somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উনজন

০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিটি লেখকের চিন্তায় একটি পৃথিবী থাকে , যেটা আমাদের এই পৃথিবীর একটা কাল্পনিক উপাংশ মাত্র। আমাদের এই বাস্তব পৃথিবীর সাথে ঐ কাল্পনিক পৃথিবীটি হুবুহু মিলে যায়, বিস্তর ফারাকটা থেকে যায় শুধুই জটিল আর বাস্তবতার মাঝে। যেমন, এই মূহুর্তে ঐ পৃথিবীতে ‘পাচু বাবু’ নামক একজন বৃদ্ধ বসে চা খাচ্ছেন।আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছি। শীতের সকাল , পাচু বাবুর আনুমানিক বয়স ৮০’র উপরে,লম্বা, গায়ের রঙ কালো, ঘোলা চোখ দুটি যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে ,সামনের চারটা দাঁতেরও একই অবস্থা, গালে সাদা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, মাথায় কালো সাদা মেলানো চুল, পরনে পুরান সাদা লুঙ্গি, গায়ে হলুদ সোয়েটার ,এরওপর একটা ছাই রঙের চাদর চাপানো। তিনি বসে আছেন একটা চা-নাশতার দোকানে কাঠের বেঞ্চিতে, তাঁর এক পা ভাঁজ করে বেঞ্চির ওপর তোলা। তিনি দুই হাতে চায়ের কাপ ধরে চা খাচ্ছেন আর তাঁর পায়ের পাতার ওপর এসে পড়া রোদের দিকে তাকিয়ে আছেন এক দৃষ্টিতে। এক সময় পাচু বাবুর হাত ঠান্ডা হয়ে আসে,কাপের চা শেষ হয়। “এই হুকেন, পয়সাটা নে রে...এই যে।” বলে পচাবাবু বেঞ্চি থেকে কোন রকমে উঠে কুঁজো হয়ে দাঁড়ালেন ,এখন আর ঠিক সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না,দুইহাত পেছনে কোমরের ওপর বেঁধে উটের মত দুলকি চালে হাঁটেন।
বাজারের রাস্তা ধরে সোজা হাঁটতে হাঁটতে ,থানার সামনে দিয়ে আরও কিছুদূর হেঁটে পাচুবাবু এসে দাঁড়ালেন রাজবাড়ীটার সামনে। থানার নাম ছিল ‘শিবরাজ পুর’ দেশ ভাগের পর নাম হয় ‘সিরাজ পুর’, কাগজে কলমে ‘সিরাজ পুর’ হলেও লোকমুখে এখনও ‘শিবরাজ পুর’ নামটি টিকে আছে। এই গ্রামে (থানায়) একটি প্রাচীন পাথরের তৈরি শিব মন্দির আছে,কেঊ জানেনা এই মন্দিরটি কবে এবং কে এই গ্রামে তৈরি করেছিল। শিব মন্দিরের মত প্রাচীন না হলেও তার কাছাকাছি প্রাচীন এই গ্রাম। ব্রিটিশ রাজের আগে এটা কোন থানা ছিল না, এই গ্রামকে কেন্দ্র করে আশেপাশের অনেক গুলি গ্রাম নিয়ে ছিল ‘শিবরাজ পুর’ রাজার জমিদারী। এই গ্রামে হাট বসত ,বাজার ছিল, বড় মাঠে খেলা হত, পয়লা বৈশাখে মেলা হত,রথের মেলা হত,শীতকালে যাত্রা পালা হত,এখনও হয় স্বল্প পরিসরে। এই গ্রামের পাশে একটি নদী আছে , নদীর নাম ‘শকুনি’,এই গ্রাম থেকে নদী পথে মাত্র ৪০ ক্রশ দূরেই ‘বড় সদর’। এই গ্রামটি মূলত ছিল একটি হিন্দুগ্রাম,প্রজাদের বেশীর ভাগই ছিল নিচু বর্ণের হিন্দু ,সাঁওতাল, আর কয়েক ঘর মসুলমান চাষি।‘শিবরাজ পুর’এর প্রথম রাজা কে তা কেউ জানেন না, কিন্তু শেষ রাজার নাম এবং তাঁর পিতামহের নাম সকলেই জানেন কারণ এই নাম দুটি আলাদা দুটি শ্বেতপাথরের ফলকে রাজবাড়ীর সামনে লিখা রয়েছে।
প্রথমটাতে লেখা
“হৈমন্তী মহল”
শ্রী শ্রী রানী হৈমন্তী দেবীর চরণে
স্থাপিতঃ ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ
রাজা প্রভাকর রায় চৌধুরী(১৮৩৮-১৯০০ খ্রিস্টাব্দ)

দ্বিতিয়টিতে লেখা
উত্তরাধিকার সুত্রে,
রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী(১৮৮৮-......)

লোকমূখে পাচুবাবু রাজা প্রভাকর রায় চৌধুরীর অনেক গল্প শুনেছেন,তিনি অতন্ত প্রতাপশালী রাজা ছিলেন। তিনি তাঁর বাপ দাদার প্রাচীন রাজবাড়ী ভেঙ্গে নতুন করে রাজবাড়ী তৈরি করেন তাঁর স্বর্গীয় মা’র নামে, প্রাচীন রাজবাড়ী ভেঙ্গে নতুন রাজবাড়ী তৈরির সময় তিনি মাটির তলা থেকে একটি সোনার নটরাজের মূর্তি পান, তারপর থেকেই নাকি তাঁর রাজবাড়ীর প্রাচুর্য এবং জমিদারী অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল । একবার ব্রিটিশ রাজের বড় একটা নৌকা রসদ আর রাজস্বের টাকা-পয়সা নিয়ে ‘শকুনির’ ওপর দিয়ে যাচ্ছিল ‘বড় সদরে’র দিকে।যখন নৌকাটি ‘শিবরাজ পুরে’থেকে কিছু দূরের জঙ্গলটার কাছে এসে পৌঁছায় তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, এদিকে সুযোগ বুঝে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা ডাকাতের একটা বড় দল নৌকার ওপর হামলে পড়ে, শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ , ব্রিটিশ রাজের পেয়াদারা ঘন ঘন গুলি চালাতে থাকে , কিন্তু অমবস্যার ঘোড় অন্ধকার থাকায় তাঁরা বেশী জুত করে উঠতে পারছিলেন না ,ডাকাতরা বল্লম ,তীর ছুঁড়ে নৌকার মাঝিদের মেরে ফেলে, নৌকা মাঝ নদীতে স্থীর হয়ে থাকে, ডাকাতরা সমানে বল্লম ,তীর ছুঁড়তে থাকে কিন্তু গুলির ভয়ে নৌকার কাছেও কেউ যেতে পারছিলনা। এই ডাকাতির খবর রাজার কানে গেল, রাজার তখন বয়েস কম, রক্ত গরম, সাহসও অনেক। রাজা হুকুম দিলেন তাঁর লাঠিয়াল বাহিনীকে মশাল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে , সাথে তিনি নিজেও রাইফেল হাতে ঘোড়া বাগিয়ে ছুটলেন। রাজার লাঠীয়াল বাহিনীর সামনে ডাকাত দল টিকতেই পারলনা ,রাজা নিজেই গুলি করে মারলেন ১৩ জন ডাকাত। রাত শেষে আহত-নিহত ডাকাতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫জন। পরদিন ‘বড় সদর’ থেকে ব্রিটীশ সাহেব অফিসার এসেছিলেন , রাজার বীরত্বের জন্য সোনার মেডেল দিয়ে সম্মান দিয়েছিলেন, এরপর রাজার প্রস্তাবেই ‘শিবরাজ পুরে’ একটি থানা আর একটি পোষ্ট অফিস বসান ব্রিটিশ রাজ।
