somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০২ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ করুন !
*পলিথিন জাতীয় জিনিস ফেলবেন না কোথাও ।
*পানি নোংরা করবেন না ।
*রাতে পাহাড়ে অপ্রযোজনীয় শব্দ করবেন না ।
*রাতে দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন ।


আমাদের রুটটি ছিল --- ভ্রমণের সময়কাল {১৪ই ফেব্রুয়ারী-২১ই ফেব্রুয়ারী ২০১১}

১৫ই ফেব্রুয়ারী- দিন-১- ঢাকা - বান্দরবান - রুমা - বগালেক (জীপ ও পায়ে হেঁটে দুই ভাবেই বগালেক যাওয়া যায়)
১৬ই ফেব্রুয়ারী-দিন-২- বগালেক-দার্জিলিংপাড়া - কেওক্রাডং-পাসিংপাড়া-জাদিপাইপাড়ার পাস দিয়ে -ক্যাপিটাল পিক - বাকলাই
১৭ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৩- বাকলাই - সিমত্লাপিপাড়া - থানদুইপাড়া - নয়াচরণপাড়া
১৮ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৪- নয়াচরণপাড়া - হাঞ্জরাইপাড়া - নেপিউপাড়া - ত্লাংমং/সাকা হাফং - সাজাইপাড়া
১৯ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৫- সাজাইপাড়া - সাতভাইখুম (ঝর্না) - আমিয়াখুম - নাইক্ষামুখ - সাজাইপাড়া
২০ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৬- সাজাইপাড়া - জিন্নাহপাড়া - নাফাখুম - রেমাক্রি
২১ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৭- রেমাক্রি - বারপাথর (বড়পাথর) - টিন্ডু - থানচি - বান্দরবান - ঢাকা ।

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০১ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৩ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৪ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল

১৬ তারিখ সূর্য উঠার আগেই উঠে পড়লাম সবাই। হাত মুখ ধুয়ে সাথে থাকা শুকনা খাবার খেয়ে নিলাম। প্রস্তুত সবাই ট্র্যাকিং শুরু করার জন্য। পাবনার দলটার জন্য আর একজন গাইড ঠিক করা হলো যে ওদের কেওক্রাডং থেকে বগা লেক পর্যন্ত ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। শুরু হলো আমাদের মূল অভিযান।

এগিয়ে চলেছি পাহাড়ি পথ ধরে। রাস্তা বেশ ভাল। শুনলাম গত বছর চাঁদের গাড়ি বগা লেক পেরিয়ে দার্জিলিং পাড়া পর্যন্ত যাতায়াত করত। চওড়া রাস্তা দিয়ে হাটাঁর সময় মনে হচ্ছিল না পাহাড়ের পথ ধরে চলেছি। সত্যি বলতে কি পথ যদি বন্ধুর, বিপদসঙ্কুল না হয় তবে ট্র্যাকিং এর মজা নেই। তাই সহজে হাটঁতে পারলেও মন ভরছিলো না। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম আশেপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতে। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। তবে শীতের দাপটে কিছুটা বিবর্ণ দেখাচ্ছে। নিচে ছোট পাহাড়্গুলোর মাঝে মেঘের দল আটকা পড়েছে। দুইটা ঝিরি পার হতে হলো। খালি হয়ে যাওয়া পানির বোতলে পানি ভরে নিলাম ঝিরি থেকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে সবাই। এক সময় পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং পাড়া। কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি দেয়া হলো। বিস্কুট, পানি, চা খেয়ে নিলাম। মিজান ঘটাঘট কিছু ছবি তুলে নিলেন।

আবার শুরু হলো পথ চলা। রাস্তা আগের মতই ভালো। বিশ্রামের পর চলার গতি বেড়ে গেল। এক সময় চোখে পড়ল কেওক্রাডং, বাংলাদেশের দ্বিতীয় উচ্চতম চূড়া, উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। একে একে সবাই পৌঁছে গেলাম সেখানে। চূড়াতে বিশ্রামের জায়গা আছে। একটা খাবার হোটেলও আছে সেখানে। বিশ্রাম আর ছবি তোলা চলতে থাকল। নিউজিল্যান্ড থেকে আসা এক পর্যটকের সাথে দেখা হয়ে গেল সেখানে। দুপুর হয়ে গেছে, তাই হোটেলে খেয়ে নিলাম। মুরগী আর খাসির মাংস ছিলো কিন্তু জবাই করা হয়েছে কি ভাবে এই ভেবে ভাত, মিষ্টি কুমড়ার তরকারী আর সঙ্গে থাকা আচার দিয়েই খাওয়া সারলাম।

এবার বিদায় নেবার পালা। পাবনার দলটা ফিরে যাবে বগা লেক পাড়া আর আমরা যাবো এগিয়ে। সবাই একসাথে ছবি তুললাম। ব্যাগ কাঁধে আবার ছুটে চলা, গন্তব্য বাকলাই পাড়া।

