somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Cast Away (2000)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনারা অনেকেই হয়তো মুভিটি দেখে ফেলেছেন অনেক আগে। ১৭ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এমন উচ্চমানের সিনেমা কেউ দেখেননি, এমনটা ভাবা বাতুলতা। তবু লিখছি, তাদের কথা ভেবে, যারা দেখননি এখনো। কিংবা নিজের প্রয়োজন থেকেই। দেখার ৮ ঘণ্টার পরও এতো আবেশিত হয়ে আছি যে, সে মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করাটা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
castaway শব্দটার অর্থ সমাজচ্যুত। নামটা থেকেই ধারণা করা যায় এর গল্প। কিন্তু গল্পটাই তো সব কথা নয়। একটা সিনেমা শুধু গল্প বলে না। গল্প ছাড়াও সিনেমা হয়, এমনকি আধুনিক ছোটগল্পগুলোতেও তা দেখা যায়। উপন্যাসেও। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ'র 'চাঁদের অমাবস্যা'র কথা স্মরণ করা যেতে পারে। সেখানে গল্প বলতে, একটি খুন। এক চন্দ্রাহত যুবকের মানসিক উত্থানপতনই এর গল্প। ঘটনার ঘনঘটা নেই, তবে বর্ণনার ছটা আছে। গোয়েন্দা নেই, তবু রোমাঞ্চ আছে। গোটা উপন্যাসটা দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি রাত আর এক যুবকের মগজে ভর করে। এই যে সামান্য গল্প নিয়েও লেখা যায় উপন্যাস, তা যেমন দেখা যায় 'চাঁদের অমবস্যা'য়, তেমনি অল্প গল্পতেও যে সিনেমা হতে পারে, সেটার প্রমাণ castaway... এখানে 'বর্ণনার ছটা' সিনেমার ভাষায় আর অভিনেতার অভিনয়ে।
গল্প বলতে, এক ভ্যাগ্যাহত ব্যক্তি- চাক নোল্যান্ড (টম হ্যাংক্স), বিমান দূর্ঘটানার শিকার হয়ে আটকে পড়েন প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক বাস-অযোগ্য দ্বীপে। পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করেন ফেডারেল এক্সপ্রেস নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসে। প্রচন্ড সময়সচেতন চাক ঘুরে বেড়ান সারা পৃথিবীতে। সমাধান করেন বিভিন্ন সমস্যার। প্রেমিকা কেলির সাথে বিয়ে হচ্ছে না এই সময়ের অভাবেই। খুব সাধারণ মানুষ চাক। তার দাঁতের ব্যাথা আছে। দেখতে পথচলতি আর দশটা মানুষের মত। একটু মোটা। ভয় পান ড্যান্টিস্টের কাছে যেতে।
সেই চাকই ভাগ্যের বরাতে আটকে যায় সমুদ্রবেষ্টিত এক দ্বীপে। সেখানে কাটানো চাকের চার বছর আর ফিরে আসাটাই এ সিনেমার গল্প। তবুও এটাই সবটা নয়। ঐ যে বললাম, সিনেমাভাষা- সেটাই গল্পটাকে গল্লের উপরের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
সিনেমাটার প্লটে রবিনসন ক্রুসোকে খুঁজে পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই দুইয়ের পার্থক্য বিস্তর। ক্রুসো যেমন অজানা এক দ্বীপে আটকে পড়ে, সে দ্বীপটিকে নিজের বানিয়ে নিয়েছিল, গড়ে তুলেছিল এক সাম্রাজ্য, শাসন করেছিল প্রকৃতিকে, castaway ঠিক উল্টো। প্রকৃতিকে শাসন করতে পারেনি এর প্রধান চরিত্র, বরং প্রকৃতিই তাকে বারংবার বাধ্য করেছে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিতে। এটাই এর সার্থকতা। অন্তত সিনেমাটা দেখার পর প্রত্যেক দর্শকই তা মেনে নিতে বাধ্য হবে।
castaway তে নায়িকার (কেলি)ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Helen Hunt। তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি খুব বেশি নেই সিনেমায়। কিন্তু সিনেমার পুরোটা জুড়েই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। চাককে উপহার দেয়া তার একটি ঘড়ি থেকে গিয়েছিল এতসব ঝড়ঝাপ্টার পরও। যেটা হয়েছিল চাকের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। সিনেমায় কেলির (হেলেন হান্ট) সামান্যতম উপস্থিতও উষ্ণতা দিয়েছে অনেকখানি।
সিনেমার অন্যতম আরেকটি একটি চরিত্র উইলসন। উইলসন মানুষ নন। একটি বাস্কেটবল। এই বাস্কেটবলটিই চাকের নিত্যসঙ্গী হয়ে ছিল চার বছর। চাক নিজের মনেই কথা বলতো তার সাথে। ঝগড়া করতো। রেগে গেলে আঘাত করতো। আবার বলটা আঘাত পেয়েছে বলে, ক্ষমা চেয়ে বলতো, 'never again!'
