somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য লটারি : শার্লি জ্যাকসন

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুন মাসের সাতাশ তারিখ, ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল এক সকাল। বসন্তের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পরিবেশকে আরামদায়ক করে তুলেছে। বাতাসে ছড়িয়ে আছে সদ্য ফোঁটা ফুলের গন্ধ। সবুজ ঘাসের মনোরম দৃশ্য অপূর্ব এক স্নিগ্ধতা সৃষ্টি করেছে।
একে একে মাঠে জমায়েত হতে শুরু করেছে গ্রামের লোকেরা। জায়গাটা পোস্টঅফিস আর ব্যাংকের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থিত। সকাল দশটার ভেতর প্রায় সব লোকই এসে হাজির হয়েছে। কিছু কিছু শহরের জনসংখ্যা এত বেশী যে, লটারির কার্যক্রম জুনের দুই তারিখেই শুরু করতে হয়। তবে ছোট্ট ছিমছাম এই গ্রামের লোকসংখ্যা একেবারেই কম, মাত্র তিনশ’। দুই ঘন্টার মাঝেই সব কাজ শেষ হয়ে যায়। প্রায় প্রতিবারই দেখা যায়, লোকজন দুপুরের খাবারের আগে ঘরে ফিরে যেতে পারছে।
সবার প্রথমে বাচ্চা কাচ্চারা এসেছে আজ। গ্রীষ্মকাল উপলক্ষে ছুটি চলছে এখন, কিন্তু তবুও কেন জানি স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসটা নেই। চুপচাপ জটলা পাকাচ্ছে ওরা, চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ। তবে কিছুক্ষণ পর দল ভারী হয়ে উঠতেই দেখা গেল, হইহুল্লোড়ে মেতে উঠেছে সবাই। আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু অবশ্য ক্লাসরুম, বইপত্র আর একে অপরকে তাচ্ছিল্য করার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ববি মার্টিন এরই মাঝে পাথরের টুকরো দিয়ে পকেট ভরে ফেলেছে। অন্য ছেলেরা ওর দেখা দেখি একই কাজ করতে শুরু করলো। ববি, হ্যারি জোন্স আর ডিকি ডেলাক্রোয়িক্স-গ্রামের লোকেরা উচ্চারণ করে ডেলাক্রয়-শুধুমাত্র পকেটে পাথর ভরেই ক্ষান্ত হল না। মাঠের এক কোনায় পাথরের ঢিবি বানানো শুরু করে দিলো ওরা। কাজটা শেষ করে সটান দাঁড়িয়ে রইল ঢিবির পাশে, যেন অন্য ছেলেদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পাহারা দিচ্ছে।
মেয়েরাও এসেছে, একজায়গায় জটলা পাকিয়ে গল্প করছে নিজেদের মনে। ভিড় জমিয়েছে গ্রামের পুরুষেরা। গল্পে কিন্তু তারাও কম যান না, তবে তাদের গল্পের বিষয় ভিন্ন– বৃষ্টি, ফসল, ট্র্যাক্টর, খাজনা– এসব আরকি। পাথরের ঢিবি থেকে নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁরা, গল্পে মাতলেও দৃষ্টি কিন্তু সজাগ। সব শেষে এলেন গ্রামের মহিলারা। তাদের পরনে রঙ চটে যাওয়া মলিন সোয়েটার। একে অন্যকে দেখে হাসলেন তারা; জড়িয়ে ধরলেন, মেতে উঠলেন গালগপ্পে। এরপর চলে গেলেন নিজ নিজ স্বামীর কাছে। ছেলে–মেয়েদেরকে ডাকলেন। চার-পাঁচবার ডাকার পর গোমড়া মুখে যার যার বাবা-মা’র পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা। ববি কিছুক্ষণ মায়ের আচলের তলায় লুকিয়ে ছিল, এরপর খিলখিল করে পাথরের ঢিবির কাছে দাঁড়াল আবার। বাবা পিটিয়ে পিঠের ছাল তোলার কথা বলতেই যথাস্থানে ফিরে এলো সে। লক্ষ্মী বাচ্চার মতো দাঁড়িয়ে গেল বাবা আর বড় ভাইয়ের মাঝখানে।
লটারি পরিচালনা করার জন্য বরাবরের মতোই মি. সামার্সকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। গ্রামের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধার দায়িত্ব তার কাঁধেই বর্তায়। স্বীকার করতে হবে, গোলগাল চেহারার এই কয়লা ব্যবসায়ী লোকটার যথেষ্ট ধৈর্য্য আছে। একে তো দজ্জাল স্ত্রী, তার ওপর আবার নিঃসন্তান; গ্রামের লোকদের মনে আলাদা একটা মায়া কাজ করে তার প্রতি। মি. সমার্সকে কালো বাক্সটা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে, সবাই ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করল। মাঠের মাঝখানে এসে সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন তিনি, বললেন, ‘আজ একটু দেরী হয়ে গেল।’ তার পিছনে একটা তেপায়া টুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এলাকার পোস্ট মাস্টার, মি. গ্রেভস। বছরের পর বছর ধরে লটারি প্রথা চলে আসছে বলে, সমাবেত কারোরই এই ইঙ্গিতের অর্থ বুঝতে কোন কষ্ট হলো না। টুলটাকে মাঠের কেন্দ্রবিন্দুতে বসানোর পর, মিস্টার সামার্স তার কালো বাক্সটাকে তার ওপরে রেখে দিলেন। এরপর ভিড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কেউ আমার সাথে হাত লাগাতে চান?’
প্রথম প্রথম সবাই চুপ করে রইল, কেউ আগে বাড়তে রাজি নয়। তবে কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল মি. মার্টিন আর তার বড় ছেলে ব্যাক্সটার হাত তুলেছে। সাহা্য্য করতে ইচ্ছুক তারা দু’জন। মিস্টার সামার্স আগেই ভেতরে লটারির কাগজ ভরে রেখেছেন, এবার বাক্সটাকে ভালভাবে নাড়া দিলেন তিনি।
লটারির এই প্রথা যে কত বছর ধরে চলে আসছে, তা গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি বুড়ো ওয়ার্নারও বলতে পারবেন না। কালো বাক্সটা তার জন্মেরও অনেক আগে থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মি. সামার্স বহুবার নতুন বাক্স বানানোর ব্যাপারে কথা উঠিয়েছেন। তবে গ্রামের লোকেরা পিছপা হয়েছে প্রতিবার, চিরাচরিত প্রথা ভাঙতে ভয় পায় তারা। অনেকে বলে, কালো বাক্সটা বানানোর সময় আগের বাক্সটার কাঠের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম সেই বাক্সটা বানানো হয়েছিল গ্রামের গোড়াপত্তনের সময়।
প্রতি বছর লটারির সময় মিস্টার সামার্স নতুন একটা বাক্স বানানোর কথা বলেন, আর প্রতি বছরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় – এবার না, সামনের বার। বাক্সটা জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে, পুরোটা এখন আর মিশমিশে কালো নেই। জায়গায় জায়গায় রঙ চটে গিয়ে কাঠের রঙ বেরিয়ে এসেছে। দাগ পড়েছে এখানে-সেখানে।
মি. মার্টিন তার বড় ছেলে ব্যাক্সটারকে নিয়ে টুলটা শক্ত করে ধরে রাখলেন, যাতে বাক্স নাড়াচাড়া করার সময় কোন অঘটন না ঘটে। বহুদিন ধরে চলে আসা এই প্রথার অনেক কিছুতেই পরিবর্তন ঘটেছে। বিকৃতের পাশাপাশি হয়েছে বিস্মৃত। কাঠের টুকরোর পরিবর্তে কাগজের স্লিপ ব্যবহারের প্রচলন করেছেন মি. সামার্স। শুরুর দিকে কাঠের টুকরো ব্যবহার করতে অসুবিধা হতো না। গ্রামের লোকজন বলতে তখন হাতে গোনা কয়েকজন ছিল। কিন্তু তিনশ’ লোকের বাস যেখানে, সেখানে কী আর কাঠের টুকরো দিয়ে পোষানো যায়? বাক্সে এত জায়গা-ই তো নেই। লটারির আগের রাতে মি. সামার্স আর মি. গ্রেভস মিলে কাগজের স্লিপ বানিয়ে রাখেন। এরপর সেগুলোকে বাক্সে ভরে পাঠিয়ে দেয়া হয় সমার্সের কয়লার কারখানায়। পরদিন সকালে মাঠে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত সিন্দুকের ভেতর বন্দী থাকে ওটা। বছরের বাকি সময়ে বাক্সটা বিভিন্ন জায়গায় থাকে, কখনও এর বাড়ি আবার কখনও ওর বাড়ি। একবার পুরো বছরের জন্য ওটাকে মি. গ্রেভসের গোলাঘরে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আরেকবার রাখা হয়েছিল পোস্ট অফিসে। মার্টিনের মুদি দোকানেও স্থান হয়েছে কয়েকবার।