এদিকে রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী, পিতা প্রতাপ রায় চৌধুরী। তাঁর এত খ্যাতি না থাকলেও প্রতাপ ছিলো তার পিতামহের মতই। লোকে বলে,রাজা প্রতাপ রায় চৌধুরীর চারজন ছেলের ভেতর সেই যোগ্য রাজা ছিলেন।তিনি বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান ছিলেন। ভাইদের ভিতরে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর বাকি তিন ভাই অপঘাতে মারা যান। বড়জন নৌকাডুবিতে মারা যান, ছোট দুইজন যমজ ছিলেন , তাঁরা যাত্রা দল করতেন , এই নিয়ে পরিবারের লজ্জার শেষ ছিল না। যাত্রা দলের মধ্যে বিবাদে দুইজনই একসাথে খুন হন। লোকজন কানাঘসা করতে থাকে যে ভাইদের অপমৃত্যুর পিছনে দেবাকর রায় চৌধুরীর হাত আছে। রাজা প্রতাপ রায় চৌধুরী মনের দূঃখ্যে সন্ন্যাস নিয়ে কাশী চলে যান। রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী শক্ত হাতে সরাসরি রাজকার্য সামলাতে শুরু করেন।

সকাল ৭টা ৪৫, পাচুবাবু তাঁর হাত ঘড়ির ঘোলা কাঁচে কষ্ট করে দেখলেন। রাজবাড়ীর বিশাল বড় জলছাদ, আশপাশের গাছপালার চেয়ে ছাদ উঁচু হওয়ায় অনেক সকালেই পুরা ছাদ সোনা রোদে ভরে উঠে। পাচু বাবু ছাদের এককোনায় বসে সরীসৃপের মত নির্লিপ্তভাবে রোদ পোহাতে লাগলেন।আস্তে আস্তে রোদের তাপে তাঁর শরীর উষ্ণ হতে শুরু হল , তিনি হাড়ে আরাম অনুভব করতে লাগলেন, খানিকটা ঝিমুনির মতও আসল এক সময়। এই তন্দ্রা অবস্থায় পাচুবাবুর অনেক কিছু মনেপড়ে ,বলতে গেলে চোখে ভাসে, তিনি এই ‘শিবরাজ পুরে’ এসেছিলেন ১৯৩৬ সালে, তখন তাঁর বয়েস ছিল ৫ বছর, পরনে একটা সাদা ময়লা ধূতি আর গায়ে একটা চাদর। তাঁর মা ‘নিরমলা দেবদাসী’ তাঁর হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন রাজবাড়ীর বৈঠক খানায় । রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী হুঁকা টানতে টানতে, নিরমলা দেবদাসীর এগিয়ে দেয়া চিঠিটি মনযোগ দিয়ে পড়ছিলেন আর কিছুক্ষন পরপর আড়চোখে ছোট পাচুর দিকে তাকাচ্ছিলেন। চিঠিটি রাজা মশায়ের বাবা রাজা প্রতাপ রায় চৌধুরীর লেখা, কাশী থেকে লিখেছিলেন। নিরমলা দেবদাসীর ভাষ্যমতে তিনি এটি লিখেছিলেন মৃত্যুর কয়েক মাস আগে। সবাই কিছুক্ষন চুপ থাকার পর হঠাৎ নিরমলা দেবদাসী হুহু করে কেঁদে উঠে বললেন “আমাকে সাহায্য করুন!অনেক আশা নিয়ে...”, পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য রাজামশায় হাসি হাসি মুখ করে ভারি গলায় পাচুকে জিজ্ঞাস করলেন “এই ছোঁড়া তোর নাম কি রে ?”
পাচু মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিল “পঞ্চম”, রাজামশায় একটু নকল ধমকের সুরে আবার জিজ্ঞেস করল “পঞ্চম কি রে হতভাগা?”, পাচু চমকে দ্রুত বলল “আজ্ঞে! পঞ্চম কুমার ”। শুনে রাজামশায় ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে বললেন “নামের কি বাহার! আহা! পঞ্চম কুমার! এই নাম তোকে কে দিয়েছে?”,পাচু মাথা নামিয়েই ঐ একই ভঙ্গিতে উত্তর দিল “আজ্ঞে, সন্ন্যাসী বাবা ”, এরপর রাজামশায় তাচ্ছিল্যের সাথে নাক কুঁচকে বললেন “ অ্যাঁহ, আবার সন্ন্যাসী বাবা! কি সন্ন্যাসী তার ফল তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।” একটু থেমে চিঠিটি তিনি ভাঁজ করে বুক পকেটে রাখলেন,তারপর আবার পাচুর দিকে তাকিয়ে আগের মেজাজেই বললেন “এরপর কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে বলবি ‘পঞ্চম কুমার দাস’, এই রাজবাড়ীর সীমানার বাইরে, পেছনের দিকে একটা পুরান বাগান বাড়ি আছে,আমার লোক তোদের ঐখানে নিয়ে যাবে ,সেখানে মাকে নিয়ে থাকবি, আমি ওখানে ‘রাধা গোবিন্দের’ মন্দির গড়ে দেব। সেখানে মাকে পূজা আর্চনায় সাহায্য করবি। রসদ সব রাজবাড়ী থেকে যাবে। আর কান খুলে শুনেনে, ফের যদি কোনদিন এই রাজবাড়ীর ত্রিসিমানায় দেখি তবে পেয়াদা দিয়ে চাবকে পিঠের ছাল তুলে নুন লাগিয়ে দিব!” নিরমলা দেবদাসী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, রাজামশায় তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “তোমার সাথে আলাদা কোন কথা নেই,আমার হুকুম হয়ে গেছে , আশা করি অন্যথা হবে না,হলে এর ফল ভাল হবে না!”। পরবর্তিতে রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী যতদিন দেশে ছিলেন এই হুকুমের অন্যথাও হয়নি। সেদিন ঘাড় কাত করে মাথা নাড়লেও রাজার কথা কিছুই বোঝেনি পাচুবাবু, তবে পরে আস্তে আস্তে বুঝেছেন সমাজের জটিল কিছু অংকের অনেক সহজ সমাধান।

কাশীর সব স্মৃতি পাচুবাবুর মনে নেই, কিছু কিছু মনেপড়ে, তাঁদের ছোট ঘরের কথা, সামনের গলির কথা, ‘সন্ন্যাসী বাবা’র কথা, রাজা প্রতাপ রায় চৌধুরী সন্ন্যাস নিয়ে কাশী চলে যান, সেখানে সন্ন্যাস নিলেও শেষ পর্যন্ত সে ধর্ম পালন করতে পারেননি। সাদা চুল সাদা দাঁড়ি, মাঝে মাঝেই তিনি তাদের ঘরে আসতেন,মা নিরমলা দেবদাসীর সাথে বসে পূজা আর্চনা করতেন। পাচু বাবুকে পঞ্চম কুমার বলে ডাকতেন,ঝোলা থেকে বের করে ফলমূল খেতে দিতেন। ‘শিবরাজ পুরে’ আসার কয়েক মাস আগে ‘সন্ন্যাসী বাবা’ একবার আসলেন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে, নিরমলা দেবদাসী অনেক সেবা করেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন না। এমনিতে পাচু বাবু তাঁর মার চোখে জল সারা জীবনই দেখেছেন ,কিন্তু ঐ দিন তিনি তাঁর মাকে আছড়ে পড়ে কাঁদতে দেখেছেন প্রথম এবং শেষবারের মত।

‘ঠ্যাং’ করে একটা কৌটা পড়ার শব্দ হল।পাচু বাবু চোখমেলে তাকালেন চিলেকোঠার দিকে, ভাঙ্গা পুরান জিনিষপত্র থেকে একটা বড় মাদী বিড়াল বের হয়ে এসেছে, ছাদের রোদে গা টানা দিচ্ছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই শীতেও বাচ্চা দিয়েছে বিড়ালটা। পাচুবাবু আবার ঘড়ি দেখলেন একইভাবে, ৮:৩৫ বাজে। আড়মোড়া ভেঙ্গে তিনি অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালেন, মনে মনে ভাবলেন এরাই থাক রাজবাড়ীতে, মানুষ থাকে না জন থাকেনা! রাজবাড়ীর লোকেরা কিছু পুণ্যি কামাক!

