এই 'আর....' দিয়েই গল্প শেষ। তবে শুরুটা কি?
শুরুটা হলো এই।
আমার কৈশরে একজন 'আলু স্যার' ছিলেন। আলু মানে আলুর দোষ ছিল - তা নয়। উনি বাংলা সাহিত্য ও ব্যকরণ পড়াতেন। স্যারের বর্ণমালায় একটা স্বরবর্ণ মিসিং ছিল - 'ও'। সেটা উনি পুষিয়ে নিতেন 'উ' দিয়ে। তাই স্যারের সকাল আলোকিত হতো সূর্যের 'আলু' দিয়ে। ওঁর পৃথিবী আকার গোল ছিল না; ছিল 'গুল'। অর্থাৎ যাবতীয় ও-সম্বলিত 'শব্দু' স্যারের 'জাদুকুরি' উচ্চারণে উ-উ 'করতু'। এক ঘন্টার ক্লাস শেষে দেখা যেত আমরা বলছিঃ
কি রে দুস্তু, আজকে ক্লাস শেষে ফুটবুল খেলার প্রুগ্রাম উকে তু? সবাইকে বুলে দিস।
- যেন আশির দশকের মুরাদ টাকলা।
একদিন বাগধারা ক্লাস চলছে। একেরপর এক ছাত্রকে ব্যাসবাক্য জিজ্ঞেস করছেন স্যার। পারলে প্রশংসা পাচ্ছিঃ ভালু...ভালু...ভেরি গুড। আর না পারলেই উনি প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। নাহ...আমাদের প্রেমে না। ওই যারা না পারছে তাদের কর্ণযুগলের প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। অনেকক্ষন ধরে কচলে কচলে আদর করে তবেই শান্ত হচ্ছেন।
এভাবে অবশেষে আমার পালা আসলো। জিজ্ঞেস করলেনঃ বল, ঊনপাঁজুরে'র ব্যাসবাক্য কি? উত্তর হবে - ঊন পাঁজরে যার। মানে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী যে তাকেই 'উনপাঁজরে' বলে।
ক্রমাগত মারধোর দেখে ততক্ষনে আমার মুখস্ত সব গুলিয়ে গিয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। দুইবার জিজ্ঞাসার পর যখন খেয়াল করলাম, স্যার এবার কানের প্রেমে পড়বেন বলে প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, মরিয়া হয়ে বলে উঠলামঃ
"ঊন দ্বারা পাঁজরে, স্যার। উনপাঁজরের ব্যাসবাক্য হলো উন দ্বারা পাঁজরে।"
এই 'অসাধারণ' উত্তর শুনে কি যে এক অনির্বচনীয় ভঙি ফুটে উঠল স্যারের মুখে, কি বলব। ততক্ষনে ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছি মনে করে বসে পড়েছি। পরমুহূর্তেই খপ করে কে যেন কানটা খামচে ধরল। এঁ...এঁ...করতে করতে সে উঠে দাঁড়াবার আগেই স্যারের সেই কালজয়ী বক্তব্যঃ
"হুম....উন দ্বারা পাঁজুরে...? আর ডাস্টার দ্বারা স-জু-রে (সজোরে)...!"
বলেই ডাস্টার দিয়ে দিড়িম করে এক বাড়ি পিঠের মাঝ বরাবর।
এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে। এখনও রোগা-পটকা কাউকে দেখলে পিঠের মাঝখানটা শিরশির করে ওঠে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৩