”ইসলাম মানব রচিত ধর্ম । বেশ, যুক্তি, তর্ক পেশ করুন। অাপনাকে স্বাগত জানাবো।
টিকতে পারলে টিকবেন, না হলে চিপাচাপা দিয়ে পালাবেন।”
আমার নীতি সম্পর্কে আপনার ভূল ধারনা প্রথমে অপনোদন করছি। আমি কখনও তর্কে জেতার জন্য তর্ক করি না। আমি বিতর্ক করি সত্যে বের করে আনার জন্য। ।শ্রেষ্ঠতর যুক্তির কাছে মাথা নত করাকে আমি পরাজয় মনে করি না, সেটাকে আমি আমার বিজয় মনে করি, কারন আমি সত্যের গোলাম, মিথ্য ও কুহকের গোলাম নয়। যুক্তিতে যেনতেনভাবে জেতার প্রতিযোগিতা বা কাউকে যুক্তিকে হারানোর জন্য যেন তেন পন্থা অবলম্বন করা হীন মানসিকতার পরিচয়- যা দেখা যায় বহু আস্তিক ও বহু নাস্তিক অবলম্বন করে থাকে।
আপনি আমাকে নিয়ে কিছু পোষ্ট পূর্বেও করেছে যা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। আপনার এ পোষ্টটি "ইসলাম মানব রচিত ধর্ম"-" সত্য ও বিবেক" ব্লগারের জ্ঞাতার্থে। দৃষ্টিগোচর হওয়াই আপনার ব্লগে একটু চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম যে আপনি আমাকে নিয়ে আরো পোষ্ট করেছিলেন। আপনি যদি আপনার প্রশ্ন ও যুক্তিগুলো আমার ব্লগে করতেন তাহলে বুঝতাম যে আপনি সত্যিকার অর্থে আমার জবাব জানতে চান। আপনি আমার দেয়া যুক্তি খন্ডন না করে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।যেহেতু আপনার অভিযোগ এখন আমার দৃষ্টিগোচর হল, আমি আপনার অভিযোগের জবাব দিচ্ছি।
(১) অন্য ধর্মের কোটি কোটি লোক রয়েছে। তাদের ধর্ম কার রচিত? তাদের সংশোধণ করেন না কেন? শুধূ ইসলামের প্রতি এলার্জি কেন?
দেখুন:আমি মুক্তমনা,কেন শুধু ইসলামের সমালোচনা করি।
কিন্তু কোরঅানের ক্ষেত্রে কি বলবেন? ইহার লেখক কে? যদি কোন গ্রন্থ থেকে নকল করা হয় তবে তার যথাযথ রেফারেন্স দিন।
আমার জবাব: আজকের এ আধুনিক যুগে আমি একটি পুস্তক রচনা করে কিছু সুকৌশলি পন্থার আশ্রয় নিয়ে দাবি করি যে এটা স্রষ্টা অবতীর্ণ করেছেন, আমার উপাস্থাপিত কিতাব আমার নিজ হাতে লেখা নাকি অন্য কাহারও সাহায্য নিয়ে লেখা তা তদন্ত করে সত্য বের করা বড়ই কঠিন।অথচ আধুনিক যুগে তদন্ত করা অনেক সহজ।সেখানে আপনি ১৪০০ বছর পূর্বে রচিত একটি পুস্তকের প্রকৃত রচয়িতা কে তা আপনি আমাকে বের করতে বলছেন।
আপনি অন্যান্য কয়েকটি ধর্মের রচনার উৎস সম্পর্কে বলেছেন। উক্ত ধর্মের রচনার উৎস সম্পর্কে আপনি যা বলেছেন তা হয়ত আংশিক সত্য/পুরোটাই সত্য/পুরোটাই মিথ্যা।এমনিভাবে কুরআন রচনার ইতিহাস অনুসন্ধান আমি করেছি। অনুসন্ধানীতে যা বেরিয়ে এসেছে তা হতে পারে আংশিক সত্য/পুরোটাই সত্য/পুরোটাই ভূল। এতবছর পর পুরো সত্যে নিশ্চিত করে বের করা সম্ভব নয়।যার সত্যেতা নিশ্চিত করা সম্ভব না, শুধুমাত্র ইতিহাসের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে বিতর্ক করা বোকামির কাজ এবং সে বিতর্ক শেষ হবার নয়। তাছাড়া কোন পুস্তক স্রষ্টার দাবী করা হলে তার লেখক তদন্ত করা যাদের কাছে দাবী করা হয়েছে তাদের নয়। সুতরাং কোন অকাট্য বিষয় থাকলে সেটি বলুন।
আপনার দেয়া ৩ থেকে ৬ নং পয়েন্ট এর সবগুলো বক্তব্যই ইতিহাস সংক্রান্ত যার ১০০% সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।তাছাড়া কেউ কোন বিষয়ে ত্যগ তিতিক্ষা করলেই তা স্রষ্টার হয়ে যায় না। হিন্দু নাগা বাবারা ধর্মের জন্য যে ত্যগ তিতিক্ষা করে তার নজির আর কিছু দিয়ে সম্ভব নয়।জে,এম,বির লোকেরাও জীবন দিয়ে দেয় ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য, তার মানে এ নয় যে জে,এম,বির ইসলাম সঠিক আর তাবলীগ জামাতের ইসলাম বেঠিক। সুতরং ত্যগ-তিতিক্ষা কোন সত্যের মাপকাঠি নয়।
(৭) একমাত্র কোরঅান ছাড়া অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত করা সম্ভব হয়নি। কেন? সেটা এক দুইজন নয়, কোটির উপরে । এর লজিকটা কি?
