somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওড়ের টানে টাঙ্গুয়ার হাওড় ..........

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক যাত্রায় তিন দ্রষ্টব্য- দৈনিক কালের কন্ঠতে প্রকাশিত লেখা


একদিকে সবুজ পাহাড় আরেক দিকে নানা রঙ্গের পানির হাওড় , মনমুগ্ধকর এক পরিবেশ ! পাহাড়ের গায়ে নানা রঙ্গের মেঘের খেলা । মেঘ কখনো সবুজ পাহাড়কে ডেকে দিচ্ছে আবার কখনো বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার আপন ভালবাসায় ।

”ভ্রমণ বাংলাদেশ” এর ২৭ জনের বিশাল দল প্রথমেই গেলাম শ্রীমঙ্গল শহরে । সেখানে আগে থেকেই সিলেট থেকে এসে রেস্ট হাউজ ঠিক করেছে আমাদের নতুন জামাই তাসনুভার স্বামী বাবন ।
আমরা বাস থেকে নেমেই গেলাম সেখানে । সকালে প্রচন্ড বৃষ্টি আমাদের যাত্রাকে ব্যহত করলো । নাস্তা শেষ করে বাস ঠিক করতে করতে বেজে গেল ১০টা ।
আমাদের প্রথম গন্তব্য মৌলভৗবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেক । সেখানে তিন কিমি ব্যাপ্তি চা-বাগান, লেক, শাপলাফুল আর মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঠান্ডা পরশ আমাদের মনকে করছিল উৎফুল্ল । গেটে ঢুকতে কোন টাকা লাগে না , তবে গাড়ির জন্য পাকিং চার্জ দিতে হয় । যাতাযাতের জন্য সিএনজি চালিত বেবি, রির্জাভ মাইক্রোবাস বা লোকাল বাসে শ্রীমঙ্গল থেকে যেতে পারেন মাধবপুর লেকে । লোকাল বাসে গেলে ভানুগাছ নামতে হবে । এরপর রিকসা বা সিএনজি চালিত বেবিতে মাধবপুর লেক । শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ১৫কিমি দূরে যেতে হবে অপরূপ সবুজের গাছগাছালির মাঝ দিয়ে ।
চা-বাগান আর লেকের নানা জায়গায় ছবি তুললাম আমরা । সুযোগ পেয়ে লেকের পানিতে ডুব দিলো বেলাল । ছোট একটি ছেলে শাপলা ফুল দিয়ে মালা তৈরি করে দিল মিনি আর মিতাকে । তারা তো মালা পেয়ে মহাখুশি । কি স্ন্দুর মালা !!

লেক আর চা-বাগান দেখা শেষ করে গেটে পান করলাম চা. নুপুর কিনলো আনারস । মাধবপুর দেখা শেষ করে গেলাম প্রাকৃতিক লাউয়াছড়া বনে । নানা রকম পাখির ডাকে সবার চোখ গাছের ডালে । মাঝে মাঝে ক্যামেরা তাক হচ্ছিল গাছের ডালে ঝুলে থাকা মাকড়সার দিকে । অনেক পর্যটক আজ বনে, তাই বানর আর উল্লুকের দল লুকিয়েছে বনের গহিনে ।
এক ঘন্টার একটা ট্রেইল দিলাম সবাই মিলে । মাকড়সা , পাখি আর নানা কিটপতঙ্গের ছবি তুললাম । দেখলাম কমলাবুক কাঠ বিড়ালি , কিন্তু তার চঞ্চতার কাছে হার মানলো আমাদের ক্যামেরা ও লেন্স । ঝিরিতে কিছুটা পানি কেউ কেউ পা ভিজিয়ে নিলো মনের আনন্দে ।
বনে ডুকতে জনপতি দিতে হয় বিশ টাকা । ছাত্রদের জন্য হাফ, তবে পরিচয়পত্র সাথে থাকতে হবে । ,ট্রেইল শেষ করে চলে এলাম গেটে দাড়ানো আমাদের রির্জাভ করা বাসে । গন্তব্য শ্রীমঙ্গল ”কুটুম বাড়ি রেস্টরেন্ট” ।
২০১১ সালে হামহাম ঝর্না থেকে ফেরার সময় একবার ২০ জনের দল ডুকেছিলাম এখানে , খাবারও ভালই ছিল ।
কিন্তু এবার যেন কি হলো ? দেড় ঘন্টা বসিয়ে মুরগীর যে পিস দিলো তা দেখে মনে হলো মুরগী গুলোর মনে হয় পোলিও হয়েছিল । সেই খাবার খেয়ে ভারক্রান্ত মনে ফিরলাম রেস্টহাউজে । এবার গন্তব্য সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ । সাংবাদিক বন্ধু শাহীন ভাই ও সুনামগঞ্জের বাবলু ভাইয়ের সাহায্যে হোটেল ঠিক করলো তাহসিন ।
খাবারের ব্যবস্থা করলো মাধবদীর তুহিন ভাই, তাকে সাহায্যে করলো মাধবদীর কামাল ভাই ও মেজবা ভাই । খেতে বসার আগেই ফোন করলো জুবায়ের ভাই । রুমা আপা, আফরিন আপা আর মাউন্ট এলব্রুস জয়ী ইতিকে সাথে নিয়ে এসেছে ঢাকা থেকে । আমি আর তাহসিন মিলে রিসিভ করলাম তাদেরকে ।
পরদিন খুব ভোরে বৈঠাখালী ঘাটে গেলাম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে । ঘাট পার হয়ে দেখি কোন লেগুনা নেই । তাহসিন ফোন করে লেগুনা আনালো ঠিকই ততখনে পার হয়ে গেছে প্রায় এক ঘন্টা । দূরে সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘ দেখে সবাই নেমে পড়লো ছবি তুলতে ।
তাহেরপুরের চেয়ারম্যান বিশ্বজিত দা ও সারোয়ার হাবিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল ফোনে আমাদের ডাক্তার বন্ধু এম এ মুক্তাদির ভাই।
তাদের সাহায্যে নৌকা ঠিক হলো । তাহেরপুর বাজার থেকে হাওড়ের টাটকা মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে উঠলাম নৌকায় । মাঝিকে--- ”সুজন কান্ডরি নৌকা সাবধানে চালাও, মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপক্ষী নাও”- গানটা শুনালাম আর বললাম সাবধানে নৌকা চালাতে কারণ হাওড়ে অনেক নৌকার দূরঘটনা ঘটে । ”

