somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা রিভেঞ্জ (পার্ট ০২) (গল্প)

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

“DO NOT CROSS !!! DO NOT CROSS !!! DO NOT CROSS !!! DO NOT CROSS !!!”



মোটামুটি ১০ স্কয়ার ফুট জায়গা আটকে ফেলা হয়েছে হলুদ রঙের এই ওয়ার্নিং টেপ দিয়ে। টেপটা ডিঙ্গিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল শাকিল মাহমুদ। ভেতরে একটা লাশ।

কবির চৌধুরীর লাশ !!!

গতকাল দুপুরেও তার সাথে তার অফিসে কথা বলছে শাকিল, জয়িতা চৌধুরীর খুনের ব্যাপারে। জয়িতার খুনের ব্যাপারে যে কবির চৌধুরীকে গতকালও সন্দেহ করে আসছিল শাকিল, ২০ ঘন্টার ব্যবধানে সেই কবির চৌধুরী কিনা নাম পাল্টে মরহুম কবির চৌধুরী হয়ে গেল?

পাশেই একটা মেয়ের (সম্ভবত রিপোর্টার) ‘ওয়াক ওয়াক’ শুনে তাকিয়ে দেখল মেয়েটা হড়হড় করে বমি করছে। তার কারণ যে লাশটা সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেন যে এই কোমল মনের মেয়েগুলা এইসব পেশায় আসে সেটা আরেকবার ভেবে মাথা নাড়তে নাড়তে লাশটার দিকে তাকাল শাকিল।

লাশটার দিকে তাকানোর মত অবস্থা নেই আসলে। মুখ বাঁধা, সারা শরীর রক্তে মাখা। শরীরে ক্ষত যে কতগুলো হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। উপর্যুপরি কোপানো হয়েছে তাকে, জায়গায় জায়গায় হুলদেটে চর্বি বীভৎস ভাবে বের হয়ে আছে, তার ওপর সেগুলোর ওপর রক্ত জমে নোংরা একটা রঙ সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল, জয়িতা চৌধুরীর লাশটার সাথে কবির চৌধুরীর লাশটার একটা বড় মিল আছে। সেটা হল, কবির চৌধুরীর চোখও উপড়ে ফেলা হয়েছে। চোখ না থাকায় চোখে আতংক থাকার ব্যাপারটা না থাকলেও, ভিক্টিমের মুখের দিকে তাকালেই তার মৃত্যু যন্ত্রণাটা টের পাওয়া যায়। চোখহীন রক্তাক্ত গর্তগুলোর ওপরে মাছি ভনভন করছে। হঠাৎ একটা গন্ধ এসে ভক করে নাকের মাঝে ঢুকে গেল, জমাট বাঁধা রক্তের গন্ধ, একদম পেট গুলিয়ে ওঠে।এরকম বীভৎস একটা লাশ ও জমাট বাঁধা রক্তের গন্ধে হঠাৎ মাথাটা ঝিম করে উঠলো ডিটেকটিভ শাকিলের। রিপোর্টার মেয়েটাকে আসলে খুব একটা দোষ দেয়া যায়না।

লাশটার পাশ থেকে উঠে আসতে যাবে এমন সময় তার চোখে পড়ল, একটা মুখোশ, ওয়ার্নিং টেপের থেকে বেশ খানিকটা দূরে। হুবহু সেই মুখোশটির মত, যেটি পাওয়া গিয়েছিল জয়িতা চৌধুরীর লাশের পাশে। একদিকে কাত হয়ে থাকা মুখোশটি যেন তার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে। মুখোশটি হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতেই হঠাৎ শুনলো কাশির শব্দ, তারপরেই সালাম...

- স্লামালিকুম, স্যার।

- ওয়ালাইকুম সালাম। চলে এসেছো?