লটারির আগে মি. সামার্সকে একগাদা ঝামেলা পোহাতে হয়। গৃহকর্তাদের নামের তালিকা, তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম লেখা, আরও কত কী। লটারির পরিচালক হিসেবে তাকে শপথ পাঠ করান পোস্টমাস্টার মি. গ্রেভস। একটা সময় ছিল, যখন লটারি শুরু হবার আগে বিচিত্র ধরনের কিছু একটা আবৃত্তি করানো হতো। জিনিসটাকে কবিতা বলা যায় না, আবার গান বললেও ভুল হবে। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে সেই সুরহীন গম্ভীর অনুচ্ছেদ আওড়ে যেত সবাই। কেউ কেউ বলে পরিচালক মহোদয় সেই আবৃত্তির সময় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। আবার কারও কারও বিশ্বাস, সেই সময় তিনি ভিড়ের ভেতর ঘুরে ঘুরে যাচাই করতেন সবাই হাজির আছে কিনা। যুগে যুগে বদলে গেছে অনেক কিছুই। বিশেষ এক ধরনের স্যালুটের প্রচলন ছিল আগে। লটারির বাস্ক থেকে বাছতে আসা প্রত্যেককেই প্রধান পরিচালক সেই বিশেষ স্যালুট দিতেন। কালের ক্রমে পরিবর্তন ঘটেছে সেই রীতির-ও। এখন শুধু কথা বলাতেই সবকিছু সীমাবদ্ধ। মি. সামার্স অবশ্য এই কাজে বেশ পারদর্শী। ধবধবে সাদা শার্ট আর নীল জিন্স পরে কালো বাক্সের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ফুরফুরে মেজাজে গল্প করে যাচ্ছেন গ্রেভস আর মার্টিনদের সাথে।
মি. সামার্স সাধারণত সব গুছিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। সব কিছু গুছানো শেষ করে জটলার দিকে ফিরে কিছু বলার জন্য যেই না মুখ খুলেছেন, দেখতে পেলেন মিসেস হাচিসন দৌড়ে আসছেন এদিকে, তার কাঁধের ওপর সোয়েটার পেঁচিয়ে রাখা। ভিড়ের ভেতর ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে কী দিন!” পাশে দাঁড়ানো মিসেস ডেলাক্রোয়িক্স জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে। লজ্জা মাখানো কণ্ঠে বলতে লাগলেন মিসেস হাচিসন, “ভেবেছিলাম, আমার বুড়ো স্বামীটা বোধহয় কাঠ জড়ো করতে বেরিয়েছে। হঠাত জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি, বাচ্চারা কেউ নেই। সাথে সাথে মনে পড়ল, আরে, আজকে তো সাতাশ তারিখ। তখনই দৌড় লাগালাম।” মিসেস ডেলাক্রোয়িক্স হাসিমুখে বললেন, “সময় মতোই এসেছো কিন্তু। সবাই কেবল জড়ো হলো।”
এদিকে ভিড়ের ভেতর স্বামী-সন্তানকে খুঁজতে ব্যস্ত মিসেস হাচিসনের দু’চোখ। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে দেখতে দেখতে অবশেষে তাদের দেখা মিলল। মিসেস ডেলাক্রোয়িক্সের হাতে টোকা মেরে বিদায় নিয়ে সেদিকেই এগোলেন তিনি। লোকজন সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দিলো। ভিড়ের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠল দু’-একজন, “এইতো, এসে পড়েছে মিসেস হাচিসন,” আর “যাক, বিল, সময়মতোই এসেছে তোমার স্ত্রী।”
মিস্টার সামার্স গলা খাঁকারি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, “ভেবেছিলাম, এবার হয়তো তোমাকে ছাড়াই শুরু করে দিতে হবে, টেসি।” দাঁত কেলিয়ে হাসলেন মিসেস হাচিসন। “সিংকে একগাদা থালাবাসন জড়ো করে ছুটে এসেছি। শুরু করে দিন, জো।” হাসির আওয়াজ শোনা গেল ভিড়ের ভেতর থেকে। এতক্ষণের গম্ভীর পরিবেশ কিছুটা হলেও হালকা হয়ে গেল।
“ঠিক আছে,” শান্ত কণ্ঠে বললেন মি. সামার্স। “আমাদের এবার শুরু করা উচিত। আগেভাগে শেষ করে যে যার কাজে ফিরে যাওয়াই ভালো। কেউ আছে নাকি?”     
