somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৭

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৭

আড়িয়াল বিলঃ
পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে এবং ঢাকার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি অবভূমি। প্রায় সমগ্র এলাকাই ভারি কাদা দিয়ে আবৃত। দুটি বৃহৎ নদীখাত কাছাকাছি থাকার পরও বৃষ্টিপাতের সঞ্চিত পানি দ্বারা এখানে গভীর মাত্রায় মৌসুমি প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে, কেননা নদীগুলোর প্রবাহ সে সময় পরিপূর্ণ থাকার কারণে তারা এই
সঞ্চিত পানি নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হয়। শুষ্ক ঋতুতেও এই এলাকার বেশিরভাগ আর্দ্র থাকে। নিমড়ব আত্রাই অববাহিকা ও আড়িয়াল বিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম ভূখণ্ডের দ্বিতীয় স্তরে গঠিত কিন্তু গভীর জলাবদ্ধ এলাকা ছিল। প্রাচীন যুগে এই এলাকা মানব বসতির উপযুক্ত ছিল না।

গোপালগঞ্জ-খুলনা পিট অববাহিকাঃ
গঙ্গা নদীর প্লাবনভূমি এবং গঙ্গার জোয়ার-ভাটাপ্লাবনভূমি এলাকার মধ্যে অবস্থিত একাধিক নিন্ম এলাকা নিয়ে ২,৭৬৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। এই এলাকার প্রধান দুটি বিল হচ্ছে বাঘিয়া বিল ও চান্দা বিল। আর্দ্র অববাহিকাসমূহ জুড়ে ভারি পীট মৃত্তিকা বিদ্যমান, তবে প্রান্তীয় এলাকায় এই মৃত্তিকা কর্দম দ্বারা আবৃত। বিল এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার শাখানদীসমূহ বরাবর এলাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম পিট মজুতকারী অববাহিকা। বর্ষায় এই অববাহিকা অঞ্চল বৃষ্টির পানির দ্বারা গভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। খুলনার কাছাকাছি অবস্থিত বিলসমূহে বন্যার পানি ঈষৎ লবণাক্ত হয়ে থাকে। এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভূঅবনমন প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয়। এই এলাকা সুন্দরবন অঞ্চলের অনুরূপ। প্রাচীন যুগে এখানে জনবসতি ছিল না।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমিঃ
সমুদ্র উপকূল বরাবর চট্টগ্রাম জেলার সংকীর্ণ স্থান জুড়ে অবস্থিত এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। উত্তরে ফেনী নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণে মাতামূহুরী নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত এ সমভূমি ১২১ কিমি দীর্ঘ। প্রস্থ ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার এবং কর্ণফুলি নদীর মোহনায় প্রায় ২৬ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকার কাছাকাছি এই ভূমি সুষম ঢালবিশিষ্ট পাদদেশীয় সমভূমি
গঠিত হয়েছে। ফেনী, কর্ণফুলি, হালদা এবং অন্যান্য নদীর গতিপথ বরাবর গঠিত হয়েছে জোয়াট-ভাটা প্লাাবনভূমি, উত্তরাংশে গঠিত হয়েছে নবীন মোহনাজ ক্ষুদ্র প্লাবনভূমি এবং দক্ষিণে সাগর উপকূল বরাবর গঠিত হয়েছে বালুকাময় উপকূলীয় শৈলশিরাভূমি। পার্বত্য এলাকায় কাছাকাছি পললের বৈশিষ্ট্য প্রধানত পলিকণাময় ও স্থানীয়ভাবে বালিসমৃদ্ধ এবং
প্লাবনভূমি অববাহিকাসমূহে অধিকতর বিস্তৃত কর্দমবিশিষ্ট্য। সমগ্র মূল ভূখণ্ড আকস্মিক বন্যার শিকার। বন্যার মাত্রা প্রধানত অগভীর এবং বন্যার গভীরতা জোয়ার-ভাটা দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। জোয়ারভাটার দৈনিক গড় ব্যবধান প্রায় ২ মিটার। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ার-ভাটা এবং মোহনাজ প্লাবনভূমির মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়ে পড়ে।