মিজানকে ফোন করে পাঠানোর কথা আগেই বলে রেখেছিল শাকিল। তাকে আঙুল দিয়ে লাশের দিকে ইশারা করল। মিজান লাশের দিকে হাঁটতেই, শাকিল সামনে বাড়লো। উদ্দেশ্য কবির চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলা।

কবির চৌধুরীর স্ত্রী আর মেয়ের সাথে কথা বলার মত অবস্থা নেই। মা একটু পর পর ফিট পড়ছে আর মেয়ে তার পাশে বসেই কাঁদছে। আপন মানুষের এইরকম নৃশংস মৃত্যুতে আসলে মাথা ঠিক রাখাটা মুশকিল। তবে কবির চৌধুরীর ছেলে আশ্চর্য রকম শান্ত। হয়ত অধিক শোকে ছেলেটা নিশ্চুপ, কিংবা ছেলে মানুষ বোধহয় এমনই, যত কষ্টই পাক না কেন, চোখ দিয়ে পানি পড়ে না। শাকিল কবির চৌধুরীর ছেলেকে একটু দূরে ডেকে এনে বিব্রত ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করল শাকিল।

- দেখুন, আমি আসলে খুবই দুঃখিত এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আপনাকে ডেকে এনে কথা বলার জন্য। আমি শাকিল মাহমুদ, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। আপনি মিঃ...

- অভীক, অভীক চৌধুরী।

বলে করমর্দনের জন্য বাঁ হাতটা বাড়িয়ে দিল অভীক। আবার বলতে শুরু করলো...

- ইটস ওকে, অফিসার। আপনি যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন, আমি শুধু বাবার খুনের বিচার চাই।

- আমরাও চাই। আচ্ছা, সর্বপ্রথম লাশটা কে দেখেছেন?

- আমি, ভোর ৬ টার দিকে আমি বাগানে হাঁটতে বের হয়ে বাবার লাশটা দেখতে পাই।

- অতো ভোরে আপনি বাগানে কি করছিলেন?

- আমি কয়েকদিন ধরে একটু মনোকষ্টে আছি, আর তাছাড়া আমার ইনসমনিয়ার প্রবলেম আছে। রাতে ঘুম হয়না খুব বেশি।

- হুম, আর ওনাকে শেষ দেখতে পেয়েছিল কে?

- আমিই শেষ দেখতে পাই।

- কখন?

- রাত ৩ টার দিকে। বাবা বারান্দা দিয়ে হেঁটে বাগানের দিকে যাচ্ছিলেন।

- অতো রাত অব্দি তিনি জেগে ছিলেন কেন?

- বাবা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশোনা করেন তার স্টাডিরুমে। বাবার স্টাডি রুমটা আমার বেডরুমের পাশেই।

- আপনার মনে কি একবার ও প্রশ্ন জাগেনি অত রাতে তিনি কোথায় যাচ্ছিলেন?

- আমারও একটু খটকা লেগেছিল ব্যাপারটা কিন্তু গত ১৫-২০ দিন ধরে বাবার সাথে আমার একটু ঝামেলা চলছিল, তাই আমি আর বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি

- কি ঝামেলা চলছিল মিঃ অভীক?

- ব্যাপারটা একটু ব্যক্তিগত।

- দেখুন মিঃ অভীক, আপনার বাবার খুনের ব্যাপারে আমরা ইনভেস্টিগেশন করছি, সুতরাং আপনি যদি কিছু লুকান তাহলে আমাদের পক্ষে আপনার বাবার খুনিকে খুঁজে বের করা হয়ত সম্ভব হবেনা।

- আসলে সমস্যাটা আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে, বাবা চাচ্ছিলেন না তারই অফিসের কোন স্টাফকে আমি বিয়ে করি।

- কিছু মনে করবেন না, আপনার গার্লফ্রেন্ড এর নাম?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে অভীক বলল...

- গার্লফ্রেন্ড ছিল, এখন আর নেই। কারণ সে এখন আর পৃথিবীতেই নেই... তার নাম... জয়িতা চৌধুরী।

কানের পাশে যেন একটা বোমা ফাটল শাকিল মাহমুদের। জয়িতা চৌধুরী অভীক চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড ছিল ! এই তথ্যটা কীভাবে সে জানলো না? কবির সাহেব পুরো ব্যাপারটা চেপে গেছেন, কারণ তিনি চাচ্ছিলেন না ব্যাপারটা ছড়াক। তার না বলার পেছনে মোটিভ আছে। কিন্তু জয়িতার মা কেন জানালেন না অভীকের ব্যাপারটা? তবে তিনি অভীকের সাথে তার মেয়ের সম্পর্কের কথা জানতেন না? নাকি তিনিও গোপন করেছিলেন কবির চৌধুরীর মত? পুরো ব্যাপারটা গোলমেলে লাগছে এখন শাকিলের কাছে। খোলাসা হবার জন্যে প্রশ্ন করল অভীক চৌধুরীকে...

- আপনার আর জয়িতা চৌধুরীর সম্পর্কটা কতদিনের? কে কে জানত এই সম্পর্কের কথা?

- আমার আর জয়িতার সম্পর্ক ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরু থেকে,মানে ৭ বছরের কিছু কম হবে। আর এই সম্পর্কের কথা সবাই জানত।

- জয়িতা চৌধুরীর মা? উনি জানতেন?

- হ্যাঁ, উনিও জানতেন। প্রথম প্রথম উনি চাইলেও শেষ দিকে উনিও চাইতেন না আমাদের সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াক।

- কেন চাইতেন না বলে আপনি মনে করেন?

- সেটা আমি বলতে পারবোনা।

- হুম। আচ্ছা, আপনি কি খুন দুটোর মাঝে কোন মিল খুঁজে পান?

- আমার ধারণা দুটো খুনের মাঝে একটা যোগসাদৃশ আছে। কি মিল আছে সেটা ডেডবডি দুটো দেখলেই বোঝা যায়। আমি আর সেটা বলতে চাচ্ছিনা।

- ওকে। আচ্ছা আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?

- না, অফিসার সেরকম কেউ নেই। বাবা নিরীহ গোছের মানুষ ছিলেন। আসলে মিডিয়ার সাথে জড়িত মানুষের শত্রুর অভাব হয়না। নির্দিষ্টভাবে বাবার কোন শত্রু ছিলোনা।

- আচ্ছা, ঠিক আছে, মিঃ অভীক। ধন্যবাদ আপনাকে। আপাতত আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই আপনাকে, তবে প্রয়োজন হলে আপনাকে আমার অফিসে আসতে হবে। আর পোস্টমর্টেম এর জন্যে আমরা ডেডবডিটাকে নিয়ে যাবো, আপনাদের কোন সমস্যা আছে?

- না, অফিসার। আমি শুধু আমার বাবার খুনের বিচার চাই।

- জী, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবো, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার ছোট বোনের সাথে একটু কথা বলার প্রয়োজন ছিল। তাকে একটু পাঠিয়ে দেবেন।

- জী অফিসার, আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এতটুকু বাচ্চা একটা মেয়ে, বয়স ১৭-১৮ হবে, এর সাথে ঠিক কি কথা বলবে ভেবে পাচ্ছে না শাকিল। কান্না থামাতেই পারছে না মেয়েটা। তাকে কান্না থামানোর সময় দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো শাকিল। সিগারেট শেষ হতে হতে মেয়েটার কান্না থেমে যায়। ফিল্টারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে কথা শুরু করলো শাকিল।

- আপনার নাম কি?

- ঐন্দ্রিলা।

হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল মেয়েটা।

- আচ্ছা, আপনি দয়া করে কান্নাটা থামিয়ে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।

- জী, বলুন।

দমকে দমকে কান্নার কারণে সে ঠিকমত কথাই বলতে পারছিল না। তার কাছ থেকে এটুকু জানা গেল যে, অভীক চৌধুরীর সাথে জয়িতার চৌধুরীর সম্পর্কটা খোলাখুলিই ছিলো। অভীক খুবই সিরিয়াস ছিল জয়িতার ব্যাপারে। জয়িতা প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসতো, যদিও শেষদিকটায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। শেষটায় জয়িতা চাচ্ছিল না সম্পর্কটা রাখতে, মাঝেমধ্যেই ফোনে জয়িতার সাথে ঝগড়া করতো অভীক, যেটার আওয়াজ শুনতে পেত ঐন্দ্রিলা। আর একটা ইম্পরট্যান্ট জিনিস জানা গেল। তা হল, অভীকের সাথে তার বাবার মনোমালিন্য হওয়ার কারণ শুধু জয়িতা চৌধুরী নয়। গতকাল রাতে ব্যবসার জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়েছিল অভীক, কিন্তু বারবার ব্যবসার নামে টাকা নিয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে টাকা উড়ায় বলে কবির চৌধুরী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় অভীক আর কবির চৌধুরীর মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।

ঐন্দ্রিলা চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে শাকিল একটা সিগারেট ধরালো। হাতের মুখোশটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। সামনে দেখতে পেল এস আই মিজান এগিয়ে আসছে। তাকে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করল শাকিল...

- লাশটা দেখেছো?

- জ্বী, স্যার।

- কি মনে হল তোমার?

- দেখে তো মনে হল খুন দুটো একজনই করেছে। মুখোশটা আর অত্যাচারের নমুনা সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

- মুখোশটা কিন্তু ধোঁকা দেয়ার জন্যেও হতে পারে।

- জ্বী, স্যার সেটাও হতে পারে।

- আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? খুন হয়েছে এমন দুজন যারা একই মিডিয়ায় কাজ করে। এমনও তো হতে পারে পুরনো কোন শত্রু হয়ত প্রতিশোধ বশঃত খুনগুলা করছে?

এই কথায় বেশ চিন্তিত দেখা গেল মিজানকে।

- স্যার, মুখোশটা কি একটু দেখতে পারি?

হঠাৎ এ কথা বলে বাঁ হাতটা বাড়িয়ে দিল মিজান। হাতের দিকে খেয়াল করতেই শাকিল দেখতে পেল মিজানের ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজ করা।

- তোমার হাতে কি হয়েছে?

মুখোশটা বাড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল শাকিল।

- ও কিছু না স্যার। গতকাল থেকে আমার স্ত্রী বাড়িতে নেইতো, তাই রান্না করার জন্য সবজি কাটতে গিয়ে চাকু দিয়ে হাত কেটে ফেলেছি। স্যার, মুখোশটা কি আমি একদিনের জন্য রাখতে পারি? আসলে আমি এটা নিয়ে একটু স্টাডি করতে চাচ্ছিলাম।

- হুম, রাখো। আর শোনো, ডেডবডি পোস্টমর্টেম এর জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। ওদেরকে সব বলা আছে, কোন সমস্যা হবে না।

মিজান মাথা নাড়তেই শাকিল সেখান থেকে উঠে গাড়ির দিকে রওনা দিলেন।

..............................................................................................................................



কবির চৌধুরীর খুনের দুটো দিন পেরিয়ে গেছে। পরপর দুজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খুন হবার পর ওপর মহল থেকে শাকিল মাহমুদের ওপর খুব প্রেশার আসছে। তাকে আগামী ৭ দিনের মাঝে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে অথচ সে তেমন কোন সুরাহাই করতে পারেনি।

ইজি চেয়ারে বসে সকাল সকাল বাসি মুখে একটা সিগারেট ধরিয়ে পুরো ঘটনা গুলো আবার গোড়া থেকে মনে করার চেষ্টা করল শাকিল। মনে মনে একটা গল্প দাঁড় করালো। জয়িতা মেয়েটা খুন হয়েছে কবির চৌধুরীর হাতে। মোটিভ হিসেবে বলা যায়, তিনি চাচ্ছিলেন না জয়িতার সাথে অভীকের সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াক। আর অভীক যেহেতু জয়িতার ব্যাপারে খুব বেশি সিরিয়াস ছিল তাই সেখানে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সুযোগও ছিল না। তাই ঝামেলা চিরতরে সরিয়ে দিতে কবির চৌধুরী জয়িতাকে খুন করে। হতে পারে খুনটা নিজের হাতে করেছেন, আবার সেটা নাও হতে পারে। অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারেন। আর কবির চৌধুরীর খুনের ব্যাপারে শাকিল মাহমুদের সন্দেহ হচ্ছে অভীক চৌধুরীকে। যদিও কবির চৌধুরী তার বাবা কিন্তু বাবা ছেলের হাতে খুন হয়েছে এই ঘটনা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু না। জয়িতা চৌধুরীর খুনের ব্যাপারটা অভীক হয়ত টের পেয়ে যায়। নিজের ভালোবাসার মানুষের খুন তাকে এতোটাই প্রভাবিত করেছিল যে তার প্রতিশোধ বশঃত সে খুন করে বসে জয়িতা চৌধুরীর খুনি অর্থাৎ তার জন্মদাতা পিতাকে। তার ওপর গতকাল রাতে টাকা নিয়ে কবির চৌধুরীর সাথে তারকথা কাটাকাটির ব্যাপারটা তো রয়েছেই। খুন করে একটা মুখোশ সে ফেলে রাখে খুনের বিষয়টাকে ঘোলাটে করার জন্য। চোখ উপড়ে ফেলে এটা বোঝানোর জন্য যে, জয়িতা চৌধুরীর খুনি আর তার বাবার খুনি এক ব্যক্তিই।



