somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজানা দার্শনিক
আমি ছাত্র । পকেট খালি থাকে আর চেহারার কোয়ালিটি বাজে হওয়ায় আজও সিঙ্গেল যখন আমার বাকি সব বন্ধুরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু করেছে । বই , গেম , অ্যানিমে এবং ইন্টারনেট সার্ফিং করার নেশা থাকায় কিছুটা গর্তজীবীও বটে ।

থমসন এসএমজি , শিকাগোর ত্রাস || মারণাস্ত্র সিরিজ ||

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
=============
Thompson SMG
=============


১৯১৮ সালে জন থমসন যখন এটার ডেভেলাপমেন্টের শেষ করেন , তখন বোধ হয় ভাবেন নি তিনি কতটা গুরুত্ত্বপুর্ণ একটা ডিজাইন শেষ করেছেন । পুলিশ থেকে আর্মি , কন্ট্রাক্ট কিলার থেকে গ্যাং লর্ড সবার হাতেই যে এর ব্যবহার শুরু হবে সেটা বোধ হয় তার ধারনাতেও ছিলো না । এর কত আদরের নাম আছে ... ট্রেঞ্চ সুইপার , দ্যা চপার , শিকাগো অর্গান গ্রিন্ডার , ট্রেঞ্চ ব্রুম ... আরো কত কি ! কিন্তু সেরা নামটা মূলত এসেছে যাদেরকে মারার জন্য এ অস্ত্র ডিজাইন হয়েছিলো তাদের কাছ থেকেই । হ্যা , অ্যাল কাপোন গ্যাং এর মেম্বাররা এই অস্ত্র ব্যবহার করতো আর একে ডাকতো "টমি গান" । নিঃসন্দেহে এই অস্ত্র শিকাগোর সবচেয়ে বেশী রক্তপাতের কারন ।
=============
এই সাব-মেশিনগান এর ডিজাইনার এটির নক্সায়ন করেছিলেন কারন তখনকার ইউ এস মিলিটারির মূল লক্ষ ছিলো , বোল্ট অ্যাকশন রাইফেলের থেকে অটোমেটিক ওয়েপনের দিকে অগ্রসর হওয়া কিন্তু গ্যাস-অপারেটেড ওয়েপনের মতো জটিলতায় না যাওয়া ।
কারন তখনকার সময় আমেরিকানদের কাছে ট্রেঞ্চে ব্যাবহারের জন্য অস্ত্র বলতে ছিলো ব্রাউনিং অটোমেটিক রাইফেল (BAR) যা আসলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট পার্ফরমেন্স দেখাতে পারছিলো না । সেটা রিপ্লেস করার জন্যই এই অস্ত্রের উদ্যোগ নেয়া হয় । চূড়ান্ত নক্সায়ন শেষ হয় , ১৯১৯ সালের দিকে । এর ডিজাইনারদের মাঝে ছিলেন জর্জ গোল , থিওডর ইকহফ , থমাস রয়ানসহ আরো অনেকেই । প্রথমে এর অফিশিয়াল নাম রাখা হয় "অ্যানিহিলেটর" কিন্তু পরবর্তিতে তা পাল্টে ডেভেলাপারের নামে "থমসন সাব-মেশিনগান" রাখা হয় । যদিও আমি মনে করি এর পার্ফরম্যান্সের কথা চিন্তা করলে "অ্যানিহিলেটর" নামটাই ভালো ছিলো ।
ইউ.এস.এ. এর সেনাবাহিনীতে এর ব্যাবহার হয়েছে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত । কিন্তু অন্যান্য অনেক দেশেই এই জিনিস আজও ব্যাবহার হচ্ছে ।
এই অস্ত্র উৎপাদন শুরু হয় অটো-অর্ডিনান্স কোম্পানি শুরু করলেও পরবর্তিতে বার্মিংহাম স্মল আর্মস কোম্পানি , কোল্ট , স্যাভাজ আর্মস কোম্পানিও এই অস্ত্র উৎপাদনের কাজটি করেছে যা ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলমান ছিলো ।
২০ লক্ষ থমসন এসএমজি উৎপাদিত হয়েছে বলে জানা যায় ।
এর কার্যনীতি : ব্লো ব্যাক , ব্লিশ লক ।
==============
এতে ব্যাবহার হয় .45 ACP কার্ট্রিজ যা তৎকালীন বেশ কয়েক মডেলের পিস্টলের কার্ট্রিজের সাথে মিলে যায় । এর ম্যাগাজিন সাইজ বেশ ভালো , ৩০ রাউন্ড ক্লিপ ম্যাগাজিন । ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২০ রাউন্ডের ম্যাগাজিন ব্যাবহার করেছে । যদিও এর মূল ভ্যারিয়েন্টে ড্রাম ম্যাগাজিন ব্যবহার করা যেত না , কিন্তু এর ব্যাবহারের সুবিধার্থেই পরবর্তি ভ্যারিয়েন্ট গুলোতে ৫০ রাউন্ড ও ১০০ রাউন্ডের ড্রাম ম্যাগাজিন ব্যাবহার করা যেত যা পাশ্চাত্য গ্যাং গুলোর মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ।
==============
এই অস্ত্রটি দুই ধরনের ব্যাবহারের জন্য বিখ্যাত ।
এক । আমেরিকান গ্রাউন্ড ফোর্স । তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান কাঁপিয়ে দিতে এটি বেশ ভালোভাবেই ব্যাবহার করেছে । এই অস্ত্রটি মূলত BAR এর রিপ্লেসমেন্ট ছিলো , সে হিসেবে বলা যায় এটি একটি সফল প্রোজেক্ট । তাছাড়া জার্মানি যখন প্রথম সাব-মেশিনগান ব্যাবহার করে , বার্গম্যান এমপি১৮ , তখন এর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে আমেরিকানদেরকে ত্রান দিয়েছে এই থমসন । ব্রিটিশরাও এই অস্ত্রের টুকটাক সুবিধা নিয়েছে ।
এখন আসি এর দ্বিতীয় ব্যাবহার ক্ষেত্রের দিকে । গ্যাং । অ্যাল কাপোন যখন শিকাগোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন তার গ্যাং মেম্বারদের সবচেয়ে পছন্দের অস্ত্র ছিলো এই থমসম এসএমজি বা টমি গান । তারা এর অন্য ভ্যারিয়েন্ট ব্যাবহার করতো এর ড্রাম ম্যাগাজিনের সুবিধা নেবার জন্য । তাদের হাতে এটা যমদূতের অস্ত্রে পরিণত হয়েছিলো । কতজনকে এ অস্ত্রের জন্য বধবা আর এতীম হতে হয়েছে তার কোন হিসাব নেই ।
===============


