somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়া থেকে ঘুরে এসে - (পর্ব ২)- কেএল সিটি গ্যালারি আর রাতের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখে এসে

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল হোটেলে পৌঁছে গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে সুইস হোটেলের নিচ তলায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রিসিপশনিস্ট আসার পর তাকে আগে বুকিং দেয়ার কথা জানালে পরে সে পাঁচ তলায় একটা এয়ার কন্ডিশনড রুমের ব্যবস্থা করে দেয়। রুমের জানালা দিয়ে কুয়ালালামপুরের মিনারা টাওয়ার আর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখতে পেলাম। যে টুইন টাওয়ারকে এতদিন ছবিতে দেখেছি এখন চোখের সামনে দেখছি, তাও আবার রুমের জানালা দিয়ে দেখছি এটা ভাবতেই অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করলো। যাই হোক রুমে এসে কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে নীচে নামলাম কারণ ক্ষুধার জ্বালায় পেট চো চো করছিল অনেকটা সময় ধরে। রাস্তা পাড় হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। রেস্টুরেন্টোটারর মালিক একজন বাঙালি। তিনি যথাসাধ্য আদর–আপ্যায়ন করলেন। খাবার হিসাবে নিলাম রাইস, সার্ডিন ফিস, বিশেষ মসলা দিয়ে রান্না করা মুরগী আর সবজি। সার্ডিন ফিস মালয়েশিয়ায় খুব জনপ্রিয়। মোটামুটি সব রেস্টুরেন্টে সার্ডিন ফিসের একটা আইটেম থাকবেই। সবশেষে চা খেলাম। ঘন দুধ দিয়ে বানানো চা খেতে দারুণ ছিল।


ভাত, সার্ডিন ফিস, ডিম, আচার, বাদাম আর ড্রাইড ফিস

খাওয়া–দাওয়ার পর আশাপাশে কিছু জায়গায় ঘুরলাম, রাস্তার পাশেই একটা সুন্দর ফোয়ারা ছিল। সেখানে বসে কিছু সময় কাটালাম। প্ল্যান করলাম বিকালে কুয়ালালামপুর সিটি গ্যালারী আর সন্ধ্যায় পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ঘুরে দেখব। অবশ্য মাঝখানে শহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়িয়েছি কিছুটা সময়। আমার মনে হয় নতুন কোন শহরে ঘুরতে গেলে হেঁটে হেঁটে ঐ শহরটা ঘুরে দেখার চেয়ে মজার আর কিছু হতে পারে না। বিদেশ-বিভূঁইয়ে মানুষ দেখার মাধ্যমেও অনেক কিছু আইডিয়া করা যায়। মানুষের কালচার, আচার–আচরণ, পছন্দ–অপছন্দ এসব ব্যাপারে কিছুটা হলেও শেখা যায়। ইউরোপিয়ানরা যেটা করতে পছন্দ করে তা হল তারা ব্যাপক হাঁটাহাঁটি করতে পছন্দ করে। পারলে হেঁটেই পুরো শহর এক্সপ্লোর করে ফেলে এমন অবস্থা। কিন্তু আমরা বাঙ্গালিরা সামান্য দূরত্বের জায়গাতেও হেঁটে যেতে ইচ্ছুক না, বরং কোন না কোন যানবাহন ব্যবহার করি।


রাস্তার পাশের ফোয়ারা। ফোয়ারাটি যে হোটেলে ছিলাম সেখান থেকে বের হয়ে ১-২ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়ে।

দুপুরবেলা হোটেলের কাছে একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খেয়ে আবার হোটেলে চলে গেলাম। বিকালের দিকে বের হলাম সিটি গ্যালারী দেখব বলে। সিটি গ্যালারী আমাদের হোটেলের পাশেই ছিল। মারদেকা স্কয়ারের রাস্তা ধরে কিছু দূর সামনে এগুলেই এই গ্যালারী। গ্যালারীতে পাঁচ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত টিকিট কেটে ঢুকলাম। এক রিঙ্গিত মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় বিশ টাকা। গ্যালারীতে মনোমুগ্ধকর লেজার শো এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ইতিহাস, বিখ্যাত মানুষদের অবদান, বিখ্যাত স্থাপনা, ট্যুরিস্ট স্পট এসবের ব্যাপারে ট্যুরিস্টদের আইডিয়া দেয়া হয়। আর ভবিষ্যতে আরো কি কি করা হবে সারা দেশ জুড়ে সে ব্যাপারেও ব্রিফ করা হয় দর্শকদের। এই লেজার শো এর দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে বিশ মিনিট পাড় হয়ে গেল টের পেলাম না। লেজার শো দেখে গ্যালারীর ভেতরের দোকান থেকে কিছু স্যুভিনিয়র কিনলাম। দোকানের সব প্রোডাক্টই একবারে জেনুইন এবং ফিক্সড প্রাইস, তাই কোন প্রকার বার্গেইনিং করা গেল না। তবে মালয়েশিয়াতে কিছু মার্কেট আছে যেখানে বার্গেইন করা যায় কেনাকাটার সময়। সিটি গ্যালারীর সামনের রাস্তায় ‘ আই লাভ কেএল’ লেখা নামক একটা স্থাপনার সামনে ছবি তোলার জন্য মানুষের ভীড় লেগেই ছিল যেটা গ্যালারীতে ঢুকার সময়ই লক্ষ্য করেছিলাম। তাই গ্যালারী থেকে বের হয়েই ছবি তোলার জন্য দৌড় দিলাম যদিও ছবি তোলার সুযোগের অপেক্ষা আসতে আসতে বেশ খানিকটা সময় চলে গেল।


