somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৩ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ করুন !
*পলিথিন জাতীয় জিনিস ফেলবেন না কোথাও ।
*পানি নোংরা করবেন না ।
*রাতে পাহাড়ে অপ্রযোজনীয় শব্দ করবেন না ।
*রাতে দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন ।


আমাদের রুটটি ছিল --- ভ্রমণের সময়কাল {১৪ই ফেব্রুয়ারী-২১ই ফেব্রুয়ারী ২০১১}

১৫ই ফেব্রুয়ারী- দিন-১- ঢাকা - বান্দরবান - রুমা - বগালেক (জীপ ও পায়ে হেঁটে দুই ভাবেই বগালেক যাওয়া যায়)
১৬ই ফেব্রুয়ারী-দিন-২- বগালেক-দার্জিলিংপাড়া - কেওক্রাডং-পাসিংপাড়া-জাদিপাইপাড়ার পাস দিয়ে -ক্যাপিটাল পিক - বাকলাই
১৭ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৩- বাকলাই - সিমত্লাপিপাড়া - থানদুইপাড়া - নয়াচরণপাড়া
১৮ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৪- নয়াচরণপাড়া - হাঞ্জরাইপাড়া - নেপিউপাড়া - ত্লাংমং/সাকা হাফং - সাজাইপাড়া
১৯ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৫- সাজাইপাড়া - সাতভাইখুম (ঝর্না) - আমিয়াখুম - নাইক্ষামুখ - সাজাইপাড়া
২০ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৬- সাজাইপাড়া - জিন্নাহপাড়া - নাফাখুম - রেমাক্রি
২১ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৭- রেমাক্রি - বারপাথর (বড়পাথর) - টিন্ডু - থানচি - বান্দরবান - ঢাকা ।

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০১ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০২ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৪ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল


১৭ তারিখ ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেল। নাস্তা সারলাম আগের রাতের বেঁচে যাওয়া খিচুড়ী দিয়ে। একজন গাইড ঠিক করা হলো; ১৫-১৬ বছরের স্মার্ট, সুন্দর গাইড, যে আমাদের নিয়ে যাবে থান্দুই পাড়া পর্যন্ত। হঠাৎ করে কুয়াশা এসে সূর্যকে ঢেকে দিল। বাতাস বন্ধ হয়ে গেল। থমথমে আবহাওয়া। বৃষ্টি যেন না আসে এই দোয়া করতে করতে হাঁটা শুরু করলাম। পাড়া ছেড়ে কিছুদূর আসার পর আর্মি ক্যাম্প। আর্মি ক্যাম্পের নিচে ঝিরি থেকে পানি নিয়ে নিলাম। রাস্তা ভালো কিন্তু ভ্যাপসা আবহাওয়ায় অস্বস্তি লাগছিল। মাঝখানে বিরতি দিয়ে বিস্কুট, পানি খেয়ে নিলাম। দূরে ফিতার মতন পাহাড়ের গায়ে পথ দেখা যাচ্ছিল। ক্রমেই উপরে উঠছি। সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি চলছেই। ঘন্টা দু’য়েক চলার পরেই পৌঁছে গেলাম সিমতলাংপি পাড়ায়। এটা বম পাড়া। আমাদের গাইডের পরিচিত এক বাড়িতে ব্যাগ, মালপত্র রাখলাম। এবার তাজিংডং সামিটের পালা। মনা, কোরেশী, আবু বকর এর আগে তাজিংডং সামিট করলেও বাকিদের জন্য এবারই প্রথম। মনা আর কোরেশী দুপুরের খাবার রান্নার জন্য পাড়াতে থেকে গেল। বাকিরা চলে গেলাম সামিট করতে।


