somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাদীজান ও হ্যাজাক লাইট

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময় ১৯৮০ এর দশক, প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার আমার দাদাজানের মৃত্যুবার্ষিকী’তে বড় চাচা, আব্বা বেশ খরচ করে গ্রামবাসী ও আত্মীয় পরিজনদের খাবারের একটা ব্যবস্থা করতেন, বড় চাচা আর আব্বা বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ গ্রামের বাড়িতে চলে আসতেন, বিকেলে বাজার তারপর সারা রাত চলতো আয়োজন, সকল আত্মীয় স্বজন এসে বাড়ী ভরপুর - দক্ষযজ্ঞ পরিবেশ। গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুতের প্রবল সমস্যার কারণে ও রান্নার আয়োজনের প্রয়োজনে বাড়ির উঠানে “হ্যাজাক লাইট” জ্বালানো হতো, আব্বার খুব পছন্দের সংগ্রহের মধ্যে একটা ছিলো “হ্যাজাক লাইট, জার্মানের প্যাট্রোম্যাক্স কোম্পানীর তৈরি” একটা সময় ছিলো গ্রামের বাড়িতে কারো হ্যাজাক লাইট থাকা একটা - “ব্যাপার স্যাপার” ভাবা হতো এবং একই সঙ্গে সম্ভ্রান্ত বাড়ির একটা চিহ্নও - ফুয়েল চার্জ ঘন্টায় ১ লিটার - সহজ ব্যাপার ছিলো না! তখন বাজারে তেল সের দরে বিক্রি হতো, ১ সের কেরোসিনের দাম ছিলো ৭ টাকা!

অনুষ্ঠানে সবচেয়ে মজাদার ও আকর্ষণীয় কয়েকটি কাজের মধ্যে একটি ছিলো সেই হ্যাজাক লাইট জ্বালানো পর্ব ! আমরা সবাই উঠানে ঘেরাও করে দাড়িয়ে আছি আর মাঝখানে আব্বা ব্যাক্তিগত জলচৌকি’তে বসে হ্যাজাক লাইট এর চিমনি পরিস্কার করছেন - কেরোসিন দিচ্ছেন - ল্যাম্পে আগুন দিচ্ছেন - শো শো শব্দে পাম্প থেকে কেরোসিন সুঁই দিয়ে হ্যাজাক লাইটের জ্বলন্ত ল্যাম্পে পড়ে যেই আলোর বন্যা তৈরি করতো তার কাছে এখনকার আধুনিক বাতি খুবই নগন্য বলা যায়। হ্যাজাক লাইট জ্বলার সাথে সাথে আমার দাদীজান সমস্ত কাজের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে নিতেন। দাদীজানকে পেয়ে আমাদের সবার কাজে কর্মেও এক আশ্চর্য্য গতি চলে আসতো আর বাড়িতে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে তার রুপ পাল্টে দেওয়ার মুল ভুমিকাটাই ছিলো আমার দাদীজান ও হ্যাজাক লাইট। ১৯৯৩ সনে দাদীজান, ১৯৯৯ সনে আব্বা ও ২০০৫ সনে বড় চাচা আমাদের সকলকে অথৈ সাগরে রেখে আমাদের ছেড়ে চিরো বিদায় নিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। হ্যাজাক লাইট টি আজো আছে কিন্তু তার সাথের সঙ্গী সাথী আজ আর কেউ নেই।

আমার দুই দাদীজানদের বিক্ষ্যাত উক্তি: -
কথাগুলো তাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় বলতেন যা আমার পুরোপুরি এখন আর মনে নেই, তবে সঠিক বাংলাটি লেখার চেষ্টা করেছি।

মালবোঝাই নৌকা বৈঠা ধরে, লগি মেরে, গুন টেনে
তিনজনের জীবন শেষ - -
ভাঙ্গা নৌকা বেঠা মেরে, ঘামে ভিজে দৌড়ের নৌকা
নয়জনের সুখের দেশ।
- রায়না বিবি (আমার বেহেস্তবাসী দাদীজান)


“খাইতে তো পারে সবাই - -
খাওয়াইতে পারে কয়জন?
খাইয়া পেট ভরে, খাওয়াইয়া মন ভরে”
- ওমরাহ আমল (আমার বেহেস্তবাসী দাদীজান - আমার বেহেস্তবাসী দাদাজানের বোন)


যবনিকা: - ১৯৮১ হতে ১৯৯৮ সন পর্যন্ত বড় চাচা ও আব্বা গ্রামের বাড়িতে সকল গ্রামবাসী সহ আত্মীয় পরিজনকে বছরে একবার দাওয়াত দিয়ে সম্মান করে খাওয়ানোর দায়ীত্ব পালন করে গেছেন, আব্বার ইন্তেকালের পর বড় চাচা একেবারে একা হয়ে যান, আর বড় চাচা ইন্তেকালের পর গ্রামের বাড়িই আমাদের সবাইকে একা করে দেয়। কিছু কিছু বাড়ি থাকে যেখানে বাড়ির মূল কিছু মানুষ থাকেন “এই মানুষ - এই বাড়ির মানুষ”। এই মানুষ চলে যাওয়ার পর বাড়ি আর আগের মতো আলোকিত হয়না। আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিলো না, ১৯৮২ সনে আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে। এখন বাড়িতে নানা ধরনের নানা রঙের বাতি সহ বিদেশী ১০০০ ওয়াটের ষ্ট্রিট লাইট আছে তারপরও বাড়ি অন্ধকারই হয়ে থাকে।






সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:২১
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×