somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রহরাজ বৃহস্পতি পর্যবেক্ষন (শেষ পর্ব)।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই পর্যবেক্ষনের আগে বৃহস্পতির পৃস্টের বিভিন্ন ধরনের বৈশিস্ট্য সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন।দূরবীনে গ্রহটির পৃস্টে পূর্ব পশ্চিম বরাবর কিছু উজ্জল এবং অন্ধকার অংশ দেখা যায়।এদেরকে যথাক্রমে (Zones) অঞ্চল এবং( বলয় (Belts) বলে।
এরা গ্রহের প্রধান বৈশিস্ট্য বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত এদের বিষুবীয় (Equatorial), ক্রান্তীয় (Tropical), উপক্রান্তীয় (Temperate) এবং মেরু (Polar) এই ভাবে ভাগ করা হয়।এছাড়াও অস্থায়ী আরো কিছু বৈশিস্ট্য দেখা যায় যেমন-ঘণীভবন (Condensation): বলয়স্থিত ক্ষুদ্র,সুনির্দিস্ট কালো গোলাকার বৈশিস্ট্যকে ঘনীভবন বলে।এগুলো যখন বেশী দির্ঘায়িত হয় তখন একে ‘রড’ বলা হয়।



নডিউল (Nodules): ঘনীভবনের বিপরীত বৈশিস্ট্য।এরা যখন দীর্ঘায়িত হয় তখন একে ‘ডোরা’ বলে।
ডিম্ব (Ovals): সাদা অথবা ধুসর বর্ণের উপবৃত্তাকার,সুস্পস্ট সীমারেখা বিশিস্ট বৈশিস্ট্যকে ডিম্ব বলা হয়।অঞ্চল অথবা বলয় উভয় স্থানেই এরা থাকতে পারে।ক্ষুদ্রাকৃ্তির ডিম্বগুলো এক আর্কসেকেন্ড বা তার চেয়ে ও ক্ষুদ্র হয়।
অভিক্ষেপ (Projections) ও খাঁজ (Indentations): বলয় বা অঞ্চলগুলোর সীমারেখার অসমতাকে অভিক্ষেপ বা খাঁজ বলে।



উপসাগর (Bays): বড় আকারের,সুনির্দিস্ট খাঁজকে উপসাগর বলে।এগুলো দেখতে অনেকটা উপবৃত্তের কাটা অংশের মতো।ছোট অর্ধগোলাকার খাঁজকে নচ (notch) বলে।



আবরন (Veils): বলয়কে আচ্ছাদনকারী কালচে ছায়াযুক্ত অংশকে ‘আবরন’ বলে।এগুলি অঞ্চলসমূহে প্রসারিত থাকে।এই আবরনের উজ্জল অংশকে ‘পটী’ (Patch) বলে।
ফেস্টুন (Festoons): একটি অঞ্চলের দুই পাশের দুই বলয়কে যুক্তকারী সরু রেখাকে ফেস্টুন বলে।যদি এই রেখাসদৃশ বৈশিস্ট্যুগুলো বলয় দুটিকে স্পর্শ না করে তখন একে ‘হুক’ (Hooks) বলে।বিক্ষিপ্ত ফেস্টুনকে কলাম (Columns) বলে।



পেঁচানো ফেস্টুন বা পত্রমালা (Garlands): বৃহস্পতির পৃস্টের কোন উপসাগর বা কোন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন কোন ফেস্টুন দেখা গেলে তাকে পেঁচানো ফেস্টুন বলে।
ফাটল (Gaps): সরু বলয়ে উজ্জল বিচ্ছিন্ন দেখা গেলে তাকে ফাটল বলে।এই ফাটল বলয়কে দুই বা ততোধিক অংশে বিভক্ত করে।



চ্যুতি (Rifts): একটি বলয়ের দুই পাশের দু’টো অঞ্চলকে সংযোগকারী উজ্জল রেখার মতো প্রান্তবিশিস্টকে চ্যুতি বলে।এগুলি সাধারনত 450 ডিগ্রি বা 600 ডিগ্রি কোনে অবস্থান করে।
জট (Knot): সরু বলয়ের সরুতম অংশকে জট বলে।



নীচে এই গ্রহের প্রধান অংশগুলির ব্যাখ্যা দিলাম।
C.M: মূল মধ্যরেখা (Central Meridian)।
S.P.R: দক্ষিন মেরু অঞ্চল (South Polar Region)।
S.S.T.B: দক্ষিন দক্ষিন নাতিশীতোন্ষ বলয় (South South Temperate Belt)।



S.T.B: দক্ষিন নাতিশীতোন্ষ বলয় (South Temperate Belt)।
S.E.B: দক্ষিন বিষুবীয় বলয় (South Equatorial Belt)।
S.S.T.Z: দক্ষিন দক্ষিন নাতিশীতোন্ষ অঞ্চল (South South Temperate Zone)।



S.T.Z: দক্ষিন নাতিশীতোন্ষ অঞ্চল (South Temperate Zone)।
S.Tr.Z: দক্ষিন ক্রান্তীয় অঞ্চল (South Tropical Zone)।
E.B: বিষুবীয় বলয় (Equatorial Belt)।
E.Z: বিষুবীয় বলয় (Equatorial Zone)।
N.E.B: উওর বিষুবীয় বলয় (North Equatorial Belt)।
N.T.B: উওর নাতিশীতোন্ষ বলয় (North Temperate Belt)।