পাহাড়ে পূর্নিমার চাঁদ ওঠার সময় ।


মেঘ আর কুয়াশাকে হারিয়ে দিয়ে সূর্য আলো ছড়াল। পাড়া থেকেই দেখা যায় তাজিংডং। পথ শুধু উঠছে আর উঠছে। তাজিংডং এর তিনটা চূড়া। যেটা তে সবাই যায় সেটার উচ্চতা ২৭২০ ফুট। বাকি দু’টার একটাতে যাওয়া যায় অন্যটাতে যায় না। ২৭২০ ফুট উচ্চতার চূড়ার শেষ ২০ ফুট পথ আলগা মাটিতে ভরা। উঠার চেয়ে নামার সময় বেশী বিপদজনক। একে একে সবাই উঠলাম সেখানে। এবার নেমে এসে অন্য চূড়াতে উঠব। কিন্তু ওই চূড়া ঘন বাঁশঝাড়ে ভরা। বাঁশ কেটে পথ তৈরী করে যাওয়া লাগবে। বাঁশ কাটার জন্য পাড়া থেকে দা নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সিয়াম আমাদের হারিয়ে দা নিয়ে ফিরে গিয়েছিল পাড়াতে। পাড়াতে ফিরে অবশ্য কিঞ্চিৎ বকাঝকা করেছিলাম সিয়ামকে। যাই হোক, দা ছাড়াই উপর উঠতে শুরু করলাম। সবারই হাত পা কেটে গেল। ঘন বাঁশের জঙ্গল শেষ হতে চায় না। এক সময় বাঁশের জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম চূড়াতে। কিছুক্ষণের বিশ্রাম নিয়ে নামতে শুরু করলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে পৌঁছে গেলাম পাড়াতে। এদিকে মনা আর কোরেশী ভাত, ডাল রান্না করে বসে আছে। ক্ষুধার্ত সবাই গোগ্রাসে খেলাম। ডালটা খুবই সুস্বাদু হয়েছিল। মনে হলো বিশ্বের তাবৎ রন্ধন শিল্পী মনার কাছে কিছুই না। তৈরী হয়ে নিয়ে রওনা হবো থান্দুই পাড়ার দিকে এমন সময় দেখা পেলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা দু’জন ছাত্রের সাথে। একজনের নাম রাসেল (পাঠকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি কারণ অন্য জনের নাম ভুলে গেছি)। ওরা থানচি হয়ে ঢুকেছে, সাথে কোন গাইড নেই; যাবে সাকা হাফং। সবাই একসাথে রওনা হলাম।




নেফিউ পাড়ার কারবারি ।



পাড়া থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাবার পর পথটা খাড়া নেমে গেছে। আর পুরোনো শত্রু এখানেও উপস্থিত; আলগা মাটি, পা রাখায় দায়। তবে মনা ভারী ব্যাগ, আর এক হাতে ডিমের খাঁচা নিয়ে যেভাবে নামলেন তা আসলেই অসাধারন। অসাধারন তার ব্যালান্স। কিন্তু নামা যে শেষ হয় না। এরই মধ্যে মোহন একবার আছাড় খেয়ে পড়ে পিছলে গেল কিছু দূর। অবশেষে নামা শেষ হলো। মোটামূটি সোজা পথেই এগিয়ে যেতে লাগলাম। থান্দুই পাড়া (বম পাড়া) ঢোকার আগে গাছের ছায়া ঘেরা একটা জায়গায় না থেমে পারলাম না। বিকালের নরম রোদ খেলা করছে গাছের পাতায়, ঝিরঝির ঝিরঝির প্রাণ জুড়ানো বাতাস। একদিকে দেখা যাচ্ছে গাঢ় নীল আকাশ আর তাতে সাদা মেঘের ইতস্তত পায়চারী; দূরে দিগন্তে আকাশ আর পাহাড় মিলে মিশে একাকার, এত সুন্দর চোখ ফেরানো দায়। কিন্তু চোখ ফেরাতেই হলো; কারণ আমাদের পরিকল্পনা থান্দুই পাড়াতে না থেকে যতদূর পারি এগিয়ে যাবো রাত গভীর না হওয়া পর্যন্ত। রাসেল আর তার বন্ধু থান্দুই পাড়াতে থেকে গেল। ওরা আর সামনে আগাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে বাংলা ট্র্যাক আর ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশের চারটা দল সাকা হাফং সামিট করেছিল। সবার নাম আর সামিটের সময় কাগজে লিখে প্লাসটিকের বোতলে রেখে এসেছিল। কিন্তু ঢাকার আর একটা দল সেগুলো নিয়ে চলে আসে। তাই বাংলা ট্র্যাক তালিকাটা আবার লিখে রাসেলের হাতে দিয়েছিল ও যখন সাকা হাফং সামিট করবে তখন রেখে আসার জন্য। রাসেল যেহেতু আর যাবেনা তাই ও সেটা মোহনের কাছে দিয়ে অনুরোধ করল সাকা হাফং এ সামিট যখন করবে তখন রেখে আসার জন্য। মোহন কাগজটা নিয়ে নিল। থান্দুই পাড়াতে গিয়ে বাকলাই পাড়া থেকে নিয়ে আসা গাইডকে বিদায় দিলাম। সেখান থেকে আর একজন গাইড জোগাড়ের চেষ্টা করলাম যে আমাদের নিয়ে যাবে সাকা হাফং পর্যন্ত। কিন্তু কাউকে পাওয়া গেল না। অগত্য পথের হদিস জেনে নিজেরাই হাঁটা শুরু করলাম। সূর্যের আলো আর হয়ত আধা ঘন্টা পাবো তাই জোরে পা চালালাম।





