আগের কথা জানতে পড়ুনমেঘের কোলে রোদ-১১
ভোরবেলা দরজায় খটখট শব্দ শুনে চমকে উঠল ঈষা। কেউ একজন
কড়া নাড়ছে।
মা ঘরে নেই। ঈষা একা। তাই তার বুকটা ধ্বক করে উঠল।শয়তানদের
কেউ নয়তো?
না,শয়তান নয় নিশ্চয়,শয়তানরা মাঝরাতে পৃথিবী কাঁপায়,ভোররাতে জাগে
পাখি। প্রভাতের আগমনী গান গায়। ঈষার জীবনে কি কখনও তেমন ভোর
আসবে,পাখি ডাকবে?
তবু সাহস করে দরজা খুলতে পারছে না ঈষা। যদি কোন শয়তান হয় তবে
ঈষা শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। ছিঁড়েখুড়ে ফর্দাফাঁই করে দেবে অস্তিত্বের
সকল পর্দা।হাজার চিৎকার করলেও কেউ ছুটে আসবে না বাঁচাতে।পাশের
টালির ঘরগুলো থেকে উৎকর্ণ হয়ে থাকবে মানুষজন।
মায়ের উপরে রাগ হচ্ছে ঈষার। ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছে।রাতে ফেরার কথা
ছিল,ফেরেনি। ভাইয়ের বাড়ির ভালমন্দ খেয়ে ভুলে গেছে মেয়ের কথা।মুখে
অবশ্য এমন ভাব দেখায় যেন,মেয়ের জন্যে জীবন দিতে প্রস্তুত।
মায়ের ভাই ঈষার মামা নয়। কেনই-বা হবে? ঈষা যাত্রাপালায় অভিনয় করে।
মামার তাতে আপত্তি। ভেবে দেখে না,প্রাইমারীর গন্ডি পেরোন মেয়ে চাকরী
পাবে কিম্বা চাইবে কোন যোগ্যতায়?বোনের উপরে যদি অতই দরদ,তার পাওনা
গন্ডা বুঝিয়ে দেয় না কেন?
সংসার চালাতে গিয়ে ঠোঙা তৈরী করেছে ঈষা।বিড়ি বেঁধেছে। সবখানে মহাজনের
লোলুপ দৃষ্টি। তারচেয়ে যাত্রাপালায় নিজেকে প্রদর্শন করা অনেক স্বাছন্দের কাজ।
লোলুপদৃষ্টির সাথে প্রসংশাময় হাততালিও থাকে।
আবার খটখট আওয়াজ।
শব্দটা যেন তর না সওয়া আকূতি।
তবু দরজা খুলতে সাহস পায় না ঈষা।
মা বলে, তোর এত ভয় কিসের বলতো? পালাগানে তো দেখি অচেনা-অজানা
মরদের সামনে বুক ফুলিয়ে অ্যাক্টো করিস।
--- স্টেজে অভিনয় করা জীবনে অভিনয় করার চেয়ে সহজ মা। বাবা আমাকে
সেই শিক্ষায় দিয়ে গেছে।
---আ মোলো যা,আবার সেই অনামুখোর কথা,মিনসে তো মরে বাঁচল,আমি
এখন তোকে নিয়ে জ্বলছি।
---বাবা তো তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসেনি মা,তুমিই তো বাবাকে ঘরছাড়া
করেছিলে।
---পোড়া কপাল আমার,তখন কি আর জানতাম,অত সুন্দর চেহারার ভেতর
অমন ক্ষয়রোগ বাসা বেঁধে আছে।
---ক্ষয়রোগ হওয়ার পরেও বাবা তোমাকে মুক্তি দিয়েছিল,তুমি যাওনি।
---যাব কি করে,তখন যে তুই পেটে চলে এলি। এখনও তো দাদারা ডাকে,
চলে আয় খুকি,পেছনের সব মায়া-বন্ধন ফেলে চলে আয়,পারি না যেতে।
---বাবাও তো তোমাকে ছেড়ে যায়নি মা,জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে
গেছে।দিনে বিড়ি বেঁধেছে,রাতে পালা করেছে।আমাকে হাতে ধরে অভিনয়
শিখিয়েছে।পালা-জগতে পরিচিতি দিয়েছে কিন্তু উপরওলার ডাক তো কেউ
আটকাতে পারে না।
---সবই আমার কপাল।বলে কাঁদতে বসে মা।
মামার বাড়িতেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না মা। তার দাদারা তাকে তোয়াজে রাখে
সম্পত্তির লোভে।
দাদুর ছোট মেয়ে। দশ বিঘে ধানিজমি তার নামে রেজিস্ট্রি করা আছে। মামারা
প্রথমে সেসব অস্বীকার করছে,চেষ্টা করেছে বর্গা,অনুমতি দখল রেকর্ড করে
মালিকানা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। সব তীর নাকি ঘুরেফিরে তাদের বুকেই বিঁধেছে।
তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে তারা এখন বারবার ডেকে নিয়ে যায়।
ভালমন্দ খাওয়ায়। ওই জমিটুকুই নাকি তাদের এখন একমাত্র সম্বল।
আবার দরজায় খটখট।
সহ্য হল না ঈষার। হাতে হেঁসো-দা নিয়ে খুলে ফেলল দরজার কপাট।
দরজার সামনের লোকটাকে দেখে তার হাত থেকে দা পড়ে গেল।বলল,
দাদা,তুমি?
মৃদু হেসে ওয়াশিম বলল,বড় বিপদ-রে বোন,তাই তোর কাছে ছুটে এলাম।
---ভাল মানুষেরই বিপদ হয়,এসো দাদা ভেতরে এসো,বল আমি তোমার
কি কাজে লাগতে পারি।
---ভাল করে এককাপ চা কর তো। সারা রাত হেঁটে শরীর যেন জমে গেছে।
(পরের কথা আগামী পর্বে।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