N.N.T.B: উওর উওর নাতিশীতোন্ষ বলয় (North North Temperate Belt)।
N.Tr.Z: উওর ক্রান্তীয় অঞ্চল (North Temperate Zone)।
N.T.Z: উওর নাতিশীতোন্ষ অঞ্চল (North Temperate Zone)।
N.N.T.Z: উওর উওর নাতিশীতোন্ষ অঞ্চল (North North Temperate Zone)।
N.P.R: উওর মেরু অঞ্চল (North Polar Region)।



দূরবীনঃ এই গ্রহ পর্যবেক্ষনের জন্য খুব বড় দূরবীনের প্রয়োজন নেই।

2 ইঞ্চি প্রতিসরন দূরবীনে 80x বিবর্ধনের আইপিস ব্যাবহার করে গ্রহটির বিষুব অঞ্চল ও বিষুব অঞ্চলের প্রধান বলয় দেখতে পাওয়া যায়,এছাড়াও মেরু অঞ্চলও দেখা যায়।



3 ইঞ্চি দূরবীনে 120x বিবর্ধন ব্যাবহার করে উচ্চ অক্ষাংশের আরো কিছু বলয় দেখা যায়,সেই সাথে বলয়ের প্রান্তের অসমতা। ঘনীভবন,ও উজ্জল দাগও দেখা যাবে।



4 ইঞ্চির অধিক ব্যাসের দূরবীনে এই গ্রহের আরও অনেক কিছু দেখা যাবে এবং গ্রহটির দ্রুত ঘূর্ণনের জন্য এই সব বৈশিস্ট্যগুলো অল্প সময়ের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করে এই পরিবর্তনও বোঝা যাবে।বৃহস্পতির বিখ্যাত গ্রেট রেড স্পট এটা বিশাল একটি ঘূর্নিঝড় এলাকা এটিও দেখতে পাবেন।





যদি কারো কাছে 8 ইঞ্চি স্মিড ক্যাসেগ্রাইন দূরবীন থাকে তবে এই দূরবীনের ফোকাল লেন্ত প্রায় 2000mm যদি এই দূরবীনে 10mm আইপিস ব্যাবহার করা হয় তাহলে এর বিবর্ধন হবে 200 (200/10) গুন।এই একই দূরবীনে যদি 30mm আইপিস ব্যাবহার করা হয় তাহলে বিবর্ধন হবে (2000/30)।কাজেই দেখা যায় যে আইপিসের ফোকাল লেন্ত কম হলে দূরবীনে দেখার ক্ষমতা বেড়ে যায়।গ্রহ পর্যবেক্ষনের সবচেয়ে ভাল সময় হলো যখন এটি মধ্যরেখা অতিক্রম করে বা তার কাছাকাছি থাকে।



তখন এটি সর্বাধিক উচ্চতায় থাকে বলে বায়ুমন্ডলের প্রতিসরনজনিত অসুবিধা থেকে মুক্ত থাকা যায়।বৃহস্পতি খুব উজ্জল কাজেই পর্যবেক্ষনের সময় কিছু ফিল্টার ব্যাবহার করতে হবে,এই ফিল্টার ব্যাবহার না করলে এর পৃস্টের বৈশিস্ট্য সমূহ পর্যবেক্ষন করতে পারবেন না।এই অসুবিধা দূর করার জন্য কোডাক কোম্পানি বেশকিছু কালার ফিল্টার আবিস্কার করছে সাদা কালো ছবি তোলার জন্য, একে বলা হয় রেটেন (Wratten) সিস্টেম।জ্যোতির্বিদরা এই ফিল্টার গুলিকেই গ্রহ ফিল্টার নামে আখ্যায়িত করে।
নীচে বৃহস্পতিকে পর্যবেক্ষনের জন্য বিভিন্ন প্রকার ফিল্টারের তালিকা দিলাম।
রেটেন নাম্বারঃ 12।
রং: হলুদ।
কাজ: এই ফিল্টার দিয়ে খুব ভালোভাবে দক্ষিন প্রান্তের,উওর গোলার্ধের,এবং বিষুবীয় অঞ্চলের ফিস্টুন দেখা যাবে।
রেটেন নাম্বারঃ 30।
রং: মেজেন্টা (Magenta)।



কাজঃ দক্ষিন গোলার্ধের সাদা ওভাল খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষন করা যাবে।
রেটেন নাম্বার:47।
রং:গাঢ় নীল।
কাজঃ গ্রহের কালো এবং ধূসর বর্ণের বেল্ট পর্যবেক্ষন করা যাবে।
রেটেন নাম্বার: 38A।
রং: নীল।



কাজ: গ্রহের উজ্জল মেঘের অঞ্চল,মেঘের সুক্ষ সীমানা পর্যবেক্ষন করা যাবে।তাছাড়াও আপনি গ্রহের ছবি তুলেও পর্যবেক্ষনের কাজ করতে পারেন।
গ্রহের ছবি কিভাবে তুলতে হয় এই সর্ম্পকে এখানে লিখতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে,এই সর্ম্পকে বিস্তারিত পরে লিখবো তবে নীচে আমি কি ভাবে গ্রহের ছবি তুলতে হয় সেই লিঙ্ক দিয়ে দিলাম এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
এই পাতায় ঢকুন-

Click This Link

যাদের দূরবীন আছে তারা আজকে থেকেই শুরু করে দেন।
এই পাতায় ঢুকন কখোন কোন গ্রহ খালি চোখে দেখা যাবে তার বর্ননা পাবেন-

http://http://www.nakedeyeplanets.com/

বর্তমানে বৄহস্পতিকে ভোরের আকাশে পূর্ব দিকে দেখতে পাবেন।আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন,সে সন্ধ্যার আকাশে চলে আসবে।



ছবি গুগল।

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×