কুয়ালালামপুর সিটি গ্যালারী


সিটি গ্যালারীতে প্রবেশের পূর্বে এই 'আই লাভ কেএল' লেখা মনুমেন্ট চোখে পড়বে। দারুণ ভিড় থাকের সামনে ছবি তোলার জন্য

সিটি গ্যালারীতে ভালো কিছু সময় কাটিয়ে ট্যাক্সিতে করে রওয়ানা দিলাম পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের উদ্দেশ্যে। আর তখন ও সন্ধ্যা নামেনি। সন্ধ্যা নামার কিছু পূর্বেই চলে আসলাম টুইন টাওয়ারের কাছে। টুইন টাওয়ার একসময় বিশ্বের উচ্চ–তম বিল্ডিং ছিল ছিল। বিশ্বের উচ্চ–তম বিল্ডিং এর খেতাব হারালেও এখনো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ারের খেতাব ধরে রেখেছে এই পেট্রোনাস টাওয়ার। ফ্রান্সের যেমন আছে আইফেল টাওয়ার, দুবাইয়ের যেমন আছে বুর্জ খলিফা, তাইওয়ানের যেমন আছে তাইপে ১০১ ঠিক তেমনি মালয়েশিয়ার ও আছে পেট্রোনাস টাওয়ারস। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে এই পেট্রোনাস টাওয়ার দেখতেই প্রতিবছর কয়েক লাখ ট্যুরিস্ট কুয়ালালামপুরে বেড়াতে আসেন। লিফটে করে উঠে টুইন টাওয়ারের উপর থেকে কুয়ালালামপুর শহরটাকে দেখা যায়। টিকেটের জন্য লাইন থাকায় আর দাম বেশি হওয়ায় এই যাত্রায় দেখা হল না। টুইন টাওয়ারের সামনে যথারীতি অনেক ভীড় ছিল, মানুষজন যে যার মন মত ছবি তুলে যাচ্ছে টাওয়ারকে ব্যাকড্রপ করে। রাতের টুইন টাওয়ার দেখতে অসাধারণ।


রাতের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার


কেএলসিসি পার্কের লাইট এন্ড সাউন্ড শো

শুধু টুইন টাওয়ারই নয় এর আশে পাশের স্কাই–স্ক্রেপার গুলো ও রাতের বেলা বিভিন্ন রঙের আলোতে সুন্দরভাবে আলোকিত করা হয়। পেট্রোনাস টাওয়ারসের সামনের ফোয়ারার সামনে কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর গেলাম সুরিয়া কেএলসিসি শপিং মলে। অনেক গুছানো বিশাল একটা শপিং মল, কিন্তু দাম প্রায় আকাশ–ছোঁয়া। তাই কিছু না কিনে ঘুরে দেখতেই ভালো লাগলো। বিশ্বের সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের আউটলেট আছে এই শপিং মলে। শপিং মল থেকে বের হলে কেএলসিসি পার্ক। বিকেলে ভালো সময় কাটানোর জন্য দারুণ একটা জায়গা। যে যার মত বসে গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য একটা ওয়াটার পার্ক আছে পাশে। সন্ধ্যার দিকে পার্কের ফাউন্টেইনে লাইট আর সাউন্ড শো হয়। শুধু এটা দেখার জন্যই অনেকে পার্কে বেড়াতে আসে। সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সেদিনের মত হোটেলে ফিরলাম । ফিরে রাতের খাবারের জন্য বাইরে না গিয়ে হোটেলেই খেলাম। খাবার দারুণ মজা যদিও দাম খানিকটা বেশি ছিল। মুরগীর ঝাল ক্বারী, সবজি ভাজি, ডাল, আলু ভর্তা আর সাথে গরম ধোঁয়া উঠা ভাত। খেয়ে–দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম রুমে গিয়ে পরের দিনের ঘুরাঘুরির প্ল্যান ফাইনাল করে।

১ম পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×