somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব বিদ্রোহ ৪র্থ এবং শেষ পর্ব

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আরব বিদ্রোহের ইতিহাস ( প্রথম পর্ব )
আরব বিদ্রোহের ইতিহাস (২য় পর্ব )
আরব বিদ্রোহ ৩য় পর্ব
১৯১৮মিত্রশক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যুদ্ধের সমাপ্তি
আকাবা দখল করার সময় অনেক অফিসার ফয়সালের অভিযানে যোগ দেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট এফ নিউকম্ব এবং সিরিল ই উইলসনের তত্ত্বাবধানে ব্রিটিশ অফিসার এবং উপদেষ্টারা আরবদেরকে রাইফেল, বিস্ফোরক, মর্টার ও মেশিন গান সরবরাহ করেন। ঘাটতির কারণে অস্ত্র বিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হত। মিশরীয় ও ভারতীয় সৈনিকরা প্রথমদিকে মেশিনগানার এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিদ্রোহে অংশ নেন তাছাড়াও কয়েকটি রোলস রয়েস সাজোয়া যান যুদ্ধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীও আরবদের অপারেশনে সমর্থন দেয়। সেই সাথে রাজকীয় উষ্ট্র বাহিনীও আরবদের সাথে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন। ব্রেমন্ডের অধীন ফরাসি ১১০০ অফিসার হুসাইন ও তার পুত্র বিশেষ করে আমির আলী এবং আবদুল্লাহর সাথে সখ্য গড়ে তোলেন। তাই আরব দক্ষিণ বাহিনীতেই ফরাসিদের তৎপরতা বেশী ছিল। আমির আলীর অধীন এই বাহিনী মদীনা অবরোধে অংশ নেয়। অন্যদিকে আবদুল্লাহর অধীন পূর্বাঞ্চল বাহিনী ইবনে রশিদের কাছ থেকে আলীর পূর্ব ভাগ রক্ষার দায়িত্বে ছিল। হাশেমি বাহিনী কখনোই মদীনা দখল করতে পারেনি। কেবল ১৯১৯ সালের ৯এ জানুয়ারি তুর্কি সরকারের ঘোষণার পরই উসমানীয় কমান্ডার ফখরি পাশা আত্মসমর্পণ করেন। সেসময় মদীনায় মোট ৪৬৫ জন অফিসার এবং ৯৩৬৪ জন সৈনিক ছিল। লরেন্স উইলসন এবং অন্যান্য অফিসারদের নির্দেশনায় আরবরা হেজাজ রেলওয়ের উপর সফল আক্রমণ পরিচালনা করেন। তাছাড়াও তারা সামরিক সরবরাহ আটক করেন। ট্রেন ও ট্রাক ধ্বংস করে এবং একহাজারেরও বেশি উসমানীয় সৈনিকদের বন্দী করেন। যদিও সেসব আক্রমণ সাফল্য সবসময় আসত না তবুও তারা উসমানীয় সৈন্যদের বন্দী করা ও মদীনাকে বিচ্ছিন্ন করায় সফল ছিল। ১৯১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আরব বিদ্রোহের অন্যতম বৃহৎ যুদ্ধে লরেন্স এবং আরব সৈনিকরা তাফিলাহতে উসমানীয়দের একটি বড় সৈন্যবহরকে পরাজিত করেন।