“ডানবার,” ভিড়ের মধ্যে থেকে আওয়াজ এলো, “ডানবার, ডানবার।”
“ক্লাইড ডানবার?” মিস্টার সামার্স হাতের লিস্টের দিকে তাকিয়ে বললেন। “ক’দিন আগে পা ভেঙ্গেছে লোকটার। তার পক্ষ থেকে কেউ আছে?”
“আমি আছি,” একটা নারী কণ্ঠ শোনা গেল ভিড়ের মধ্যে থেকে। মিস্টার সামার্স সেদিকে ঘুরে বললেন, “স্বামীর হয়ে স্ত্রী কাগজ টানবে! তোমাদের একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আছে না? বাবার পরিবর্তে তো ওরই কাজটা করার কথা।”
প্রশ্নের উত্তরটা গ্রামের আর দশটা লোকের মতো মি. সামার্স নিজেও জানেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন করা লটারির পরিচালকের দায়িত্বের মাঝে পড়ে। উত্তরের অপেক্ষায় মিসেস ডানবারের মুখের দিকে সৌম্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তিনি।
“হোরাসের বয়স এখনও ষোলো হয়নি,” কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললেন মিসেস ডানবার। “এই বছর আমাকেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে।”
“ঠিক আছে,” ঘোষণা করলেন লটারি পরিচালক। হাতে ধরে রাখা লিস্টে কিছু একটা লিখলেন। তারপর উঁচু কণ্ঠে হাক পাড়লেন আবার, “ওয়াটসনের ছেলে কোথায়? এবার দেখছি ওরই টানার কথা।”
টিংটিঙে লম্বা এক ছেলেকে হাত তুলতে দেখা গেল। “এই যে আমি,” বলল সে, “মায়ের পক্ষ থেকে আমিই তুলব কাগজ।” ভিড়ের ভেতর থেকে চিৎকার শোনা গেল, “সাবাস, জ্যাক।” লোকজনের কথা শুনে ভয়ে মাথা নিচু করে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করল ছেলেটা। আরেকপাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠল কেউ একজন, “যাক, তোমার মা একজন পুরুষ মানুষের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তাহলে।”
“আচ্ছা,” গম্ভীর কণ্ঠে বললেন মি. সামার্স। “এবার কাজ শুরু করা যাক। বুড়ো ওয়ার্নার আছেন নাকি?”
“এখানে,” গলার আওয়াজ শুনে ভিড়ের ভেতর লোকটাকে খোঁজার চেষ্টা করলেন মি. সামার্স।
চারদিক নীরব হয়ে এলো। লিস্টের দিকে তাকালেন মিস্টার সামার্স, গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “সবাই প্রস্তুত তো? আমি এখন এক এক করে সবার নাম ডাকব-আগে ডাকা হবে পরিবারের কর্তাদের। আপনারা এসে এই বাক্স থেকে একটা করে কাগজ তুলে নেবেন। তারপর সেটার ভাঁজ না খুলে, পরিবারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন চুপচাপ। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকেই একবার করে সুযোগ পাচ্ছে, ততক্ষণ কেউ কাগজটার দিকে তাকাবেন না। কেমন?”
    অর্ধেকের বেশি লোক সেই নির্দেশনার দিকে মনোযোগ-ই দিল না। এতবার ব্যাপারটা চোখের সামনে দেখেছে যে নতুন করে বোঝার মতো আর কিছু নেই। আশেপাশে না তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল সবাই। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট আলতো করে চেটে নিল কেউ কেউ। লটারির মতো এমন মহৎ আর বিশাল কর্মকান্ডকে ঘিরে সবারই একটা ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা কাজ করে।
হাত উঁচু করে প্রথম নামটা ডাকলেন মিস্টার সামার্স, “অ্যাডামস।” এক মাঝবয়সী লোক ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলেন। “কেমন আছো, স্টিভ?” হাসিমুখে জানতে চাইলেন মিস্টার সামার্স। “তোমার কী খবর, জো?” হাসিমুখে প্রত্যুত্তর দিলেন সেই লোকটাও। একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন দু’জন। তারপর এগিয়ে এসে বাক্সের ভেতর হাত ঢোকালেন মি. অ্যাডামস। একটা কাগজ টেনে নিয়ে হাতে গুঁজে নিজের পরিবারের কাছে চলে গেলেন। হাতের দিকে তাকাতেও ভুলে গেছেন যেন।
   “অ্যালেন।” মিস্টার সামার্স একের পর এক নাম ডেকে গেলেন। “অ্যান্ডারসন... বেন্থাম।”
“একটা জিনিস খেয়াল করেছেন?” মিসেস গ্রেভসের দিকে তকালেন মিসেস ডেলাক্রোয়িক্স। “ইদানীং খুব দ্রুতই লটারির সময় ঘনিয়ে আসে। আমার মনে হচ্ছে, গত বছরের লটারিটা যেন গত সপ্তাহেই হয়ে গেল!”
