somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যখন হুজুর ছিলাম :) :) :)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানের টুকরা দোস্তকে জিজ্ঞেস করিলাম, “ ‘আল্লাহর কী যাদু! ডাণ্ডার ভিতর মধু’ – কতো এইটা কী হবে?”
দোস্ত আমার দিকে রক্ত চক্ষুতে তাকাইয়া বলিল, “শালা। তোর ভাল হবে না। তুই কী মানুষ না অন্যকিছু? আল্লাহর নামেও খারাপ কথা কইস”
আমি অবাক হইয়া মাটিতে বসিয়া পড়িলাম। তারপর যে বেগে মাটিতে বসিয়াছি, তাহার চারগুন বেগে উঠিয়া তাহার কানে দমাদ্দাম চারপাঁচটা চড় মারিয়া বলিলাম, “শালা খালি খারাপ চিন্তা। খারাপ চিন্তা খালি। আমি পার্মানেন্ট ডাণ্ডার কথা কইছি, টেম্পোরারির কথা কই নাই! ব্যাটা ডাণ্ডা হইল আখ। আখ। কুশাইর। আর শালা তুই কী ভাবছিস? সারাদিন খারাপ খারাপ ভিডিও দেখেই তোর এই অবস্থা হইছে”।

মাঝে মাঝে নিজের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করিয়া নির্বাক হইয়া যাই। আমি কী ছিলাম আর কী হইয়া গিয়াছি। ছোটবেলায় পুরুষ-রমণী নির্বিশেষে সুবোধ কিউট বালক বলিয়া আমার গাল টিপিয়া দিয়া কোলে তুলিয়া লইত। আর এখন যখন আমার নিজের ‘টিপিয়া দেওয়ার’ (গালের কথা বলিতেছি, অন্য কিছু ভাবিলে লেখক দায়ী থাকিবেন না) সময় আসিল, তখন সবাই ‘বেয়াদপ’ ট্যাগ মারিয়া আমাকে দূরদেশে নির্বাসিত করিল। ছোটবেলার সেইসব সোনালী দিনের কথা বলিতে গেলে একপ্যাকেট বিড়ি ফুঁকিতে হয় আর দীর্ঘশ্বাসের চোটে আগুন যেন নিভিয়া না যায় সেই দিকেও লক্ষ্য রাখিতে হয়। অবশ্য এই নির্বাসন নিয়া চোখের জলে ‘হাগজ’ ভিজাইতে আজিকার পোস্ট লিখিতে বসি নাই। (হাগজ হইল টয়লেট পেপার। তপন রায়চৌধুরী কৃত মিনিং)
আমি লিখিতে বসিয়াছি আমার হুজুরবেলা সম্পর্কে। অনেকেই তাহাদের হিজড়াবেলা, বান্দরবেলা, প্রেমিকবেলা সম্পর্কে লিখিয়াছেন, কিন্তু হুজুরবেলা সম্পর্কে আমার জানা মতে কেহ লিখেন নাই। এর কারণ অবশ্য অতি সাধারণ। হুজুর হইতে গেলে যে ইলম আর ধৈর্য আবশ্যক, অনাবশ্যক হইলেও বলিতেছি, তাহা সবার মধ্যে নাই। আমার গোষ্ঠীতেও অনলি ওয়ান পিস এভেলেবল, বুঝিতে পারিয়াছেন নিশ্চয়ই সে-বান্দা কে। তাছাড়া আল্লাহ’তালা আল কুরানের সূরা এতো এর এতো নাম্বার আয়াতে বলিয়াছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে হইতে যাকে ইচ্ছা ইলম দান করিব, যাহার কাছ থাকি ইচ্ছা তাহা ফিরাইয়া লইব”। (আমি ইচ্ছা করিয়াই সূরা আর আয়াতের নাম কইলাম না। কারণ আমি এভাবে আয়াতসহ সূরার নাম বলিলে, ইহাতে যদি কেউ আমার মধ্যে নব্য জাকির নায়েক খুঁজিয়া পাইয়া পূজা শুরু করিয়া দেন, তাহা হইলে আমি সমস্যায় পরিব। কারণ আমি লেকচার দিতে এবং টিভিতে ইন্টারভিউ দিতে লজ্জা বোধ করি)। সুরাং আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় আমাকে হুজুর বানাইয়াছেন। আবার যখন দেখিলেন আমিও আদমের মতন গন্দম খাইয়া বেল্লাল্লপনা শুরু করিয়া দিয়া হুজুর জাতির লুঙির গিট্টু খুলিয়া দিয়াছি অর্থাৎ মান-সম্মান-ইজ্জত ধূলায় মিশাইয়া দিয়াছি, তখনই তিনি আমার হুজুরত্ব কারিয়া লইলেন। সবই তার ইচ্ছা।