কিন্তু বেশ কিছু ফাঁক রয়ে গেছে গল্পে। বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরী হয়েছে, যেগুলার উত্তরের ওপর নির্ভর করছে তার এই গল্পের ঘটনা সত্যি হবার সম্ভাবনা। কবির চৌধুরী যদি খুনটা করেই থাকেন তবে সেখানে মুখোশের ভূমিকাটা কি? কবির চৌধুরী কেন চাইতেন না,জয়িতার সাথে তার ছেলের বিয়েটা হোক? তার না চাওয়ার কারণটা কি এতোই গভীর ছিলো যার কারণে জয়িতাকে খুন করার মত একটা কাজ তাকে করতে হল? অভীক চৌধুরীর কথায় বাবার প্রতি সহমর্মিতাই প্রকাশ পেল, তার মানে কি বাবার খুনের ব্যাপারে আসলেই সে কিছু জানে না? নাকি পুরোটাই তার অভিনয়? নাকি দুটো খুনই অভীক নিজেই করেছে? ব্যাপারটা কী এরকম যে, সম্পর্ক না রাখতে চাওয়ায় জয়িতাকে খুন করে অভীক? পরে কবির চৌধুরী জেনে ফেলে সেটা, জেনে গভীর রাতে ছেলে কে তিরষ্কার করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে প্রমাণ সরানোর জন্য উন্মাদ হয়ে বাবাকেই খুন করে অভীক।



নাহ ! আর কাজ করছে না মাথাটা। আরেকটা সিগারেট ধরাতেই ফোন দিল এস আই মিজান। সে যে তথ্য দিল তাতে শাকিলের একটু আগের সাজানো গল্পের পুরোটাই ভেস্তে গেল। তাকে বাসার ঠিকানা দিয়ে এখনি চলে আসার কথা বলে ফোন রাখলো।

ফোন রাখার সাথে সাথেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো।

- হ্যালো।

- শাকিল মাহমুদ বলছেন? আমি ফরেনসিক ল্যাব থেকে ডাঃ তানিয়া বলছিলাম।

- কি ব্যাপার বলুনতো?

ঝাড়া ৩ মিনিট কথা হলো ডাঃ তানিয়ার সাথে। কথা শেষ হতেই কোন মতে রেডি হয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেল শাকিল মাহমুদ।

গাড়িতে উঠেই ফরেনসিক ল্যাবে যেতে নির্দেশ দিল ড্রাইভারকে। তারপর মিজানকে ফোন দিয়ে আপাতত তার বাসায় না আসার নির্দেশ দিল শাকিল। কখন আসতে হবে সেটা জানিয়ে সে নিজেই ফোন দিবে বলে ফোন রাখলো শাকিল।

ফোন রেখে ভাবতে লাগল, ডাঃ তানিয়া যে নিউজ দিল সেটা যদি সত্যি হয়, তবে এখুনের ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেবে। আর সে ক্ষেত্রে রহস্যের প্যাঁচ খুলে দিতে পারে একজনই।



জাহানারা চৌধুরী !! মরহুমা জয়িতা চৌধুরীর মা !!!


তৃতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×