somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৫- মাহমুদ শাফায়েত জামিল

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লস্ট ইন প্যারাডাইস-০১ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০২ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৩ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল
লস্ট ইন প্যারাডাইস-০৪ - মাহমুদ শাফায়েত জামিল

*পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ করুন !
*পলিথিন জাতীয় জিনিস ফেলবেন না কোথাও ।
*পানি নোংরা করবেন না ।
*রাতে পাহাড়ে অপ্রযোজনীয় শব্দ করবেন না ।
*রাতে দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করবেন ।

আমাদের রুটটি ছিল --- ভ্রমণের সময়কাল {১৪ই ফেব্রুয়ারী-২১ই ফেব্রুয়ারী ২০১১}

১৫ই ফেব্রুয়ারী- দিন-১- ঢাকা - বান্দরবান - রুমা - বগালেক (জীপ ও পায়ে হেঁটে দুই ভাবেই বগালেক যাওয়া যায়)
১৬ই ফেব্রুয়ারী-দিন-২- বগালেক-দার্জিলিংপাড়া - কেওক্রাডং-পাসিংপাড়া-জাদিপাইপাড়ার পাস দিয়ে -ক্যাপিটাল পিক - বাকলাই
১৭ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৩- বাকলাই - সিমত্লাপিপাড়া - থানদুইপাড়া - নয়াচরণপাড়া
১৮ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৪- নয়াচরণপাড়া - হাঞ্জরাইপাড়া - নেপিউপাড়া - ত্লাংমং/সাকা হাফং - সাজাইপাড়া
১৯ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৫- সাজাইপাড়া - সাতভাইখুম (ঝর্না) - আমিয়াখুম - নাইক্ষামুখ - সাজাইপাড়া
২০ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৬- সাজাইপাড়া - জিন্নাহপাড়া - নাফাখুম - রেমাক্রি
২১ই ফেব্রুয়ারী- দিন-৭- রেমাক্রি - বারপাথর (বড়পাথর) - টিন্ডু - থানচি - বান্দরবান - ঢাকা ।

১৯ তারিখ সকালে ওমিয়াকুম যাবার জন্য তৈরী সবাই। সাথে নিলাম বিস্কুট। এসময় কারবারীর সাথে দেখা হলো। ২৫ বছরে সুদর্শন একজন মানুষ। আন্তরিক ব্যবহার। অংফউ তাকেও আমাদের সাথে যেতে বললেন। এক কথায় রাজি হয়ে গেল। সিয়াম থেকে গেল পাড়াতে।

পাড়ার উত্তর পাশের পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। পথটা উত্তর থেকে পশ্চিমে ঘুরে নিচে নেমে গেছে। প্রথমে অনেকক্ষণ খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠলাম; তারপর কিছুটা সমতল রাস্তা। তারপর আবার উঠতে হলো। এখানেই অংফউ একটা প্রাণী শিকার করলেন; নাম বললেন বুই। খরগোশের মত সাইজ, ছোট কান, বাদামী লোম, চার পায়ের আঙ্গুলে নখ আছে। এবার নামার পালা। নামতে নামতে চলে এলাম সজারুর রাস্তায়। পথ একটা আছে কিন্তু ঘন ঝোপের কারণে সেখান দিয়ে সোজা হয়ে হেঁটে যাবার উপায় নেই। চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে হয় বলে অংফউ রাস্তার নাম দিয়েছেন সজারুর রাস্তা। অনেকটা সেনাবাহিনীর সদস্যদের মত ক্রল করে নিচে নামছি সজারুর রাস্তা দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাত পা ধরে এলো; কিন্তু রাস্তা শেষ হয় না। সব কিছুর মত রাস্তাও শেষ হলো এক সময়। চলে এলাম রেমাক্রি খালে। খালের অপর পাশের পাহাড়ে ত্রিপুরাদের একটা পাড়া আছে।