দুপুরের করা রোদে নৌকা চললো ........ উদ্দেশ্যে । লাইফ জ্যাকেট দিয়ে গোসলে মজা নেয়ার জন্য আমরা গেলাম সেখানে । ঘন্টা খানেক গোসল শেষ করে গেলাম ট্যাকেরঘাটের দিকে । রাত থাকবো সেখানে । মেয়েদের জন্য রেস্ট হাউজ ঠিক করা হল আর ছেলেরা থাকবে নৌকায় ।
বিশাল পরিকল্পিত বাজার । কিন্তু বেশি ভাগ মানুষ স্থানীয় তাই বাজারের বেশি ঝাল দেয়া খাবারে আমাদের চলবে না । খাবার অডর্রি দেয়া হলো সবার কথা মাথায় রেখে।
কাছেই বারেক টিলা তাই তুহিন ভাই স্থানীয় মোক্তার মামাকে বলে দিলো আমাদের জন্য মটর সাইকেল ঠিক করে দিতে আর তারা তিনজন চলে গেল সুনামগঞ্জ শহরে ।
রাতে খাবার খেতে বেজে গেল রাত ১২টা । মেয়েদেরকে হোটেলে দিয়ে ছেলেরা চললো নৌকায় । ছোট চাঁদকে সঙ্গী করে চললো আড্ডা । তিনটা পর্যন্ত জেগে থাকতে পারলাম । এরপর সকালে বারেক টিলা যাবার চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকালে উঠে মটর সাইকেলে জন্য তাড়া দিলাম । সময়মত মটর সাইকেল না আসাতে কিছুটা বিরক্ত ছিলাম । কিন্তু সবাই যখন বারেক টিলা গেল তখন সব কিছু ভুলে গেল । সবাই ছবি তুললো মন খুলে । পাশে ভারতীয় সীমান্ত আর মেঘালয়ের পাহাড় । পাথর তোলা হচ্ছে সেখান থেকে । হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছে সেখানে । যাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ পানিতে আছে হাজার হাজার মহাশোল মাছ ।
দেশের উওরপূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেষে অবস্থিত বারিক টিলা ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা। যেন নৈর্সগিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় এক স্থান। সুনামগঞ্জ জেলার উওর পশ্চিমে এবং তাহিরপুর উপজেলা থেকে উওরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত এ বারিকটিলা ও যাদুকাটা নদী।
বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে স্রোতধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধূ-ধূ বালুচর। পার্শ্বস্থ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সারি-সারি উচু নীচু খাসিয়া পাহাড় ও বাংলাদেশের বারিক টিলার সবুজ বনায়ন ও মাটিয়া পাহাড়। প্রতিনিয়ত ছুটে আসা লোকজনের দৃষ্টি কাড়ে। এ দুই নান্দনিক নৈর্সগিকতার পাশাপাশি তাহিরপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে যাদুকাটা ও বারিক টিলার পূর্ব প্রান্তে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী শাহ আরফিনের আস্তানা। এছাড়াও যাদুকাটা নদীতীরে লাউর নবগ্রাম শ্রী-শ্রী অধৈত প্রভুর মন্দির ও তীর্থ ধাম, পশ্চিমতীরে ইস্কন মন্দির বোত্তাশাহর মাজার, বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর শুল্কষ্টেশন, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প, আওলি জমিদার বাড়ি, রামসা প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত বিশাল টাক্সগুয়া হাওরের জলাভূমি এবং বনভূমি উল্লেখযোগ্য।
বারেক টিলা দেখে সবাই মটর সাইকেলে ফেরত আসলো ট্যাকের ঘাট বাজার শেষ বারেরমত নাস্তা শেষ করে । সবাই তৈরি নৌকা ছাড়বে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে । সবুজ গাছ, গ্রাম কতশত নৌকা দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম সুনামগঞ্জের মনিপুরি ঘাটে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×