পাচুবাবু সকাল ১০ টার আগে বাজার করেন না,জিনিষের দাম বেশী থাকে বলে। তিনি আবার হুকেনের দোকানে ঢুকলেন। হুকেনদের ৩ পুরুষের ব্যাবসা এই বাজারে,হুকেনের বাবার সাথে ভাল খাতির ছিল পাচুবাবুর, অল্প বয়েসে লোকটা মারা গেল,তারপর থেকে হুকেন ছেলেটা একহাতে দোকান চালায়! পাচু বাবু আবার সকালের জায়গাতেই বসে লুচি তরকারী অর্ডার দিলেন। হুকেন লুচি তরকারী দিতে এসে ফিসফিস করে পাচুবাবু কে বলল “দাদু! কুছু শুইনছেন নাখি? অই , হামাগেরে দক্ষিণ পাড়ার হারান শীল আছে না, অহারা ত ওপার চইলহে গেইছে। ভিডা মাডি নাকি জুড় কইরা বিকরি করহাইছে পারটির লোখজনই আর নাম দিইছে তরফদার গেরে,ওয়াদের সংগে নাখি দাগ লিয়া কেচাল! এতদ্দিন থেকে কুছুটি ট্যার পানুনা গ্যে! এই গিরামে হিন্দু ঘর আছিলওই বা কয়ডা?আরহো চইলহে যাইছে...” পাচুবাবু শুনে মূখ দিয়ে শুধু “অ...আহা রে” বললেন। তিনি একটু অবাকই হলেন, আগে এই গ্রামে মাত্র কয়ঘর মুসলিম ছিল , দেশ ভাগের পর প্রায় সব হিন্দু গেরহস্থ পরিবার জমিজমা বিক্রি করে পাড়ি জমান ওদেশে, শুধু মাত্র হাতে গোনা কিছু গরিব হিন্দু পরিবার যারা একেবারেই টাকা জোগাড় করতে পারেনি তাঁরা শুধু থেকে যান এদেশে। রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী তাঁর রাজকার্য এবং জমিদারী বন্ধ করতে বাধ্য হন যোগ্য লোকবলের অভাবে, প্রায় সব জমিজমা তিনি পানির দামে বিক্রি করে দেন বিভিন্ন ধনী মুসলিমদের কাছে। ‘শিবরাজপুরে’র বেশ কিছু জমিতে তাঁর শরিকদের সাথে মামলা-মোকদ্দমা চলছিল, যেগুলি দেশভাগ হবার পর আরও জটিল হয়ে যায় , সেগুলি তিনি দানপত্র লিখে দান করে দেন ‘রাজা প্রভাকর রায় চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়’, ‘শিবরাজ পুর হিন্দু সমিতি’, রঘুপতি মন্দির, দক্ষিণ পাড়ার ‘সিরাজপুর মাদ্রাসা’ আর সাঁওতাল পাড়ার কিছু জমি ‘সিরাজপুর ক্যাথলিক চার্চ’ এর নামে। এতে করে তাঁর শরিকরা এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে মামলায় হিমসিম খেয়ে পথে বসে , নতুন সরকার রায় দেয় প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে। রাজা দেবাকর রায় চৌধুরী স্বপরিবারে ওদেশে চলে যান। যাবার সময় দু’বিঘে জমি তিনি নিরমলা দেবদাসীর নামে লিখে দিয়ে যান। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজবাড়ী আর বাগানবাড়ী বিক্রি করতে পারেনি,কেউই নিতে রাজী হয়নি,অবশেষে বাগানবাড়ী হয়ে রইল নিরমলা দেবদাসীর ‘রাধা গোবিন্দ’র মন্দির আর রাজবাড়ী পড়ে থাকল জানা অজানা অনেক কিছু নিয়ে।
দেশভাগের পরপর থেকে অনেক দাঙ্গা হ্যাঙ্গামা হয়েছে হিন্দু-মুসলিম মিলে, বেশীর ভাগই জমিজমা নিয়ে,নয়তো বাড়ীর সীমানা নিয়ে, কিন্তু নতুন করে এইসব কি শুরু হল ,কে জানে ? এই নিয়ে চিন্তায় পড়লেন পাচুবাবু , না এইসব তো ঠিক না,এইসব কথা সমিতিতে ওঠে না? সমিতি শুধু আছে চাঁদা নেবার তালে! নাশতা শেষ করে পাচু বাবু উঠলেন বাজার করার জন্য, হুকেন আটা বেলতে বেলতে বলল “চিন্তিইয়া কইরফেইননা দাদু,উপ্রে ভগবান আছে লয়...?” পাচুবাবু মূখ গোমড়া করে বললেন “হুম, তুই পয়সা নে, বাজার শেষ করে আবার আসবো।”
বেলা ১১টার দিকে পাচুবাবু বাজার করে ফিরে এলেন হুকেনের দোকানে বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বড় কাঁচের গেলাসে এক গেলাস পানি খেলেন। কেবল তিনি বসতে যাবেন এমন সময় ভাঙ্গা গলার আওয়াজ পেলেন , “এইযে পাচুদা ! ওইখানে লয়, এইখানে এইসে বস, এইযে হামার থানে,এই হুকেন দুই ডা আলু শিঙ্গাড়া গরম ভাইজে দে জলদি” পাচুবাবু পেছনে ফিরে দেখলেন কল্যাণ মাস্টার, হাসিহাসি মুখ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।
“তা কেমুন আছো পাচুদা? শরীর তো দেইখছি একেবারে ফিট রাইখেছো অ্যাঁ,প্রতিদিন সেই একই রুটিন,ভাল ভাল!”
“ওইসব কথা বাদ দাও তো কল্যাণ, এই শিক্ষিত লোকের এক সমস্যা সোজা কথা কইতে পারেনা, আসল মতলব কি ঝেরে কাশ দেখি?”
“শুনো পাচুদা, এই মানে হইছে কি এইযে, হামাগের সমিতির যে সভা হই, তুমি আসোনা ক্যানে গোঁ? হামরাতো নতুন বামুন আনিইয়েছি গোঁ রঘুপতি মন্দিরের লাইগা,হেন কুনো পূজা-মন্তর নাইযে উঁ জানে না! সবাই আশীর্বাদ লিলো,তুমি বাদ যাবা ক্যানে গোঁ?”
“আমি মূর্খ মানুষ, আমি তোমাদের সমিতি সভাতে গিয়ে কিবা করব। এটা তোমার আসল কথা না, আসল কথাটা বল”
“না মানে বুইলছিলাম কি, সামনে স্বরসতি পূজা, এবারও ইস্কুলেই হবে। সমিতি থিইকা চাঁদা তুলার দায়িত্ব পইড়েছে হামার, তাই তুমার চাঁদা ডা...”
“কত টাকা?”
“সমিতি থেইকে ঠিক কইরে দিছে ২০টাকা”
“অ্যাঁ! ২০টাকা! পয়সা কি বলদের পোঁদ গলে পড়ে,ইয়ার্কি? মগের মুল্লুক নাকি?”
“আহা! চেতছো ক্যানে?”
“১০টাকার এক পয়সাও বেশী দিব না, এতে যদি তোমার শিঙ্গারার দাম না ওঠে তো বল ও আমি খাব না!”
“না না, তা হবে ক্যানে! ২০টাকা কি খুবই বেশী নাখি? আইজখের বাজারে এ কিছুই না, আচ্ছা তুমি ১০টাকায় দাও!”
শিঙ্গারা খেয়ে পাচু বাবু উঠে পড়ল , “এই নাও দশ টাকা, সব সময় শুধু চাঁদা চাঁদা ,হিন্দু সমিতি মাড়াচ্ছে! অ্যাঁহ, হিন্দু সব দেশ ছাড়া হচ্ছে সেই খবর নাই,তেনারা আছেন বালের সমিতি নিয়ে, এখন আবার নতুন বামুন নিয়ে এসেছে ডাকাতি করার জন্য,সবকটাকে আমি চিনি!”
“আহা তুমি অযথা খিস্তি কইরছ পাচুদা, শুধু শিনিওর শীটীজেন বুলে তোমাখে সম্মান করি, এই লাও রসিদটা!”
“লাগবে না!” বলে গজগজ করতে করতে বাজার নিয়ে বের হয়ে গেলেন পাচু বাবু, হুকেন দাঁত বের করে হাসছে দেখে, কল্যাণ মাষ্টার ধমকে ঊঠে বললেন, “ফ্যা ফ্যা করে হাসছিস ক্যানে রে হারামজাদা, একটা রং চা দে। এহ! রাজা গেল জমিদারী গেল,তাও রাজবাড়ীর দেমাঘ গা থেইকে গেল না! আরে ওই সব ব্যাপার সমিতি জানে না! সব জানে, পার্টি অফিশে বুলা হইয়েছে, পার্টি দেখছে ব্যাপারডা কি আসলে, বললেই হল হিন্দু দেশ ছাড়ে চইলে যাছে,কই হামারা তো যাছি না! আবে লাড়ি পুঁতা আছে রে এই জাগায়! সালা বুড়া ভাম!”