খাল ধরে এগিয়ে চলেছি। মনে হচ্ছে যেন রূপকথার পাথরের রাজ্যে এসে পড়েছি। খালের মাঝে, পাশে বিরাট বিরাট পাথর পড়ে আছে। তিন্দুর বড় পাথর এগুলোর কাছে কিছুই না। একটা পাথর চোখে পড়ল যার উপরে মানুষ বসা যাবে এরকম একটা গর্ত আছে। দেরী না করে কোরেশী গর্তের মধ্যে বসে পড়লেন, মনা ছবি তুললেন। একসময় পৌঁছে গেলাম সাত ভাই ঝর্ণার কাছে; যার আরেক নাম মাঠভারাকুম। এখানে বর্ষা থেকে শীতের আগ পর্যন্ত পাহাড় বেয়ে সাতটি ঝর্ণা নেমে আসে। খাল এখানে অনেক গভীর। তাই ডান পাশের পাহাড় বেয়ে উঠতে হলো কিছুক্ষণ। একটা জায়গায় বানরের মত ঝুলে ঝুলে যেতে হলো। পথটা নিচে নেমে খালের পাড়ে এসে মিশেছে। আবার পাথরের মাঝ দিয়ে পথ চলা। পাড়ের কাছে যে পাথরগুলো ডিঙিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম সেগুলো আগের গুলোর চেয়েও বড়।

এক সময় বাম পাশে একটা বড় ঝিরি দেখলাম যা খালে এসে পড়েছে। জানলাম এটাই সাজাই পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঝিরি। সাঁতার জানলে এদিক দিয়েও কম সময়ে পাড়াতে যাওয়া যায়; পাহাড়ে চড়ার কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু সবাই সাঁতার জানি না বলে ওপথ পরিহার করলাম। পাহাড়গুলো এখানে আরও উঁচু। কেমন একটা শীত শীত ভাব। পায়ে হাঁটার পথ এখানে শেষ। আনুমানিক ৫০০ মিটার হবে; খাল খুব গভীর। যেতে হবে বাঁশের ভেলায় চেপে। কিন্তু এপারে ভেলা নেই; আছে ওই পারে। জামা কাপড় খুলে সাঁতারের জন্য প্রস্তুত অংফউ। আর কেউ যেতে রাজি হলো না। একাই পানিতে নেমে পড়লেন; সাঁতরে গিয়ে নিয়ে আসলেন ভেলাটা। তিনজন তিনজন করে ভেলা দিয়ে পার হলাম।

অপর পারে গিয়ে আবার কিছুক্ষণ হাঁটলাম। পৌঁছে গেলাম ওমিয়াকুম। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম প্রকৃতির এক অপরূপ সুন্দর নিদর্শন। অবিরাম ছুটে চলা জলরাশি জলপ্রপাতের মত আছড়ে পড়ছে নিচে; সৃষ্টি করছে শ্রুতি মধুর গর্জনের। সূর্যের আলোয় মুক্তোর মত ঝকমক করছে পানির ছুটে চলা কণারা। সকল মৌনতাকে সঙ্গী
করে দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। অংফউ জানালেন যে ওমিয়াকুম সবচেয়ে সুন্দর লাগে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে।

দেখছি তো দেখছি, মন চাই আরো দেখি, আরো কিছুক্ষণ থাকি। কিন্তু ফিরতে তো হবেই। ফিরে চললাম পাড়ার দিকে। পা চালালাম জোরে; কারণ আলো থাকতে থাকতেই সজারুর রাস্তা পার হতে হবে, টর্চ নেই সাথে অন্ধকারে বিপদে পড়ব। গোধুলির আলোতে সবাই পৌঁছে গেলাম পাড়াতে।

সিয়াম আমাদের জন্য না খেয়ে বসে আছে। গোসল সেরে খেয়ে নিলাম। অংফউ আমাদের জন্য গাইড ঠিক করে দিলেন রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত যাবার জন্য। আজ আর চাঁদের আলো খেলাম না। ক্লান্ত শরীর, ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×