somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্ঞানী মাত্র বলেছেন, অতীত ভুলে যাও, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হবে না, বর্তমানে বাস কর শান্তি পাবে।
অতীত আমরা ভুলি নাই, ৭১ আমরা ভুলি নাই, শুধু ১৭১৭, ১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯০৫ ১৯৪৭, ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৯০ এই দিনগুলো ভুলে গেছি। আর ভবিষ্যৎ সে নিয়ে আমরা ব্যাপক চিন্তিত। আজকে বাদে কালকেতো মরেই যাবো, দুনিয়ায় আর কয়দিন। তাই যা খেতে পারি তাই মুনাফা। ভালো লাগে বাঙালির মুখে হাসি দেখতে। বাঙালির সবচেয়ে বড় বিনোদন কিসে তা কি আপনার জানা আছে? আমি নিশ্চিত আপনি জানেন। কিন্তু বলতে পারবেন না। বাঙালি অপ্রীতিকর সত্য বলে না। যতই গালিগালাজ করুক না কেন, বাঙালিকে অপ্রীতিকর সত্য বলতে দেখা যাবে না। বাঙালির বড় বিনোদন হলো, অন্যের খেমটা নাচন দেখায়। আমি অস্বীকার করবো না। আমিও ভালোবাসি। অন্যের গালে দুটো চড় পড়লে, আমিও দাঁড়িয়ে পড়ি দেখতে; হাসি আর হাত তালি দেই, অনেক ভালো লাগে। অন্যের সমালোচনা করা বাঙালির আরেকটা বিনোদন। সবাই সবার থেকে সেরা। এই যুগে রবি ঠাকুর বা নজরুল জন্ম নিলে তাদের লেখার সমালোচনা করার লোকের অভাব হতো না। না না, ভুল বুঝবেন না, ইংরেজিতে যাকে বলে ক্রিটিকস এরা কিন্তু তাদের দলের কেউ নয়। এরা হলো প্রতিভার জগতের হুলিগান। এদের কাজই হলো কেউ মুখ খুললেই কুলুপ এটে দেয়া। আমার চেনা পরিচিতের মধ্যেই কয়েকজন আছেন। যাই হোক আসল প্রসঙ্গে আসি। আজকে সকালে একটা প্রবন্ধ পড়লাম, লেখনী চমৎকার। লেখার নাম, লেখকের নাম বলব না, এটুকু জানুন, লেখক একজন নারী।ডিজিটাল জামানায় যা হয়, লেখা লিখতে দেরি কমেন্ট শুরু হতে দেরি নাই। তাই হলো, প্রথম কমেন্টেই প্রমীলাটিকে শরীর বিক্রেতার উপাধি দেয়া হলো। তার লেখার মধ্যে যুক্তি ছিলো, যুক্তির স্বপক্ষে বিবরণ ছিলো। কেন তাকে বেশ্যা বলা হলো জানেন? কারণ তিনি যৌনতাকে একটা বাক্সের ভিতর দেখতে বলেছেন। বাঙালি এখন মর্ডান। যেখানে দিন দিন বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে একদল কে দেখা যায় সেক্স এড চালুর আহবান জানাতে। কাউকে দেখি নাই কারিগরি জ্ঞানের গুরুত্বের উপর একটা উদ্যোগী পদক্ষেপ নিতে কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে সকলকে একত্র হবার আহবান জানাতে। আরেকজনের মন্তব্য ছিল এরকম যে যেহেতু ভুল আরেকজনের তাহলে তার মজা লুটতে দোষ কোথায়! দোষ কোথায় জানেন, কাউকে না কাউকে থামতে হয়। আপনি থামতে চাচ্ছেন না। আর সেতো ভুল করে বসে আছে, তাইলে কি হচ্ছে? ভুলের একটা বৃত্ত বানিয়ে নিচ্ছেন। আপনার ঠেকা লেগেছে নাকি সেই বৃত্ত আপনি ভাঙবেন। আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। ঐ সময় আব্বুর এক বাক্স ভর্তি গানের ক্যাসেট ছিলো। ছোট বেলায় আমি গানের প্রতি একটু উদাসীন ছিলাম, বুঝতাম