বহুদিন আগের কথা
আমি সব সময় নাস্তিক বা ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের এড়িয়ে চলি। কারন এরা কোন যুক্তির ধার ধারে না।এদেরকে আপনি যদি অনুরোধ করেন কারো ধর্ম বিশ্বাষে আঘাত না করতে। তারা এটাকে ভাবে দূর্বলতা। তারা তখন আরো বেশী করে খারাপ ভাষায় ধর্ম কে আঘাত করে। তবে নাস্তিক শ্রেনীর বাংলা ব্লগারদের সবচেয়ে অপছন্দের ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তাদএর গাত্র দাহ ইসলাম নিয়েই সবচেয়ে বেশী। তাই এসব পরমত অসহিষ্ণু চরমপন্থি ব্লগারদের সব সময় আরিয়ে চলতাম। আরো একটা ভয়ানক বিষয় আছে আপনি যদি তাদের কে যুক্তি দেখান বা প্রতিবাদ করেন তাহলে তারা আপনাকে ত্যানা পেঁচিয়ে ট্যাগায়িত করবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা কারী হিসেবে। কারন তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট মনে করে, যেমনটা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নামক রাজনৈতিক দল নিজেদেরকে মনে করে। এসব কারনে ধর্ম বিদ্বেষী অসহিষ্ণু ব্লগারদএর এড়িয়ে চলতাম।
তবুও একদিন
তবুও একদিন কিভাবে যেনো আসিফ মহিউদ্দিন নামের নাস্তিক এক ব্লগারের সাথে আলোচনায় জড়িয়ে পড়ি। নাতি দীর্ঘ সেই আলোচনার এক পর্যায়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বলেছিলেন "আমরা যারা আস্তিক ব্লগার তাদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে।'' সেদিন কথাটাকে অত গুরুত্ব দেই নি, মর্মও উপলব্দি করিনি। কিন্তু আজ মর্মে মর্মে বুঝতে পারছি কথাটা সত্য ছিলো। কথাটা নিছক একটা তর্কের খাতিরে তর্ক ছিলো না। আমরা অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ন কথাকে গুরুত্বহীন ভেবে মন থকে মুছে ফেলার চেস্টা করি। আমিও সেদিন তাই করেছিলাম। আজ সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরন, মানুসের বাক স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করার নোংরা প্রচেস্টা দেখে মর্মে মর্মে সেদিনের আসিফ মহিউদ্দিনের কথা উপলব্ধি করছি।
ফিরে দেখা নাস্তিক পর্ব
লাখো লাখো আস্তিক মিছিল মিছিল করে সারাদেশে ফ্যাসিসট সরকারের বিরোদ্ধে। নাস্তিক মিডিয়া বলে, কাঠ মোল্লার ঝটিকা মিছিল।
আস্তিক বিশ্বজিৎ প্রান ভয়ে চিৎকার করে বলে আমাকে মারবেন না , আমি হিন্দু, কিন্তু নাস্তিক মিডিয়া বলে সেকুলার ছাত্রলীগে ধর্মভীরু শিবির ঢুকে এ নৃসংশ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
শাহবাগে নাস্তিক ও সেকুলারিস্টদের হোলি উৎসব হয়ে গেলো, বীরউত্তম বঙ্গবীরকে বলা হলো নব্য রাজাকার। নাস্তিক মিডিয়া বলে এটা নাকি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।
ইমরান সরকার, চটি পিয়াল, আরিফ ঝেপ্টিক রা সেদিন "জবাই কর, বস্তায় ভর, তারপর নাস্তা কর শ্লোগানে মানুষ হত্যআর মাতম তুলে, এমন কি ৬ বছরের নিষ্পাপ শিশুকেও শেখানো হলো এসব মধ্যাযুগীয় বর্বরতা ও নাৎসীজমের স্লোহান। নাস্তিক মিডিয়া বলে এটা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অহিংস আন্দোলন।