তখন আমি ক্লাস ফাইবে পড়িতাম। রমযান মাসে হঠাৎ একদিন দেখিলাম আমার বন্ধু সজীব পাঞ্জাবি পরিয়া টুপি মাথায় দিয়া মসজিদের দিকে চলিতেছে। আমি যতপরনাই ভীত হইলাম। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় সে আমার চাইতে তিন নাম্বার কম পাইয়াছিল। আমাকে কাটাইবার কম চেষ্টা সে করে নাই। আমি ভাবিলাম, শালা এমনিতেই পড়ে সারাদিন। তার উপর যদি আল্লাহর রেডিমেড আসমানি হেল্প পায়, তাহা হইলে আমাকে কাটাইতে তাহার মিনিটখানেক সময় হয়তো লাগিবে। সুতরাং আমিও আল্লাহর হেল্প পাইতে নিয়মিত মসজিদ যাইতে শুরু করিলাম।
সজীবের সহিত তখন কথা বলিতাম না। কিন্তু দেখিতাম, আমি যদি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি, তাহা হইলে সে চাইর রাকাত আদায় করিত, আমি চাইর রাকাত পড়িলে সে ছয়। অবশ্য ভাল কাজ করিলেই কটু কথা শুনিতে হয়। আমার পিতা হইতে শুরু করিয়া এলাকার বাবলুদা, রাব্বানি ভাই, আজম ভাই সবাই বলিতে লাগিলেন যে, “রমজানটা শেষ হলেই, তোর হুজুরত্বের শ্রাধ্য করতে হবে”। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই ভয়ে ভীত ছিলাম, তাই রমাদান শেষ হইয়া যাইবার পর খুব করিয়া নামাজ পড়া বাদ দিতে ইচ্ছা করিলেও, ছাড়িলাম না। যেভাবেই হউক, তাহাদের ভবিষ্যৎবাণী সফল হইতে দেওয়া যাইবে না।
এই রকম রেষারেষি করিয়া আমাদের রমাদান মাস কাটিল। আর রমাদান শেষ হওয়া মাত্র সজীব নামাজ বাদ দিল। তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হইল যে, বৃত্তি পরীক্ষায় সে আর আমাকে কাটাইতে পারিবে না। কারণ আমি নামাজ ছাড়ি নাই।
কিন্তু এদিকে অল্প দিনেই মেলা জিনিস আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছি। যেমন নিয়মিত নামাজ আদায় করিলে পায়ের গোড়ালিতে আর কপালে কাল দাগ পড়িয়া থাকে। আমি ইহা লইয়া কিঞ্চিৎ চিন্তিত ছিলাম। আমার সেই কিঞ্চিৎ চিন্তার নিশ্চিত অবসান ঘটিল যখন এক এলাকাত দাদী বলিলেন, “কপালের কাল দাগ যত বেশি(প্রশস্থ) হবে, জান্নাতে সে তত বড় স্থান পাবে”। অতএব, আমি সেই কপালের দাগ যেন আরও বড় হয়, সেই জন্য কাজ করিতে লাগিলাম। সিজদা দেওয়ার সময় এমন জোরে শব্দ করিয়া মাথা মেঝেতে আছড়াইতাম যে ইমাম পর্যন্ত চমকিয়া যাইতেন। ইহাতে আমার কপালের কাল দাগ কতটুকু বাড়িয়াছিল জানি না কিন্তু আমি যে স্বর্গে যাইবই, এই কাল অহংবোধ আনলিমিটেড পরিমাণে বাড়িয়াছিল।
আরও একটা জিনিস আবিষ্কার করিয়া এতোই আনন্দিত ও বিনদিত হইয়াছিলাম যে এখন মনে হয়, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করিয়াও এতো আনন্দিত হন নাই। আমি দেখিতাম যে, আমাদের মুয়াজ্জিন সাহেব নামাজ পড়িবার সময় চোখ মুখ ঘুরাইয়া ডানে বামে দেখেন। নফল নামাজ পড়িবার সময় যখন তাকাইত তখন আমি তাহার চোখের দৃষ্টি যেখানে যায়, সেইখানে গিয়া মুখ ভেংচাইতাম। বেচারাকে ইহা নীরবে সহিতে হইত। এর মধ্যে একদিন আমার দিকে তাকাইতেছিল, আমি বুঝিতে পারিয়া তাহাকে শাহরুখ খানের ‘রাওয়ান’ ছবির ‘পাওয়ার ইয়োগা’ মারিলাম। তিনি লজ্জা পাইয়া নিচের দিকে তাকাইলেন।
সেদিন তিনি আমাকে ধরিয়াছিলেন। বলিলেন, ‘আমি নামাজ পড়ার সময় তুই এমন করলি কেন?”