না, গানের আবেদন ঠিক আমাকে ছুতো না (যদিও স্ভিরোদভের বাজনার তালে আমার মাথা আপনাই দুলে, তবুও মনে হয় এখনো ছুতে পারে না)। তো আমার বাবা একদিন আমাকে নিয়ে বসলেন, একটা ক্যাসেট বের করে ক্যাসেট প্লেয়ারে ঢুকালেন, প্লে বোতাম চাপতেই অদ্ভুত ভাষায় গান। আমি অবাক এ আবার কেমনতোর ভাষায় গান। আব্বু বললেন, এইটা স্কটিশ গান, আমার পছন্দের ক্যাসেটগুলোর এইটা একটা। আমি বলি কি এখন থেকে কিছু কালেকশন রাখেন, নিজের সন্তানদের বলবেন, দেখ এই বিনোদনে আমোদ করে বড় হয়েছি। কারণ নাহলে এই বৃত্ত টিকে থাকবে কিভাবে? যে বৃত্ত ভাঙ্গতে আপনার এত উদাসীনতা।
আরেকটা প্রসঙ্গ না বললে নয়, আজকে পত্রিকায় দেখলাম, মোটরসাইকেল কিনে দেয় নি বলে পুত্র পিতাকে আগুনে পুড়ে দিলো। কি শিখছে শিশু গুলো? কি নৈতিকতা তাদের মধ্যে ঢুকানো হচ্ছে? আমি জানিনা। আমার কাছে এর উত্তর নেই। আমি অনেক দিন আগে একটা প্রশ্ন শুনেছিলাম, কোন একটা ডকুমেন্টারি টিভি অনুষ্ঠানে। প্রশ্নটা ছিল, কোন একটা সভ্যতা শেষ হয় কখন? আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম, যখন সেই সভ্যতার হাল ধরার কেউ থাকে না তখন সভ্যতা ভাঙ্গতে থাকে, তার তরুণ প্রজন্ম যখন বিলাসিতায় গা ভাসায় তখন সভ্যতা ভাঙ্গতে থাকে। তাহলে কি জাতি হিসেবে আমরা ভেঙে পড়ছি? আমার মনে হয় না, সে কথা আমরা বলতে পারি। কারণ ওই ছেলেটা; কয়দিন আগে যাকে রাস্তায় দেখেছিলাম। ছেলেটা কলেজ ড্রেস পড়া, আরো কয়েজন সহপাঠীর সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা মারছিলো।ছেলেটার একটা বর্ণনা দেয়, নাদুসনুদুস চেহারার বেটে খাটো ছেলে। কাছেই রেলক্রসিং এ রাস্তার উঁচু অংশের কাছে এসে একটা ভ্যান থেমে গেলো। ভ্যানে বোঝাই মালের ভারে ভ্যানের লোক দুজন ঠেলে তুলতে পারছে না। ছেলেটা কথা থামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে বললো, চল সবাই মিলে হাত লাগাই। কেউ রাজি হলো না। সে উঠলো, বললো আমার ব্যাগটা দেখে রাখ। একজন বললো, তুই পারবি না কিছু করতে। সে হেসে বললো, যাইতো আগে। গেলো ছেলেটা। ভ্যানে হাত লাগাতেই ভ্যানের লোকগুলো বললো, আপনে হাত লাগাইতে হবে না। সে আবার হাসি দিয়ে লোক দুজনকে ইশারা দিয়ে ঠেলতে লাগলো। একচুলও নড়লো না। হঠাৎ এক লোক চিৎকার দিয়ে বললো, বেডা গুলো খাড়ায়া তামাশা দেখ খালি, ইস্টুডেন্টে ঠেলে আর তোমরা খাড়ায়া তামশা দেখো। হঠাৎ করে ভ্যানের চতুর্দিকে মানুষ জড়ো হয়ে গেলো, ছেলেটা নিজেই আংগুল রাখার জায়গা পেলো না। এক ঠেলায় অবলীলায় ভ্যান রেললাইনের ওপাড়ে। কেউ ওকে ধন্যবাদ বলেনি, কেউ এই খবর পত্রিকায় ছাপায়নি। কিন্তু ওর মুখের যে অকৃত্রিম হাসিটা আমি তার বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার পথে দেখেছিলাম তাতে বুঝে গিয়েছিলাম, বাঙালি জাতি টিকে থাকবে, এরকম লুকিয়ে থাকা নায়কগুলোই টিকিয়ে দিবে এই জাতিকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×