২৮ শে ফেব্রুয়ারী মাত্র ৪ ঘন্টায় ৭০টা লাশ সহ সর্বমোট প্রায় ২৫০টা লাশ (যেখানে ১০ বছরের শিশু থকে ৬ নারী সহ ৭০ বছরের বৃদ্ধও আছেন) ফেলে দিয়ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমাকে রক্তনদী বানানো হলো। নাস্তিক মিডিয়া বলে এরা সবাই নাকি দুষ্কৃতিকারী ছিলো।
জেগে উঠা পর্ব
আমাদেরকে যখন এসব অখাদ্য-কুখাদ্য গেলানো হচ্ছিলো। তখন হঠাৎ করে তীতুমীরের পুত্ররা, শরীয়তউল্লাহর বংশধরেরা, শাহজালালের উত্তরসূরীরা জেগে উঠলো। তারা চেয়ে দেখলো আমাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মোড়কে গেলানো হচ্ছে নাস্তিক্যবাদ, গেলানো হচ্ছে উগ্র সেকুলারিজম, গেলোনো হচ্ছে ব্রাম্মন্যবাদ, গেলানো হচ্ছে হোসনি মোবারক, বুশ-ব্লেয়ার থিওরী। আমাদের কে নাস্তিকরা চোখ রাঙাচ্ছে, বলছে আমাদের সাথে থাকো না হলে তুই রাজাকার। তুই রাজাকার।
সারাদেশ ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়লো। সারাদেশের মানুষ ভাবলো ফ্যাসিজম আবার এসেছে নতুন মোড়কে। তারপর জেগেছিলো আবার মাহমুদুর রহমান। বলে ছিলো ফ্যাসিজমের পদধ্বনি শোনা যায়। উগ্র সেকুলারিষ্ট ও নাস্তিকরা হুংকার দিলো মাহমুদুর রহমান কে হত্যা করতে হবে। তারা হুংকার দিলো খালেদা জিয়াকে হত্যার মাধ্যমে গনহত্যা শুরু করতে তাদের মন চায়। তার পর থাবা বাবা অধ্যায়। থাবা বাবাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যা দেয়া হলো। মহান সংসদে দাঁড়িয়ে এসব ধর্ম বিদ্বেষীদের জাতীয় বীর ঘোষনা করে সংসদের ইজ্জত ও সম্মান কে ভুলন্ঠিত করা হলো।
মনে রাখতে হবে নাস্তিকতা আর ধর্ম বিদ্বেষ এক কথা নয়। বাংলাদেশে নাস্তিকরা নাস্তিকতা নাম নিয়ে ধর্ম বিদ্বেষী লেখা ছড়ায়। তারা মানুষের আবেগ ও চেতনাকে গালাগালি করে। ফ্যাসিজমের এ পর্যায়ে সারাদেশে ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃনা ও ক্ষোভ বাড়তে থাকলো। সেই সাথে শাহবাগীদের মুখোশ উম্মোচিত হলো। পাশাপাশি জ্যামিতিক হারে মানুষের সংখ্যা কমতে লাগলো শাহবাগ থেকে। জনমানুষের যে ভালোবাসা শুরুতে পেয়েছিলো একটা মহান দাবীকে সামনে আনার কারনে তা থেকে যখন তারা ছিটকে পড়লো তখন মানুষের ঘৃনা আর হাজার থু থু আর গ্লানি নিয়ে খোদ শাহবাগীরাই আজ তিন চার ভাগে দ্বিধা বিভক্ত।
এই উগ্র সেকুলারিস্ট, ধর্ম বিদ্বেষী, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, হিটলার-মুসোলীনী, বুশ-ব্লেয়ারদের প্রতাত্মাদের বিরোদ্ধে যখন জেগে উঠলো লাখো মানুষ, মানবতার পক্ষে যখন জেগে উঠলো বায়েজিদ বোস্তামীর সন্তানেরা, ওমর-হামজার চেতনাধ, খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরীরা। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে উঠলো বিএন কাশিম- বখতিয়ার খিলজির বংশধর তখন তখতে বসা ঘসেটি বেগম আর হিন্দিভাষী শদন্ট আরতির চোখে সর্ষেফুল।
প্রতিক্রিয়ায়