আমি বলিলাম, “কেমন করিলাম?”
তিনি তখন পুটু পিছনে লইয়া দুইহাত মুঠি করিয়া সামনে বাড়াইয়া আবার পুটু দিয়া ঠেলা দিয়া পাওয়ার ইয়োগা করিয়া দেখাইলেন। বলিলেন, ‘এমন করলি কেন?”
আমিও পকাত করে আরেকবার পাওয়ার ইয়োগা করিয়া বলিলাম, “আমি যে এমন করলাম, আপনি দেখলেন কীভাবে?”
ততদিনে পাক-নাপাক সম্পর্কে ধারনা আসিয়া গিয়াছে। কিন্তু ধারনা না থাকিলেই বোধহয় ভাল হইত। কারণ আমার সবসময় মনে হইত আমি নাপাক হইয়া গেয়েছি! মূত্র ত্যাগের পর টিসু ব্যবহার করি অতঃপর এক বদনা পানি গোটাল ব্যয় করি, অথচ সেই নাপাক নাপাক ভাব আর যায় না মনের। সুতরাং প্রতিওয়াক্ত নামাজের আগে আমি গোসল করিতাম। ভাবিলে এখনও গায়ে জ্বর আসিতে চায়। আমার এই অতীব পাকপবিত্রতা সম্পর্কেও এলাকার বদবদ ছেলেগুলার সন্দেহের শেষ ছিল না।
খালাতো ভাই সন্ধি বলিতেন, “তুই প্রতিবার নামাজের আগে গোসল করিস ক্যান? তোর সমস্যাটা কী?”
আমি তখন নিতান্ত বালক, অতো কিছু কি আর বুঝিতাম? আমি বলিতাম, “কোন সমস্যা নাই। নাপাক হয়ে গেছি তাই গোসল করছি”।
সন্ধি ভাই শুনে চোখ কপালে তুলিয়া বলিতো, “এই বয়সে নাপাক!”
কিন্তু আমার এই সমস্যা বেশিদিন রইল না। কিছুদিন পর এক হুজুর আমাকে বাৎলে দিলেন যে, কুলুপ লইয়া চল্লিশ কদম হাঁটিতে হইবে। চল্লিশ কদম হাঁটিবার পর যদি দরদর করিয়াও হিসু হইয়া যায়, তবুও তুমি পাক! আমি ভাবিলাম, পাঁচবার গোসল করিবার চাইতে কুলুপ লইয়া চল্লিশ কদম ভ্রমণ করা উত্তম। আসলে মানুষ আল্লাহর হুকুম মানে না বলিয়াই তাহাদের ডায়াবেটিস হইয়া থাকে। তাহারা এমনিতেই ঘনঘন টয়লেট যাতায়াত করে, যদি পাকপবিত্র হইবার জন্য প্রতিবার চল্লিশ কদম করিয়া হাঁটিত, তাহা হইলে তাহাদের ডায়াবেটিস কি আর থাকিত? আসলে আল্লাহর সব কথাই বিজ্ঞানসম্মত। এমনকি, এই যে প্রসাব করিয়া চল্লিশ কদম হাঁটা, সেইটাতেও বিজ্ঞান, সেইটাতেও মঙ্গল। কোন নালায়েক কয় ইসলামে বিজ্ঞান নাই?
