somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের কোলে রোদ—১২ (ধারাবাহিক উপন্যাস)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের কথা জানতে পড়ুনমেঘের কোলে রোদ-১১

ভোরবেলা দরজায় খটখট শব্দ শুনে চমকে উঠল ঈষা। কেউ একজন
কড়া নাড়ছে।
মা ঘরে নেই। ঈষা একা। তাই তার বুকটা ধ্বক করে উঠল।শয়তানদের
কেউ নয়তো?
না,শয়তান নয় নিশ্চয়,শয়তানরা মাঝরাতে পৃথিবী কাঁপায়,ভোররাতে জাগে
পাখি। প্রভাতের আগমনী গান গায়। ঈষার জীবনে কি কখনও তেমন ভোর
আসবে,পাখি ডাকবে?
তবু সাহস করে দরজা খুলতে পারছে না ঈষা। যদি কোন শয়তান হয় তবে
ঈষা শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। ছিঁড়েখুড়ে ফর্দাফাঁই করে দেবে অস্তিত্বের
সকল পর্দা।হাজার চিৎকার করলেও কেউ ছুটে আসবে না বাঁচাতে।পাশের
টালির ঘরগুলো থেকে উৎকর্ণ হয়ে থাকবে মানুষজন।
মায়ের উপরে রাগ হচ্ছে ঈষার। ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছে।রাতে ফেরার কথা
ছিল,ফেরেনি। ভাইয়ের বাড়ির ভালমন্দ খেয়ে ভুলে গেছে মেয়ের কথা।মুখে
অবশ্য এমন ভাব দেখায় যেন,মেয়ের জন্যে জীবন দিতে প্রস্তুত।
মায়ের ভাই ঈষার মামা নয়। কেনই-বা হবে? ঈষা যাত্রাপালায় অভিনয় করে।
মামার তাতে আপত্তি। ভেবে দেখে না,প্রাইমারীর গন্ডি পেরোন মেয়ে চাকরী
পাবে কিম্বা চাইবে কোন যোগ্যতায়?বোনের উপরে যদি অতই দরদ,তার পাওনা
গন্ডা বুঝিয়ে দেয় না কেন?
সংসার চালাতে গিয়ে ঠোঙা তৈরী করেছে ঈষা।বিড়ি বেঁধেছে। সবখানে মহাজনের
লোলুপ দৃষ্টি। তারচেয়ে যাত্রাপালায় নিজেকে প্রদর্শন করা অনেক স্বাছন্দের কাজ।
লোলুপদৃষ্টির সাথে প্রসংশাময় হাততালিও থাকে।
আবার খটখট আওয়াজ।
শব্দটা যেন তর না সওয়া আকূতি।
তবু দরজা খুলতে সাহস পায় না ঈষা।
মা বলে, তোর এত ভয় কিসের বলতো? পালাগানে তো দেখি অচেনা-অজানা
মরদের সামনে বুক ফুলিয়ে অ্যাক্টো করিস।
--- স্টেজে অভিনয় করা জীবনে অভিনয় করার চেয়ে সহজ মা। বাবা আমাকে
সেই শিক্ষায় দিয়ে গেছে।
---আ মোলো যা,আবার সেই অনামুখোর কথা,মিনসে তো মরে বাঁচল,আমি
এখন তোকে নিয়ে জ্বলছি।
---বাবা তো তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসেনি মা,তুমিই তো বাবাকে ঘরছাড়া
করেছিলে।
---পোড়া কপাল আমার,তখন কি আর জানতাম,অত সুন্দর চেহারার ভেতর
অমন ক্ষয়রোগ বাসা বেঁধে আছে।
---ক্ষয়রোগ হওয়ার পরেও বাবা তোমাকে মুক্তি দিয়েছিল,তুমি যাওনি।
---যাব কি করে,তখন যে তুই পেটে চলে এলি। এখনও তো দাদারা ডাকে,
চলে আয় খুকি,পেছনের সব মায়া-বন্ধন ফেলে চলে আয়,পারি না যেতে।
---বাবাও তো তোমাকে ছেড়ে যায়নি মা,জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে
গেছে।দিনে বিড়ি বেঁধেছে,রাতে পালা করেছে।আমাকে হাতে ধরে অভিনয়
শিখিয়েছে।পালা-জগতে পরিচিতি দিয়েছে কিন্তু উপরওলার ডাক তো কেউ
আটকাতে পারে না।
---সবই আমার কপাল।বলে কাঁদতে বসে মা।
মামার বাড়িতেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না মা। তার দাদারা তাকে তোয়াজে রাখে
সম্পত্তির লোভে।
দাদুর ছোট মেয়ে। দশ বিঘে ধানিজমি তার নামে রেজিস্ট্রি করা আছে। মামারা
প্রথমে সেসব অস্বীকার করছে,চেষ্টা করেছে বর্গা,অনুমতি দখল রেকর্ড করে
মালিকানা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। সব তীর নাকি ঘুরেফিরে তাদের বুকেই বিঁধেছে।
তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে তারা এখন বারবার ডেকে নিয়ে যায়।
ভালমন্দ খাওয়ায়। ওই জমিটুকুই নাকি তাদের এখন একমাত্র সম্বল।
আবার দরজায় খটখট।
সহ্য হল না ঈষার। হাতে হেঁসো-দা নিয়ে খুলে ফেলল দরজার কপাট।
দরজার সামনের লোকটাকে দেখে তার হাত থেকে দা পড়ে গেল।বলল,
দাদা,তুমি?
মৃদু হেসে ওয়াশিম বলল,বড় বিপদ-রে বোন,তাই তোর কাছে ছুটে এলাম।
---ভাল মানুষেরই বিপদ হয়,এসো দাদা ভেতরে এসো,বল আমি তোমার
কি কাজে লাগতে পারি।
---ভাল করে এককাপ চা কর তো। সারা রাত হেঁটে শরীর যেন জমে গেছে।
(পরের কথা আগামী পর্বে।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×