আজ গ্রেফতার করা হলো তিন নাস্তিক ব্লগারদের। আমি জানতে চাই এদের বিরোদ্ধে কি কোন কেস-মামলা হয়েছে, এদের বিরোদ্ধে কি কোন ওয়ারেন্ট ইস্য হয়েছে। এদেরকে কম্পিটার সহ মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়েছে। কম্পিউটার কি কোন অস্ত্র? এটাকি জমায়াত শিবির ধরে ইসলামী বই ও তাফসীর গ্রন্থ সাজিয়ে রাখার মতো নাটক নয়। এরা কি প্রকৃত অপরাধী?। এরা কি আসিফ মহিউদ্দিন, আমি পিয়াল, আরিফ জেব্তিক, দাঁড়িপাল্লা, টেলি সামাদ, আরিফুর রহমান, ওঙ্কার, শয়তান ইত্যাদি চিহ্নিত ধর্ম বিদ্বেষী ও উগ্ব্লর সেকুলারিস্ট ব্লগারদের মতো। আজ চার বছর ধরে ব্লগিং করি। যাদের কে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম-ধাম তেমন একটা শুনিওনি। কিন্তু ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের মধ্যে যারা রুই, কাতলা বা খতরনাক তারা কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে এখনো। তাই এখনো মনে হচ্ছে এটা উগ্র সেকুলারিস্ট সরকারের ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে আরো একটি নাটক। মুক্তমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার কৌশল।
বুঝিনা এই উগ্র নাস্তিক ও জঙ্গী সেকুলারিস্ট সরকার যে কোন ধুতির চিপায় চিহ্নিত খতরনাক ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগার গুলার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সচিব শাকিল কিংবা হালের বুদ্ধিবেস্যা জাফর ইকবাল আসিফ মহিউদ্দিনের মতো ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের পিঠ চাপড়িয়ে তাদের উগ্রতাকে অভিনন্দন ও মহান সংসদে দাঁড়িয়ে ৭০ এর আন্দোলনের মহা নায়ক তোফায়েল আহমদ যখন বলেন এইসব উগ্র নাস্তিক আর জংগী সেকুলারিষ্ট ও তাদের দোসরা তাদের চেয়েও বড় মুক্তিযোদ্ধা তখন আর বুঝতে বাকী থাকেনা কেন সেদিন আসিফ মহিউদ্দিন আমাকে বলেছিলেন "আস্তিকদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে থাকে"
পাদটিকা:
আজ কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতারে মাছের মায়ের কান্নার মতো অনেকেই মায়া কান্না করছেন এমন কি ব্লগও ভাসিয়ে ফেলছেন। ব্লগকত্রী ও কর্তাগন।
আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে মার্টিন নিয়েমলার-এর অভিজ্ঞতার কথা :
‘‘প্রথমে ওরা এলো কমিউনিস্টদের ধরতে,
আমি প্রতিবাদ করিনি কেননা আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না।
তারপর তারা সোস্যালিস্টদের ধরতে এসেছিলো,
আমি প্রতিবাদ করিনি কারণ আমি সোস্যালিস্ট ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়নপন্থীদের ধরতে,
আমি প্রতিবাদ করিনি কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ইহুদীদের ধরতে,
তখনও আমি প্রতিবাদ করিনি কেননা আমি ইহুদী ছিলাম না।
তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো
তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ ছিলো না।’’
দীর্ঘজীবি হোক ব্লগ
দীর্ঘজীবি হোক ব্লগাররা
দীর্ঘজীবি হোক গন মাধ্যম
দীর্ঘজীবি হোক মত প্রকাশের স্বাধীনতা