পাহাড়ি ফুল ।


পাড়া থেকে বেরিয়ে একটা ঝিরি পার হলাম। আলো দ্রুত কমে আসছে। পাহাড়ি পথ বেয়ে উপরে উঠছি। মনা চলেছেন আগে আগে। উপরে উঠে দূরে আলো দেখা গেল। তার মানে পাড়া সামনেই। পথ আবার নিচে নেমে গেছে। আরও একটা ঝিরি পার হলাম। এবার উঠছি। আকাশে মেঘ, অন্ধকার আরো চেপে বসেছে। টর্চের আলোতে পথ চলছি। পথটা নেমে গিয়ে একটা খালের পাশ দিয়ে চলে গেছে। ধারনা করলাম এটাই রেমাক্রি খাল। অনেক পায়ের ছাপ দেখে বোঝা গেল পথটা বহুল ব্যবহৃত। দেখা পেলাম তামাক ক্ষেতের। আশা পেলাম কাছেই পাড়া আছে ভেবে। আগে আগে চলেছেন মনা, অভিজ্ঞ ট্র্যাকারের মত পথ খুঁজে খুঁজে। হঠাৎ খাড়া উঠে গেছে পথটা। ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি, পা আর চলছে না। এমন সময় মনা বললেন যে আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পাড়াতে পৌঁছে গেছি। মনে হলো বহুদিন পরে একটা সুসংবাদ পেলাম। পাড়ার লোক আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। জানলাম পাড়ার নাম নয়াচরন। ত্রিপুরা পাড়া। সেদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল পাড়াতে, তাই বেশির ভাগ মানুষ জেগে ছিলো। কিন্তু ঠিক প্রকৃতস্থ ছিল না; কারণ বিয়ের অনুসঙ্গ হিসাবে মদ পান করেছিল। আবু বকর আর শরীফ গেল কারবারীর সাথে থাকার ব্যাপারে কথা বলতে। রাতে থাকার জন্য ঘর পাওয়া গেল। সেখানে একজনের সাথে দেখা হলো; পেশা শিক্ষকতা। বাংলা বেশ ভালো বলেন। সিয়ামকে পাঠিয়ে দিলাম উনার সাথে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। কারণ রাতের জন্য রান্না করার ইচ্ছা, ধৈর্য আমাদের কারোরই ছিল না। সাথে থাকা শুকনা খাবার আর পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।






বহমান পাহাড়ি ঝর্না





পাহাড়ী সকাল ।



গাছের ডালে পাখির অপেক্ষা ।



প্রজাপতি ।




অভিযাত্রী দল ।



ঝর্নার মিষ্টি পানি পান দূর করে ক্লান্তি ।



দূর থেকে দেখা যায় গ্রাম বা পাড়া ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×