রাজবাড়ী পাড় হয়ে এর শেষ সীমানার বাইরে পেছনের দিকে বাগানবাড়ী, কোন একসময় এই বাড়িতে গান বাজনা হত, বাঈজি নাচতো। কিন্তু রাজা প্রতাপ রায় চৌধুরী অনেক ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর পিতা মারা যাবার পর এই বাগানবাড়ী বন্ধ করে দেন। এই বাড়ীতে অনেক গাছ-পালা, বাড়ীর সামনে পুরান দিনের তিনটি ‘ব্যাঙ গাড়ী’ পড়ে আছে। শুধুই বাইরের ধাতব খোলস, ভেতরের কল কব্জা সব বহু কাল ধরে চুরি হয়ে গেছে। গাড়ী গুলির ওপর ঘাস লতা পাতাও গজিয়েছে ,গাড়ীগুলি অর্ধেক মাটির মধ্যে এমন ভাবে গেঁথে গেছে যে দেখে মনে হয়, এই মাটি একসময় রাজাদের ঔদার্য আস্তে আস্তে গ্রাস করে নিচ্ছে। এই বাগানবাড়ী দুইটী ঘর পরিস্কার করা হয় নিরমলা দেবদাসী এবং তাঁর ‘রাধা-গোবিন্দে’র জন্যে। নিরমলা দেবদাসী মারা যান অজ্ঞাত এক রোগে ভুগে ,বড় সদরের হাসপাতালে, তখন পাচু বাবুর বয়স ১৮-২০ বছর হবে।তারপর থেকে পাচুবাবু একাই এ বাড়ীতে থাকে, বাইরের ঘরটাতে থাকেন, ভেতরের ঘরে নিয়ম করে সকাল-স্বন্ধ্যা পূজা দেন,যেভাবে তাঁর মা নিরমলা দেবদাসী তাঁকে শিখিয়েছেন। ধর্ম কর্ম এর বেশী তিনি মানেন না। নিজের রান্না নিজেই দুবেলা করেন বাইরের উঠানে। এই তাঁর একাকী জীবন।
প্রতিদিনের মত বাড়ীর ভেতরে কূয়ো তলাতে গোসল দিয়ে,পাচুবাবু বাইরের ঊঠানে চুলায় দুপুরের রান্না চাপিয়ে রোদে আবার গা তাপাতে লাগলেন।এইসময় হঠাৎ গত রাতের স্বপ্নটা আস্তে আস্তে তাঁকে আচ্ছন্ন করে ফেলল, গত রাতে খেয়েদেয়ে পাচুবাবু বিছানায় গেছেন রাত ৯টায়,তারপর লেপের তলাতে শীত নিবারণ করতে করতে কখন ঘুমিয়েছেন মনে নেই। হঠাত তাঁর ঘুম ভাঙে কূয়ো তলাতে বালতির শব্দ শুনে,পাশের ঘরে রাধা-গোবিন্দ আছে,তাঁদের গায়ে অনেক স্বর্নালঙ্কার। চোর ভেবে তিনি ঊঠে যান কূয়ো তলাতে, বাইরে পরিস্কার জোছনা , আলোতে সব দেখা যাচ্ছে,তিনি ভালভাবে তাকাতেই দেখলেন কূয়োর পাশে ছোট ৭-৮ বছরের একটা ছেলে তার গা থেকে পানি ঝড়ছে, তিনি তাড়াতাড়ি করে গেলেন ছেলেটির কাছে, চাঁদের আলোতে স্পষ্ট চেহারা দেখলেন, চমকে উঠে বললেন “রাসু! তুই ?”। রাসু মুখ হা করে কিছু বলতে যাচ্ছিলো ,এই সময় তাঁর মূখ দিয়ে নোংরা পানি গড়গড় করে বের হতে লাগল। পাচুবাবুর ঘুম ভেঙে গেল, তাঁর গায়ের লোম সব খাঁড়া হয়ে গেল ভয়ে। বাকি রাত তিনি আর ভালভাবে ঘুমাতে পারেননি।
পাচুবাবু এবার রাসুর কথা মনে করতে লাগলেন, রাসু এই গ্রামের ছেলে, দক্ষিনপাড়া বাড়ী ,গুটি খেলতে গিয়ে দুজনের যখন পরিচয় হয় তখন তাদের বয়েস ৫-৬বছর। রাসুর বাবার নাম ছিল বশীর, রাসু বাবা-মার একমাত্র ছেলে ছিলো, অনেক আদরের ছেলে। বশীর মিয়া কৃষি কাজ করত শ্বশুরের নিজেস্ব জমিতে, তাঁদের পরিবারে অভাব ছিল না। বশীর মিয়ার মা এই গ্রামে এবং আসেপাশের গ্রাম গুলিতেও খুবই কুখ্যাত ছিলো, সকলে তাকে ‘ডাইনি বুড়ী’ নামেই চিনত, কালা যাদু করত। বাণ মারা ,জ্বীন ,ভুত, অসুখ বিসুখ, মানুষেকে বশ করা,কুফরি কালাম, এইসব কাজে নানান মানুষ তার কাছেও যেত। এইসব কর্মকান্ডের জন্য তাকে সমাজ থেকে বের করে দেয়া হয়। বশীর নিজেও তাঁর মার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেননা। কিন্তু বশীরের যখন ছেলে হল তখন ‘ডাইনি বুড়ী’ প্রায়ই আসত নাতি কে এক নজর দেখার জন্য। বশীর মেরে তারিয়ে দিত বুড়ীকে। পরে একদিন এই “ডাইনি বুড়ী” কবর থেকে একটা ছোট বাচ্চার লাশ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, এই জঘন্য অপরাধের শাস্তি দিতে গ্রামবাসী এক সাথে হয়ে তাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে ।
রাসু নিজেও একটু অদ্ভুত ধরনের ছেলে ছিল,সে পাচুকে শিখিয়ে ছিল যে মরা বিড়ালের মাথার ওপর পেসাব করলে বিড়াল জীবিত হয়ে যায়, মরা কাকের মাংস খেলে দেহের রক্ত কালো হয়ে যায় আর মরা বাচ্চার কলিজা খেলে মানুষ অন্ধকার হয়ে যায়। পাচু রাসুকে জিজ্ঞাস করে “এইসব তুই শিখলি কোথায় থেকে রে?” রাসু গম্ভীর মুখ করে বলে “হামার দাদীর থানে!” পাচু শুনে অবাক হয়, কিছু বলে না। একদিন খেলতে খেলতে রাসু পাচুকে কানে কানে বলল, “হামার দাদীর থানে যাবি লো?”, পাচু একটু অবাক হয়ে বলে “তোর দাদী না মারা গেছে? কোথায় যাবি?” রাসু মুখে একটা উজ্জ্বল হাসি হেসে বলে “আছে,উ জংগলার পাড়ে,যাবি লো?” সেদিন কৌতূহল বসত রাসুর সাথে পাচু যেতে রাজি হয়ে যায়। রাসু আগে আগে প্রায় দৌড়ে দৌড়ে যায়,পিছে পিছে ভয়ে ভয়ে পাচু হাঁটতে থাকে। জঙ্গলের গভীর থেকে গভীরে । একসময় তারা শিব মন্দির পাড় হয়ে জঙ্গলের শেষ মাথায় চলে আসে যেখানে দিনের আলোতেও অনেকটা অন্ধকার। একটা ছোট পুকুরের পাশে, ভাঙ্গা একটা মাটির ঘর। পুকুরের পানি কুচকুচে কালো,ঘরের ভেতরে অন্ধকার কিছু দেখা যায় না। তারা দুইজন ঘরের বারান্দায় এসে বসে। আশেপাশের ঘন গাছপালা থেকে অনেকগুলি কাক একসাথে বিরতিহীন ভাবে কাকা করে যাচ্ছে , বারান্দা ভর্তি অবয়বহীন মাটির পুতুল, বুকের কাছে একটা ফুটা। ঘরের ভেতর থেকে বয়স্ক মহিলার কাশির আওয়াজ আসছে একটু পরপর। পাচু ভয়ে ভয়ে রাসুকে বলল,“রাসু! আমার ভয় লাগছে, চল চলে যাই”, রাসু বলে “ধূরোহ! যাবি ক্যানে?ঘরে হামার দাদী আছেরে পাগলা, ভয় পাইছিস ক্যানে?উর অসুখ হইয়াছে,আন্ধারে উর হাথো নাই ,পাহো নাই” বলে রাসুর মনখারাপ হয়ে যায়। পাচু রাসুর কথা কিছুই বুঝতে পারে না। রাসু বারান্দায় উবু হয়ে বসে এঁটেল মাটিতে পানি দিয়ে পুতুল বানাতে শুরু করে। নিজমনে রাসু পাচুকে নানান কথা বলতে থাকে “এই গুলাহ হইলো ‘তাগু’, এইগুলা বানাইয়ে একঠি কইরলে সব গুলান তাবে আসে,এইগুলার কইলজা নাই, এই বানাইয়ে কইলজা বাহির কইরে লিছি, এই তাগু মেলা বদ জিনিষ, এইগুলানকে রোজদিন রক্ত খিলাতে হয়,লয় তো ঘাড় চটকিয়েহ লিবে শেন!” এই বলে রাসু উঠে গিয়ে ঘর থেকে একটা বড় সুঁই নিয়ে আসে, বাঁ হাতের আঙুলে ছোট ফুটা করে সেখান থেকে টিপে টিপে এক ফোঁটা করে রক্ত প্রতিটি পুতুলের মাথায় দেয়। পাচু লক্ষ করে রাসুর রক্তের রং কালো।
