somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত কিছু কথা না বললেই নয়

২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ বা অকল্যান্ডের বোকামি এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধটি যুক্তরাজ্য এবং আফগানিস্তানের মধ্যে ১৮৭৮ সাল থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। সে সময় শের আলি খান ছিলেন আফগানিস্তানের শাসক। ব্রিটিশ ভারত কর্তৃক এটি দ্বিতীয় আফগানিস্তান আক্রমণ ছিল। যুদ্ধে ব্রিটিশরা বিজয়ী হয়। আর অধিকাংশ ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈনিক আফগানিস্তান থেকে ফিরে এসেছিল। আফগান গোত্রগুলিকে আভ্যন্তরীণ শাসন ও স্থানীয় প্রথা বজায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তবে বৈদেশিক বিষয়াদির নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ভারতের দিকে রুশ সাম্রাজ্যের বিস্তার রোধের জন্য ব্রিটিশরা সেই পদক্ষেপ নেয়।


১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমে ইউরোপে চলমান রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার অবসান। তারপর রাশিয়া মধ্য এশিয়ার দিকে মনোযোগ দেন। সেই গ্রীষ্মে রাশিয়া কোনো আমন্ত্রণ ছাড়াই কাবুলে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ করেন। আফগানিস্তানের আমির শের আলি খান তাদের দূর করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ১৮৭৮ সালের ২২শে জুলাই রুশ প্রতিনিধিদল কাবুল পৌঁঁছায়। ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশরা দাবি জানায় যাতে শের আলি খান একটি ব্রিটিশ মিশনও মেনে নেয়।শের আলি খান নেভিল বোলস চেম্বারলেইনের অধীনে মিশন গ্রহণের ব্রিটিশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সাথে সাথে যদি মিশন প্রেরণ করা হয় তবে তাদের থামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ভাইসরয় লর্ড লিটন ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু খাইবার গিরিপথের দিকে একে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।


আফগানিস্তানে প্রবেশের সময় অধিকাংশ ভারতীয় সৈনিক নিয়ে গঠিত ৫০,০০০ সৈনিকের ব্রিটিশ বাহিনীকে তিনটি ভিন্ন স্থানে সামরিক কলামে বন্টন করে দেওয়া হয়। জারের কাছ থেকে সহায়তার জন্য শের আলি খান ব্যক্তিগতভাবে আবেদন জানাতে চেয়েছিলেন। মাজার-ই-শরিফ পৌছানোর পর ১৮৭৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি সেখানে মারা যান।


ব্রিটিশরা দেশের অধিকাংশ দখল করে নেয়ার পর শের আলি খানের ছেলে ও উত্তরসূরি মুহাম্মদ ইয়াকুব খান ১৮৭৯ সালের মে মাসে গান্দামাকের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী বার্ষিক ভর্তুকি এবং বিদেশি আগ্রাসনের সময় সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে ব্রিটেন আফগানিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন। কাবুল ও অন্যান্য স্থানে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের পুনরায় নিযুক্ত করা হয়। গিরিপথ এবং মিচানি গিরিপথে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় ও আফগানিস্তান বিভিন্ন উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এলাকা এবং কোয়েটা ব্রিটেনের হাতে সমর্পণ করেন। তারপর ব্রিটিশ বাহিনী ফিরে আসে।১৮৭৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাবুলে সংঘটিত একটি অভ্যুত্থানে ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার লুইস কাভাগনারি তার দেহরক্ষী ও কর্মচারীসহ নিহত হন। তার ফলে যুদ্ধের দ্বিতীয় দফা শুরু হয়।মেজর জেনারেল স্যার ফ্রেডেরিক রবার্টস কাবুল ফিল্ড ফোর্স‌কে নেতৃত্ব দেন এবং শুটারগার্ডেন গিরিপথ দিয়ে মধ্য আফগানিস্তান পৌঁছান। ১৮৭৯ সালের ৬ই অক্টোবর চার আসিয়াবে তিনি আফগান বাহিনীকে পরাজিত করেন। তার দুই দিন পর কাবুল দখল করে নেওয়া হয়। গাজি মুহাম্মদ জান খান ওয়ারদাক ১০,০০০ আফগান সৈনিকের বাহিনী নিয়ে অভ্যুত্থান করে ১৮৭৯ সালের ডিসেম্বরে কাবুলে ব্রিটিশদেরকে শেরপুর সেনানিবাসে অবরোধ করেন। অবরোধ করা সত্ত্বেও তিনি তা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। ইয়াকুব খান সিংহাসনচ্যুত হন। ব্রিটিশরা সম্ভাব্য কয়েকটি রাজনৈতিক সমাধানের চিন্তা করে। তার মধ্যে আফগানিস্তানকে কয়েকজন শাসকের মধ্যে বিভক্ত করে এবং ইয়াকুব খানের ভাই মুহাম্মদ আইয়ুব খানকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার চাচাতো ভাই আবদুর রহমান খান আমির হিসেবে ক্ষমতায় বসেন। তিনি গান্দামাকের চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন।