“সময় খুব দ্রুত পেরিয়ে যায়,” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিসেস গ্রেভস।
“ক্লার্ক... ডেলাক্রোয়িক্স” ওদিকে মি. অ্যাডামস একের পর এক নাম ডেকেই চলেছেন।
“আমার স্বামীর ডাক এসেছে দেখি,” বিড়বিড় করলেন মিসেস ডেলা ক্রোয়িক্স। স্বামীকে এগিয়ে যেতে দেখে একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। উত্তেজনায় শ্বাস নিতে পারছেন না ঠিকমতো।
“ডানবার,” স্বামীর নাম শুনে বাক্সের দিকে পা বাড়ালেন মিসেস ডানবার। ভিড়ের ভেতর থেকে নারীকণ্ঠের চিৎকার শোনা গেল, “এগিয়ে যাও, জেনি।” “ভালোমতো টেনো,” বলল আরেকজন।
“এরপর আমাদের পালা,” মিসেস গ্রেভস বললেন। মি. গ্রেভকে ধীরপায়ে সামনে এগোতে দেখলেন তিনি। পরিচালকের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্স থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে নিলেন পোস্টমাস্টার। ভিড়ের ভেতর অসংখ্য পুরুষ মানুষ কাগজ হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এখন। তাদের দিকে তাকিয়ে বুক কেঁপে উঠল মিসেস ডানবারের। দুই ছেলেকে পাশে নিয়ে কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনিও।
“হারবার্ট... হাচিসন।”
নিজের নাম শুনে কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠলেন হারবার্ট, কী করতে হবে ভুলে গেছেন যেন। “যাও, বিল,” স্ত্রীর ডাকে তার হুঁশ ফিরলো। উপস্থিত সবাই হেসে ফেলল ঘটনা দেখে।
“জোনস।”
“লোকমুখে শুনেছি,” পাশে দাঁড়ানো বুড়ো ওয়ার্নারের সাথে গল্প জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করলেন মি. অ্যাডামস। “উত্তরের গ্রামে নাকি লটারি প্রথা বাতিল করার চিন্তা ভাবনা চলছে।”
   “যত্তসব ফালতু কথা,” নাক সিঁটকালেন ওয়ার্নার। “ছেলে-ছোঁকরাদের কথায় কান দিয়ে লাভ আছে, অ্যাঁ? ওরা বোঝেটা কী? ক’দিন পর দেখবে আবার জঙ্গলে গিয়ে বাস করার কথা বলবে। হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকতে পারলেই খুশি ওরা। ‘জুনে হলে লটারি, ফসল ফলে বাহারি,’ কথাটা শুনেছ? আমাদের বাপ-দাদারা বলতেন এটা। লটারি শুরু থেকে হয়ে আসছে, সামনেও হতে হবে।”
“অনেক জায়গায় কিন্তু লটারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।” আবার বললেন মি. অ্যাডামস।
“বললাম তো, এসব আজগুবি কথা চিন্তা করে লাভ নেই,” বিরক্তির ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল বুড়োর গলায়। “বোকার দল জুটেছে কতগুলো...” 
“মার্টিন।” ডাক শুনে বাবাকে বাক্সের দিকে এগোতে দেখল ববি মার্টিন।
“ওভারডাইক... পার্সি।” মিস্টার সামার্স একইভাবে ডেকে যাচ্ছেন সবাইকে। 
“তাড়াতাড়ি শেষ হলে ভালো হতো,” বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন মিসেস ডানবার। “একটু জলদি করতো যদি!”