ওইদিনের পর থেকে পাচু ভয়ে আর রাসুর সাথে খেলে না, পালিয়ে পালিয়ে থাকে। পরে একদিন হঠাৎ রাসুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না । তার বাবা –মা অনেক খোঁজার পর থানায় যায়, পুলিশও অনেক খোঁজাখুঁজি করে। শেষমেশ রাসুর লাশ পাওয়া যায় জঙ্গলের শেষ দিকে সেই ভাঙ্গা বাড়ীর পুকুরে ভাসমান অবস্থায়। এই ঘটনার পর বশীর মিয়া তার পরিবার নিয়ে অন্য জেলায় চলে যান।

বাইরে অনেক ঠান্ডা বাতাস, পাচু বাবু দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় লেপ গায়ে দিয়ে আধাশোয়া হয়ে বসে বসে পান খাচ্ছেন আর বাইরের উঠনের দিকে তাকিয়ে আছেন,বাগানবাড়ীর গেট দিয়ে একজন দাড়িওয়ালা খাটোমত লোক ভেতরে ঢুকছেন, দেখে পাচুবাবু তাঁকে চিনতে পারছেন না। লোকটি ঘরের কাছে এসে হাক ছাড়লেন “দাদু! ও দাদু , ভিত্রে আইসফো?” পাচু বাবু প্রশ্ন করলেন “কে রে?” বাইরে থেকে ঊত্তর এল “আদাব দাদু! হামি রহিম মোল্লার ছেইলা, কবির মোল্লা গোঁ,ভিত্রে আইসফো?” পাচু বাবু বললেন “অ্যাঁয়, জুতা খুলে অ্যাঁয়।”
রহিম মোল্লার বাড়ীও দক্ষিণ পাড়ায়, পাচু বাবুর দুবিঘা জমির পাশেই তাঁরও চাষের জমি আছে। একবার এই জমির সীমানা নিয়ে রহিম মোল্লার সাথে পাচুবাবুর তুমুল ঝগড়া, ঝগড়ার এক পর্যায় পাচুবাবু রহিম মোল্লার জামা টেনে ধরে পুলিশে দেবার হুমকি দেয়, কবির মোল্লার বয়েস তখন অল্প ১৪-১৫ বছর, বাবার এই রকম অসহায় অবস্থা দেখে সে থাকতে না পেরে একটা লাঠী দিয়ে পাচুবাবুর পিঠে বাড়ি দেয়।পাচুবাবু অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকায়,ছেলেটির অশ্রুসজল চোখে তখন ছিল ঘৃনা,রাগ আর অসহায় বোধ। পাচুবাবু শুধু আঙুল তুলে বলে “খবর্দার ছোঁড়া আমি তোর বাপের চেয়ে বয়েসে বড়!” রহিম মোল্লা তাঁর ছেলেকে বুকে আগলে ধরে, একধরণের লজ্জাবোদ থেকেই পাচুবাবু দ্রুত ওইখান থেকে চলে যায়। পরদিন বাজার থেকে আসার পথে রাজবাড়ীর পেছনের রাস্তায় পুকুরের সামনে কবির মোল্লা পাচুবাবুর পথ আগলে দাঁড়ায়, পাচুবাবু একটু ভয়ই পেয়ে বসে তখন।কিছু বুঝে ওঠার আগেই কবির মোল্লা পাচুবাবুর দুপা জড়িয়ে ধরে বলে “হামাখে মাফ কইরে দ্যান গোঁ দাদু , আর কূনোদিন দিন এই রখম হইবে না গোঁ!”,এই বলে সে ফেউ ফেউ করে কাঁদতে থাকে। পাচুবাবুর চোখেও পানি চলে আসে, “তোকে এইটা করতে কে বলেছে রে?” কবির মোল্লা কাঁদতে কাঁদতেই উত্তর দেয় “আব্বায়”।
কবির মোল্লা বড় হয়ে বিয়েশাদী করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বড় সদরে চলে যান, সেখানে দোকান দিয়ে ব্যাবসা করেন। মাঝে মাঝে গ্রামে আসে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপার গুলি দেখতে,গ্রামে এলে প্রতিবার তিনি পাচুবাবুর সাথে দেখা করেন,খোজ খবর নেন।
ঘরে ধুকেই আবার কবির মোল্লা আদাব দিল পাচুবাবুকে। চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল, “দাদু, শরীর ভাল? যে ঠান্ডা বাতাস ছাইড়াছে!”
“আর বলিস না রে ভাই, লেপ থেকে বের হতেই মন চায় না! পায়ের হাড়ে হাড়ে ব্যাথা।”
“তো চলেন, হামার সাথে বড় সদর, সদর হাঁসপাতালের থানে, ডাক্তার দেখাইবেন লো”
“নাহ, ওইসব এল্যোপাতিতে কাজ হবে না, হরিদাস ডাক্তার ঔষধ দিচ্ছে, সারতে সময় লাগবে এই যা”
“কি যে বুইলছেন দাদু, নুতুন যুগের ঔষুধ আর হামাগের হরিদাশ কব্রেজের ঔষুদ এক হইল!”
“তা তোর বাপ কেমন আছে? বোনটার বিয়ে দিলি যে জামাই কেমন?”
“আব্বায় আছে ভালই, কাজ কাম আর আগের মতুন কইরতে পারেন না, ক্যাশে বসেন, ছুট ভাইডার তো লেখাপড়া আর হইল না, অখে কামে লাগিয়ে দিছি দুকানে। বুনের জামাই তো ভালই, কন্টাকদার আছে, মেলা ইনখাম, ওর কথাতেই তো এলাম আপ্নের সাথে আলাপ কইরতে।”
“কি ব্যাপার বলত?”
“হইছে কি গতবার ধান লিতে হামি আসিনিখো, অই বোন জামাই আইসাছিল, জমি দেখতে।উঁর সাথে মুবাইল কম্পানি আলাদের আবা খুব খাতির, উঁদের কাম করহে তো! তো উঁ আমাকে বুলাছে, হামাগের আর আপ্নের যে জুমি পাশাপাশি লয়, উয়ার মাঝখানে নাখি টাওয়ার বসাইবে কোম্পানি। এর লাইগা বছর বছর ভাড়া দিবে। সত্যি করে বুইলছি দাদু, উঁ ভাড়ার যে হিসাব দিছে না,তাথে হামাগেরে ধান বিকরি কইরেও এত লাভ হয় নাখো!আর টাওয়ারে যে জায়গাহা লিবে সেডা বাদ দিয়া বাকি জুমিতে তো চাষ বাষ করহা যাবেই লশ তো হইছে না নাখি!”
“পরে ভাড়া না দিয়ে জমি দখল করলে?”
“না না, ও লিয়ে আপনাখে চিন্তা কইরতে হইবে না, হামার উকিল-আদালত চিনা আছে, জমিজমার কাগজ পত্র এর এক কফি লাইবে আর ভাড়ার চুক্তিপত্র হবে আলাদা, উঁদের অপিশ তো হামি চিনি, ভাড়া না দিলহে কেশ কইরা দিব শেন! আসলে দাদু হামি এলিয়া ১ মাস ঘাটঘাটি কইরেছি,মেলা লোখই দিছে জমি ভাড়া,বড় সদরে তো ছাদও ভাড়া দিছে লোখে,রেগুলার ভাড়া পাইছে!”
“বলছিস!”
“কি আর বুইলবো দাদু, চাইরডা ছেইলা মিয়া, এথ বড় ঘর শুধু এক এই ব্যাবসা দিয়া আর ভাল মথ চইলছে না, কিছু টাকা হাথে পাইলে ভাল হয়। আপনি হামার সাথে বড় সদর চলেন, নিজে চোখে সব দেখে শুইনা তারপর ভাড়া দিবেন, কি আছে? আপনি না দিলে ফের হামারও ভাড়া দিয়া হবে না দাদু!”