উত্তর ও পশ্চিমের পাদদেশীয় সমভূমিঃ
উত্তর এবং পূর্বের পাহাড়সমূহের পাদদেশীয় সীমানা ঘেঁষে ঢালু প্রকৃতির এই পাদদেশীয় সমভূমি অবস্থিত। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়সমূহের পাদদেশ সংলগ্ন একই প্রকার ভূমিকে চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পলি দ্বারা গঠিত এই সমভূমি পাহাড়ের কাছাকাছি এলাকায় প্রধানত পলিকণা অথবা বালুকাময় অবক্ষেপণ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
আশেপাশের প্লাবনভূমির নিকটবর্তী অববাহিকাসমূহে কাদার প্রাধান্য রয়েছে। সমগ্র এলাকা বর্ষা ঋতুতে আকস্মিক বন্যার শিকার হয়ে থাকে। উচ্চতর অংশে সংঘটিত বন্যা প্রধানত অগভীর এবং থেকে থেকে সংঘটিত হয়, তবে অববাহিকা এলাকায় বন্যার মাত্রা অল্প গভীর থেকে গভীরতর হয়ে থাকে। এই ভূ-প্রকৃতির আওতায় রয়েছে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা, সিলেট অঞ্চলের তাহিরপুর বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, মাধবপুর, হবিগঞ্জ, সদর, চুনারুঘাট, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ এবং কুলাউড়া, ভূ-প্রাকৃতিক এককটির আয়তন প্রায় ৪,০৬৬ বর্গকিলোমিটার। এই প্লাবনভূমির উচ্চতা, আকার ও আয়তন সময়ের পরিক্রমায় কিছু কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। পলিবাহিত পানি দ্বারা ভূমি ক্রমাগত ভরাট হচ্ছে। ভরাট হওয়ার ফলে দেশের জলবায়ুতে পরিবর্তন লক্ষণীয়। ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভিককালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বায়ুর আর্দ্রতা, পানিতে পলির পরিমাণ বর্তমানে অনেক কমে গেছে। অপরদিকে উচ্চভূমিতে বরফের স্তর কমতে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত্তিকার পুষ্টিগুণ: কৃষি উৎপাদনে এবং সবুজ বনানী সৃষ্টি ও রক্ষায় সব মৃত্তিকা সমমানের নয়। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের মৃত্তিকার পুষ্টি উপাদান সমান ছিল না এবং এখনও নেই। পুষ্টিগুণ অনুসারে মৃত্তিকাকে ৭ ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা- (১) মধুপুর অঞ্চল বা লাল মৃত্তিকা অঞ্চল, (২) বরেন্দ্র অঞ্চল, (৩) তিস্তা পলি, (৪) ব্রহ্মপুত্র পলল, (৫) গাঙ্গেয় পলল, (৬) উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চল, এবং (৭) পাহাড় অঞ্চল।

মধুপুর অঞ্চল বা লাল মৃত্তিকা অঞ্চলঃ
এ অঞ্চলটি ভূতপূর্ব বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলার কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। অঞ্চলটি মধুপুর এলাকার লাল ল্যাটারাইটীয় মৃত্তিকার প্রতিনিধিত্ব করে। অঞ্চলটি প্লাবন তলের উপরে অবস্থিত উঁচুভূমি, যা স্থানীয়ভঅবে ‘বাইদ’ নামে পরিচিত অসংখ্য ছোট ও বড় আকারের খাদ দ্বারা বিভক্ত। এই শ্রেণীর মৃত্তিকাতে অধিক পরিমাণে আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম আছে যা অধিক সংযুতিসম্পন্ন। পৃষ্ঠমৃত্তিকার পি.এইচ মানের পরিসর ৫.৫ থেকে ৬.০। ধনাত্মক আয়রন বিনিময় ক্ষমতা কম এবং মৃত্তিকা অধিক পরিমাণে ফসফেট বন্ধনে সক্ষম। মৃত্তিকাগুলোতে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে। উল্লিখিত হয়েছে যে, এই মৃত্তিকাঞ্চলই বাংলার আদি মানব বসতির আশ্রয়স্থল। এখানেই গড়ে উঠেছিল বাঙালির আদি সভ্যতার সূতিকাগার। ঐতিহাসিকদের ধারণা, এ অঞ্চলেই পূর্ব বাংলার সভ্যতার প্রথম আলোর বিকিরণ ঘটেছিল। নব্যপ্রস্তরযুগে এখানে মানুষের আবাসভূমি ছিল বলে কিছু কিছু প্রমাণ ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে।২২

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×