সিনেমার শেষ প্রান্তে চাকের হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা ছিল অন্যতম হৃদয়বিদারক একটা ঘটনা। Tom Hanks এর গলায় "wilson! Wilson! I'm sorry!" শুনে চোখ ভিজে এসেছিল একসময়।
সিনেমাটির জন্য ছবির চিত্রনাট্যকার আর অভিনেতা টম হ্যাংক্স এর ডেডিকেশন অবাক করে দেয়ার মত। চিত্রনাট্যকার উইলিয়াম ব্রোয়েলস জুনিয়র মূল চরিত্রের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কেমন হতে পারে জানতে, নিজেই একটা নির্জন দ্বীপে পুরোপুরি প্রযুক্তি বর্জিত হয়ে একা বসবাস করেছিলেন টানা সাত দিন। খাবার খুঁজেছেন, আগুন জ্বালিয়েছেন, পানির সন্ধান করেছেন আদিম মানুষের মতই। তার সেখানেই তিনি খুঁজে পান সিনেমার আরেকটি চরিত্র 'উইলসন'কে। দ্বীপে থাকার সময় তিনি স্রোতে ভেসে আসা একটা বল পান। আর সেটাকেই জুড়ে দেন castaway এর মূল গল্পের সাথে।
টম হ্যাংক্সের কথা না বললেই নয়। সিনেমার প্রয়োজনে তিনি ওজন বাড়িয়েছেন। কমিয়েছেনও সময়মত। দাড়ি রেখেছেন এক বছর যাবত। চার বছর যাবত একটা দ্বীপে আটকে থাকা একটা মানুষের প্রত্যেকটি চিহ্ন তিনি ধারণ করেছেন চিত্রায়নের সময়।
পরিচালক রবার্ট জেমেকিসের এটাই হয়তো শ্রেষ্ঠ সিনেমা। কিংবা এর চেয়ে ভালো সিনেমা আছে তার ঝুলিতে। জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি, শুধু এই সিনেমাটার জন্যই তিনি অনেকদিন বেঁচে থাকবেন সিনেমাপ্রেমীদের মনে।
সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা না বললে অবিচার করা হবে। সমুদ্রের একটানা স্রোতের শব্দকেও নিঃশব্দে পরিণত করার বাহবা নির্ঘাত মিউজিক ডিরেক্টরই পাবেন।
শেষ করবো, সিনেমাটার অসাধারণ একটা ডায়লগ দিয়ে। এই এক মিনিটের ডায়লগটাই অনেকটা পাল্টে দিয়েছে আমার দৃষ্টিভঙ্গি। বেঁচে থাকাটাই আনন্দের- এটুকু বুঝতে হলেও এই ব্লু হোয়েল প্রজন্মের মুভিটা দেখা উচিত।

I was never gonna get off that island. I was gonna die there, totally alone. I was gonna get sick, or get injured or something. The only choice I had, the only thing I could control was when, and how, and where it was going to happen. So... I made a rope and I went up to the summit, to hang myself. I had to test it, you know? Of course. You know me. And the weight of the log, snapped the limb of the tree, so I-I - , I couldn't even kill myself the way I wanted to. I had power over nothing. And that's when this feeling came over me like a warm blanket. I knew, somehow, that I had to stay alive. Somehow. I had to keep breathing. Even though there was no reason to hope. And all my logic said that I would never see this place again. So that's what I did. I stayed alive. I kept breathing. And one day my logic was proven all wrong because the tide came in, and gave me a sail. And now, here I am. I'm back. In Memphis, talking to you. I have ice in my glass... And I've lost her all over again. I'm so sad that I don't have Kelly. But I'm so grateful that she was with me on that island. And I know what I have to do now. I gotta keep breathing. Because tomorrow the sun will rise. Who knows what the tide could bring?
সত্যিই তো, Who knows what the tide could bring?


Castaway
পরিচালক: রবার্ট জেমেকিস
অভিনয়: টম হ্যাংক্স, হেলেন হান্ট
মুক্তি: ২২ ডিসেম্বর, ২০০০
IMDB Rating: 7.8/10
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০৩
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×