“আচ্ছা, আমাকে দুদিন সময় দে, একটু চিন্তা করে দেখি, তাছাড়া একজন কে খবর দিতে হবে, আমি আর কয়দিন! তুই সামনের সপ্তাহে অ্যাঁয় আমি যাবো তোর সাথে, তাছাড়া আমার নিজেরও কিছু কাজ বাকী আছে।”
“আচ্ছা দাদু, আমি তাহইলে যাছি আইজকা”
“দাঁড়া, আমিও বের হব, চল বাজারে এককাপ চা খাই, যেতে যেতে সব তোকে বলি, তুই কি কি ব্যাবস্থা করবি।”

রাতে জোরে বৃষ্টি নামলো, পৌষ মাসের শেষের দিকে এই বৃষ্টি একটু অবাক করা, ঠান্ডা বাতাসের জন্য বাইরে টেকা যাচ্ছেনা। পাচুবাবু কোন রকমে ভেতরের বারান্দাতে চুলা জ্বালিয়ে সবজী খিচুড়ি রান্না করে নিলেন। রাত ৯টায় তিনি ঘি দিয়ে আরাম করে খিচুড়ি খেয়ে লেপের তলাতে ঘুমাতে গেলেন। গভীর রাতে জোড়ে বাজ পড়ার শব্দে তিনি ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে পড়লেন। বাইরে কুয়ার পাড়ে কেউ শব্দ করে বমি করছে। তিনি উঠে গেলেন কূয়া পাড়ের দিকে। বাইরে ঘন অন্ধকার,থেকে থেকে বিজলী চমকাচ্ছে। পাচুবাবু দেখলেন লম্বা মোটা মতন একটা লোক, হাতে ঘটি নিয়ে উবু হয়ে ওয়াক ওয়াক করে বমি করছে,বাইরে এখন বৃষ্টি নেই , টিপ টিপ দুই এক ফোটা করে বৃষ্টি পড়ছে , ভ্যাপ্সা গরম। পাচুবাবু ভয়ে চিৎকার করে উঠে “কে রে ওখানে, কি হয়েছে?” লোকটা বমি করা থামিয়ে উত্তর দিল “আমায় চিনলে না দাদা! আমি বিলু গোঁ! সালারা কি মারটাই না মারলে, বিপ্লব সব এখন মূখ দিয়ে পোঁদ দিয়ে বের হচ্ছে মাইরি।ওহ দাদা! কিছুই খেতে পারছিনা জানো তো, তা তুমি আজকে কি রেঁধেছ দেখি তো”, চারিদিক আলো করে বাজ পড়ল,সেই আলোতে পাচুবাবু স্পষ্ট দেখল বিলু হাসি হাসি মূখ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে,তার মূখ দিয়ে গল গল করে রক্ত পড়ছে। পাচুবাবু ভয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠল “কিচ্ছু নেই, যাও এখান থেকে, যাও বলছি!” প্রচন্ড জোড়ে বাজ পড়ার শব্দে পাচুবাবুর ঘুম ভেঙে গেল, ধড়ফড় করে বিছানা তে উঠে বসে তিনি দেখলেন তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে একাকার। বাকি রাত টুকু আর তাঁর ঘুম হল না।
বিলু পাচুবাবুর মামাতো ভাই, বয়েসে পাঁচ বছরের ছোট। তারা থাকত হুগলীতে, পাচুবাবুর মামার কথা তাঁর অত মনে নেই। ৭১ এর দিকে বিলু মাওবাদী কমিউনিস্ট দলে যোগ দেয়, পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বেদম মার খায়, শুধু কিছু দলের তথ্যর বিনিময়ে পুলিশ তাকে জীবিত ছেড়ে দেয়। যেহেতু নিজের বাড়ীতে থাকা বিলুর জন্য নিরাপদ ছিলা না,তাই পাচুবাবুর মামা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে পাচুবাবুর কাছে রেখে যায়।বিলু যখন শিবরাজ পুরে আসে তখন তার অবস্থা মরণাপন্ন,কিছু দিন বাদে অবস্থা বেগতিক দখে পাচুবাবু তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেন,তার দুদিন বাদে বিলু মারা যায়।


পরদিন পাচুবাবু বাগান বাড়ীতে দুপুরে খাওয়ার পর একটু হাঁটাহাঁটি করছেন,সীমানার চারপাশ দিয়ে। এই বাগান বাড়ীর সাথে রাজবাড়ীর শেষ সীমানার যোগ একটা উঁচু পাঁচিল আর পাঁচিলের গায়ে ছোট একটা দরজা, যেটা প্রায় সব সময়ই বন্ধ থাকত। এই পাঁচিলের ওপারে একটা পুকুর আছে যেটা রাজবাড়ীর সীমানার মধ্যে এবং উঁচু পাঁচিল দিয়ে চারিদিক ঘেরা । এইটা ব্যাবহার হত অন্দর মহলের মহিলাদের গোসলের জন্য। পাচুবাবু হাঁটতে সেই দরজার সামনে দাঁড়ায়, দরজাটা প্রায় ভেঙে গেছে এখন , আগে এখানে শুধুই একটা ফাটল ছিল, বহু বছর আগে সেই ফাটলে চোখ রেখেই প্রথম যৌবনের হালকা হাওয়া টের পান পাচুবাবু। তখন তার বয়েস কত আর ১২-১৩ বছর। তখন বৈশাখ মাস ভীষণ গরম, এক ক্লান্ত দুপুরের শেষের দিকে পাচু খেলতে খেলতে এই দরজার সামনে আসে, ওপার থেকে রাজবাড়ীর মেয়েদের খিলখিল হাসির শব্দে সে থমকে দাঁড়ায়। কৌতুহলবশত সে চোখ রাখে ওই দরজার ফাটলটাতে, ওপারে পাকা বাঁধানো পুকুরে সে দেখতে পায় ছয় জন রমণী প্রায় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় স্নান করছে আর খুনসুটি করে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। তাদের গায়ে কোন রকমে লেপটানো আছে ভেজা শাড়ী।কেউ তাদের সুডৌল স্তন্য যুগল নিজ হাতে রগড়াচ্ছে,তো কেউ ঊরু পর্যন্ত শাড়ী তুলে পা পরিস্কার করছে।সেই প্রথমবারের মত গতানুগতিক নিজের মাঝে পাচু অন্য নতুন কিছুর অস্তিত্ব উপলব্ধি করে। এইভাবেই আরও ৬-৭ বছর পর পাচুর এই অচেনা অস্তিত্বের সাথে পরিপূর্ন রুপে পরিচয় হয়। মা মারা যাবার পর পাচু একেবারে একা হয়ে পড়ে,লুকিয়ে লুকিয়ে সাঁওতাল পাড়ায় তাড়ি খেতে যায় প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে। একদিন সন্ধ্যার দিকে পাচু সাঁওতাল পাড়ার দিকে যাচ্ছে, পাড়ার শুরুর দিকে একটা ছোট মাঠের পাশ দিয়ে সরু রাস্তা, পাশে জংলা ঘেরা ছোট ডোবার মত পুকুর। পুকুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় রিনরিনে গলার গান শুনে থমকে দাঁড়ায় পাচু । জংলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে একজন সাঁওতাল যুবতী বুক পানিতে নেমে গান গাইতে গাইতে ডুব দিয়ে দিয়ে শামুক তুলছে আর পাশের ঝুড়িতে রাখছে। তার মাথায় কোঁকড়া চুল , চোখ দুটি টানা টানা মায়াবী, সম্মোহিতের মত পাচু অইখানেই জংলার আড়ালে বসে দেখতে থাকে তাকে। অনেকগুলি শামুক তুলে ঝুড়িটি কোমরে ধরে যুবতীটি ভেজা গায়ে আস্তে পাড়ে উঠে আসে।আশেপাশে একবার তাকিয়ে ,ঝুড়িটি নিচে নামিয়ে রেখে, আলতো করে গায়ের সাথে জোড়ান শাড়ীটি খুলে ভালভাবে নিংড়ে নেয়। সাঁঝের আলোয় কৃষ্ণ শঙ্খের মত মসৃন তনু পাচুকে পরিণত করে ফেলে এক পূর্ন যুবকে। পাচু অনুভব করে অচেনা আদিম চাহিদা। একসময় সেই যুবতী ভেজা শাড়ীটি দিয়ে মাথা থেকে হাটু অব্দি পেচিয়ে ঝুড়ি হাতে দ্রুত পায়ে সাঁওতাল পাড়ার দিকে আগাতে থাকে, পাচু তার পিছে কুকুরের মত ফেউ ফেউ করে আগাতে থাকে।
“এই ছুঁড়ি, এই তোর নাম কিরে?” মেয়েটি সংকোচ করে একবার পিছে তাকায়।
“বুকী, ক্যানে কি চাস?”