এমনি করিয়া সমাপনি দিলাম। বৃত্তিও পাইলাম। কিন্তু তাহার পর শুরু হইল ভর্তি যুদ্ধ। যেভাবেই হউক আরবিআরে চান্স পাইতেই হইবে। সুতরাং আমি মসজিদে যাতায়াত বাড়াইয়া দিলাম। চান্সও হইল। চান্স পাওয়ার পর দেখিলাম যাহারা আমার মত ডিঙ ডিঙ করিয়া সিজদা দেয় নাই, তাহারাও চান্স পাইয়াছে, এমনকি বৃত্তিও পাইয়াছে। তখন ভাবিলাম হুজুরত্ব আপাতত স্থগিত থাউক। ক্লাস এইটে নাহয় আরেকবার আল্লাহ’তালার আসমানি হেল্প লইব। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করিয়া দিলাম লাফাঙ্গাগিরি। লাফাঙ্গাগিরির একটা উদাহরণ দেই-
সাখিলা ম্যাডাম তখন আমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পড়াইতেন। আমি আমার স্বভাবের কারণেই হউক আর ইনোসেন্ট ভাবের কারণেই হউক তাহার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিয়াছিলাম। সুতরাং বাকি সব ক্লাসে আবুল হাসানের মত পিছনের বেঞ্চে বসিলেও তাহার ক্লাসে ফার্স্ট বেঞ্চে বসিতাম। একদিন তিনি ক্লাসে ‘কার’ আর ‘ফলা’ পড়াইতেছিলেন। আমার মন সেদিন একটু বেচাইন ছিল বোধহয়। আমাকে অমনোযোগী দেখিয়া বলিলেন, ‘উৎস, দাঁড়াও’।
আমি দাঁড়াইয়া তাহার দিকে ইনোসেন্ট লুকের তীর মারিয়া বলিলাম, “ম্যাম, আমি কিছু করিনি”। তিনি আমার কথা না শুনিয়া জিজ্ঞেস করিলেন, “র এর দুইটা সংক্ষিপ্ত রুপ আছে। একটা ধ্বনির আগে উচ্চারিত হয় থাকে আরেকটা হয় ধ্বনির পরে। তুমি বল, র এর সংক্ষিপ্ত রুপগুলো কী কী আর কোনটা আগে আর কোনটা পরে উচ্চারিত হয়।”
এখন জানি, উত্তর হবে রেফ আর র-ফলা। রেফ ধ্বনির আগে উচ্চারিত হইয়া থাকে আর র-ফলা পরে। যেমন পর্ণ (পর্ণ মানে পাতা রে ভাই!) শব্দটায় র উচ্চারিত হইয়াছে ণ এর আগে এদিকে ‘প্রভা’ শব্দটায় র উচ্চারিত হইয়াছে প এর পরে। অতি সিম্পল বাত।
কিন্তু তখন আমি প্রভাকেও চিনিতাম না আর পর্ণ(লতা-পাতা-ফুল-ফল থুড়ি শুধু লতা-পাতা) তো দূরকি বাত। আমি না পারিয়া মাথা চুলাইতে লাগিলাম। কিন্তু আমার অক্সিলারি অর্থাৎ সাহায্যকারী অনেক ছিল। তাহাদের একজন আস্তে করিয়া বলিল, ‘রেপ’!
আমি ভাবিলাম, একটা যদি ‘রেপ’ হয় আরেকটা নিশ্চয়ই ‘ধর্ষণ’! কিন্তু আমাকে তাহা বলিতে হইল না। আমার এই চিন্তাটা কীকরিয়া জানি জনির মাথায় ট্রান্সফার হইয়া গেল। সে একটু জোরেশোরেই বলিয়া ফেলাইল, “ধর্ষণ”!
এই কথাটা ম্যাডামের কানে গিয়াছিল। তিনি আমাকে আর জনিকে ক্লাস হইতে নিকাল দিলেন।
পরদিন আমাদের বাড়িতে চিঠি গেল। “আপনার ছেলে অধ্যয়নে মনোযোগ না দিয়া বিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত কাজে লিপ্ত রহিয়াছে। অতএব, তাহার বিরুধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা লওয়া হইবে না............ইত্যাদি ইত্যাদি” ।
এদিকে এতদিন এতোই ইমানদার হইয়া গিয়াছিলাম যে, আমারে ছাড়া ইমাম সাহেব নামাজ পর্যন্ত শুরু করিতেন না। অতএব আমি যখন আর মসজিদে যাইতাম না, তখন তিনি কিঞ্চিৎ টেনসনিত হইলেন।
একদিন আমাকে ধরিয়া জিজ্ঞেস করিলেন, ‘বালক, তুমি নামাজ পড়িতে আইস না কেন?’