এই অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো , এটা একটা প্রায় নিখুঁত সাব-মেশিনগান । অসাধারণ অ্যাকুরেসি , তার সাথে দুর্দান্ত ফায়ার রেট । বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে এর ফায়ার রেট ছিলো ৬০০-৭২৫ (এম১৯২৮) , ৭০০ (এম১এ১) , ১৫০০ (এম১৯১৯) । ১৫০০ রাউন্ড পার মিনিট !! বিশ্বাস করা যায় না , তখনকার সময়ে এ ধরনের অসাধারণ একটা অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব ।
রিকয়েল খুবই কম হওয়ায় ব্যাবহার করেও মজা আছে । ইফেকটিভ রেঞ্জ প্রয়োজনের থেকে বেশীই , প্রায় ১৫০ মিটার ।
দক্ষ হাতে এই জিনিস তখনকার প্রতিদ্বন্দ্বী বার্গম্যান এম১৮ কে এটা বেশ ভালোই ভেল্কি দেখিয়েছে । যাদের অতিরিক্ত টেনশন করার বদ অভ্যাস আছে , তাদের হাতে এরকম কিছুই দরকার ।
===============
এর সমস্যা আসলে খুজে বের করাটা মুশকিল । পেনিট্রেশন করার ক্ষমতা সাধারণ সাব-মেশিনগানের মতই । ফায়ার রেট মাত্রাতিরিক্ত বেশি হওয়ায় অদক্ষ হাতে লক্ষ ভ্রষ্ট ও গুলির অপচয় হবার সম্ভাবনা থাকে ।
===============
এর ভ্যারিয়েন্ট আছে বেশ কিছু ।
পারসুয়েডার : প্রথম যখন অ্যানিহিলেটর ডিজাইন করা হয় তখন এটিরও ডিজাইন হয় , এটি ছিলো বেল্ট ফিডিং ওয়েপন ।
মডেল ১৯১৯ : মহান টমি গান । :D
---- এ দুটি ছাড়াও আরো কিছু প্রোটোটাইপ ডিজাইন করা হয়েছিলো । এবং বেশ কিছু ব্যর্থ প্রোটোটাইপও ছিলো ।
===============


এতে তেমন কোন গ্যাজেট ব্যবহার করা হতো না । এটা যেভাবে আছে , সেভাবেই ভালো ।
তারপরেও আধুনিক প্রোটোটাইপগুলোতে কিছু কিছু গ্যাজেট বসাবার সুবিধা রেখেছে -
সাইলেন্সার - খুব একটা কাজের না ।
ট্যাক লাইট - ক্ষেত্র বিশেষে দরকার হতে পারে ।
স্কোপ - সম্পুর্ণ অপ্রয়োজনীয় । কারন একটা টমিগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করার আনন্দ থেকে এটা আপনাকে বঞ্চিত করবে ।
================
এই ছিলো আমাদের আজকের মারণাস্ত্র সিরিজের অস্ত্র বিবরণী। পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।
পরবর্তি কোন অস্ত্র নিয়ে লিখবো বুঝতে পারছি না , আপনাদের কোন সাজেশান থাকলে বলবেন । আর না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটা কোন অস্ত্র নিয়ে লিখে ফেলবো ।
================
এই সিরিজের আগের পোস্টগুলো -
১। একে৪৭ - Click This Link
২। এম১ গ্যারান্ড - Click This Link
৩। ডেজার্ট ঈগল - Click This Link
৪। রেমিংটন ৮৭০ - Click This Link
৫। স্করপিওন ভিযি-৬১ - Click This Link
=================
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×