“না মানে কিছুনা, বাড়ী কোনটা তোর?”
“উ সামনে দেখা যাইছে উডা, ঘরহে কিন্তুক হামার মরদ আছে,বুইলা দিনু!”
পাচু লজ্জায় আর কিছুই বলতে পারেনা। শুধু পিছেপিছে আগাতে থাকে। এক সময় বুকী তার বাড়ী পৌছে যায়। প্রায় দৌড়ে ঘরে ঢুকে যায়। ছোট্ট খড়ের একটা ঘর , মলিন দশা , মাটির উঁচা বারান্দা, বারান্দায় আধাশোয়া হয়ে বসে একজন বলিষ্ঠ সাঁওতাল পুরুষ যার পা গুলি অসম্ভব রকমে চিকন। হাতের লম্বা বল্লমটা নাড়তে নাড়তে খুশি মনে গান গাইছে আর মাথা দুলাচ্ছে। পাচু কে দেখে তার কোন ভাবান্তর হলনা। শুধু পাচুর মুখের দিকে চেয়ে গান থামিয়ে হেসে বলল “কি রে বাবু? তু রাজবাড়ীর পূজারী হামাগের এই অছুত পাড়াতে ক্যানে আইসাছিস?” তারপর ঘরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পাচুর দিকে তাকিয়ে ভুরূ নাচিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে আবার বলল “কি? হামার মাগী কে মুনে লাইগাছে,ডাগর মাল আছে। শুবি উর সাথে? অ্যাঁ! হাহাহাহাহ” পাচু একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। লোকটি আবার ফিচেল হেসে বলে “লাজ, পাইছিস ক্যানে?যাহ্‌ তাড়ির আড়ত থেইকে হামার লাইগা এক হাঁড়ি তাড়ি আর তিনজনের লাইগা মাংস ভাত লিয়ে অ্যাঁয়,হামি তোকে শুতে দিবে যাহ্‌।”।পাচু মাথা নিচু করে তাড়ির আরতের দিকে রওনা হয়।
রাতের বেলা পাচু নিজে না চাইতেও ফিরে আসে বুকীর টানে। হাতে করে এক হাঁড়ি তাড়ি, সোনা ব্যাঙের মাংস আর ভাত নিয়ে। এসে দেখে লোকটা আগের যায়গায় বসে তার চিকন পা দুটিতে তেল মালিশ করছে আর গুন করে গান করছে। বুকী উঠানে এককোনায় চুলাতে শামুক সিদ্ধ করছে। পাচুকে দেখে বুকী একটু নিজেকে গুটিয়ে নেয়। লোকটা পাচুকে দেখে গান থামিয়ে আনন্দে বলে উঠে “আরি সাব্বাস! বাবু তুই আইসেছিস হাহাহাহাহা। তুর তো দেখছি সেই টান, ওঁ ! পয়লা নাখি? অ্যাঁয় অ্যাঁয় বয় হামার থানে বয় বাবু,সব লিয়ে এসেছিস?” পাচু বারান্দায় বসতে বসতে একবার লোকটার বল্লমের দিকে তাকায়,লোকটা হাঁড়ির তাড়ি হর হর করে গলায় ধেলে দেয় অনেকখানি তারপর আবার বলে “হামার নাম কাদন টুডু আছে, হামার মাগীর নাম ময়েশ টুডু আছে, হামি ডাকাত আছে,আজই বছর হইল হামাগেরে বিহা হইয়েছে,উ ঢেমনি মাগী সালা অপয়া আছে, বিহার দু’দিনের মাথায় সর্দারের ডাক আইলো, ‘কানন পুরে’ শেখের বাড়ী ডাকাতি দিথে গেইলাম,মোঠে ৩২ জন,কোন সালা হারামীপুনা কইরল,সবঠি মিইলা ধরা খ্যালাম,সর্দার মইরা গেল, হামি এমনই জুরে বাঁশের বাড়ি খ্যাইলাম মাঞ্জাতে,যে হামার মাঞ্জা ভাইংগা গেল বাবু,এখন এই অচল হইয়ে বইসা আছে।” আবার সে হরহর করে তাড়ি গিলে ফিস ফিস করে বলে “এখন তো হামার মরদাঙ্গিও না আছে!” তারপর আবার হরহর করে বেশ অনেকখানি তাড়ি সে গিলল এবং পুরা মাতাল হয়ে গেল “এই যে এই তেল মালিশ কইরছে, বল্লমে ধার দিইছে, পাও দুডা জুত হলেই ব্যাস, পাখি আবা ফুড়ুৎ! ওই শেখ কে হামি নিজে হাথে খুন করবে!আবার ডাকাতি দিবে কাদন টুডু, তুই খাছিস না ক্যানে খা, তোর ভয় নাই বাবু, তুই রোজ অ্যাঁয়। রোজ হামারা একসাথে খাবে, তুই হামার মাগীর সাথে শুবি,তুই রোজ অ্যাঁয়!” হাড়িটি পাচুর হাতে দেবার আগে আরও একবার গলা ভিজিয়ে নিয়ে কাদন টুডু হাঁক ছাড়ল “বুকী!ওই ছেনাল মাগী! হামাগের থানে অ্যাঁয়, অ্যাঁয় বুইলছি,নয় এই বল্লম পুরা ঘুসিয়ে দেবে, অ্যাঁয় বুলছি।” বুকী একটা মাটির পাত্রে শামুক সিদ্ধ করে নিয়ে এল। হাতের কাছে পেতেই কাদন টুডু বুকীর চুলের মুটি ধরে ক্ষানিক ঝাঁকিয়ে নিয়ে মাতাল অবস্থায় বলল “এই বাবু রোজ আইশফে, রোজ!”বুকী কথা না বারিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিল। পাচু আর বুকী খাবার পর যে টুকু তাড়ি বাকী ছিল সবটুকু কাদন একাই শেষ করে বেহুশ হয়ে পড়ে রইল।তাড়ির নেশা পাচুর যেমন হল, তেমনি বুকীরও হল।কিন্তু তাড়ির নেশার চেয়ে আদিম যে নেশা তাদের পেয়ে বসেছিল সেটাই দুজনের সাহস বাড়িয়ে দিল অনেক। বুকী পাচুর হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে যায়,ঘরের অন্ধকারে দুজনের অপূর্নতাগুলি একে ওপর কে খুঁজে নেয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে,মূখের গন্ধে আর তাদের শরীর খুঁজতে জানালা দিয়ে অভু্যদিত হয় সেই রাতের অন্ধ নীল জোছনা, যা হুমড়ি খেয়ে শুধু মেঝেতেই গড়াগড়ি করে।
ভোর বেলা পাচু বুকীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে,বুকী পাচুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কেউ কোন কথা বলেনা। একসময় অনেক ভালবাসা নিয়ে পাচু বলে “বুকী তুই আমাকে বিয়ে করবি?” বুকী পাহাড়ি নদির মত খিলখিল করে হেসে বলে “অ্যাঁ মোলরে ঢ্যামনা! হামার মরদ বাইরে শুইয়া আছে, তুই হামকে আবা বিহা কইরবি লয়! হামাকে নিয়া রাইখবি কুথা , উ রাজবাড়ী? রানী বানাইবি হামাকে? অছুত রানী ?”বলে আবার সে খিলখিল করে হেসে উঠে বসে।
