদন্ত করে জানা যায় ঐ নেকলেস চুরির সাথে “রয়্যাল মিস্ট্রী” জড়িত এবং বিচারে তাদের ২ জন কর্মকর্তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্তু ঐ চুরির সাথে এই জোড়া খুনের সম্পর্ক কি?

- সম্পর্ক আছে স্যার। ঐ চুরি নিয়ে একটা কাভার স্টোরী করেছিল জয়িতা চৌধুরী, যার ফলোআপে ঐ ম্যাজিক গ্রুপের বিভিন্ন শহরে যাওয়া আর সে শহরে ঐ সময়ে চুরির ঘটনাগুলোর সাথে ম্যাজিক গ্রুপটার জড়িত থাকার রহস্য উন্মোচন করেন তিনি। ফলোআপের সবগুলো নিউজ সত্য ছিলো না, কিন্তু পাবলিসিটির জন্য কবির চৌধুরী আর জয়িতা চৌধুরী মিলে মিথ্যা খবর গুলো তাদের মিডিয়ায় প্রচার করে গেছেন। তাদের এই ফলোআপের পরে সারা দেশবাসী “রয়্যাল মিস্ট্রী”র সম্পর্কে জানতে পারে।

- বলে যাও।

- “রয়্যাল মিস্ট্রী” তাদের খ্যাতি হারিয়ে ফেলে আস্তে আস্তে এবং একটা সময় পর পুরো গ্রুপটাই গায়েব হয়ে যায়। “রয়্যাল মিস্ট্রী”র ফাউন্ডার ছিলেন আশরাফুল আমীন, উনি শুধু ফাউন্ডারই না, বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ানও ছিলেন। উনি ছিলেন বাঁহাতি আর ম্যাজিক শো’তে তিনি সবসময় একটা মুখোশ পরে থাকতেন। আর সেটা...

এইটুকু বলে চুপ হয়ে গেল মিজান। ব্যাগ থেকে মুখোশটা বের করে শাকিলকে দেখিয়ে বলল...

- হুবহু এই মুখোশটার মত।

মিজানের হাতে ধরা জয়িতা এবং কবির চৌধুরীর লাশের পাশে পাওয়া মুখোশটা। এখনো বিদ্রুপের হাসি হাসছে মুখোশটা।

- বাহ ! মিজান, তোমার তো আসলে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে জয়েন করা উচিত। তোমার কাজের ধরন দেখে আমি মুগ্ধ। আমি নিজে তোমার ব্যাপারে সুপারিশ করবো ডিপার্টমেন্টে, যেন তোমাকে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার করা হয়।

- ধন্যবাদ স্যার।

লাজুক হেসে মিজান উত্তর দিল। হাসলও শাকিল মাহমুদও, তবে তার হাসিটা একটু অন্যরকম ছিল। হতে পারে সেটা ঈর্ষার বা অন্যকিছুর।

- তাহলে এখন আর আমাদের সময় নষ্ট করা উচিৎ হবেনা। জাহানারা চৌধুরীর কাছে যাওয়ারও আপাতত কোনো দরকার দেখছি না। এখন আমাদের আসল কাজ আশরাফুল আমীনকে খুঁজে বের করা। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি এখন কোথায় যাবে?

- স্যার, আমাকে বাসায় যেতে হবে। আমার স্ত্রী আজকে বাবার বাড়ি থেকে এসেছে। তাকে নিয়ে একটু বাইরে যাবার কথা ছিলো বিকেলে।

- আচ্ছা চলো, আমি তোমাকে নামিয়ে দেই, সেই সাথে তোমার স্ত্রীর সাথে পরিচয়টাও হয়ে যাবে।

- সমস্যা নেই স্যার, আমি যেতে পারবো।

- আহা চলো, আমার হাতে তেমন কোন কাজ নেই আজ।

- না স্যার। আমি বরং অন্য একদিন আমার স্ত্রীর সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেব।

কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থেকে তারপর হা হা করে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হেসে শাকিল মিজানকে বলল...

- আচ্ছা, ঠিক আছে, পরে দেখা হবে। ও একটা ভালো কথা তুমি কি আশরাফুল আমীনকে চেনো? মানে তার চেহারা কেমন সেটা জানো?

- জ্বী স্যার। কেন আপনি চেনেন না তাকে?

- না, আমি তার নাম শুনেছি কিন্তু তার চেহারা কেমন সেটা জানি না। তুমি যদি এখন কোন রাস্তার ভিখারীকে দেখিয়েও বল এটা আশরাফুল আমীন তাও আমি বিশ্বাস করব। হা হা হা। আচ্ছা চলি।

মিজান গাড়ি থেকে নামার পর গাড়িটা কিছুদূর সামনে নিয়ে গিয়ে রাখল শাকিল। তারপর ফোন বের করে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট টুম্পাকে ফোন দিল। একটা অ্যাড্রেস ইমারজেন্সী জানানোর কথা বলে ফোনটা রাখল শাকিল।

একটা সিগারেট ধরিয়ে মনে উঁকি দেয়া সম্ভাবনাটা খুটিয়ে দেখতে লাগলো সে। মিনিট তিনেক পর টুম্পা অ্যাড্রেসটা জানালে, মুচকি হেসে গাড়িটা ইউটার্ন নিয়ে উত্তরার দিকে আবার রওনা হলো শাকিল মাহমুদ।





..............................................................................................................................





রাত ১টা বাজে।

আজ সারাদিনের কাজ আর সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাটা খুটিয়ে ভাবতে লাগলো শাকিল। সবকিছুই ঠিক আছে, কিন্তু পুরো মোটিভটা খুঁজে পাচ্ছে না শাকিল। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো doinikbarta.com এর পুরানো নিউজগুলো ঘাঁটলে ব্যাপারটা ক্লীয়ার হতে পারে।

ল্যাপটপ আর সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে সে যখন বারান্দায় এসে বসলো তখন রাত ২ টা বাজে।

অনলাইনের মিডিয়া গুলোয় এটা অনেক বড় একটা সুবিধা যে চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে এক যুগ আগের পাবলিশড খবর গুলাও পাওয়া যায়।

কবির চৌধুরী আর জয়িতা মিলে অপকর্ম কম করেনি, অনেক বানোয়াট নিউজ খুঁজে পেল শাকিল। কিন্তু এসব পড়ার মত সময় তার নেই, সে খুঁজতে লাগল তার কাঙ্খিত খবরটি।

অনেকক্ষণ ধরে খোঁজার পর শাকিল পেয়ে যায় সেই কাঙ্খিত নিউজটি। ব্যস, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটা নিখুঁত ভাবে দাঁড় করিয়ে ফেলল শাকিল, সময় লাগলো পাক্কা দেড় ঘন্টা।

রাত পেরিয়ে যখন চারিদিক আলো ফুটতে শুরু করলো, শাকিলের হাতে তখন ১৩ নাম্বার সিগারেটটি জ্বলছে। খুনি তার এতো কাছের কেউ হবে সেটা শাকিল ভাবতেই পারেনি।

“কালকেই হবে তোমার শেষ দিন”

মনে মনে এটা ভাবতে লাগলো, আর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো শাকিল মাহমুদের…

(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×