মুভি ক্রিটিক ব্লগ পোস্ট#১৩৫
নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেছে সে। পালিয়েছে জেল থেকে। যুক্ত হয়েছে প্রিয় বন্ধুকে হত্যা করার কালিমা। মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে তার। পিছু লেগেছে পুলিশ ও বাউন্টি হান্টার। এমন বিপদে তাকে সাহায্য করছে ধনাঢ্য এক রহস্যময় সুন্দরী। কিন্তু কেন? পলাতক আসামী কি আসলেই খুনী? প্লাস্টিক সার্জারি করে কি পার পাবে সে?
সেবা প্রকাশনীর কোন থ্রিলার গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদের অংশ নয় উপরের পরিচ্ছদটি। ১৯৪৭ সালের মুভি ডার্ক প্যাসেজের প্লটটি এভাবেই ধরা দিল কলমে। উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটি।
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা হামফ্রে বোগার্ট (Humphrey Bogart) ও অভিনেত্রী লরেন ব্যাকল (Lauren Bacall) জুটির অসাধারণ মুভি চতুষ্টয়ের তৃতীয়টি হলো ডার্ক প্যাসেজ। এটি ফিল্ম নয়ার (Film Noir) ঘরানার রোমান্টিক রহস্য থ্রিলার। সৃষ্টিশীল ফার্স্ট পারসন ক্যামেরা-শৈলী এই ক্লাসিক মুভিটির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। বলা যায় এই প্রথম বৃহৎ পরিসরে হলিউডের কোন মুভিতে ফার্স্ট পারসন ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের সফল ব্যবহার হলো। চিত্রনাট্যকার/পরিচালক ডেলমার ডেভস (Delmer Daves) তার এই স্টাইলিস্ট মুভিটিতে তৎকালীন গতানুগতিক স্টুডিও ধারার বাইরে এসে আউটডোর লোকেশনে (সান ফ্রান্সিসকো) মনোযোগী হয়েছেন। বাস্তব জীবনেও যুগল বোগার্ট-ব্যাকল নিজস্ব চমৎকার পারফরম্যান্সের সঙ্গে যৌথ কেমিস্ট্রির সমন্বয় ঘটিয়েছেন মুভিটিতে। বিশেষত সুন্দরী আইরিনের চরিত্রটিতে ব্যাকল ছিলেন রীতিমতো মোহময়ী।
পৌনে দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির মুভির প্রথম ঘণ্টায় ছিল ফার্স্ট পারসন ক্যামেরার আধিপত্য ও থার্ড পারসন ক্যামেরার সফল সংমিশ্রণ। অর্থাৎ মুভির সিংহ ভাগই আমরা দেখেছি পলাতক আসামী ভিনসেন্ট প্যারির (বোগার্ট) চোখে। প্লাস্টিক সার্জারির ব্যান্ডেজ খোলার পরই আমরা প্রথম মুভির প্রধান চরিত্রটির চেহারা দেখতে পায়। যদিও আমরা কখনোই প্যারির আসল চেহারাটি দেখি না। পরিবর্তিত চেহারার প্যারিকে দেখাতেই বদলে যায় মুভির পয়েন্ট অফ ভিউ।
প্রশ্ন জাগে মনে, কেন ডিরেক্টর ডেলমার ডেভস (Broken Arrow, 3:10 to Yuma, Cowboy) চরিত্রের চোখে কাহিনীটিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন? শুধুই কি স্টাইলের দোহাই? মনে হয় না। আচ্ছা, আমরা কখনও কি একজন অভিযুক্ত আসামীকে তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি? কিংবা তার অবস্থান থেকে দেখি চারপাশটা? তার একান্ত বক্তব্য কি শুনি কখনও? আসলে আমরা তখন 'নিরপেক্ষ' থাকতেই পছন্দ করি। হয়তো তাই এই অভিযুক্ত অপরাধীর চোখ মুভির সঞ্চালক। সাহায্য-কারিণী আইরিন সমব্যথী। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই থিমটা প্রত্যাশা অনুসারে সংলাপ ও চিত্রনাট্যে গভীর হয়নি । সম্ভবত সম্পূর্ণ মুভিটির গতি সমান্তরাল রাখার জন্যই এই ফাঁকিবাজি।
প্রধান চরিত্র দুটির পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্রগুলোও দারুণ দেখিয়েছে অভিনয়। বিশেষত Madge Rapf যে প্যারিকে একসময় পছন্দ করতো কিন্তু এখন তার মৃত্যু কামনা করে সেই চরিত্রটিতে Agnes Moorehead (Citizen Kane, The Magnificent Ambersons, The Big Street)-এর শক্তিশালী অভিনয় ছিল নজর কাড়া। তবে দুঃখের বিষয় চরিত্রটি খুব বেশি বেড়ে উঠতে পারেনি, পর্দায় তার সময়সীমা ছিল কম। অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জনের ছোট্ট চরিত্রটিতে Houseley Stevenson-এর ডার্ক অভিনয় ছিল এক কথায় দুর্দান্ত।
চিত্তাকর্ষক প্লট, চমৎকার অভিনয়, অনন্য ক্যামেরা-শৈলী, পরিচ্ছন্ন নির্দেশনা - সব মিলিয়ে Bogart ও Bacal জুটির Dark Passage (১৯৪৭) আপনার দর্শনপ্রার্থী হওয়ার দাবি রাখে। বিশেষত যারা অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্রাইম মুভি দেখতে পছন্দ করেন এবং যারা ক্যামেরার পেছনে কাজ করেন তাদের জন্য এই মুভিটি দেখা প্রয়োজন। B & B জুটির বাকি তিনটি মুভি হলো: To Have and Have Not (১৯৪৪), The Big Sleep (১৯৪৬) ও Key Largo (১৯৪৮)।
রেটিং: ★★★★½ (৪.৫/৫)
রেটিং ভাষা: প্রায় ক্লাসিক/ডোন্ট মিস
_______
মুভি পোস্ট# ১৩৪: ★মুভি রিভিউ★ The A-Team: মস্তিষ্ক-বিহীন ফরমালিনযুক্ত অ্যাকশন মুভি
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১১