বসন্ত ঘুরে আর এক বসন্ত আসে ,এইভাবেই পূর্নিমার হিসেব মেনে চলতে থাকে তাদের আদি প্রাকৃতিক প্রেম, যা ছিলো সমাজের জটিল অঙ্কগুলির একটি।পরবর্তিতে পাচুবাবু এই জটিল অঙ্কগুলির সহজ সমাধান করেই চলছিল,কেইবা জানে পূর্নিমার হিসেব গুলিতে কোন ভুল হয়ে থকলেও থাকতে পারে। একদিন হঠাত পাচুবাবু খবর পেলেন সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ গেছে,কাদন টুডু নিজের বাড়ীর বারান্দায় নিজের বল্লম দিয়ে খুন হয়েছে। পাচুবাবু বিপদের আশঙ্কা দেখে আর ওদিকে যায় না। দীর্ঘ এক মাস পরে তিনি সাঁওতাল পল্লীতে যান বুকীর খোঁজে , সবাই বলাবলি করছিল ময়েস টুডু নাকি কাদন টুডুকে খুন করে পালিয়েছে,কেউ বলল জেলে যাওয়ার ভয়ে সে খ্রিস্টান হয়ে বিদেশে চলে গেছে ।প্রথম কিছুদিন পাচুবাবু নিজেকে সামলে চলে,তারপর থাকতে না পেরে এক রবিবার গেল ক্যাথলিক চার্চে। ক্যাথলিক চার্চের পাদ্রীর নাম ফাদার শিমন সরকার, চার্চের অধিবেশন শুরুর আগেই পাচু তার কাছে গিয়ে দাড়াল, ফাদার শিমন পাচুকে দেখে বললেন, “আমি জানি তুমি কেন এখানে এসেছ বাছা। যার জন্য এসেছ সে এখন ভাল আছে, ঈশ্বরের চরণে নিজে নিবেদন করে সে মুক্তি পেয়েছে। তাকে যদি তুমি সত্যিই ভালবেসে থাক তবে তার আর খোঁজ নিও না,এতেই মঙ্গল। পরম ক্ষামশীল পিতা তোমাকে ক্ষমা করুন, শান্তি দিন, আমেন!”। পাচুবাবু তবুও নাছড়বান্দা প্রায় প্রতি রবি করে সে এসে চার্চে বসে থাকে। একদিন ফাদার শিমন তাকে ডেকে বলেন “শুধু চিঠি লিখে দিলে তার হাতে পৌছে দিতে পারি,ঠিকানা দেব না।” পাচুবাবু আনন্দে ঝলমলে হয়ে বললেন “কিন্তু আমি তো লিখতে পারি না!” ফাদার শিমন হেসে বলেন “আচ্ছা কি লিখবে নিঃসংকোচে বল , ওর নাম এখন সিস্টার মারিয়া টুডু।”
এইভাবে পাচুবাবু এক তরফা চিঠি পাঠাতেই থাকে ফাদার শিমনের হাতে, কিন্তু মাসের পর মাস কোন উত্তর আসেনা। একদিন ফাদার শিমন পাচুবাবুকে ডেকে নিয়ে বললেন যে বুকীর একটি পুত্র সন্তান হয়েছে, চার্চ থেকে তার নাম দেয়া হয়েছে ‘আলফ্রেড টুডু’।


পরদিন রবিবার সকাল পাচুবাবু গেলেন চার্চে, এখন ক্যাথলিক চার্চের পাদ্রী ‘ফাদার মাইকেল’, বয়েস অনেক কম। পাচুবাবু কে দেখে ফাদার মাইকেল হেসে এগিয়ে এসে বললেন “কি দাদু,সেই চিঠি? আলফ্রেড টুডু ,খঞ্জনপুর ?” পাচুবাবু হাসতে হাসতে মাথা নাড়ে “হ্যা আরকি! জরুরী কিছু কাজ আছে তো তাই।” ফাদার পাচুবাবুকে বসিয়ে বললেন “এখন তো মোবাইলের যুগ একটা কেনেন না কেন?”
“ও অনেক খরচা! চিঠিই ভাল”
“যান না কেন? খঞ্জনপুর ?”
“দেখ ফাদার! কিছু কিছু সম্পর্ক দূর থেকে একতরফা ভাবে সামলে চলাই সকলের জন্য মঙ্গল।”


পরের সপ্তাহে কবির মোল্লার সাথে পাচুবাবু বড় সদরে উপস্থিত হলেন অনেক সকাল সকাল। বাস স্ট্যান্ডে নেমে পাচুবাবু দেখলেন আলফ্রেড টুডু দাঁড়িয়ে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পাচুবাবু অনেক সময় নিয়ে দেখলেন আলফ্রেড কে , প্রায় ১০-১৫ বছর হবে শেষ দেখা হয়েছে তাঁদের। আলফ্রেডের চুলে ভাল পাক ধরেছে,শরীর আগের মতই আছে। আলফ্রেড এগিয়ে এসে হ্যান্ডসেক করল সবার সাথে। কবির মোল্লা বললেন “কাকা, আইজকা থাইকবেন নাখি, চলে যাইবেন, হামার বাসায় থাকেন। না হলে হোটেলে ব্যাবস্থা কইরে দিছি, ভাল হোটেল পরিচিত আছে হামার।” আলফ্রেড কবিরের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন “ না না , অফিস থেকে একদিনের ছুটিই পেয়েছি কবির,আজ রাতের ট্রেনেই চলেযাব। সব কাজ যদি আজ করা যায় তো ভাল হবে। না হলে আমাকে আবার আসতে হবে আর একদিন ছুটি নিয়ে।” কবির মোল্লা সবাই কে খাবার হোটেলের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললেন “এখন বাজে ৮টা , অপিশ খুইলবে ৯টায় তো। হামরা নাশ্তা কইরা গেলেই হবে, উকিলকে সব আগে থিইকা বুলা আছে,দাদু যেভাবো বুইলাছে সেই ভাবো। ঊকিল সব রেডি কইরা রেখেছে, আপনি আর দাদু খালি সই করে দিলিই হবে। কিছু বাকি কাজ আপনি যেকোন জায়গা থেকেই করিয়ে লিতে পাইরবেন, না হলে হামি এইখান থেকে কইরে পাঠিয়ে দিব শেন”। হোটেলে খেতে বসে পাচুবাবু আলফ্রেড কে বললেন “তোমার মাথার চুলে পাক ধরেছে! কেমন অবাক লাগছে।” আলফ্রেড বললেন “কি করব বল? বয়েস তো কম হচ্ছে না। এখন তো আবার দাদুও হয়ে গেলাম!” পাচুবাবু খাওয়া বন্ধ করে হা করে আলফ্রেডের দিকে তকালেন, আলফ্রেড বললেন “হ্যা, বড়ছেলে স্যামুয়েল এর মেয়ে হয়েছে একমাস হল, ‘নিবেদিতা’ নাম রাখা হয়েছে।” পাচুবাবু মাথা নিচু করে আবার খাওয়াতে মনযোগ দিলেন।
সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ৪টা বাজলো। আলফ্রেডকে সব কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিয়ে কবির মোল্লা আর পাচুবাবু চললেন বাসস্টান্ডের দিকে।


দুই বছর পরের এক শীতের দিন বেলা ১২টা, বাগানবাড়ীতে পুলিশ এসেছে অনেক,কিছু পার্টির নেতাদের ও দেখা যাচ্ছে।গেটের বাইরে অনেক সাংবাদিক। গেটের বাইরে এককোনায় দাঁড়িয়ে হুকেন চোখমুচ্ছে। ঘটনা ভয়াবহ পাচুবাবু কে জবাই করে হত্যা করেছেন কে বা কারা, সাথে রাধা-গোবিন্দের সব অলঙ্কার চুরি গেছে,রাধা-গোবিন্দের মূর্তির মাথাও ভাঙ্গা হয়েছে। বাইরে কল্যাণ মাষ্টার শিবরাজ পুর হিন্দু সমীতির কিছু লোকজন কে নিয়ে সাংবাদিকদের বোঝাচ্ছেন এই রাধা-গোবিন্দ মন্দিরের ঐত্যিহাসিক তাৎপর্য এবং এর পুরোহিত শ্রী পঞ্চম কুমার দাসের ভূমিকা। কবির মোল্লা চিন্তিত ভঙ্গিতে একটু পর পর মোবাইল ফোনে কাউকে ফোন করছেন।
পরদিন স্থানীয় পত্রিকায় বড় করে খবর বের হল, “শিবরাজ পুর রাজবাড়ীর রাধা-গোবিন্দের মন্দির থেকে পুরোহিত কে জবাই করে ৮ ভরি স্বর্নালঙ্কার লুট।”। এরপর সময়ের নিয়মে কিছু দিন খবর টি সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ তর্কের ঝড় তুলল। লাইক,শেয়ার কমেন্টের মাধ্যমে প্রতিবাদী জনগণ ব্যাপারটা কে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে গেল।আবার সময়ের নিয়মে দুই দিন পর যখন সবাই ভুলে গেল ঘটনাটা, তখন সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ নিতে আসে আলফ্রেড টুডু এবং কবির মোল্লা। এই হাসপাতালের মর্গে একটি ফ্রিজ,৬টি লাশ রাখার ব্যাবস্থা আছে, লাশ ছাড়াতে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগে,ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয়,কত টাকা নির্ভর করে কেসের ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×