হেরাতের গভর্নর আইয়ুব খান বিদ্রোহ করেন। ১৮৮০ সালের জুলাই মাসে তিনি মাইওয়ান্দের যুদ্ধে একটি ব্রিটিশ সেনাদলকে পরাজিত করেন এবং কান্দাহার অবরোধ করেন। তারপর রবার্টস কাবুল থেকে মূল ব্রিটিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন এবং ১ সেপ্টেম্বর কান্দাহারের যুদ্ধে আইয়ুব খানকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। ফলে বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়।অন্যান্য সকল উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারলেও ব্রিটিশরা কাবুলে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রাখার নীতি থেকে সরে আসেন। তারপর ব্রিটিশরা আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসেন।


১৮৭৮ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধে বেশ কয়েকটি লড়াই সংঘটিত হয়েছিল। নিচে সময়ানুক্রমে সেসকল কিছু লড়াইয়ের নাম দেওয়া হলঃ
১৮৭৮ সালঃ

১। আলি মসজিদের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।
২। পেইওয়ার কোটালের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।

১৮৭৯সালের লড়াইঃ

১। তখত-ই-পুলের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।
২।মাতুনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।
৩।খুশক-ই-নাকুদের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।
৪।ফাতেহাবাদের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয়।
৫।কাম দাক্কার যুদ্ধে আফগানদের বিজয় ।
৬।চার আসিয়াবের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয়।
৭। শাজুইয়ের যুদ্ধ
৮।খারেজ মীরের যুদ্ধ
৯। তখত-ই-শাহের যুদ্ধ
১০। আসমাই মালভূমির যুদ্ধে আফগানদের বিজয় ।
১১।শেরপুর অবরোধ ব্রিটিশদের বিজয় ।


১৮৮০সালেঃ

১।আহমেদ খেলের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয়।
২।আরজুর যুদ্ধ ।
৩। চার আসিয়াবের দ্বিতীয় যুদ্ধ ।
৪। মাইওয়ান্দের যুদ্ধে আফগানদের বিজয় ।
৫। দেহ কোজার যুদ্ধে আফগানদের বিজয় ।
৬। কান্দাহারের যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় ।


এটি শেরপুর সেনানিবাসে ডারবান ময়দান ১৮৭৯সালের দৃশ্য


এটি শেরপুর সেনানিবাসে বেঙ্গল স্যাপার এন্ড মাইনার্স‌ ঘাটির একটি দৃশ্য


এটি গান্দামাকে ব্রিটিশ সৈনিকদের একটি দৃশ্য


এটি কান্দাহারের যুদ্ধের সময় গর্ড‌ন হাইল্যান্ডার্স‌ের ড্রামার জেমস রডিক কর্তৃক এক আহত অফিয়ারকে রক্ষা করার সময়ের সে দৃশ্যটি


এটি খাইবার গিরিপথের মধ্য দিয়ে যাত্রার সময়কার ৪৫তম রেট্রায়স শিখসের রক্ষীদের আফগান বন্দীদের পাহাড়ার দৃশ্য


এটি আলি মসজিদের যুদ্ধের স্থানে এক দল ব্রিটিশের বসে থাকার দৃশ্য

এটি হাতি ও খচ্চরটানা কামান এর একটি দৃশ্য
ছবি তথ্য Schmidt, Karl J. 1995 An Atlas and Survey of South Asian History। M.E. Sharpe।Press 74
এবং আরো অন্যান্য সাইট থেকে নেওয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:২৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×