মালয়েশিয়ার ট্যুরিসমের একটা ট্যাগলাইন আছে যেটা আমরা বিভিন্ন সময় টিভিতে দেখে অভ্যস্ত। ট্যাগলাইনটা হল ‘Truly Asia in Malaysia.’ প্রথম প্রথম দেখে মনে হতে পারে আরে এ তো দেখি তাজ্জব ব্যাপার! কিভাবে সম্ভব পুরা এশিয়াকে দেখা একটি মাত্র দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে? হ্যাঁ সম্ভব; এখানে একটা এলাকার সাথে আরেকটা এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ভূ–তাত্ত্বিক দিয়ে মিল একবারেই কম এবং কোন জায়গার চেয়ে কোনটা কম সুন্দর নয়। যে যার যার মত ইউনিক। মালয়েশিয়ার সরকার ট্যুরিসমকে সারা বিশ্বের ট্যুরিস্টদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানারকম টিভিসি তৈরি করে যাচ্ছে; দেশের ইকোনমিক অবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে ট্যুরিসমের উপর নির্ভর করে।আর তাই ট্যুরিসমের উপর আর সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে অন্যতম ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসাবে মালয়েশিয়ার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। মালয়েশিয়া শুধু দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার নয় বরং এশিয়ার অন্যতম কসমোপলিটান দেশ। যে যে বৈশিষ্ট্যের জন্য একটা দেশকে কসমোপলিটান বলা যায় তার সবকয়টাই এই দেশটার মধ্যে বিদ্যমান। একটা কসমোপলিটান দেশের মানুষেরা একটি একক কমিউনিটিতে বিশ্বাস করে এবং এই কমিউনিটিটা সাধারণত নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মূল্যবোধ,সুন্দর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আর শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এই যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর মূল্যবোধের যে সম্পর্ক সেটা যেমন এদেশের নাগরিকেরা মেনে চলে ঠিক তেমনি এটা এখানে যারা বেড়াতে আসে তাদের আচার–আচরণে ও লক্ষ্য করা যায়।
মালয়েশিয়া এত বড় একটা দেশ যে পুরোটা দেখতে হলে বেশ কয়েকবার সেখানে যাওয়া চাই।প্রথমবার ভ্রমণে প্ল্যান ছিল কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশ ঘুরে দেখা আর শহর থেকে কাছাকাছি দূরত্বের শহরগুলোতে ঘুরে আসা। প্ল্যান মোতাবেক গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক সপ্তাহের জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। সাথে ছিল আব্বু,আম্মু আর ছোট বোন। মালয়েশিয়ার আবহাওয়া সাধারণত গরম এবং আদ্রতা বেশি বাতাসে। বৃষ্টিপাত না হলে সারা বছরের যে কোন সময় মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যাওয়া যায়। দেশের পূর্বদিকের এলাকাগুলোতে নভেম্বরের মাঝা–মাঝি হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশি হয় আর পশ্চিমদিকের এলাকাগুলোতে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবরের দিকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি। বৃষ্টি মৌসুমে ঘুরতে গেলে ঘুরাঘুরি না করে হোটেলে বসে দিন কাটানোর সমূহ সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই যাওয়ার আগে ওয়েদার ফরকেস্ট চেক করে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট; ব্যাগেজ ক্লেইমিং মেশিন থেকে লাগেজ কালেক্ট করার পর

কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট
সেপ্টেম্বরের আট তারিখ রাতে আমাদের যাত্রা শুরু হল।হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়াগামী মালিন্দো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছিল রাত ১০:৫০ মিনিটে। প্লেন মালয়েশিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরতে দেরি করায় ফ্লাইট টাইম ১০:৫০ থেকে পিছিয়ে যায় ১১:৫০ টায়। তো ১১:৫০ এ প্লেন ছাড়ল। মালিন্দো বাজেট এয়ারলাইন্স। প্লেনে খাবারের মান ভালোই ছিল। কিন্ত, এয়ার কন্ডিশনের অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না। আর ইকোনমিক ক্লাসের সিট বেশ কনগেস্টেড লাগসে আমার কাছে। তবে বাজেট এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে খুব ভালো আশা করাটা আসলে বোকামি হবে। যাই হোক ৩:৩০ টার সময় মালয়েশিয়ায় পৌঁছালাম। কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটা খুব সুন্দর, একবারে সাজানো গোছানো। ইজি চেয়ারে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে কেউ কেউ, আবার অনেকে আরামে ঘুমাচ্ছে। আবার, কেউ কেউ ইজি চেয়ারে বসে হাই স্পীড ইন্টারনেটে নেট ব্রাউজিং করতেছে। প্লেন থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে এয়ারপোর্টটা ঘুরে দেখলাম, তারপর লাগেজ ক্লিয়ারেন্স আর ইমিগ্রেশন ঝামেলা শেষ করতে করতে ৫:৩০ টা বেজে গেল। আগে থেকে সুইস ইন হোটেলে বুকিং দেয়া ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সেদিন অবশ্য কুয়ালালামপুরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ভাগ্য ভালো পরের এক সপ্তাহে আর কোনরকম বৃষ্টির দেখা পাইনি। এম্নিতে প্লেন জার্নি করে ক্লান্ত ছিলাম, তাই ঘুম ঘুম চোখে মালয়েশিয়ার কিছু এলাকা দেখতে দেখতে ১:৩০ ঘন্টা পরে হোটেলে চলে আসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