“হয়ে গেছে প্রায়,” আশ্বাস দিলো ছেলেটা।
“তোমার বাবাকে দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে খবরটা। প্রস্তুত থেকো।”
প্রথা অনুযায়ী প্রতি বছর শেষ কাগজটা টানেন চেয়ারম্যান সাহেব। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। নিজের নাম ডেকে বাক্স থেকে কাগজ তুলেন তিনি। তারপর ডাকলেন, “ওয়ার্নার।”
“সাতাত্তর বছর হলো লটারিতে অংশগ্রহণ করছি,” ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে বললেন ওয়ার্নার। “এই নিয়ে সাতাত্তর বার!”
“ওয়াটসন” ঢ্যাঙা ছেলেটা জটলার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। “ভয় পেয়ো না, জ্যাক,” কে যেন সান্ত্বনা দিল ওকে। মি. সামার্স-ও নরম সুরে বললেন, “ধীরেসুস্থে তুলে নাও, বাছা।”
এরপর কিছুক্ষণ, সময় স্থবির হয়ে রইল। উপস্থিত জনতা যেন শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে। অবশেষে মিস্টার সামার্স ঘুরে দাঁড়ালেন জটলার দিকে। হাতের কাগজটা দেখিয়ে বললেন, “ঠিক আছে, বন্ধুরা। এবার কাগজটা খুলে ফেলুন সবাই।”
    এক মুহূর্তের জন্য মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল গ্রামবাসী, যেন কথার অর্থ বুঝতেই পারেনি। এরপর একসাথে কাগজ খুলল সবাই। হঠাত নীরবতা ভেঙে গুনগুন করে কথা বলতে শুরু করল মহিলারা। “কার নাম এসেছে?”, “কে?”, “ডানবার না তো?”, “নাকি ওয়াটসন?”
    প্রথম ধাক্কাটা কেটে যেতেই সবাই একযোগে বলে উঠল, “হাচিসন”, “বিল হাচিসনের নাম উঠেছে এবার।”
“বাবাকে খবর দিয়ে এসো,” ছেলেকে তাড়া দিলেন মিসেস ডানবার।
সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে হাচিসন পরিবারকে দেখার চেষ্টা করল। বিল হাচিসন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন, বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রয়েছেন হাতে ধরা কালো দাগ দেয়া কাগজটার দিকে। হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে চিৎকার করে উঠলেন মিসেস হাচিসন। সরাসরি মি. সামার্সের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি আমার স্বামীকে পছন্দমতো কাগজ তোলার সময় দেননি। আমি দেখেছি, সবাই দেখেছি। এসব আগেই ঠিক করে রাখা, অবিচার!”
“শান্ত হও, টেসি,” মিসেস ডেলাক্রোয়িক্স বললেন। “সবাই একই রকম সময় পেয়েছে,” মিস্টার গ্রেভস তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।
   “চুপ করো, টেসি,” স্ত্রীকে আদেশ করলেন বিল হাচিসন। 
“সবার উদ্দেশ্যে বলছি,” অনেকক্ষণ পর মুখ খুললেন মি. সামার্স। “দ্রুতই শেষ হয়েছে সবকিছু। এখন বাকি কাজটুকু গুছিয়ে ফেলতে পারলে আর সময় নষ্ট হবে না।” এরপর তিনি আরেকটা লিস্টের দিকে তাকিয়ে বললেন, বিল, হাচিসন পরিবারের কর্তা হিসেবে তুমিই কাগজ তুলেছ। তোমার বাড়িতে আর কে কে আছে?”
“ডন আর ইভা,” আবার চিৎকার করলেন মিসেস হাচিসন। “ওদেরকে কাগজ তোলার সুযোগ দেয়া হোক।”
“মেয়েদেরকে তার স্বামীর পরিবারের অংশ হিসেবে ধরা হয়, টেসি,” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিস্টার সামার্স। “ওরা স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে কাগজ টানতে পারে। তোমার সেটা ভালোই জানা আছে।”
“অবিচার,” টেসি চেঁচিয়ে উঠলেন।
   “কিছু করার নেই, জো,” অস্ফুট স্বরে বললেন বিল হাচিসন। আমার মেয়েটা ওর স্বামীর সাথেই থাকে। বাচ্চারা বাদে আমার পরিবারে আর কেউ নেই।”
“তার মানে, বাড়ির কর্তা হিসেবে কাগজ টানার জন্য যেমন তুমি আছো,” ব্যাখ্যা করলেন মি. সামার্স, “ঠিক তেমনি পরিবারের পক্ষ থেকেও তুমিই আছো শুধু।”
“জি,” বিল হাচিসন সায় দিলেন। “আমার তিন বাচ্চা-বিল জুনিয়র, ন্যান্সি ও ছোট্ট ডেভ। বাড়িতে আর মানুষ বলতে শুধু টেসি আর আমি।”
“ঠিক আছে, তাহলে। হ্যারি, কাগজগুলো ফিরিয়ে নিয়েছ ওদের কাছ থেকে?”
