শুক্রবারে কাজকর্ম করি না... নিজের জন্য রাখি দিনটা। কিন্তু আজ দুই বন্ধুকে সময় দিলাম।তাও আবার নেট থেকে হওয়া বন্ধু। আসার কথা ছিল একজনের... দেখলাম দুজনই চলে এসেছে। আইআরসিতে পরিচয় হয়েছিল 4বছর আগে।
বাসায় কিছুক্ষন গপপো মেরে আসর নামাজটা পড়েই বের হলাম... উত্তরার দিকে রওনা হলাম... পথে হটাৎ একজন বলে বসল এয়ারপোর্টে ঢুকবে। কোথাও আমার চলে যেতে নাই মানা... তাই ঢুকে গেলাম... দুইতিন মাস পরপরই পরিবারের কেউ না কেউ দেশে আসে.. তাই এয়ারপোর্টে প্রচুর যাওয়া হয়। এয়ারপোর্টের গোল চত্তরটায় কাউকে বসতে দেখি না কখোন। কিন্তু আজ ঢুকে দেখি গোল চত্তরে অনেক মানুষ বসে আছে... আমরাও বসলাম। সেখানেও অনেক গপপো হলো... সন্ধ্যা হয়ে এলো একসময়... মাগরিবের নামাজটা কাজা করতে চাচ্ছিলাম না... কিন্তু সাথে থাকা দুই বন্ধুর কথা ভেবে কাজা করে ফেললাম... ওরাও নিয়মিত নামাজ পড়ে... তবে ওরাও সম্ভবত অপর দুজনের কথা ভেবে আর বাড়াবাড়ি করল না... (কাজটা ভাল করিনি..এখনো খাঁটি ঈমানদার হতে পারিনি মনে হয়) সন্ধ্যার ঠিক একটু পর এত চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হলো... বিরবির করে বললাম "অদ্ভুত!" ঘন ঘাসের মাঝে শুয়ে পরলাম একসময়... আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম.. তারা দেখে নয়, এত বিশাল আকাশ কোন বাঁধা ছাড়াই দেখতে পেরে। আমরা ঢাকাবাসীরা আকাশ দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত! ওখানে গিয়ে মনে হলো কেন এতদিন আসলাম না...
সেখান থেকে ভাবলাম হেটে হেটে উত্তরা যাব... রওনাও দিয়ে দিলাম.. কথা বলতে বলতে হাটছি... হটাৎ দেখি কদম গাছ... অনেক উপরে ফুল ফুটে আছে... হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছাড়া কিছু করার ছিল না... আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি আরো কদম গাছ.. একটি দুটি নয়... একের পর এক অনেক কদম গাছ... আগে কখনো লক্ষ করিনি এই পথে এত কদম গাছ আছে... যাই হোক ভাবলাম হাতে কাছে যদি একটি ফুলও পাওয়া যেত.....একটু সামনে গিয়ে অনেকটা নিচে একটি ফুল দেখে অনেক্ষন লম্ফ ঝম্ফ দিলাম... লোকজন সম্ভবত ভাবছিল পাবনা থেকে সম্প্রতি রিলিজ পাওয় কেউ হবে... লম্ফ ঝম্ফে কাজ হলো না...
আরেকটু সামনে গেলাম হতাশ হয়ে। গিয়ে দেখি আরো নিচে একটি ফুল... একটি ডাল ধরে টেনে ফুলটিকে হাতের নাগালে এনেই ছিড়ে ফেললাম গাছ থেকে। মনে দারুন আনন্দ হলো... কিন্তু মানুষ তিনজন কদম ফুল একটি... কি করা যায়? আরেকটু সামনে গেলাম... অসংখ্য কদম গাছ.. কিন্তু কোনটিতেই হাতের নাগালে কোন ফুল নেই... উপরে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম... এক বন্ধু বললো নিচের দিকে তাকিয়ে হাটতে.... না হলে ম্যান হোলে ছু মন্তর ছু হয়ে যেতে পারি... ঐ দিকটায় ম্যানহোল নেই এটা জানি.. তাই কথা কানে না নিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে হাটা অব্যহত রাখলাম। থমকে দাড়ালাম.. খুব ছোট একটি গাছে অনেক কদম ফুল.... দুই সেকেন্ড ভেবেই দুজনকে চমকে দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে গেলাম গাছে... গুনে গুনে 5টি ফুল ছিড়লাম... তিনজন দুটো করে পাব তাহলে। আমি তখন দারুন এক্সাইটেড! ঢাকা শহড়ে গাছে উঠে কদম ফুল পারা তো আর এত সহজ বিষয় নয়... বেট ধরতে পারি মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন কাজটি করতে পেরেছে...
যাই হোক... কদম ফুল পেয়ে আমরা তিনজনই মহা খুশি.. একেবারে বাচ্চাদের মত খুশি। আমার তো চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছিল। দুটো করে কদম ফুল নিয়ে হাটছি.. লোকজন আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল... হয়তো ভাবছিল- 'কাহিনী কি... কদম ফুল পাইলো কই?' তো আমরা মহা আনন্দে হাটছি... স্কলাষ্টিকা উত্তরা শাখার কাছে এসে আমরা তিনজনই 'থ'... একি কান্ড! একটা বিশাল কদম গাছে অজস্র কদম ফুটে আছে। ফুলো জন্য পাতাই দেখা যাচ্ছিল না মনে হল। 30সেকেন্ড সম্ভবত তাকিয়ে ছিলাম। ইচ্ছে করছিল পুরো গাছটিই কেটে নিয়ে আসি... তাতো আর করা সম্ভব নয়... তাই হাতের দুটোতেই আপাতত খুশি হতে হলো...
কদম ফুল দুটে এনে আমার কম্পিউটারের উপরে রেখেছি.. এতক্ষন কদমের ঘ্রান নিতে নিতে লিখে ফেললাম, ছবি ও বর্ননা থেকে ভার্চুয়ালি আপনারাও যদি কিছু টা ঘ্রান পান.. এই আশায়...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩৭