somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব বিদ্রোহের ইতিহাস (২য় পর্ব )

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আরব বিদ্রোহের ইতিহাস ( প্রথম পর্ব )
যুদ্ধে আরব বিদ্রোহের মূল অবদান ছিল দশ হাজার উসমানীয় সৈনিকদেরকে ব্যস্ত রাখা । না হয় তারা সুয়েজ খাল আক্রমণ করতে যেতেন । এটিই ছিল বিদ্রোহ শুরু করার জন্য একটি ব্রিটিশ বিবেচনা । এঁকে অসম যুদ্ধ হিসেবে ধরা হয় । সামরিক নেতৃবৃন্দ এবং ঐতিহাসিকরা এই বিষয়ে বহুবার অধ্যয়ন করেছেন । উসমানীয় সাম্রাজ্য উসমানীয় জার্মান মিত্রতার অংশ হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের লড়াইয়ে অংশ নেয় । দামেস্ক এবং বৈরুতের অনেক আরব জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্বকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয় । স্যার মার্ক সাইকস প্রতিরোধ পতাকাটির নকশা প্রণয়ন করেন । বিদ্রোহের উদ্দীপক হিসেবে আরবত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এটি তৈরী করা হয় ।

বিদ্রোহের ভূমিকাঃ
১৯১৬ সালের ৮ই জুন এর দিকে পবিত্র শহর মক্কার অভিভাবক হুসাইন বিন আলী যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের পক্ষে যোগদেন । তবে আসলে তার প্রকৃত কোন তারিখ জানা যায়নি । উসমানীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত তরুণ আরব অফিসার মুহাম্মদ শরিফ আল ফারুকির সাহায্যের কারণে তারা অনেক উপকৃত হয়েছেন । হুসাইনের অধীনে ৫০ ০০০ এর মত অস্ত্রধারী লোক ছিল । কিন্তু রাইফেলধারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০০০০ এরও কম । উসমানীয় সরকার যুদ্ধের পর তাকে পদচ্যুত করবে এই খবর পেয়ে তিনি ব্রিটিশ হাই কমিশনার হেনরি ম্যাকমোহনের সাথে চিঠি বিনিময় করেন । মিত্রশক্তির পক্ষাবলম্বন করলে মিশর থেকে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃত আরব সাম্রাজ্য দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় । কুয়েত এডেন এবং সিরিয়ার উপকূলের কিছু এলাকাকে তার মধ্যে ধরা হয়নি । সেসময় হুসাইন কাগজ কলমে উসমানীয়দের পক্ষের হলেও মিত্রশক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন ।


জাইদ পরিবারের প্রধান শরিফ আলি হায়দার মক্কার শরীফের পদের জন্য উসমানীয় সরকারের সাথে আতাত করছে ও তাকে শীঘ্রই ক্ষমতাচ্যুত করা হবে এমন গুজবের কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । দামেস্কে আরব জাতীয়তাবাদীদেরকে জনসম্মুখে মৃত্যুদন্ড দেওয়ায় হুসাইনের মনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয় বৃদ্ধি পায় । ১৯১৬ সালের ৫ই জুন হুসাইনের দুই পুত্র আমির আলী বিন হুসাইন এবং ফয়সাল মদীনার উসমানীয় সামরিক ঘাটি আক্রমণের মাধ্যমে বিদ্রোহ শুরু করেন । কিন্তু ফখরি পাশার নেতৃতাধীন তুর্কি বাহিনীর কাছে তারা পরাজিত হলেন। ১৯১৬ সালের ১০শেই জুন হুসাইন তার সমর্থকদের মক্কার উসমানীয় ঘাটি আক্রমণের আদেশ দিলে বিদ্রোহ প্রকৃতভাবে শুরু হয় । মক্কার যুদ্ধে সুসজ্জিত উসমানীয় সেনাদের সাথে হুসাইনের সমর্থকদের মধ্যে এক মাসের মত রক্তাক্ত লড়াই হয়েছিল । ব্রিটিশদের পাঠানো মিশরীয় সৈনিকরা মক্কার হাশেমিদের সাথে যোগ দিলেন এবং অস্ত্রের সরবারহ প্রদান করেন । তারপর ৯ই জুলাই আরব তাদের দখলে আসে । উসমানীয়দের এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণ মক্কার ক্ষতির কারণ হলে তা তারা পবিত্র শহর মক্কার অমর্যাদা করেছে এমন অপপ্রচারের সুযোগ করে দেয় । জুনের ১০ তারিখ হুসাইনের আরেক পুত্র আমির আবদুল্লাহ তাইফ আক্রমণ করেন । ২২শে সেপ্টেম্বর মিশরীয় বাহিনীর গোলন্দাজদের সহায়তায় আবদুল্লাহ তাইফ দখল করেন । With the Egyptian artillery support, Abdullah took Ta'if on September 22, 1916