   মাথা নাড়লেন মি. গ্রেভস, হাত তুলে কাগজের টুকরোগুলো দেখালেন। “বাক্সে রেখে দাও ওগুলো,” আদেশ করলেন মি. সামার্স। “বিলের হাতের কাগজটাও বাক্সে ফেলো।”
“আমি ভেবেছিলাম, আবার নতুন করে লটারি হবে,” নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলেন মিসেস হাচিসন। “বিলকে সময় দেয়া হয়নি। সবাই দেখেছে।”
গুনে গুনে পাঁচটা কাগজ বাক্সে ফেললেন মি. গ্রেভস। বাদবাকি কাগজের স্লিপগুলো মাটিতে ফেলে দেয়া হলো। বাতাসে ভেসে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাল ওগুলো।
“সবাই মুখ বুঁজে এই অবিচার মেনে নেবেন?” মিসেস হাচিসন শেষ চেষ্টা চালালেন। আশপাশের লোকেদের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে অনুনয় করলেন, “প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই?”
“রেডি, বিল?” জিজ্ঞেস করলেন লটারি পরিচালক। স্ত্রী আর সন্তানদের মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সায় দিলেন বিল হাচিসন।
“মনে রেখো,” ঘোষণা দিলেন মি. সামার্স। “প্রত্যেকের কাগজ তোলা শেষ হলে তবেই নিজের হাতের কাগজটা খোলা যাবে। ডেভকে সাহায্য করো, হ্যারি।” ছোট্ট ডেভের হাত ধরে এগিয়ে আনলেন মি. গ্রেভস। খুশিমনেই বাক্সের কাছে এসে দাঁড়াল ও। “বাক্স থেকে একটা কাগজ বের করে নাও, বাবু,” মি. সামার্স বললেন। হাসতে হাসতে বাক্সের ভেতর হাত ঢোকাল ছেলেটা। “একটাই কাগজ কিন্তু।” মনে করিয়ে দেয়া হলো আবার। “হ্যারি, ওর কাগজটা তোমার কাছে রাখো।” পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী ডেভের শক্ত করে রাখা মুঠির ভেতর থেকে ভাঁজ করা কাগজটা বের করে নিলেন মি. গ্রেভস। বাচ্চাটা তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
“এবার ন্যান্সি যাবে।” বারো বছর বয়স মেয়েটার। নাম ডাকতেই ওর বান্ধবীরা আতঙ্কে শিউরে উঠল। স্কার্ট উঁচিয়ে ধীরপায়ে বাক্সের কাছে এসে দাঁড়ালো ন্যান্সি, ভয়ে ভয়ে একটা কাগজ তুলে নিলো। “বিল জুনিয়র,” আবারও শোনা গেল মি. সামার্সের সেই আবেগশূন্য কণ্ঠস্বর। হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা আরেকটু হলেই অসাবধানতাবশত বাক্সটা নিচে ফেলে দিতো। ভেবেচিন্তে একটা কাগজ বের করে নিলো সে-ও। এবার মিসেস হাচিসনের দিকে তাকালেন লটারি পরিচালক। “টেসি।” ভদ্রমহিলা একটু ইতস্তত করলেন, চারপাশে দেখে নিলেন একবার। বিড়বিড় করে কীযেন বলতে বলতে হাত ঢোকালেন বাক্সের ভেতর। তারপর দ্রুত এক টুকরো কাগজ বের করে পেছনে লুকিয়ে ফেললেন।
বাকি রইলেন কেবল বিল হাচিসন। মি. সামার্সের ইশারা অনুযায়ী শেষ কাগজটা হাতে তুলেন তিনি।    
কথা বলতে ভুলে গেছে যেন সবাই, চারদিকে অসহ্য নীরবতা। ভিড়ের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট মেয়ে ফিসফিস করে বলল হঠাৎ, “ন্যান্সি যাতে না হয়! ন্যান্সি যাতে না হয়!” সেই কণ্ঠস্বর যেন সবার হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করল।  
“আগে এসব রঙ-তামাশা হতো না,” আপন মনে বিড়বিড় করলেন বুড়ো ওয়ার্নার। “মানুষ আর আগের মতো নেই।”
“ঠিক আছে, তাহলে,” মিস্টার সামার্স আর সময় নষ্ট করতে চাইলেন না। “হাতের কাগজটা খুলে দেখো সবাই। ডেভের কাগজটা তুমি খুলবে, হ্যারি।”
মি. গ্রেভস কাগজটা খুলে তুলে ধরতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল উপস্থিত জনতা। সেই কাগজে কোন দাগ-ছোপ নেই। ন্যান্সি আর বিল জুনিয়র একই সাথে নিজেদের কাগজ খুলে ফেলল। ওদের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কী ঘটনা! বাকিটুকু কাগজ মেলে ধরতেই নিশ্চিত হওয়া গেল-ধবধবে সাদা!
   এবার মিসেস হাচিসনের দিকে তাকালেন মিস্টার সামার্স। টেসির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। অবশেষে বিলের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করলেন পরিচালক। বিল হাচিসন কাগজের ভাঁজ খুলেই লাফিয়ে উঠলেন– সাদা!
   ‘টেসি’, চাপা গলায় বললেন মিস্টার সামার্স। বিল হাচিসন জোর করে তার স্ত্রীর হাত থেকে কাগজ কেড়ে নিয়ে খুলে ফেললেন। উঁচু করে ধরতেই সবাই দেখল, কাগজের মাঝখানে একটা কালো দাগ। গতকাল রাতে কয়লার কারখানায় বসে গাঢ় পেন্সিল দিয়ে এই দাগটা দিয়েছেন মি. সামার্স।
উপস্থিত গ্রামবাসীদের মনে আলোড়ন বয়ে গেল।
“আর দেরি করে লাভ নেই,” মিস্টার সামার্স ঘোষণা করলেন। “যত
তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়, ততই ভালো।”
গ্রামের লোকেরা যেন এই নির্দেশেরই অপেক্ষা করছিল এতক্ষণ। রীতিনীতির অনেক কিছু ভুলে গেলেও পাথর ব্যবহারের কথাটা সবারই মনে আছে। সবাই তড়িঘড়ি করে ছুটে গেল পাথরের স্তূপটার দিকে। হাতের কাছেই বিশাল একটা পাথর দেখে দুই হাতে সেটাকে তুলে নিলেন মিসেস ডেলাক্রোয়িক্স। এরপর মিসেস ডানবারের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কী হলো? জলদি করো!”
মিসেস ডানবার কয়েকটা ছোট ছোট পাথর বেছে নিয়েছেন। উত্তেজনা চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন তিনি। “আমি একদম দৌড়াতে পারি না। তুমি যাও, আমি পেছন পেছন আসছি।”
বাচ্চাগুলো আগে থেকেই পাথর নিয়ে অপেক্ষা করছিল। এরই মাঝে কে যেন ছোট্ট ডেভির হাতে কয়েকটা নুড়ি পাথর ধরিয়ে দিয়েছে।
মিসেস হাচিসন কিন্তু তার জায়গা থেকে নড়েননি, চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। গ্রামবাসীরা সরে গিয়ে মাঠের মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি করে দিয়েছিল। পায়ের আওয়াজ শুনে মাথা তুলে দেখলেন, গ্রামবাসীরা চারপাশ থেকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ এক টুকরো পাথর ছুটে এসে তার কপালে আঘাত করল। বুড়ো ওয়ার্নার দাঁত কেলিয়ে হাসছেন, “কোথায় গেলে সবাই? এসো, এসো, পাথর মারতে শুরু করো।”
জনতার দঙ্গলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্টিভ অ্যাডামস। মি. গ্রেভসকে পাশেই দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে গ্রামবাসী।
“এ হতে পারে না। অবিচার এসব!” প্রাণপণে চিৎকার করলেন মিসেস হাচিসন। সে কথায় কান না দিয়ে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল গ্রামবাসী। বৃষ্টির দুরন্ত ফোঁটার মতো একের পর এক পাথর ছুটে গেল লটারি বিজয়ীর দিকে।
   হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রথা, না মেনে উপায় আছে?

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×