মাথার উপর সূর্য অকৃপণ হাতে তাপ বিলাচ্ছে। পথের আশেপাশে গাছের পরিমাণ কম। মাঝে মাঝে থেমে পানি খেয়ে নিচ্ছি। রোদের তীব্রতায় মনে হচ্ছে চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। পাসিং পাড়া পেরিয়ে এলাম এক সময়। রাস্তা আগের মতই, মনে হয় যেন গাড়ি চলার পথ। রাস্তা ভালো তাই এগিয়ে চলেছি দ্রুত। ক্যাপিটাল পাহাড়ের দেখা পেলাম এক সময়। মিজান আর আবু বকর এই পাহাড় সামিটে আগ্রহ প্রকাশ করল। কিন্তু মনা মনে করিয়ে দিল আমাদের মূল পরিকল্পনায় এটা নেই। তাই সামিট করতে গিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। মন খারাপ হলেও করার কিছু নেই, কারণ যে ভাবেই হোক আজকেই বাকলাই পাড়া পৌঁছাতে হবে আমাদের। ক্যাপিটাল পেরিয়ে কিছু দূর আসতেই ডান দিকে নেমে গেছে সরু একটা পথ। এ পথ ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। পথটা খাড়া নেমে গেছে; তবে সমস্যা হলো মাটি আলগা। পা দিলেই পিছলে যায়। সাবধানে একে একে নেমে গেলাম সবাই।

সত্যিকারের ট্র্যাকিং শুরু হলো এবার। চিরায়ত পাহাড়ি ট্র্যাক। একপাশে পাহাড় আর অন্য পাশে শূণ্যতা। সাপের মত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠছি পাহাড় বেয়ে। কিছু কিছু জায়গাতে সেই আলগা মাটি। ঘেমে নেয়ে একাকার। আর পারছি না, কিছুক্ষণ বিশ্রাম না নিলেই নয়। বসে পড়লাম সবাই পথের উপর। পানি খেয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। মোহন সবার সামনে। এক সময় ওকে আর দেখতে পেলাম না। নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু সাড়া পেলাম না। দেখা পায় আগে তারপরে কঠিন ঝারি দেয়া হবে বলে ঠিক করল মনা। কারণ পাহাড়ি রাস্তায় একা একা চলা ঠিক নয়। কোন দূর্ঘটনা ঘটলেও উদ্ধার করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না। পথ চলতে হয় দল বেঁধে। এক জায়গার ট্র্যাক দেখে মনে হলো আরে শিপ্পির (শিপ্পি বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পাহাড়, উচ্চতা ৩০২৮ফুট) ট্র্যাকে চলে এসেছি মনে হয়।

গাছগুলো উঁচু, ঘন, মোটা আর প্রাচীন। এক কথায় প্রাগৈতিহাসিক। মাটি নয়, পাথরে খাঁজ কেটে পথ বানানো হয়েছে। ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে তবুও মোহনের দেখা নেই। মনে দুশ্চিন্তা থাকলেও মুখে বকাঝকা চলছে। পথ এখন আগের চেয়ে ভালো। পায়ের নিচে শক্ত মাটি। অবশেষে দেখা পেলাম মোহনের; পথের উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। একা না চলার ব্যপারে জ্ঞান দেয়া হলো। জানা গেল ঘন্টা দু’য়েক যাবৎ এখানেই অপেক্ষা করছে সে। আমাদের দেরী দেখে একটা ঘুম দিয়ে নিয়েছে। রোদ পড়ে এসেছে। আবার চলতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বাকলাই ফলস-এ। নেমে পড়লাম গোসলের জন্য। কি যে ঠান্ডা পানি! মনে হচ্ছিল রক্ত সব জমাট বেঁধে যাচ্ছে। সারাদিনের পথশ্রমের পর গোসল করে ভালো লাগল। গোসলের পর হাটাঁ শুরু করলাম। তখন বিকাল, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাকলাই পাড়া (বম পাড়া) পৌঁছে গেলাম।
রাতে আদিবাসীদের একটা ঘরে থাকার ব্যবস্থা হলো। সোলার প্যানেল আছে তাই আলোর সমস্যা নেই। সন্ধ্যার দিকে রাতের খাবার রান্নার কাজে লেগে পড়লাম সবাই। কেউ কাটলাম পেঁয়াজ, কেউ রসুন, কেউ টমেটো, কেউ মরিচ। সঙ্গে নিয়ে আসা ডাল ধুয়ে নিলাম। চাল নিলাম যাদের ঘরে ছিলাম তাদের কাছ থেকে। আর ডিম তো ছিলই আমাদের সাথে। রান্না করতে বসে গেলেন আমাদের বিখ্যাত রন্ধন শিল্পী মনা। সাথে সাহায্যকারী হিসাবে থাকলেন মৌরী। খিচুড়ী, ডিম ভাজি, সালাদ আর আচার দিয়ে রাতের খাওয়া সারলাম। সারাদিন ক্ষুধার্ত থাকার পর মনে হচ্ছিল অমৃত খাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×