আমি মাটির দিকে তাকাইয়া জবাব দিলাম, ‘হুজুর, আমার কোন দোষ নাই। সব দোষ শয়তানের। আর আল্লাহই শয়তান ক্রিয়েট করেছেন। সুতরাং আমি যে নামাজে আসি না এইটাও আল্লাহর ইচ্ছা। এর মধ্যেই মঙ্গল নিহিত। বস্তুত এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার এন্ড লাভলি’।
হুজুর আমাকে সেই দিন ছাড়িয়া দিলেন।
অতপর আবার আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ক্লাস এইটে হুজুর হইয়া গেলাম। এবারে একটু বেশি মাত্রায় হুজুরত্ব আমার মধ্যে জাগিয়া উঠিল। বিশেষত, আমার এলাকা হইল জামাত অধ্যুষিত। তাহাদের সংস্পর্শে আসিয়া ইমানি জোশে এতোই বলিয়ান হইয়া উঠিলাম যে, ইচ্ছা হইল আমেরিকা উড়াইয়া দিয়া আবার খেলাফত প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু আমেরিকা বাংলাদেশ হইতে তিন আসমান দূরে। আর আমাদের তো আর হুদহুদ আর বুররাক নাই। সুতরাং আমাকে বলা হইল, “আগে দেশের কাফেরদের কিছু করতে হবে”।
কিন্তু এদিকে আমার বাড়িতে খবর হইয়া গিয়াছিল। ইমানি জোশেই হউক আর তরবারি দিয়া কাফেরদের কল্লা কাঁটার জোশেই হউক আমার হুজুরত্ব অতিরিক্ত পরিমাণে বারিয়া গিয়াছিল। গ্রীষ্মে রাত আঁটটায় ইশার আজান দিত। আর নামাজ শুরু হইত সাড়ে আঁটটায়। আমি ইমানের বারুদে জ্বলিয়া উঠিয়া আজানের সাথে সাথেই মসজিদ পানে ছুটিতাম।
কিন্তু এদিকে নালায়েক সমাপনি পরীক্ষা চলিয়া আসিল। পিতাজান আমার এরুপ ইমানের কথা জানিতে পারিয়া চিৎকার মারিয়া বলিলেন, “বেহেশত যাওয়ার সখ হইছে না? বৃত্তি না পাইলে আমি তোকে বেহেশত পাঠাব। খেয়াল রাখিস?”
আমার কাছে বেহেশত খুব কাম্য জিনিস হইলেও শর্টকাট উপায়ে হুর লাভের কোন ইচ্ছা ছিল না। তাই মসজিদে যাওয়া বাদ দিয়া পড়িতে শুরু করিয়া দিলাম। জানা কথা যে দেশপ্রেম আর ইমান দুইটাই- সাতদিন থাকে, তারপর আর থাকে না। থাকিলে ডাক্তার দেখাইতে হয়- ইহা চরম উদাস কহিয়াছেন। সুতরাং পড়ার চাপে আমার ঈমানও পলায়ন করিল।
ক্লাস টেনে উঠিলে পিতা কহিলেন, “এবারে একটু আরবি শিখ। এটাও শিখতে হয়”।
আমি কইলাম, “আলবাত”।
তিনি আমাকে আরবি শিখাইবার জন্য এক বরকাওয়ালি আপুকে ঠিক করিলেন। কিন্তু তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করিলেও আমি আরবি শিখিতে পারিলাম না। দোষ অবশ্য আমার একটুও ছিল না। আপু অতিরিক্ত সুন্দরী হইলে আমার কী দোষ?
এভাবেই আমার হুজুরত্ব খতম হইল। তবে, আমার নিজের উপর কোন বিশ্বাস নাই। কিছুদিন পর দরকার হইলে আবার হুজুর হইয়া যাইতে পারি।
কিছুদিন আগে এক শিবির ভাই আমাকে কইল, “তুই শালা জাহান্নামে যাবিই। তোর কোন মাফ নাই”।
আমি কইলাম, “চুপ শালা। আল্লাহ তো আর শিবির করে না”

এক হাতে মোর তসবী খদার,আর-হাতে মোর লাল গেলাস,
অর্ধেক মোর পুন্য-স্নাত, আধেক পাপে করল গ্রাস।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁটি মুসলিমও-
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ।
-ওমর খৈয়াম
অনুবাদ- কাজী নজরুল ইসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৭
৩১টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×