জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এবং কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আজ সংবাদ সম্মেলনে একগাদা মিথ্যা কথা বলেছেন। সেগুলো আবার একটু পরপরই দেখি কপিপেস্ট করে যাচ্ছে তার অনুসারী জামাত-শিবিরের প্রপোগান্ডার জন্য মাইনে দিয়ে রাখা ব্লগাররা। এমনকি মুজাহিদের স্বরূপ উন্মোচন করে কয়েকটি পোস্ট পড়ার পরও তাদের ম্যাতকার থামছে না। আসুন এবার এইসব মিথ্যেবাদী ও তাদের নাটের গুরু মুজাহিদের মিথ্যেবাদী মুখোশটা খুলে দিই।
এক ছাগু কোট করে করে বিভিন্ন পোস্টে পেস্ট করছে :
তিনি বলেন ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন জারি করা হয়। এ আইনের অধীনে প্রায় ১ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়। এদের মধ্যে অভিযোগ আনা হয় ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্য থেকে ৭৫২ জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২০ হাজার ৯২ জন বেকসুর খালাস পান। যে ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের মধ্যে জামায়াতের কেউ ছিলেন না।
বিস্তারিত নয়, নীচের ছবিটি দেখুন। এরপর তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত ও সে সাজা ভোগ করেছে কিনা সেটা দেখুন। এই লোক জামাতে ইসলামীর কিনা দেখুন।
১৯৭২ সালের ১৮ জুলাই দৈনিক বাংলার প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট তুলে দিচ্ছি :
শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যা মামলা : জামাত নেতা খালেকের ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা
গতকাল ১৭ জুলাই ঢাকার পঞ্চম স্পেশাল ট্রাইবুনাল পাক হানাদার বাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবি নিধন মামলায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যা মামলার রায় প্রদান করে বেআইনী জামাতে ইসলামীর বেতনভুক দফতর সম্পাদক এ.বি,এম আবদুল খালেককে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদন্ড দান করেন।
মাননীয় স্পেশাল জজ জনাব এফ. রহমান আসামীকে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৬৪ নং ধারা ও দালাল আদেশের দ্বিতীয় তফসিলের কতিপয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করে দন্ড প্রদান করে বলেন যে আসামী হত্যা করার জন্য পাক বাহিনীর দালাল হিসেবে শহীদুল্লাহ কায়সারকে অপহরন করেছে। এই চাঞ্চল্যকর অপহরন ও হত্যা মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে, আলবদর বাহিনীর সদ্স্য ও জামাতে ইসলামীর দফতর সম্পাদক হিসেবে আসামী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দখলদার পাক বাহিনীর অবৈধ দখল কায়েম রাখার জন্য তাদের সমর্থন ও সাহায্য করে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগে বলা হয় যে গত ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আসামী চার/পাঁচজন আলবদর সদস্য সাথে করে নিহত শহীদুল্লাহ কায়সারের বাড়ীর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দোতলার একটি ঘর থেকে মরহুমকে ধরে নিয়ে যায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে। আসামীদের হাতে স্টেনগান, রিভলবার ইত্যাদি অস্ত্র ছিল এবং বাড়ির মহিলারা চিৎকার করে বাধা দিলে তাদের ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। তখন কারফিউ বলবৎ ছিল। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর বহু তল্লাশী করে মরহুমের লাশ পাওয়া যায়নি। ২০ ডিসেম্বর থানায় এজাহার দায়ের করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা পুলিশ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে।
মামলায় সরকার পক্ষে তেরোজন সাক্ষ্য প্রদান করেন। তন্মধ্যে মরহুমের স্ত্রী, বোন, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এরা আসামীকে সনাক্ত করে বলেন যে অপহরনকারী আলবদর বাহিনীর মধ্যে আসামীও ছিল। আসামী ছোট কাটারা মুক্তিবাহিনী কর্তৃক ধৃত হবার পর তার ছবি কাগজে ছাপা হয়েছিল। এজন্য সাক্ষীরা আসামীর ছবি দেখে সনাক্ত করেছে। আসামী পক্ষের কৌশলীর এই যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে বিজ্ঞ জজ বলেন যে সাক্ষীরা শিক্ষিত এবং তাদের অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
জজ সাহেব তার রায়ে আরো উল্লেখ করেন যে দখলদার আমলে আসামী রিভলবারের লাইসেন্সের জন্য যে দরখাস্তা করেছে তাতে সে নিজেই নিজেকে পাকিস্তানবাদী বলে উল্লেখ করেছে তাছাড়া সরকার পক্ষের একজন বিশ্বাসী সাক্ষী বলেছেন যে আসামী কারফিউর সময় রাতে এমনকি পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পণের পূর্বের রাতেও ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু জজ সাহেব প্রশ্ন রাখেন পাক বাহিনীর দালাল ছাড়া সে সময় অমনভাবে ঘোরা সম্ভব ছিল কি?