ব্রিটিশ এবং ফরাসি নৌবাহিনী লোহিত সাগর থেকে উসমানীয়দের তাড়িয়ে দিলেন । ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ও সিপ্লেনের সহয়তায় ১০ই জুন ৩৫০০ জন আরব জেদ্দা বন্দর আক্রমণ করেন । ব্রিটিশ বিমানবাহী জাহাজ এইচএমএস বেন মাই চেরি হাশেমিদের আকাশ থেকে সাহায্যে ভূমিকা রাখেন । ১৬ জুন উসমানীয়রা আত্মসমর্পণ করেন । ১৯১৬ এর সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আরবরা ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সহায়তায় উপকূলীয় শহর রাবেঘ ও ইয়ানবো এবং কুনফিদা দখল করে ও ৬০০০ জন উসমানীয়কে বন্দী করা হয়। এর ফলে ব্রিটিশরা ৭০০ জন উসমানীয় আরব যুদ্ধবন্দীকে বিদ্রোহে পাঠাতে সক্ষম হয় । তারা নুরি আস সাইদের নেতৃত্বে বিদ্রোহে যোগ দিয়ে সম্মত হয়েছিল । সেই সাথে ফরাসি উত্তর আফ্রিকা থেকে বেশ কিছু মুসলিম সৈনিক বিদ্রোহে যোগ দেয় । পনের হাজার সুসজ্জিত উসমানীয় সেনা হেজাজে রয়ে যায় । কিন্তু অক্টোবরে মদীনার উপর সরাসরি হামলায় আরবদের বিতাড়িত হয় ।
১৯১৬ টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স
জেদ্দার উত্তরে রাবেঘে লরেন্স ১৯১৭ সাল ।


১৯১৬ সালের জুনে ব্রিটিশরা হেজাজের বিদ্রোহে সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পাঠায় । কর্নেল সিরিল উইলসন, কর্নেল পিয়ার্স সিঃ জয়েস ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট ফ্রান্সিস নিউকম্ব তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য । অন্যদিকে ফরাসিরা কর্নেল এডওয়ার্ড ব্রেমেনকে ফ্রান্সের সামরিক মিশনে প্রেরণ করেন । ফ্রান্স কয়েকজন মুসলিম অফিসারকে নিয়োগ করায় সেক্ষেত্রে বেশী সুবিধা পায় । এই অফিসাররা হলেন ক্যাপ্টেন আউল্ড আলি রাহো, ক্লড প্রস্ট ও লরেন্ট ডেপুই শেষের দুইজন আরবে অবস্থানকালে ইসলাম গ্রহণ করেন । ফরাসি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রোজারিও পিসানি মুসলিম না হলেও প্রকৌশলী ও গোলন্দাজ অফিসার হিসেবে বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।

১৯১৬ এর অক্টোবরে মিশরের ব্রিটিশ সরকার তরুণ অফিসার ক্যাপ্টেন টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সকে হেজাজের হাশেমি বাহিনীর সাথে কাজ করার জন্য পাঠায় । ইংরেজ ঐতিহাসিক ডেভিড মারফি লিখেছেন যে লরেন্স যদিও ব্রিটিশ এবং ফরাসি অফিসারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কিন্তু ঐতিহাসিক লেখায় মনে হয় যে লরেন্স নিজেই আরবে মিত্রশক্তির প্রতিনিধিত্ব করছিলেন ।

ছবিতথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×