১৯১৮ সালের মার্চ মাসে আরব উত্তর বাহিনী নিম্নোক্তদের নিয়ে গঠিত হয়েছিলঃ জাফর পাশা আল আসকারির অধীন নিয়মিত আরব বাহিনী পদাতিক ব্রিগেড এক ব্যাটেলিয়ান ক্যামেল কর্পস এক ব্যাটেলিয়ান মিউল মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রি আটটির মত কামান
লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি সি জয়েসের অধীন ব্রিটিশ অংশ মেশিনগান এবং দুটি ১০ পিডিআর আগ্নেয়াস্ত্রযুক্ত রোলস রয়েসের হেজাজ আর্মর্ড কার ব্যাটারি বিমানের একটি ফ্লিট এক কোম্পানি ইজিপশিয়ান ক্যামেল কর্পস ইজিপশিয়ান ক্যামেল ট্রান্সপোর্ট কর্পস
ইজিপশিয়ান লেবার কর্পস আকাবায় ওয়্যারলেস স্টেশন ক্যাপ্টেন পিসানির অধীন ফরাসিদের অধীনে ছিল । দুইটি মাউন্টেন গান চারটি মেশিনগান এবং দশটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ১৯১৮ সালের এপ্রিলে জাফর আল আসকারি এবং নুরি আস সাইদ মানের সুরক্ষিত রেলপথের উপর নিয়মিত আরব বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করেন। তাতে দুই পক্ষে ব্যাপক হতাহত হন। শরিফি বাহিনী মানকে বিচ্ছিন্ন করতে সমর্থ হলেও তারা ১৯১৮ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান বজায় রাখে। মানের সেনাঘাটিতে মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহারের জন্য আল আসকারির বেশ কয়েকটি অনুরোধ ব্রিটিশরা ফিরিয়ে দেন।


১৯১৮ সালে বসন্ত কালে অপারেশন হেজহক হেজাজ রেলওয়ে ধংসের জন্য পরিচালিত হয়। মে মাসে রেলপথের ২৫টি সেতু ধ্বংস করা হয়। ১১ই মে আরবরা জেরদুন অধিকার করে এবং ১৪০ জনকে বন্দী করেন। পাঁচ সপ্তাহ পর ২৪শে জুলাই মেজর আর ভি বাক্সটনের অধীন ইমপেরিয়াল ক্যামেল কর্পস ব্রিগেডের নস ৫ এবং ৭ কোম্পানি মুদাওয়ারা স্টেশন আক্রমণের জন্য সুয়েজ খাল থেকে আকাবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইমপেরিয়াল ক্যামেল কর্পস ১৯১৮ এর ৮ই আগস্টে সেখানে একটি সফল হামলা পরিচালনা করেন। তারা ১২০ জনকে বন্দী ও দুটি কামান লাভ করে সেইসাথে ১৭ জন হতাহত হয়। বাক্সটনের দুই কোম্পানি ইমপেরিয়াল ক্যামেল কর্পস আম্মানের দিকে যাত্রা করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূল সেতু ধ্বংস করে দেওয়া। শহর থেকে ২০ মাইল ৩২ কিঃমিঃ দূরে তারা বিমান হামলার শিকার হন। মিত্রশক্তির চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য এলেনবি আমি ফয়সাল এবং তার আরব উত্তরাঞ্চল বাহিনীকে তুর্কি বাহিনীগুলোকে পূর্ব দিক থেকে আক্রমণের জন্য বলেন। এই উদ্দেশ্য ছিল লেভান্টে অবস্থানরত তুর্কি কমান্ডারদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সন্দিহান করে তোলা। সেখানে আমির ফয়সালের বাহিনীতে রুয়াল্লা, বনি সাখর, আজিয়াল এবং হাওয়িতাত গোত্রের সদস্যরা ছিলেন। পাশাপাশি ফয়সালের সাথে গুর্খা সৈনিক, ব্রিটিশ সাজোয়া যান, মিশরীয় ক্যামেল কর্পস, ক্যাপ্টেন পিসানির অধীন আলজেরিয়ান গোলন্দাজ সৈনিক ও ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর সাহায্য ছিল।