কুরআন স্রষ্টার বাণী হওয়ার পক্ষে কুরআনের কি প্রমান আছে তা কুরআন নিজেও উপাস্থাপন করেছে। কুরআন স্রষ্টার বানী হওয়ার পক্ষে মাত্র দু’টি প্রমান উপাস্থাপন করেছে। কুরআনের নিজ উপাস্থাপিত প্রমানই কুরআন স্রষ্টার হওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমান হওয়ার দাবি রাখে।তা এড়িয়ে আপনি ভিন্ন প্রমান উপাস্থাপন করছেন।কোন পুস্তক মুখস্থ করতে পারা তা স্রষ্টার হওয়ার প্রমান বহন করে না।
ঠিক আছে তারপরও আপনি লজিকটা চেয়েছেন, আমি লজিকটা দিচ্ছি:
১. কুরআন মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে ধর্মীয় আবেগ। ধর্মীয় আবেগ দ্বার কোন মানুষকে যতবড় ত্যগ ও কষ্ট স্বীকার করাতে রাজি করানো সম্ভব তা অর্থ দ্বারা সম্ভব নয়।সাথে সাথে হাফেজ নামক ডিগ্রি পাওয়ার আকাঙ্খা তো থাকেই।
২. যারা কুরআন মুখস্ত করে তাদের একমাত্র পাঠ্য শুধু মুখস্ত করা। সারাদিন একজন শিক্ষকের কড়া তত্ত্বাবধানে থেকে দিনভর ছাত্ররা কুরআন মুখস্তে সময় ব্যয় করে। এভাবে ৩ থেকে ৭/৮ বছর এ একটি পুস্তক মুখস্তে টানা সময় করে।
৩. কোন কিছু মুখস্তের ক্ষেত্রে ছন্দ বা সুরারোপ বেশ ভাল ভূমিকা পালন করে। কুরআনের এক দশমাংশ ছন্দ।আর পুরো কুরআন তেলাওয়াত বা মুখস্তে বিশেষ রীতির সুরারোপ করা হয় যা মুখস্তকে সহজতর করে।
৪. এত কঠোর পন্থা অবলম্বন করে মুখস্ত করার পরও হাফেজরা বাস্তবার্থে পুরোটাকে ধরে রাখতে পারে না যদি না তারা নিয়মিত রিভিশন দেয়া। রমজান মাস আসলে খতম তারাবি পড়ানোর জন্য রিভিশনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়।খতম তারাবিতে যে দিন যে অংশ তেলাওয়াত করা হবে সে অংশ সে দিন বেশিরভাগ সময় রিভিশন তেলাওয়াত করে সময় কাটাতে হয়। তারপরও তারা নামাজে তেলাওয়াতে ভূল করে।
আবার সে ভূল যিনি নামাজে ধরিয়ে দেন তার সে হাফেজের সাথে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়।আবার পরস্পর খাতির থাকলে কখনও কখনও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে যতটুকু কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ততটুকু এড়িয়ে যায়।
যে সব হাফিজরা রিভিশন দেয় না তাদেরকে কুরআনের বিভিন্ন অংশ থেকে জিজ্ঞাসা করলে ঠিকমত মুখস্ত তেলাওয়াত করতে পারে না।
উপরোক্ত পন্থা অবলম্বন করলে পৃথিবীর যে কোন পুস্তকই উপরোক্ত পদ্ধতিতে মুখস্ত করা সম্ভব।
(৮) কোরঅান ছাড়া এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই যা সংশোধন বা পরিমার্জন হয়নি। কিন্তু কোরঅানের শুরু থেকে একটি অক্ষর পর্যন্ত পরিবর্তন হলো না কেন?