সংবাদ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ও অন্যতম সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যা মামলার রায় শোনার জন্য বিপুল দর্শকের আগমন হয়।
মামলাটি সরকার পক্ষে সিনিয়র স্পেশাল পি.পি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আসামী পক্ষে এডভোকেট এম, এম সাফকতা হোসেন পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন এই লোকের গ্রেপ্তার কাল, সাজার কাল কবে, সে জামাতের কি ছিলো?
মুজাহিদের আরেকটি বচন হচ্ছে : তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের পর জামায়াতের কেউ দেশ ত্যাগ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, "স্বাধীনতার পর জামায়াত নেতারা এদেশেই ছিলেন, আছেন। অভ্যূদয়ের পর এই বাংলাদেশ আমাদের দেশ। এদেশই আমাদের ঠিকানা। এ দেশের জনগণই আমাদের আশ্রয়স্থল।"
তাহলে অধ্যাপক গোলাম আযম কি জামাতের কেউ ছিলো না? তাকে কেনো ফেরার ঘোষণা করে তার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছিলো?
জনাব মুজাহিদ নিজে কোথায় ছিলেন? এখানে একসময় ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মিজবাহউর রহমানে সাক্ষাতকার পড়ুন
গুরুত্বপূর্ণ দুটো অংশ অনুবাদ করে দিচ্ছি :
স্টার: আল-বদরের নেতা হিসেবে মতিউর রহমান নিজামীর ভূমিকা কি ছিল?
মেজবাহ: আল-বদরের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি রক্ষীবাহিনীটিকে হোসনী দালান থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বাহিনীটিকে সংগঠিত রাখতেন এবং বিভিন্ন অভিযানের পরিকল্পনা করতেন, তাঁর ডেপুটি আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ২৪৬ জন বুদ্ধিজীবির তালিকা তৈরী করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে তিরিশ জনকে খুন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জনমত, একটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দৈনিক, স্বাধীনতার পরে এই তালিকাটি ছেপেছিল। তাছাড়া আমার কাছে প্রমান আছে যে মুজাহিদ কিছু বুদ্ধিজীবির হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আ.স.ম রুহুল কুদ্দুস আল-বদর ঢাকার ডেপুটি চীফ ছিলেন। তিনি এবং চৌধুরী মঈনুদ্দিন(যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন) বুদ্ধিজীবি হত্যার আদেশটি পালন করেন।
একই সাক্ষাতকারে লেখা হয়েছে : আলি আহসান মুজাহিদ একজন ছাতা-মেরামতকারীর ছদ্মবেশে সারা দেশ ঘুরে আল-বদর কর্মীদের সংগঠন করার চেষ্টা করেন যাতে তিনি নব্য নির্বাচিত সরকারী নেতাদের খুন করতে পারেন। তাঁরা চট্টগ্রামে জড়ো হওয়ার এবং মিয়ানমারের আরাকান রাষ্ট্র থেকে দেশের ভেতর কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তাদের অবশ্য আর অত লুকোচুরির দরকার ছিল না কারণ তাঁরা তখন প্রকাশ্যে রাজনীতি করার অনুমতি পেয়ে গিয়েছেন।
১৯৭১ সালে জামাতে ইসলামী মওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী তৈরি করেছিল। ইসলামী ছাত্র সংঘ (যা এখন ছাত্র শিবির) বানিয়েছিল আল বদর যারা আমাদের দেশ সেরা বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ফেলে রেখেছিল। সেই হাই কমান্ডের মুজাহিদ এখন বলে জামাত ১৯৭১ সালে কোনো অপরাধ করেনি, তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি। আর তার অনুসারীরা সেগুলো কপিপেস্ট করে। ইসলামকে ঢাল বানিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করা কুখ্যাত এসব অপরাধীর মুখোশ ঠিকই উন্মোচিত। মহান আল্লাহতায়ালা এতটা নিষ্ঠুর নন যে এসব অপরাধী মুনাফেকের পক্ষে থাকবেন।
সূত্র : ব্যবহৃত ছবি ও রেফারেন্স অমি রহমান পিয়ালের আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
মুজাহিদ বচন : যেদলের নেতা চরম মিথ্যাবাদী, সেই দলের সদস্যরা কিভাবে সত্য বলবে?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬৫টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন