somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসনেহেনা হাউজ - ৪

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্গোপুজোর মৌসুম, শাখারী পট্টিতে রঙয়ের ছড়াছড়ি। অসাধারণ চোখে গলিটিকে দেখলে মনে হবে আসমান থেকে কেউ রংধনুর বিশাল কৌটা উপুড় করে দিয়েছে। হলুদ, সবুজ, গোলাপী হরেক রকম রঙ চারপাশে। ঢোলক ঢোল বাজাচ্ছে এমন দৃশ্য কোনো এক যুগে চোখে পড়তো হয়তো, এখন পড়েনা; এখন বড় বড় সাউন্ড বক্সে শরীর গরম করা গান বাজছে। আর গানের তালে ছেলে বুড়ো সবাই নেচে কুদে আনন্দে মাতোয়ারা। মা দুর্গার মূর্তি লরিতে করে গলির এ মাথা থেকে ও মাথা যাচ্ছে। কেউ কেউ মন্ত্র জপে যাচ্ছে

সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতে

কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ তাকিয়ে দেখছে আনন্দরত ছেলে বুড়োদের। তরুণী মেয়েগুলো হাফপ্যান্ট পড়া অর্ধ নগ্ন যুবকদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। এর মাঝে হয়তো কোন রোমিও তার জুলিয়েট কে পেয়ে গেছে। চারদিকে আনন্দ দোলা দিচ্ছে, বাতাসে আনন্দের গন্ধ। যেনো স্বপ্নপুরী এক। সবার মুখে হাসি। দাদা হাসছে, ঠাকুরদা হাসছে, দিদি হাসছে, বৌদি হাসছে, পিসিমা হাসছে, ইন্দ্রানী হাসছে বিষ্ণুর কাণ্ড দেখে।
হাসছে না শুধু কাদের হুজুর। তার মুখ গোমড়া। তিনি কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে হাটছেন। আসগর কে বলেছিলেন, একটা পাটুয়াটুলীর রিক্সা ঠিক করে দিতে। হারামজাদা রিক্সা ঠিক করেছ দিয়েছে, কিন্তু রিক্সা তাকে সদরঘাটে নামিয়েছে। এলোপাথাড়ি ঘুরতে ঘুরতে এই রাস্তা দিয়ে একজন পথ বাতলে দিলো। এখন বিপাকে পড়ে গেছেন, তিনি নিজের গা বাচিয়ে বাচিয়ে চলছেন। তার চেষ্টা কোন বিধর্মীর সাথে তার গা যেনো না লাগে। কানে হাত দিয়ে রেখেছেন যাতে মন্ত্র তার কানে না ঢুকে। এর মাঝেই ঘটলো বিপত্তি। কোথা থেকে যেনো একটা বোতল এসে তার গায়ে পড়লো। কাদের হুজুর কিছু বুঝে উঠার আগেই তার সাদা জোব্বা হয়ে গেছে গোলাপী। কাদের হুজুর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না, তিনি কেদে দিলেন। লোকজন হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বয়স্ক একটা লোক কান্না করছে। কয়েকজন এগিয়ে এলেন তিনি তাদের থেকে পেছাতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে গেলেন এক বৌদির সাথে, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেকে সামলাতে গিয়ে আরো বেসামাল হয়ে গেলেন কাদের হুজুর। এবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন বৌদির উপর। সবাই রা রা করে উঠলো। বৌদি বসিয়ে দিলেন এক চপটাঘাত। তার চোখ মুখ সব অন্ধকার হয়ে গেলো। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখলেন, কয়েকটা বেজার মুখ তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। একজন জিজ্ঞেস করলো,

যাইবেন কই?

আমতা আমতা করতে কাদের হুজুর বললেন,

পাটুয়াটুলি

একজন তাকে টেনে তুললো, এরপর দুইজন দুইদিক থেকে তাকে ধরে পাটুয়াটুলি পৌছে দিলো। কাদের হুজুর পাটুয়াটুলি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তার গায়ের জোব্বা গোলাপী, পিঠে ময়লা, আর গালের বামপাশটা এখনো হাত দিয়ে ডলছেন। তিনি ভাবছেন সকল দোষের মূলে আছেন, জাফর সাহেব। তিনি নিশ্চয় আসগরকে এইরকম নির্দেশনা দিয়েছেন, যার কারণে আসগর রিক্সা সদরঘাটের ঠিক করে দিয়েছে। যাই হোক এখন মতিন মিয়ার দোকান খুজে বের করতে হবে। তার সাথে জরুরি কাজটা সারার জন্যই এতো ঝামেলা পোহাইতে হলো।

ফয়সাল অপলক দৃষ্টিকে দীপাকে দেখছে। দীপা তার মুখের উপর চলে আসা চুলগুলোকে আঙুল দিয়ে কানের পিছে গুজে দিচ্ছে। পুরুষ মানুষের মনঃস্ত্বত কিন্তু কম অদ্ভুত নয়। এই সাধারণ ব্যাপারটাতেই ফয়সালের ভেতর একটা ঝড় তুলে দিলো। তার ইচ্ছে করছে দীপা কে ও গিয়ে বলবে,

এই যে মিস দীপা, তুমি কিন্তু ভারী অন্যায় করলে, এভাবে চুল ঠিক করা উচিত হয়নি

দীপা নিশ্চয় উত্তরে বলবে,

তাতে আপনার কি সমস্যা, চুল আমার, সমস্যা আমার, তাই সমাধানও আমার

ও তখন দীপার হাতটা টেনে ওর হৃতপিন্ডের উপর বসিয়ে বলবে,

সমস্যা শুধু তোমার না আমারো। বুঝতে পারছো কেমন লাফাচ্ছে?

হঠাত করেই চিন্তায় ছেদ পড়লো। বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ফয়সাল জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো, দীপাও এলো। হাতটা জানালা দিয়ে বের করে দিলো। ওর হাতের উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ওরই গালে এসে পড়ছে। ফয়সাল আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে দীপার বাড়িয়ে রাখা হাতটা ধরে ফেললো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×