আমার জবাব:
কুরআন কতটুকু পরিমার্জন হযেছে কিনা তার সত্যতাও ১০০% তদন্ত করে বের করা সম্ভব নয়।তবে আমার অনুসন্ধানীতে কুরআন সংগ্রহের সময় (মুহাম্মদ স: এর তিরোধানের পর, হযরত ওসমানের সময়) কিছুটা যোজন-বিয়োজন হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে।যেহেতু আমার পাওয়া তথ্য ও তত্ত্ব আর আপনার সাম্ভাব্য উপাস্থাপিত তথ্য ও যুক্তির কোনটার সত্যতা ১০০% যাচাই করা সম্ভব নয়, তাই এ নিয়ে আমি বিতর্ক করতে চাই না বা প্রয়োজনও নেই। কারন কোন পুস্তক অপরিবর্তিত থাকা সে পুস্তক স্রষ্টার হওয়ার অকাট্য প্রমান বহন করে না।
কুরআন স্রষ্টার হওয়ার পক্ষে অকাট্য ও বর্তমানে প্রমানযোগ্য এমন কোন প্রমান যদি আপনার কাছে থাকে তা উপাস্থাপন করুন।
আপনার দ্বিতীয় ভাগে উপাস্থাপিত প্রশ্নের জবাব:
একটু গল্প দ্বারা জবাবটি দেই।কোন এক যুগে একজন লোক চিৎকার করে বলতে শুরু করলো যে বেগুন বাকা কেন? কেউ এর উত্তর দিতে পারছিল না। এ নিয়ে গ্রাম জুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ একজন লোক দৌড়ে এসে বললো আমি এর জবাব জানি। সকল উৎসুক লোক তার কাছে জবাব জানতে চাইল।
তিনি বললেন ’নদী বাকানং তো বেগুন বাকানং’ অর্থ্যাৎ নদী যেহেতু বাকা তাই বেগুন বাকা হয়েছে।
এবার লোকেরা বললো আচ্ছা তা তো বুঝলাম, তাহলে নদী বাকা কেন?
জবাবে তিনি বললেন যে ‘চাদ বাকানং তো নদী বাকানং’ অর্যাকেৎ চাদ বাকা হয়েছে তাই নদী বাক হয়েছে।
এবার গ্রামের লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল।কিছু লোক উক্ত লোকের জবাব পেয়ে উক্ত লোকেরা অনুসারী হয়ে গেল।যেহেতু উক্ত লোকের জবাবটা বোগাচ ও আন্দাজহেতু বানোয়াট, আর বানোয়াট উত্তর হাজার রকমেরই হয়ে থাকে (1+1=2 একটি সঠিক উত্তর, আর ভূল উত্তর কতটা হবে তার ইয়ত্তা নেই)।এ কারনেরা উক্ত লোকেরা অনুসারীরা বেগুন বাকা হওয়ার কারনকে বিভিন্ন ভাবে ব্যখ্যা করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হল।
আর কিছু লোক বেগুন বাকা হওয়ার পক্ষে উপাস্থাপিত ঐ সকল ফালতু, হাস্যকর জবাব প্রত্যখ্যান করল।যারা প্রত্যখ্যান করলো তাদের বিশ্বাস যে এ বিশ্বজগতের তুলনায় আমরা অনুর সমানও নয়, এ মহাজগতের রহস্য সম্পর্কে হাজারও প্রশ্ন রয়েছে যার সবগুলোর জবাব জানা হয়ত কোনদিন সম্ভব হবে না।কোন প্রশ্নের জবাব না জানলে ফালতু একটি জবাব তৈরি করে সন্তুষ্ট হওয়া বেকুফ লোকদের কাজ হতে পারে, বুদ্ধিমানেরা কখনও এরুপ করতে পারে না।
বেগুনের অনুসারী বলতে আমি ধর্মানুসারীদের তুলনা করেছি।পৃথিবীর সকল ধর্মই নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। সকল ধর্মের ক্ষেত্রে সে প্রশ্নগুলো এক ও অভিন্ন।উত্তর গুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই ধর্মগুলোও ভিন্ন ভিন্ন।
আপনার উথ্থাপিত প্রশ্নের উত্তরগুলো যদি ধরেও নেই যে আপনার ধর্ম, তারপরও আরো অনেকগুলো প্রশ্ন রয়ে যায় যার কোন উত্তরই আপনি দিতে পারবেন না।লেখা বড় হওয়াই এবং সে প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিক কিন্তু মৌলিক না হওয়াই সে আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না।
প্রথম ও প্রধান বিষয় হল আপনি যদি দাবি করেন যে স্রষ্টা বিধান দিয়েছে তা হলে তার পক্ষে অকাট্য ও বর্তমানে প্রমানযোগ্য প্রমান উপাস্থাপন করুন।এ বিষয়টি সমাধা হলে বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রইল।
যিনি কোন পুস্তককে স্রষ্টার দাবি করেন তারই প্রথম দায়িত্ব হয়ে থাকে তার দাবির পক্ষে প্রমান উপাস্থাপন করা।যার কাছে দাবি উপাস্থাপন করা হল এটা তার দায়িত্ব নয় যে তা প্রমান করা যে পুস্তকটি স্রষ্টার নয়। তারপরও আমার কাছে বহু প্রমান রয়েছে যে কুরআন মানবরচিত স্রষ্টার নয়। সে প্রমানগুলো থেকে মাত্র কয়েকটি প্রমান আমার ব্লগে দিয়েছি। আরো প্রমান দেয়া হবে।
ভাল থাকবে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২৩