১৯১৮ তে আরব অশ্বারোহীদের শক্তিবৃদ্ধি পায় এবং এসময় জয় হাতের নাগালে বলে মনে হচ্ছিল। এসময় তারা এলেনবির সেনাবাহিনীকে উসমানীয় সেনাদের অবস্থান সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য দিতেও সক্ষম ছিল। তারা উসমানীয় সরবরাহ ব্যবস্থা, ছোট ঘাটি ও রেলপথ ধ্বংস করে। ২৭শে সেপ্টেম্বর উসমানীয়, অস্ট্রিয়ান এবং জার্মান সৈনিকরা মেজেরিব থেকে পিছু হটার সময় তাফাসের নিকট একটি যুদ্ধে আরবরা বড় বিজয় অর্জন করেন। সেসময় কথিত তাফাস গণহত্যা সংঘটিত হয়। লরেন্স তার ভাইকে লেখা এক চিঠিতে দাবি করেন যে এসময় বন্দী না রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাফাস গ্রামে উসমানীয়দের গণহত্যার বদলা হিসেবে এই আদেশ দেওয়া হয়। এখানে মোট ২৫০ জন জার্মান ও অস্ট্রিয়ান যুদ্ধবন্দী এবং অগণিত তুর্কিদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে লরেন্স তার “সেভেন পিলার্স অব উইজডম” বইয়ে তাফাসের ঘটনার উল্লেখ করেন। সেসব যুদ্ধের অন্যতম মেগিড্ডোর যুদ্ধে এলেনবি সাফল্য লাভ করেন। ১৯১৮ এর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দিকে উসমানীয় সৈনিকরা পিছু হটতে এবং ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। ১৯১৮ এর ২৭শে সেপ্টেম্বর লরেন্সের অধীন অনিয়মিত বাহিনী দেরা দখল করে। উসমানীয় বাহিনী ১০ দিনের মধ্যেই পরাজিত হয়। এলেনবি জয়ের জন্য ফয়সালের ভূমিকার প্রশংসা করে বার্তা পাঠান।
আলেপ্পোর যুদ্ধ ১৯১৮ সাল

১৯১৮ এর ৩০শে সেপ্টেম্বর দামেস্ক পৌছানো প্রথম আরব বিদ্রোহী বাহিনী হল শরিফ নাসেরের হাশেমি উষ্ট্রারোহী বাহিনী এবং নুরি শালানের অধীন রুয়াল্লা গোত্রের অশ্বারোহী বাহিনী। এসব সৈনিকরা শহরের বাইরে ফয়সালের আগমনের অপেক্ষা করছিল। অল্প কয়েকজনের একটি দলকে শহরের ভেতর প্রেরণ করা হয় এবং তারা দেখতে পায় যে শহরের আরব জাতীয়তাবাদী অধিবাসীরা আরব বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করেছে। এরপর সেদিন অস্ট্রেলিয়ান লাইট হর্স সৈনিকরা দামেস্কে প্রবেশ করে। আউদা আবু তায়ি, লরেন্স এবং আরব সৈনিকরা পরের দিন ১ই অক্টোবর শহরে প্রবেশ করেন। যুদ্ধের শেষে ইজিপশিয়ান এক্সপিডিশনারি ফোর্স ফিলিস্তিন, ট্রান্সজর্ডান, লেবানন, আরব উপদ্বীপের বিরাট এলাকা এবং দক্ষিণ সিরিয়া অবরোধ করে। সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ১৯১৯ এর জানুয়ারি পর্যন্ত মদীনা আত্মসমর্পণ করেনি।
উসমানীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে আরবদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা হবে এই মর্মে যুক্তরাজ্য হুসাইন ম্যাকমোহন চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তির বিষয়ে উভয়পক্ষের নিজস্ব অভিমত ছিল। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স মূল চুক্তি পরিত্যাগ করে এবং অত্র এলাকাকে ১৯১৬ সালের সাইকস-পিকট চুক্তি মোতাবেক বিভক্ত করার পরিকল্পনা করে। আরবদের কাছে এটি অসন্তোষজনক ছিল। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা আরো সন্দেহের সৃষ্টি করেন। সেই ঘোষণায় ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র ঘোষণার কথা বলা হয়। আরবের পশ্চিম অংশের হেজাজ অঞ্চল হুসাইন বিন আলীর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং ১৯২৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা বজায় রাখে। এরপর ব্রিটিশরা তাদের সমর্থন সৌদ পরিবারের দিকে ঘুরিয়ে নেন। সৌদিরা হেজাজ দখল করে নেন।

ছবিতথ্য ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×